Harvey Weinstein après une comparution devant le tribunal de New York. Il a depuis été condamné à 23 ans de prison.
কেউ আপনাকে বা আপনার সোর্সকে অনুসরণ করলে কী করবেন
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
২০১৭ সালের কথা। দ্য নিউ ইয়র্কারের অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোনান ফারো তখন অনুসন্ধান করছিলেন হলিউডের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, হার্ভি ওয়াইনস্টিনের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে। সেই সময়টাতে নিজের চারপাশে অদ্ভুত সব ঘটনা খেয়াল করতে থাকেন ফারো, যেগুলোর একটি বিবরণ তিনি তুলে ধরেন নিজের ক্যাচ অ্যান্ড কিল পডকাস্টে। বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি, ফোনে সতর্কবার্তা—সব মিলিয়ে বিষয়গুলো এতই সন্দেহজনক হয়ে ওঠে যে তিনি নিজের সব গবেষণা একটি সিন্দুকে ভরে রেখে দেন।
কয়েক সপ্তাহ পর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন ইগর অস্ত্রোভস্কি নামের এক ইউক্রেনীয় এবং স্বীকার করেন, ফারোর ওপর যারা নজর রাখছে, তিনি তাদের একজন। আর এমন নজরদারি চালানো হচ্ছে ওয়াইনস্টিন মামলা নিয়ে কাজ করা আরেক সাংবাদিক, নিউ ইয়র্ক টাইমসের জোডি ক্যান্টরের ওপরও। তিনি জানান, ইসরায়েলের একটি বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থা তাকে ভাড়া করেছে। হুইসেলব্লোয়ার হয়ে ঘটনাটি ফাঁস করে দেওয়ার কারণও ব্যাখ্যা করেন অস্ত্রোভস্কি। বলেন, তিনি সব সময় এমন একটি সমাজে বসবাস করতে চেয়েছিলেন যেখানে গণমাধ্যম স্বাধীন, আর বুঝতে পেরেছিলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের ওপর নজরদারি সেই সমাজের ক্ষতি করবে।
যৌন নিপীড়নের মামলায় শেষ পর্যন্ত জেলে যেতে হয় ওয়াইনস্টিনকে, আর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলোর জের ধরে, বৈশ্বিকভাবে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে শুরু হয় #মিটু আন্দোলন।
তবে, অস্ত্রোভস্কির স্বীকারোক্তি থেকে উন্মোচিত হয়, অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও তাঁদের সোর্সদের ওপর শারীরিক নজরদারির হুমকি ক্রমাগত বাড়ছে। ফারো, বিষয়টি পরবর্তী সময়ে বিশদভাবে তুলে ধরেন তাঁর “ক্যাচ অ্যান্ড কিল” বইয়ে।
তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের ফাঁদে ফেলার” যে প্রবণতা, সেখানে শারীরিক ও ডিজিটাল নজরদারির অত্যাধুনিক কৌশলের প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে, যার “বিপুল বৈশ্বিক প্রভাব রয়েছে”।
গত মার্চে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টারস অ্যান্ড এডিটরস, অস্ত্রোভস্কিকে আমন্ত্রণ জানায় নিকার২১ ডেটা জার্নালিজম কনফারেন্সে। উদ্দেশ্য ছিল সাংবাদিকদের জানানো, কীভাবে তাঁরা এই ধরনের শারীরিক নজরদারি শনাক্ত ও মোকাবিলা করতে পারেন।
