বলা যায়, অনেকটা শূন্য থেকেই গত বছর যাত্রা শুরু করে রিপোর্টার্স শিল্ড। উদ্দেশ্য, ভয় দেখানো বা হয়রানিমূলক মামলার বিপরীতে অনুসন্ধানী বার্তাকক্ষকে সুরক্ষা দেয়া। রিপোর্টার্স শিল্ড—এখন সক্রিয়, জবাব দিতে প্রস্তুত।
অলাভজনক সংস্থাটি স্ট্র্যাটেজিক ল-স্যুটস অ্যাগেইনস্ট পাবলিক পার্টিসিপেশন—সংক্ষেপে স্ল্যাপের (জনস্বার্থ বিরোধী কৌশলগত মামলা) বিপরীতে আর্থিক ও প্রয়োজনীয় সমর্থন দিয়ে থাকে। স্ল্যাপ মূলত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিকে নিরুৎসাহিত আর অনুসন্ধানী বার্তাকক্ষকে ধ্বংসের হাতিয়ার হিসেবে প্রয়োগ করা হয় । এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশের বার্তাকক্ষকে এ ধরনের আইনি আক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিয়েছে রিপোর্টার্স শিল্ড।
সম্প্রতি রিপোর্টার্স শিল্ডের নতুন নির্বাহী পরিচালক ক্লোথিল্ড রেডফার্নের সাক্ষৎকার নিয়েছে জিআইজেএন। দ্রুত সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি ক্যানসারের মতো চারপাশে ছড়িয়ে পড়া জবাবদিহিহীনতার সংস্কৃতি রুখতে সংস্থাটি কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে তা নিয়ে কথা বলেছেন রেডফার্ন। তিনি এর আগে ররি পেক ট্রাস্টের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন।
রিপোর্টার্স শিল্ডের কাজের ধরনের সঙ্গে বীমা প্রতিষ্ঠানের সামান্য মিল খুঁজে পেতে পারেন।তবে মোটের ওপর এর রিপোর্টার্স শিল্ডের কর্মপদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। যেমন, কোনো সদস্য যদি বারবার মামলায় জড়ায়, তখন তাদের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে কোনো বাধ্যবাধকতা জুড়ে দেয়া হয় না। কারণ রিপোর্টার্স শিল্ড মনে করে, কোনো বার্তাকক্ষ যখন নিয়মিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরে, তখন তাদের বিরুদ্ধে মামলার পরিমাণও বেশি হয়।
ক্রমবর্ধমান হুমকির কথা বর্ণনা করে রোমানিয়ার স্বাধীন অনুসন্ধানী আউটলেট কনটেক্সটডটআরওর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক আত্তিলা বিরো বলেন: “সাংবাদিক হিসাবে আমরা আইনের ঊর্ধ্বে নই, কিন্তু এই কৌশলগত মামলাগুলো করা হয় আমাদের থামিয়ে দেয়ার জন্য। প্রতিবেদন তৈরি ও সম্পাদনার মূল্যবান সময় নষ্ট করে দিনের পর দিন একটিমাত্র মামলা নিয়ে আমাদের লড়তে হচ্ছে। অথচ এই সময়ে আমরা আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারতাম। সৎ রোমানিয়ানদের করের টাকায় গঠিত জন-তহবিলের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে কিনা সেদিকে নজর দিতে পারতাম।”
দীর্ঘ সাক্ষাৎকারটিকে পরিপাটি ও সংক্ষিপ্ত করে তুলে ধরার জন্য আংশিক সম্পাদনা করা হয়েছে।
জিআইজেএন: আপনাদের উদ্দেশ্য কি?
