Brant Houston led the GIJC23 workshop on Using Social Network Analysis for Investigations. Image: GIJN, YouTube
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় শক্তিশালী টুল সোশ্যাল নেটওয়ার্ক অ্যানালাইসিস
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
ডেটা-চালিত সাংবাদিকতার যুগে, বিভিন্ন বিষয়কে একসঙ্গে যুক্ত করার মাধ্যমে যুগান্তকারী সব তথ্য উন্মোচন করা সম্ভব। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক অ্যানালাইসিস (এসএনএ) ঠিক এমন একটি কৌশল, যা ব্যবহার করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা ঠিক এ কাজটিই করতে পারেন।
সংযোগ, ধরন আর লুকানো গল্পের এক চমৎকার জগৎ এসএনএ — সাংবাদিকের টুলকিটে যা একটি শক্তিশালী সংযোজন, আর এটি আমাদের বিশ্বব্যাপী ছড়ানো সম্পর্কগুলোর লুকানো জাল উন্মোচনে সাহায্য করে। শুধুমাত্র বিষয়গুলোর মাঝে সংযোগ স্থাপনই নয়; এটি দৃশ্যের আড়ালে থাকা জটিল ভাষ্যগুলোও সামনে নিয়ে আসে। জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশগত সংকট বা বিভিন্ন সন্ত্রাসী চক্রের মধ্যকার সংযোগ খুঁজে বের করা– এধরনের নানা কাজে এসএনএ অনেক সম্ভাবনা তৈরি করে।
সুইডেনে ১৩তম গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে (জিআইজেসি২৩) এ সংক্রান্ত টুলের ব্যবহার নিয়ে কথা বলেছেন জিআইজেএনের বোর্ড চেয়ারপার্সন ও সহপ্রতিষ্ঠাতা, ইনভেস্টিগেটিভ নিউজ নেটওয়ার্কের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিংয়ের নাইট চেয়ার ব্রান্ট হিউস্টন।
কাজের জিনিস
হিউস্টন আলোচনা করেন প্রাথমিক দুটি এসএনএ টুল নিয়ে: নোডএক্সএল (NodeXL) এবং গেফি (Gephi)।
নোডএক্সএল হচ্ছে মাইক্রোসফট এক্সেলের জন্য নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণ ও ভিজ্যুয়ালাইজেশন সফটওয়্যার প্যাকেজ। ফলে স্প্রেডশিট সফটওয়্যারের সঙ্গে পরিচিত– এমন যে কেউই এটি সহজে ব্যবহার করতে পারেন। এদিকে গেফি হচ্ছে বিনামূল্যে ব্যবহারযোগ্য ওপেন সোর্স ভিজ্যুয়ালাইজেশন টুল। হিউস্টন বেশিরভাগ সময় দ্বিতীয় টুলটি ব্যবহার করেন। এটিকে তিনি সাংবাদিকদের জন্য আদর্শ টুল হিসেবে ব্যাখা করেন, কারণ এটি যৌথ কাজ আর ধারণার আদান-প্রদানকে সহজ করে: “আমি ভীষণ অবাক হয়েছি যে অনেক সাংবাদিক শক্তিশালী এ টুলটি ব্যবহার করেন না,” বলেন হিউস্টন।
সাংবাদিকদের মধ্যে যারা এসএনএ নিয়ে কাজ করতে চান হিউস্টন তাদের ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক অব সোশ্যাল নেটওয়ার্ক অ্যানালাইসিস (আইএনএসএনএ) এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ারও পরামর্শ দেন। “এটি আমার দেখা সবচেয়ে মজার নামগুলোর মধ্যে একটি, এ নেটওয়ার্কটি বিভিন্ন কর্মশালা এবং সেমিনারের আয়োজন করে, যার মাধ্যমে ক্ষেত্রটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংযোগ তৈরি হয়,” বলেন তিনি। “এসএনএ-র জগতে ঢুকতে চান– এমন সাংবাদিকদের জন্য সহায়ক হতে পারে এমন বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা ও পরামর্শ।” তাছাড়া নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে আয়োজিত সম্মেলনগুলো “ধারণা ও সংযোগ তৈরির সোনার খনি,” বলেন হিউস্টন— “অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির অসংখ্য ধারণা লাভের পাশাপাশি আগামী বছরগুলোর জন্য একগুচ্ছু অনুপ্রেরণা প্রদান করে,” যোগ করেন তিনি।
সাফল্যের গল্প
এসএনএ ব্যবহারের বিষয়টি দারুনভাবে উঠে এসেছে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)-এর পানামা পেপারস অনুসন্ধানে। এই নথিপত্রগুলো দুর্নীতি ও কর ফাঁকির বিশ্বজুড়ে ছড়ানো নেটওয়ার্ককে উন্মোচিত করেছে। যার মাধ্যমে খুব ভালোভাবে বোঝা যায় লুকানো সংযোগগুলো শনাক্তের গুরুত্ব। এসএনএ-র ব্যবহার সংক্রান্ত আরো দুটি জবরদস্ত উদাহরণের মধ্যে রয়েছে দে রুল— এটি কর্পোরেট বোর্ডগুলোর মধ্যে সংযোগগুলো তুলে ধরে এবং অন্যটি হচ্ছে ৯/১১ হামলায় জড়িত সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলোর বিশ্লেষণ।