অভিজ্ঞ এই প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর (তিনি এখনো এই পেশায় কাজ করে যাচ্ছেন) সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, সাধারণত অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের ওপর নজরদারির নির্দেশ আসে তাঁদের সোর্স শনাক্ত করার জন্য, সম্ভাব্য প্রতিবেদনটির প্রভাব কমিয়ে আনার জন্য, রিপোর্টারের সম্মানহানি করার জন্য, প্রতিবেদনটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য, “মামলার ক্ষেত্রে সহায়ক” উপকরণ সংগ্রহের জন্য; অথবা এই সবকিছু মিলিয়ে কিছু একটা করার জন্য। অস্ত্রোভস্কি বলেন, হুমকি বা সহিংসতার ঘটনা খুবই কালেভদ্রে ঘটে। এবং তিনি তাঁর নিজের কাজের ক্ষেত্রে কোনো অবৈধ কৌশলও ব্যবহার করেননি। তবে রিপোর্টারদের ভয় দেখাতে কিছু কৌশল ব্যবহার করেছিলেন ওয়াইনস্টিন কেসে নিযুক্ত অন্য গোয়েন্দারা।
অস্ত্রোভস্কি বলেন, “মাথায় রাখুন যে, আদালতে দাখিল করার মতো নথির খোঁজে নামলে বেসরকারি গোয়েন্দারাও আইন মেনে চলেন। নজরদারির অনেক লক্ষ্যের মধ্যে একটি হলো: সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে কাজে আসবে এমন জিনিসপত্র খোঁজা। আবার কোনো নজরদারির লক্ষ্য হতে পারে, প্রতিবেদনটির কাজ থামিয়ে দেওয়া। সাংবাদিক হিসেবে, আপনি যাঁকে নিয়ে কাজ করছেন, তাঁর সম্পর্কে আপনার পূর্ণাঙ্গ বিচার-বিশ্লেষণ থাকতে হবে। যেমন: তাঁদের আর্থিক অবস্থা কেমন, এবং তাঁরা অতীতে এ ধরনের কিছু করেছেন কি না ইত্যাদি।”
অস্ত্রোভস্কির বক্তব্য থেকে যে বড় একটি বিষয় বোঝা গেছে, তা হলো: পেশাদার বেসরকারি গোয়েন্দাদেরও নিয়মনীতি ও বাজেট-স্বল্পতা নিয়ে মাথাব্যথা থাকে। এবং সাংবাদিকেরা চাইলে এই নজরদারিকে আরও ব্যয়বহুল করে তুলতে পারেন। অস্ত্রোভস্কি বলেন: যেমন, টার্গেট করা রিপোর্টার যদি তাঁর বন্ধুর বাসায় রাতে ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে নজরদারির দলকে অপরিচিত একটি রাস্তায় সারা রাত ধরে জেগে বসে থাকতে হবে। এবং এ জন্য তারা একটি বড় অঙ্কের বিল পাঠিয়ে দেবে তাদের এজেন্সি কিংবা নিয়োগদাতার কাছে।
কোনো বেসরকারি গোয়েন্দা যদি কোনো প্রতিবেদন থামিয়ে দিতে পারেন, তাহলে “এই কাজে একটি বিল্ট-ইন ‘সাফল্যের ফি’ আছে,” বলে জানান অস্ত্রোভস্কি। “কিন্তু বসরা এতই কিপটে যে, যখন তাঁরা আমাকে কোনো রেস্টুরেন্টে পাঠান, তখন বিল নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। এই কিপটেমির কারণে আমরা দুজন গোয়েন্দা দিনের পর দিন ফারোর দরজার সামনে একটি গাড়িতে সারা দিন বসে থাকতাম। আমরা সেখানে এত সময় থেকেছি যে, ফারোর বাড়ির তত্ত্বাবধায়কও জানতেন: আমরা কী সিগারেট খাই।”
গোয়েন্দারাও এই ধরনের সাধারণ কিছু ভুল করেন।
এমনই এক ভুলের কথা মনে করে অস্ত্রোভস্কি মুচকি হেসে বলেছেন, “ফারোর সন্ধান করতে করতে, আমরা কিছু সময়ের জন্য তার এক প্রতিবেশীকে রাস্তায় অনুসরণ করেছিলাম। সে দেখতে হুবহু ফারোর মতো ছিল। আমি ফারোর সেলফোন নম্বর জানতাম। তো, যাচাই করার জন্য আমি তাকে ফোন দিই এবং তিনি যখন ফোন ধরেন, তখন আমি নিশ্চিত বুঝে যাই যে, তিনি কোনো ঘরের মধ্যে আছেন এবং আমরা ভুল ব্যক্তিকে অনুসরণ করছি।”