ক্লোথিল্ড রেডফার্ন: আমাদের মূল উদ্দেশ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও জনস্বার্থ সম্পর্কিত রিপোর্টিংকে সুরক্ষিত রাখা। আইনি খরচ মিটাতে গিয়ে স্বাধীন আউটলেটগুলো যেন স্থবির বা পঙ্গু না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করা। তাদের পাশে দাঁড়ানো। বার্তাকক্ষের বিরুদ্ধে আইনি আক্রমণ বাড়ছে। ধনী ও ক্ষমতাবানরা অস্ত্র হিসেবে স্ল্যাপ ব্যবহার করছে। আবার অনেক অসাধু আইনী সংস্থাও রয়েছে যাঁরা সাংবাদিকদের আদালতে নিয়ে যাওয়ার জন্য খুশিমনে অর্থ ঢালতে রাজি। স্ল্যাপ প্রয়োগ করে তাঁরা যে সবসময় মামলা জিততে আগ্রহী, তা নয়। স্রেফ হয়রানি করতে চায়। তারা জানে প্রতিবেদনে আপনি যা প্রকাশের চেষ্টা করেছেন, তাতে অসত্য কিছু নেই। তারা কেবল আপনাকে ভয় দেখানো বা আপনার আর্থিক উৎসগুলো বন্ধের চেষ্টা করে। রিপোর্টার্স শিল্ডের মডেল হলো মিউচুয়াল ডিফেন্স ফান্ড বা পারস্পারিক প্রতিরক্ষা তহবিল গঠন। বৃহৎ পরিসরে কাজের মাধ্যমে যা অনেক বেশি কার্যকর হয়ে ওঠে। আমরা বৈশ্বিক সদস্য তৈরির কর্মসূচী নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি। আমাদের সব সদস্য তাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সঙ্গে সম্পর্কিত আইনি ঝুঁকি বিশ্লেষণ বিষয়ক পরামর্শ পাবেন, পাশাপাশি আইনি খরচের সমর্থনও। দিনের পর দিন ধরে আইনি লড়াই চালানো আর আর্থিক খরচ মেটাতে গিয়ে ছোট আকারের সংবাদমাধ্যমগুলো রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে।
জিআইজেএন: আপনাদের পরিষেবাগুলো কীভাবে সাজানো হয়েছে?
সিআর: আমরা তিনটি মূল বিষয়ের ওপর জোর দিই: প্রতিরোধ; প্রতিক্রিয়া; প্রতিরক্ষা। সদস্যরা এই তিন ধরনের সুবিধা পান। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের আইনি অংশীদাররা রয়েছে, যাঁরা আমাদের সদস্যদের আইনি সহায়তা দেন। তাদের পারিশ্রমিক দেয়া হয়। অন্যান্য আইনি সহায়তা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রিপোর্টার্স শিল্ডের বড় পার্থক্যই এটি। সদস্যদের পক্ষ থেকে আমরা আইনজীবীদের পারিশ্রমিক বহন করি, তাই গোটা বিষয়টাই অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। ধরুন, কোনো প্রতিবেদন প্রকাশের আগে আপনার আইনি দিকগুলো পর্যালোচনার প্রয়োজন। মানে প্রতিবেদন প্রকাশের পর মামলা হলে কী ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন পড়বে। এ অবস্থায় হাতে খুব বেশি সময়ও থাকে না। আপনি যদি রিপোর্টার্স শিল্ডের সদস্য হন, দ্রুত প্রতিরোধমূলক আইনি পরিষেবা পাবেন। যাকে বলে আইনি ঝুঁকি মূল্যায়ন। অনেকটা প্রতিবেদন প্রকাশের আগে অনানুষ্ঠানিক পর্যালোচনার মতো। এভাবে আপনি আইনি ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পাবেন। বুঝতে পারবেন কোন বিষয়গুলো নিয়ে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে।
এটাই হচ্ছে “প্রতিরোধ”। বেশিরভাগ সাংবাদিকই আমাদের কাছে এ পরিষেবা নিতে আসছেন। তাদের রিপোর্টের কপি পাঠাচ্ছেন। আইনজীবীদের দিয়ে যাচাইয়ের জন্য বলছেন। যেন তাঁরা আগেভাগে আইনি ঝুঁকিগুলো নির্ধারণ করতে পারেন।