দে রুল —২০০৫ সালে এই ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন প্রকল্প শুরু করেন সান ফ্রান্সিসকো-ভিত্তিক ডিজাইনার জশ অন। এটি একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ টুল, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যকার ইন্টারলকিং ডিরেক্টরি প্রকাশ করে। যেমন, এর মাধ্যমে দেখা যায়: ২০২১ সালের শীর্ষ ১০০ মার্কিন কোম্পানির মধ্যে ৮৭টি কোম্পানির বোর্ড ডিরেক্টরের সংযোগ রয়েছে একে অপরের সঙ্গে। সাইটটি এসব সংযোগ খুঁজে দেখা ও শেয়ার করার মতো ম্যাপ তৈরির সুযোগ করে দেয়। কর্পোরেট ও সরকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে নির্বাচিত কয়েকজনকে ঘিরে কীভাবে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয় এটি তার ওপর আলোকপাত করে — যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনসাধারণের নজরে পড়ে না।
এসএনএ ব্যবহারের আরেকটি বড় উদাহরণ লাটভিয়ান-আমেরিকান গবেষক ভালদিস ই. ক্রেবসের কাজ। তিনি ৯/১১ হামলার নেপথ্যের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলোকে বিশ্লেষণ করেছেন। “তার, ম্যাপিং নেটওয়ার্কস অব টেরোরিস্ট সেলস, গবেষণাটি এসএনএ নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী যে কারো জন্য প্রয়োজনীয় টিউটোরিয়াল সরবরাহ করে,” বলেন হিউস্টন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, প্রবন্ধ ব্যবহার করে একটি ডেটাবেস তৈরি করেছিলেন ক্রেবস এবং সেখান থেকে সংযোগ দেখিয়েছিলেন বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে। তার বিশ্লেষণ তুলে ধরে কীভাবে ব্যক্তি আর গোষ্ঠীগুলো জটিল বা অনেকটা অপ্রত্যাশিত উপায়ে আন্তঃসংযুক্ত ছিল।
এসএনএ মূল ধারণা: নৈকট্য, কেন্দ্রীয়তা, এবং মধ্যবর্তীতা
এসএনএ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে উল্লেখ করেন হিউস্টন:
- নৈকট্য: এটি নির্দেশ করে আপনার কাজের বিষয়টি মূল নেটওয়ার্ক থেকে কতটা কাছে বা দূরে আছে। “আপনি যদি সমাজতাত্ত্বিক পরিপ্রেক্ষিতে, যেমন… অভিবাসী বা প্রান্তিক গোষ্ঠী সম্পর্কে চিন্তা করেন, যারা মূল সম্প্রদায়ের কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে থাকে,” হিউস্টন বলেন। “কিন্তু এটি অন্যরকমও হতে পারে।” তিনি যোগ করেন: শুধুমাত্র একটি বিষয় কেন্দ্র থেকে দূরে থাকার অর্থ এই নয় যে তারা ক্ষমতাবান নন— আর এ কারণেই অন্য দুটি ধারণা বিবেচনা করাটা গুরুত্বপূর্ণ।
- কেন্দ্রীয়তা: এটি দিয়ে বোঝানো হয় নেটওয়ার্কে কোন বিষয়টির সবচেয়ে বেশি সংযোগ আছে।
- মধ্যবর্তীতা: এটিকে হিউস্টন সবচেয়ে চমৎকার বলে মনে করেন। এটি অনেকটা “দুটি ঘটনার মধ্যবর্তী দ্বাররক্ষী হওয়ার মতো। কারণ আপনি এই ব্যক্তির মাধ্যমে না গেলে নেটওয়ার্কের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে পারবেন না। এরা বিভিন্ন দলকে সংযুক্ত করে। তাদের হয়তো অনেক সংযোগ নাও থাকতে পারে না, তবে এরা অপরিহার্য,” বলেন হিউস্টন।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা
এসএনএ যদিও চমৎকার সম্ভাবনার কথা বলে, তবে এর কৌশলগুলোর সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জও জড়িত। “ডেটার সত্যতা যাচাই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আপনার অনুসন্ধানের গুণগত মান আপনার ডেটার মানের ওপর নির্ভর করে,” সতর্ক করে দিয়ে বলেন হিউস্টন। “ডেটা যাচাইকরণ এবং বৈধতা সম্পর্কে সতর্ক হওয়া জরুরী।”
যেকোনো জটিল গল্পের মতো, এসএনএ-র মাধ্যমে পাওয়া জটিল তথ্যগুলো সহজে তুলে ধরাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: “কঠিন পরিভাষা এড়িয়ে চলা এবং সহজ ভাষা ব্যবহার করা নিশ্চিত করে যে পাঠকেরা আপনার খুঁজে বের করা অনুসন্ধানের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে সক্ষম,” যোগ করেন হিউস্টন।
অনুসন্ধানের জন্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক অ্যানালাইসিস (এনএসএ) ব্যবহার নিয়ে জিআইজেসি২৩-র সম্পূর্ণ ভিডিওটি দেখুন।