নিকার২১ ওয়ার্কশপের মডারেটর এবং টেলিকম কোম্পানি ভেরাইজন মিডিয়ার তথ্য নিরাপত্তা বিভাগের বিশ্লেষক, শন স্পোসিটোর মতে, শারীরিক নজরদারি মোকাবিলা করার মতো কিছু দক্ষতা রিপোর্টারদের মধ্যে সহজাতভাবেই থাকে।
তিনি বলেন, “পেশাগত জীবনে আপনি যেভাবে কৌতূহল দেখান, নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও সেভাবে কৌতূহলী হয়ে উঠুন। সব সময়ই একজন ভালো রিপোর্টারের মতো চলাফেরা করুন এবং কোথাও কোনো কিছু এলোমেলো বা পরিবর্তিত মনে হচ্ছে কি না, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন।”
গোয়েন্দা নজরদারি এড়াতে চাইলে রিপোর্টাররা কী ধরনের কৌশল নিতে পারেন, তার কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন অস্ত্রোভস্কি।
গুপ্তচরদের কাজ যেভাবে কঠিন করে তুলবেন
- ডিজিটাল সুরক্ষা ও পরিচ্ছন্নতা জোরদার করার মাধ্যমে গুপ্তচরের পরিকল্পনা ভন্ডুল করে দিন। গুপ্তচররা যেন আগে থেকেই আপনার অবস্থান জেনে নজরদারির পরিকল্পনা করতে না পারে, সে জন্য আপনার কর্মপরিকল্পনা গোপন রাখুন। সিগন্যাল ও ফোটনমেইলের মতো এনক্রিপ্টেড যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন এবং ডিজিটাল পাসওয়ার্ডের ক্ষেত্রে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করুন। “আপনি যদি আপনার ডিজিটাল নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন, এবং আমরা আপনার কর্মপরিকল্পনা বা যোগাযোগ সম্পর্কে কোনো তথ্য না পাই, তাহলে আমরা বাধ্য হব আপনার শারীরিক চলাফেলার ভিত্তিতে কাজের পরিকল্পনা করতে,” বলেন অস্ত্রোভস্কি।
- বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ব্যবহার করুন—একমুখী রাস্তায় অন্যদের তুলনায় উল্টো পথে হাঁটুন। অস্ত্রোভস্কির পরামর্শ: “এমনটা করলে আমাকেও যাতায়াতের পদ্ধতি বদলাতে হবে। যেমন, বাইসাইকেল চালাতে হবে বা বাসে-ট্রেনে চড়তে হবে। আমাদের এমন পরিকল্পনা ছিল যে, ফারো যদি হেঁটে উল্টো পথে যায়, বা কোনো ক্যাব ডাকে; তাহলে রাস্তায় থাকা গুপ্তচর সেখানে একটি দুর্ঘটনার দৃশ্য তৈরি করবে এবং ক্যাবটি আটকে রাখবে যেন অন্য গুপ্তচররা গাড়ি ঘুরিয়ে আনার সময় পান। একটা সময় তো আমি আক্ষরিক অর্থেই গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে ঝাঁপ দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম।”
- তাদের নজরদারির ব্যয় বাড়িয়ে দিন। অস্ত্রোভস্কি বলেছেন, “নিজ বাড়ির বাইরে, অন্য কোথাও, যেমন কোনো বন্ধুর বাসায় রাত কাটালে, নজরদারির দলকে সারা রাত গাড়িতে সেই বাসার বাইরে জেগে বসে থাকতে হয়। ফলে শেষ পর্যন্ত তাদের বেশি টাকা খরচ হয়।”