“সাড়া দেয়া” হচ্ছে আনুষ্ঠানিক আইনি হুমকির উত্তরে শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া জানানো। ধরুন, বড় কোনো আইনী সংস্থা আপনাকে চিঠি পাঠিয়েছে। বেশিরভাগ মানুষই এ অবস্থায় ভয় পেয়ে যায়। কীভাবে জবাব দিতে হবে তা বুঝতে পারে না। কিন্তু স্ল্যাপ মামলার (যা মূলত ভয় দেখানোর জন্য দায়ের করা হয়) বিপরীতে দাঁড়ানোর সেরা উপায় হলো সময় নষ্ট না করে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী মারফত শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দেওয়া। দুষ্কর্মকারীরা যতই প্রভাবশালী হন না কেন, তাঁরা বুঝতে পারবেন আপনি মোটেই বিচলিত নন, আর আপনার পেছনে শক্ত আইনি সমর্থন আছে।
এরপর আসে “প্রতিরক্ষা”; যা আদালতে মোকাবেলা করার বিষয়। আমরা নিউইয়র্ক সিটি বার অ্যাসোসিয়েশনের জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ সাইরাস আর. ভ্যান্স সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিসের সঙ্গে কাজ করি। এরা আমাদের আইনগত অংশীদার। আমাদের আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। এদের আইনজীবীরা বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেন। তবে কারও যদি বিশ্বস্ত কোনো আইনজীবী থাকে, যিনি স্থানীয় বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত, তাহলে ভালো। যদি না থাকে, আমরা আমাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একজন উপযুক্ত আইনজীবী খুঁজে দিবো। তাঁর খরচ বহন করবো। তিনি আপনাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিবেন। তিনি আপনার মামলার বিপরীতে প্রতিক্রিয়া জানাবেন। আদালতে আপনার পক্ষে দাঁড়াবেন।
জিআইজেএন: রিপোর্টার্স শিল্ডের সদস্য হতে কী ধরনের যোগ্যতা লাগে?
সিআর: রিপোর্টার্স শিল্ড মূলত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক না, আমরা আইনি সত্তার (যেমন: নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান) সঙ্গে কাজ করি। লক্ষ্য, খারাপ লোকেদের অসৎ উদ্দেশ্যে করা মামলার ঝুঁকি কমানো। নিবন্ধিত বার্তাকক্ষের ক্ষেত্রে আমরা যেমন যাচাই করতে পারি যে—তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে কিনা, মালিকানা ও পরিচালনায় তৃতীয় পক্ষের প্রভাব আছে কিনা, সম্পাদনা নীতিমালা কতটা শক্তিশালী কিংবা একাধিক ব্যক্তি তথ্য যাচাই ও প্রতিবেদনটি সম্পাদনা করছে কিনা। ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের বীমার আওতায় আনা কঠিন। তবে, তাঁরা যদি রিপোর্টার্স শিল্ডের সদস্য আউটলেটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য মামলা খায়, আমরা তাদের জন্য একজন আইনজীবী খুঁজে দেব।
আমাদের সদস্য হওয়ার অন্য শর্ত হচ্ছে: প্রতিবেদনগুলো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট হতে হবে। প্রতিষ্ঠানটিকে অলাভজনক হতে হবে বা মালিকানা ও পরিচালনায় স্বচ্ছতা থাকতে হবে। এছাড়া সম্পাদনাগত স্বাধীনতা এবং পেশাগত মান বজায় রাখতে হবে।
আমরা এখন শুধু প্রিন্ট আর অনলাইন আউটলেটকে সদস্য করছি। আমাদের লক্ষ্য ছোট, স্বাধীন অনুসন্ধানী বার্তাকক্ষকে সমর্থন দেয়া। যাদের কোনো নিজস্ব আইনজীবী বা বীমা সুবিধা নেই। আমরা চাই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মাধ্যমগুলোকে সহায়তা দিতে। বেশিরভাগ সম্প্রচার মাধ্যমের নিজস্ব আইনজীবী থাকে। এছাড়া, সরাসরি সম্প্রচারিত হয়না এমন ৩০ মিনিট পর্যন্ত চিত্রনাট্যভিত্তিক রেকর্ডকৃত অডিও বা ভিডিও কনটেন্টও আমরা কভার করি।
জিআইজেএন: এ ধরনের চিন্তা, তা থেকে উদ্যেগ গ্রহণ এবং সংগঠনের আকার দেয়া—শুরুটা কীভাবে?