- বেরোনোর ভিন্ন কোনো রাস্তা ব্যবহার করুন, বিশেষভাবে শপিং মলে। “আপনার যখন কোনো জরুরি বৈঠকে যেতে হবে, এবং আপনি নজরদারি ফাঁকি দিতে চান, তখন এমন একটি পরিকল্পনা করুন যেন তারা বুঝতেও না পারে যে, এটি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে। অনেকগুলো বেরোনোর রাস্তা আছে—এমন কোনো বড় ভবন এ ক্ষেত্রে আদর্শ হতে পারে। এমন কোনো ভবন বা শপিং মলে ঢুকে ভিন্ন একটি দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান এবং একটি কার-শেয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে সেই বৈঠকে চলে যান। হ্যাঁ, দিন শেষে আবার তারা আপনাকে আবার আপনার বাড়ির সামনে পেয়ে যাবে। কিন্তু আপনি কয়েক ঘণ্টার প্রাইভেসি তো পেয়ে গেলেন।”
- বিভিন্ন ভোক্তা তালিকা ও ডেটা ব্রোকার ওয়েবসাইট থেকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য মুছে ফেলুন। “আমি যদি সাংবাদিক হতাম, আর এ ধরনের কাজ করতাম; তাহলে আমি নিজেই নিজেকে ডক্স করতাম,” বলেন অস্ত্রোভস্কি। “এর জন্য গুগল ও ইয়ানডেক্স-এ যান এবং আপনার নিজের সম্পর্কে যা তথ্য আছে, তা দিয়ে সার্চ করুন। এবং সেসব জিনিস মুছে ফেলুন, যা থেকে আপনাকে সহজে খুঁজে বের করা যাবে। এবং সেসব সাইট থেকে বেরিয়ে আসুন, যেখানে আপনার সব ডেটা দেওয়া থাকে। এসব কাজের জন্য ফ্যামিলি ট্রি নাও সাইটটি খুবই উপকারী। এমন সেবা পাওয়ার জন্য হয়তো অনেক জায়গাতেই অর্থ খরচ করতে হয়। কিন্তু এটি পুরোপুরি ফ্রি এবং আপনি বিভিন্ন জায়গা থেকে নিজের তথ্য সরানোর কাজে তা ব্যবহার করতে পারেন।”
- এমনভাবে কাজ করুন যেন আপনার সম্পর্কে অনুমান করা না যায়। “আপনার রুটিন সাজান স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এতে করে আপনি আমাকে এড়াতে পারবেন না। কিন্তু আপনাকে অনুসরণ করতে গিয়ে আমাদের কাজগুলো আরও ব্যয়বহুল করে তুলতে পারবেন। আমাদের বাধ্য করতে পারবেন আরও বেশি রিসোর্স ব্যবহার করতে।”
- সোশ্যাল মিডিয়ায় কখনো নিজের কোনো পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করবেন না। “ফারো বেশ ভালো; আমাদের জন্য খুব শক্ত টার্গেট ছিল। আমি তার সোশ্যাল মিডিয়া ও ইনস্টাগ্রাম দেখতাম, এবং সেখানে শুধু অতীত ঘটনার পোস্ট ছিল। তার পরিকল্পনা বা সে কোথায় আছে, সে-সংক্রান্ত কিছুই থাকত না। সে বাড়িতেও খুব বেশি আসত না। লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকত।”
- নজরদারি যদি খুবই ধারাবাহিকভাবে হয়, তাহলে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে ঠিকানা ও পরিচয়ের জায়গাগুলোতে “মিথ্যা বর্ণনা” দিন। “কোনো ছুটি কাটিয়ে আসার পর কয়েক সপ্তাহ আপনার ছবিগুলো জমিয়ে রাখুন। তারপর অন্য কোনো সময়ে সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করুন, যেন মানুষ ভাবে আপনি এখনো প্যারিসে বা অন্য কোনো জায়গায় ছুটি কাটাচ্ছেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করুন। ভিন্ন কোনো ঠিকানা দিয়ে কোনো মেইলের জন্য নিবন্ধন করুন। ইয়েল্প ডটকমে এমন কোনো ব্যবসার কথা যোগ করুন, যাতে মনে হয় আপনার ঠিকানা অন্য কোথাও, যদিও আসলে আপনি সেখানে নেই। বাড়ি বদলের পরও আপনার পুরোনো ঠিকানা ব্যবহার করুন।”
কীভাবে বুঝবেন, আপনাকে অনুসরণ করা হচ্ছে
- আপনি যেভাবে গণপরিবহন বদলাচ্ছেন, ঠিক সেভাবেই অন্য কেউ গণপরিবহন বদলাচ্ছে কি না, খেয়াল করুন। “তবে এটি সাধারণভাবে নিন,” বলেন অস্ত্রোভস্কি।
- আপনি কোনো নিরাপত্তাসংক্রান্ত লাইনে দাঁড়ানোর সময় কেউ সেই লাইন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে কি না, খেয়াল করুন। এর মধ্যে থাকতে পারে মেটাল ডিটেক্টরের সামনে যাওয়ার লাইন এবং আদালত-বিমানবন্দরের চেকপয়েন্ট।
- রেস্টুরেন্টে বসে মেনু পড়ার ভান করুন এবং অন্যদের খেয়াল করুন। দেখুন, কেউ বিশেষ কিছু করছে কি না। যেমন, আপনার মতোই মেনু পড়ার ভান করছে কি না। “হাঁটার সময়, মাঝেমধ্যেই বাঁক নেবেন। তবে কোনো ব্লকের মধ্যে চক্রাকারে ঘুরবেন না। আঁকাবাঁকাভাবে এগিয়ে যাবেন এবং পেছনে কেউ আছে কি না, খেয়াল করবেন।”
- মানুষের জুতার দিকে নজর দিন। “এই ধরনের গুপ্তচরবৃত্তির কাজে জুতা বদলানো খুব কঠিন। এখান থেকে আপনি ভালো ইঙ্গিত পেতে পারেন যে, সেই দিনটিতে মানুষটি কী করার পরিকল্পনা করছেন। [ভিন্ন ধরনের বা অনুপযুক্ত কোনো জুতা] কেউ পরেছে কি না, খেয়াল করুন।” অস্ত্রোভস্কি বলেছেন, “নজরদারির সময়, আমি গ্রীষ্মকালে আরামের জন্য কালো স্নিকার পরি এবং শীতে পরি কালো হাইকিং বুট।”
- কোনো বন্ধুকে বলুন আপনার পেছনে থাকা গাড়িগুলো পর্যবেক্ষণ করতে। বিশেষভাবে মোড়গুলোতে। “কখনো কখনো, একাধিক গাড়ি দরকার হলেও খরচ কমানোর জন্য আমরা মাত্র একটি গাড়ি নিয়েই কাজ করি। একটি গাড়ি নিয়ে কাজ করলে আপনি আমাদের শনাক্ত করার সুযোগ পাবেন। পেছনে থাকা গাড়িটি আপনি মোড় ঘোরানোর সময় সামনে চলে গেলেও, কয়েক ব্লক পর আবার আপনার পেছনে হাজির হলো কি না—এমন ইঙ্গিতের দিকে খেয়াল রাখুন। এমনটা যদি দুবার ঘটে, তাহলে নিশ্চিত হয়ে যাবেন যে, আপনাকে অনুসরণ করা হচ্ছে।”
- রাশ আওয়ারে এমন পরিস্থিতি তৈরি করুন যেন নজরদারির দল আপনার কাছাকাছি আসতে বাধ্য হয়। “আপনি যদি একটি জনাকীর্ণ সাবওয়েতে থাকেন, তাহলে আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ জানার জন্য আমাদেরকে আপনার কয়েক হাতের দূরত্বে থাকতে হবে। এ রকম পরিস্থিতিতে আপনি আমাদের ভালোভাবে খেয়াল করতে পারবেন। আমরা ভিড়ের মধ্যে সেটি বুঝতে পারব না।
- নজরদারি ও ডিজিটাল পদচিহ্ন মুছে দেওয়ার কায়দাকানুন নিয়ে বিভিন্ন বইপত্র পড়ুন। এর মধ্যে আছে মিশেল বাজেলের লেখা, “ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স টেকনিকস” ও “এক্সট্রিম প্রাইভেসি: হোয়াট ইট টেকস টু ডিজাপিয়ার ইন আমেরিকা।” “এই বইগুলোতে দারুণ কিছু পরামর্শ আছে,” বলে জানান অস্ত্রোভস্কি।
নজরদারি শনাক্ত করতে পারলে কী করবেন