সিআর: শুরুটা করেন ড্রিউ সুলিভান (অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা) এবং অ্যালেক্স পাপাক্রিস্টো (সাইরাস আর. ভ্যান্স সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক)। একসঙ্গে অনেক দিন ওসিসিআরপিকে আইনি আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য কাজ করেছেন। তাঁরা দেখতে পান যে, স্ল্যাপ মামলার সংখ্যা বাড়ছে, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে হয়রানি করা হচ্ছে। এদিকে প্রচলিত মিডিয়া বীমা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ অবস্থায় জনসেবামূলক সাংবাদিকতার প্রয়োজন মেটাতে সাশ্রয়ী মডেল তৈরির লক্ষ্যে গঠিত হয় রিপোর্টার্স শিল্ড।
২০২৩ সালের পহেলা মে। বিশ্ব সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতা দিবসে প্রতিষ্ঠিত হয় রিপোর্টার্স শিল্ড। ইউএসএইডের প্রাথমিক তহবিলের অংশ হিসেবে এ উদ্যোগের কথা ঘোষণা করা হয়। বলা হয়, এটি একটি বৈশ্বিক কর্মসূচি। রিপোর্টের জন্য মামলা হলে সদস্যদের আইনি খরচ বহন করা হবে।
জিআইজেএন: প্রতিষ্ঠার পর থেকে আপনাদের সদস্য সংখ্যা কীভাবে বেড়েছে? আপানারা কী কোনো স্ল্যাপ মামলা লড়েছেন?
সিআর: এখন পর্যন্ত ১৫০টিরও বেশি আবেদন পেয়েছি, যার মধ্যে ৩০টি আউটলেটকে সদস্য হিসেবে নিশ্চিত করা হয়েছে। আইনি সহায়তা চেয়ে আমাদের কাছে বেশকিছু অনুরোধ আসছে। তিনজন সদস্যের পক্ষে আদালতে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। আমরা ধাপে ধাপে আমাদের সদস্যপদ বাড়াচ্ছি। প্রথম ধাপে রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার মিডিয়া আউটলেট। দ্বিতীয় ধাপে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করবো। আর তৃতীয় ধাপে থাকবে এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আউটলেটগুলো।
আমরা এখন দ্বিতীয় ধাপে আছি। এ বছরের শেষ দিকে তৃতীয় ধাপ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। এভাবে অগ্রসর হওয়ার কারণ সুষ্ঠভাবে আবেদনগুলো মূল্যায়ন ও আমাদের ভৌগোলিক অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় করা। ভৌগোলিক অংশীদাররা আমাদের স্থানীয় আইনজীবীদের খুঁজে পেতে সহযোগিতা করেন—বিশেষ করে যাঁরা দক্ষতার সঙ্গে স্ল্যাপ মামলা সামলেছেন এবং সাংবাদিকদের রক্ষা করতে জানেন। এশিয়াতে আমরা আমাদের আইনি নেটওয়ার্ক তৈরি করছি।
জিআইজেএন: আপনি কী আপনাদের প্রথম প্রতিরক্ষা মামলা সম্পর্কে কিছু বলবেন?
সিআর: মধ্য ইউরোপের একটি প্রকাশনা আমাদের প্রথমদিকের সদস্য। যেটি একজন বিদেশি বিনিয়োগকারীর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য আবাসন প্রতারণার অভিযোগ এনে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই বিনিয়োগকারী মানহানির অভিযোগে মামলা করেন। প্রকাশনা সংস্থাটি একজন আইনজীবীর কথা আমাদের জানায়। আমরা ওই আইজীবি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে তাকে অনুমোদন দিই। আমাদের ওই সদস্যের পক্ষে মামলা লড়ার জন্য আমার এখনও ওই আইনজীবীর খরচ বহন করছি।
জিআইজেএন : সদস্যরা কী তাদের সদস্যপদের কথা প্রকাশ করেন?
সিআর: এটা সম্পূর্ণ তাদের ওপর নির্ভর করে। কারও জন্য সদস্যপদ সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। কেউ কেউ আবার এটা বলা পছন্দ করেন না। তাঁরা কারও চোখে পড়তে চান না। আপনি সদস্য হয়েছেন মানে আপনাকে কঠোর যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে আসতে হয়েছে। অনেকে রিপোর্টার্স শিল্ডের সদস্য হতে পেরে গর্ববোধ করে। প্রথমদিকে, আমরা সদস্যদের নাম প্রকাশ করতে চেয়েছি। পরবর্তীতে আমরা বুঝতে পারি কিছু সদস্যের ধারণা, সদস্যপদের তথ্য প্রকাশ মামলার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কেউ হয়তো মনে করলো, “বার্তাকক্ষটির পেছনে বড় কারও আর্থিক সমর্থন আছে, এদের বিরুদ্ধে মামলা করি।” যা বিভ্রান্তিকর। আমাদের অনেক পয়সাকড়ি নেই! অযথা মামলার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে চিন্তা করে কিছু সদস্য তাই আর সদস্যপদের কথা প্রকাশ করতে চান না।
জিআইজেএন: আউটলেটগুলো কীভাবে আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, সদস্য ফি নিয়ে আলোচনা করে এবং মামলা দাখিল করে?
“এখন পর্যন্ত, সদস্যদের গড় ফি বছরে ৩ হাজার ৫০০ ডলার। বেশিরভাগ সদস্যের জন্য ৫ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত কভারেজ দেয়া হয়।” — ক্লোথিল্ড রেডফার্ন
সিআর: এর জন্য আমাদের একটি দল রয়েছে। সে দলে তিনজন লোক আছেন, যাঁরা সরাসরি সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁরা ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ এবং আরবি ভাষায় দক্ষ। তাঁরা আবেদনপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করেন। অন্য একটি কমিটি সদস্যদের ফি নির্ধারণ করে; ভ্যান্স সেন্টার আইনগত দিকগুলো দ্যাখে, আর সাংবাদিকতা বিষয়ক কমিটি দ্যাখে সম্পাদকীয় বিষয়গুলো।
আমাদের সম্পর্কে জানার জন্য আপনি info@reportersshield.org-এ ইমেইল করতে পারেন। আর, আপনি যদি সদস্যপদ গ্রহণের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকেন, তাহলে সরাসরি আমাদের ওয়েবসাইটে রাখা আবেদন পত্রটি পূরণ করতে পারেন।
জিআইজেএন: সদস্যদের ফির পরিমাণ কিভাবে নির্ধারণ করা হয়— আর সর্বনিম্ন খরচইবা কত?
সিআর: বর্তমানে সদস্যদের গড় ফি বছরে ৩,৫০০ মার্কিন ডলার। বেশিরভাগ সদস্যকে ৫০০,০০০ ডলার পর্যন্ত কভারেজ প্রদান করা হয়। অর্থাৎ ৫০০,০০০ ডলার পর্যন্ত তাঁরা আইনি খরচ করতে পারে। আর আমরা সেই খরচ বহন করবো। তবে আদালত যদি সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ক্ষতিপূরণ ধার্য করে, তা এর আওতায় পড়বে না।
প্রতিটি সদস্যপদের বিপরীতে প্রথমে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিতে হয়, যা “মডেস্ট কন্ট্রিবিউশন” হিসেবে পরিচিত। এর পরিমাণ ২৫০ থেকে ১,০০০ মার্কিন ডলারের মধ্যে হতে পারে। এটি নির্ভর করে সদস্যের ঝুঁকি এবং দেশের বিচারব্যবস্থার ওপর। বছরে সর্বাধিক চারবার যা দিতে হতে পারে।