- যদি কোনো ক্ষতি বা ঝুঁকির আশঙ্কা করেন, তাহলে পুলিশকে জানান। “নিজেকে বিপদগ্রস্ত মনে করলে অবশ্যই সোর্স ও সম্পাদকদের সাবধান করে দেওয়া উচিত। আপনি যদি তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বিপদের ঝুঁকি অনুভব করেন, তাহলে আপনার পুলিশকে জানানো উচিত। তবে পুলিশকে জানাতে গেলে, আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট বর্ণনার জবাব দিতে হবে। যেমন, গাড়ির রং, মডেল কী ছিল বা লাইসেন্স নম্বর কত ছিল, কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল কি না, কোথায় এবং কখন তাদের প্রথম দেখতে পেয়েছিলেন ইত্যাদি।”
- যারা আপনাকে অনুসরণ করছে, কখনোই তাদের সামনে যাবেন না। এবং তাদের বুঝতেও দেবেন না যে, আপনি তাদের ধরে ফেলেছেন। “কখনোই আমার মতো মানুষদের খুব বেশি রাগিয়ে দেবেন না! নজরদারিতে থাকা দলটিকে কখনোই বুঝতে দেবেন না যে, আপনি তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে গেছেন। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তা না হলে পরিস্থিতি হুমকি বা সহিংসতার দিকে চলে যেতে পারে। কখনোই আমার মতো গুপ্তচরদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়বেন না বা আঙুল দেখাবেন না। তবে আপনি এমনি এমনিই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারেন। এভাবে সেই গুপ্তচরের দলকে ক্লান্ত করে দিতে পারেন, যেন তারা শৌচাগারে যাওয়ার বা একটু জিরিয়ে নেওয়ারও সময় না পায়।”
- বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলো কোনো ফেডারেল আদালতে বা বিমানবন্দরের ভেতরে আয়োজন করুন। যেখানে নিরাপত্তা চেকপয়েন্ট পেরিয়ে আসতে হয়। “ফেডারেল কোনো আদালতে কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে সেখানে গুপ্তচররা নজরদারির ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ভেতরে নিয়ে যেতে পারবে না। কারণ, তাদেরকে সেই নিরাপত্তা চেকপয়েন্টের মধ্যে দিয়ে যেতেই হবে।”
- আপনার ওপর যদি কোনো সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা নজরদারি করে, তাহলে আইনজীবী ও মানবাধিকার-সংক্রান্ত অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করুন। “আপনার যদি মনে হয়, কোনো রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আপনাকে অনুসরণ করছে, তাহলে যেতে পারেন সিটিজেন ল্যাব ও ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশনের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে। যদি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রে পুলিশ আপনাকে অনুসরণ করে, তাহলে আপনার দ্রুত সেখানকার দূতাবাসে ফিরে যাওয়া উচিত। তা না হলে আপনি গুরুতর ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন।”
- সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এনক্রিপ্টেড পদ্ধতিতে। এবং যদি খুবই প্রয়োজন হয়, তাহলে মাত্র একবার দেখা করুন। “যদি আপনার সূত্রের সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করতেই হয়, তাহলে সেই বৈঠকেই তাকে বিস্তারিতভাবে জানিয়ে দিন, কীভাবে নজরদারি এড়িয়ে যোগাযোগ করতে হবে। সোর্স যেন খুব বেশি ঘাবড়ে না যায়, সেটিও আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। দেখা করার জন্য এমন জায়গা বেছে নিতে পারেন, যেটি কোনো অচেনা মানুষের পক্ষে খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন হবে।”
- নজরদারি সম্পর্কে সোর্সদের সতর্ক করে দেওয়ার জন্য একটি সহজ শব্দ বা কোড তৈরি করে রাখুন। “এর সবচেয়ে সাধারণ কৌশল হলো: তাদেরকে ফোন করে এমন নামে ডাকা, যা দিয়ে সচরাচর তাদের ডাকা হয় না। যদিও সেটি তাদের সত্যিকার নামেরই অংশ। যেমন, প্রথম নামের বদলে আমি হয়তো আপনার পদবি ধরে ডাকলাম। তখন সোর্স নিশ্চিতভাবে জেনে যাবে যে, কোনো গোলমাল আছে। তারা জেনে যাবে যে, কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলার পরিকল্পনা থাকলেও তা এখন করা যাবে না,” বলেন অস্ত্রোভস্কি। তিনি যখন প্রথম ফারোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তখন তিনি ফারোকে একটি ক্রিপ্টিক, অস্বাক্ষরিত বার্তা পাঠিয়েছিলেন “দাগরোধী ফ্রাইং প্যান” সম্পর্কে। সেটি ছিল এমন একটি বার্তা, যা ফারো সম্প্রতি একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ব্যবহার করেছিলেন। রোনান ফারো তাঁর পডকাস্টে বলেছেন, বার্তাটি যে তাঁকে অনুসরণ করা কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে এসেছে, এটি বোঝার জন্য এই সাংকেতিক ভাষাটিই যথেষ্ট ছিল ।
- এ ব্যাপারেও সতর্ক থাকুন যে, গুপ্তচররা সাংবাদিক সেজেও আপনার সোর্সদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। “গুপ্তচরবৃত্তির এজেন্সিগুলো অন্য সাংবাদিক বা সোর্সদের কাছ থেকে তথ্য জানার জন্য সাবেক সাংবাদিকদের ভাড়া করে এবং সক্রিয় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করানোর ভান করে। এমনকি এমন মানুষদেরও ভাড়া করা হয়, যারা চাকরির জন্য সেই রিপোর্টারের সাক্ষাৎকার নেবে। আমাকে একবার বলা হয়েছিল এক সাংবাদিকের ভুয়া সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য কাউকে নিয়োগ দিতে,” বলেন অস্ত্রোভস্কি।
নিকার২১ সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী? পুরো সময়সূচির তালিকা পেয়ে যাবেন এখানে। নজরদারি এড়ানোর এই সেশন রেকর্ড করা হয়নি। তবে রেকর্ড করা অন্য সেশনগুলো ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত দেখা যাবে এই লিংকে গিয়ে। এখানে অবশ্য আপনাকে নিবন্ধন করতে হবে।
আরো পড়ুন
ডিজিটাল সেল্ফ-ডিফেন্স ফর জার্নালিস্টস: এন ইন্ট্রোডাকশন
ডিজিটাল নিরাপত্তা: সাংবাদিকদের যা যা জানা দরকার
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএন-এর রিপোর্টার। দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসে কাজ করেছেন প্রধান প্রতিবেদন হিসেবে। বিদেশী প্রতিনিধি হিসেবে রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন বিশ্বের দুই ডজনেরও বেশি দেশ থেকে।