আমাদের লক্ষ্য অনেক বেশি প্রতিষ্ঠানকে সদস্য করা। তাই আমরা সদস্য ফি কমানোর জন্য বিভিন্ন পথ খোলা রাখি। যেমন, আপনি যদি মনে করেন আপনার ৫০০,০০০ মার্কিন ডলারের কভারেজের প্রয়োজন নেই, তাহলে আপনি কম কভারেজ এবং কম ফি বেছে নিতে পারেন। অথবা, যদি আপনার ঝুঁকি কম থাকে, তবে আপনি কম ফি দিয়ে, বেশি “মডেস্ট কন্ট্রিবিউশন” বিকল্পটি বেছে নিতে পারেন। প্রথম দফায় আপনাকে এ টাকাটা দিতে হবে। পরে বাকি খরচ কভারেজের আওতায় আসবে। সদস্য ফি-এর সর্বনিম্ন পরিমাণ ১,০০০ মার্কিন ডলার। আমরা বুঝি যে কিছু সদস্যদের জন্য এই পরিমাণ অর্থও বেশি হয়ে যায়।
আমরা সুইডিশ সরকারের অনুদান পেয়েছি। এ টাকা দিয়ে ওই সব দেশের সংবাদমাধ্যমকে সহায়তা করা হবে যাঁরা ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট এইড (ওডিএ) বা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা প্রাপ্তির তালিকায় রয়েছে। অনেকের জন্য এ ভর্তুকি কাজে আসবে। আগামীতে কিছু সদস্যের জন্য আমরা ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি প্রদানের উদ্যোগ নিচ্ছি, যাতে তাঁরা অল্প খরচে সদস্য হতে পারে।
আমাদের সদস্য হওয়ার পর আপনাকে যদি কোনো আইনি হুমকি দেয়া হয় বা মামলা করা হয়, তাহলে আপনার কাজ হচ্ছে রিপোটার্স শিল্ডকে ইমেইল করে তা জানানো। আমাদের আইনি দল চটজলদি সাড়া দিবে। আপনার জন্য একজন আইনজীবী খুঁজে বের করবে, মামলা লড়তে কী পরিমাণ খরচ হবে তা নির্ধারণ করবে, আপনি প্রাথমিক ফি (মডেস্ট মানি) প্রদান করবেন, এবং আমরা আপনার আইনজীবীর ফি পরিশোধ করতে থাকবো।
জিআইজেএন: বিভিন্ন সদস্যদের জন্য ভিন্ন পরিমাণ ফি নির্ধারণ কিভাবে করেন?
সিআর: ফি নির্ধারণের জন্য আমরা অ্যাকচুয়ারিয়াল স্ট্যাডি ব্যবহার করি। এই টুলটি বীমা শিল্পে ঝুঁকির আর্থিক খরচ পরিমাপে ব্যবহৃত হয়। এটি এমন একটি পদ্ধতি যা বিভিন্ন হিসাব ও পরিসংখ্যান থেকে ভবিষ্যৎ ও সম্ভাবনা অনুমান করে নির্দিষ্ট ঝুঁকির মাত্রা পরিমাপ করে। আমরাও এ পদ্ধতি ব্যবহার করছি। যেন অলাভজনক সংগঠন হিসেবে রিপোটার্স শিল্ড টেকসই অবস্থান নিশ্চিত করে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা তহবিলের মাধ্যমে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে চিরস্থায়ী সুরক্ষা দিতে পারে।
বেশ কিছু অনুসন্ধানী আউটলেট আমাদের তথ্য সরবরাহ করে। এর ওপর ভিত্তি করে আমরা আমাদের অ্যাকচুয়ারিয়াল স্টাডি করি। টাকা নির্ধারণের মডেলটি সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য আমরা কয়েকদফা যাচাই-বাছাই করি।
কোন প্রতিষ্ঠান কতটা মামলার ঝুঁকিতে রয়েছে তা বিবেচনায় নিয়ে ফি বা কাভারেজের হিসাব করা হয়। তবে, আমি জোর দিয়ে বলতে চাই এরইমধ্যে যাঁরা আইনি মামলার সম্মুখীন হয়েছে তাদের আমরা ছাড় দেয়ার চেষ্টা করি। যা ইতিবাচক সাংবাদিকতাকে প্রতিফলিত করে।
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। এর আগে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসের প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন। একজন বিদেশি সংবাদদাতা হিসেবে তিনি বিশ্বের দুই ডজনেরও বেশি দেশের সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি এবং সংঘাতের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং আফ্রিকায়।