প্রবেশগম্যতা সেটিংস

বাংলাদেশের সেরা অনুসন্ধান
বাংলাদেশের সেরা অনুসন্ধান

লেখাপত্র

বিষয়

সম্পাদকের বাছাই: ২০২১ সালে বাংলাদেশের সেরা অনুসন্ধান

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

বাংলাদেশের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

২০২১ সাল, বাংলাদেশের সাংবাদিকতার জন্য নতুন কোনও ভালো খবর বয়ে আনেনি। এসময় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে (রোজিনা ইসলামের গ্রেপ্তার সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা)  রিপোর্টাররা গ্রেপ্তার হয়েছেন, দমনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যম স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করেছে, এবং সর্বোপরি, সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য ও চাকরির নিশ্চয়তা- দুভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে মহামারি।

বৈশ্বিকভাবে গণমাধ্যমের নিরাপত্তা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান প্রেস এমব্লেম ক্যাম্পেইনের মতে, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে দেশে কমপক্ষে ৬৮ জন সাংবাদিক মারা গেছেন। সবচেয়ে আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছিল অন্যতম। আর্ন্তজাতিক অলাভজনক সংগঠন রিপোর্টারস্ উইদাউট বর্ডার্সের সর্বশেষ বিশ্ব গণমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১৫২ তে। সার টেনে সংগঠনটি উদ্বেগের সাথে বলেছে, বাংলাদেশে “দুর্নীতি বা স্থানীয় অপরাধী চক্র নিয়ে অনুসন্ধানে জড়িত রিপোর্টাররা ভয়াবহ নির্মমতার শিকার হন, যা কখনো কখনো তাদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।” বাংলাদেশের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে বিচার করতে হবে গণমাধ্যম মালিকানা, মামলা আতঙ্ক, সেলফ-সেন্সরশিপ, এবং ভঙ্গুর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মত বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে।

 এত প্রতিবন্ধকতার পরও গত ১২ মাসে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, মুদ্রা পাচার, অনিয়ম ও প্রাতিষ্ঠানিক অবহেলার মত ঘটনা উন্মোচনের চেষ্টা করে গেছেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা। বিদায়ী বছরে বাংলাদেশের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রধান বিষয় ছিল, যথারীতি দুর্নীতি। কিন্তু ২০২১ সালের সেরা স্টোরি বাছাই করতে গিয়ে শুধু অনুসন্ধানের গভীরতা বা কৌশল নয়, কোথাও কোথাও বিষয়বস্তুর নতুনত্ব, প্রভাব এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ মনোযোগের মত বিষয়কেও আমরা আমলে নিয়েছি। – জিআইজেএনের বাংলা সম্পাদক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী 

কানাডায় নিরাপদ আবাস

ছবি: স্ক্রিনশট (চ্যানেল টুয়েন্টিফোর)

বিদেশে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের সম্পদ ও সংশ্লিষ্টতা – এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিলাসবহুল জীবনযাপন – অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য একটি উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করেছে। এই অনুসন্ধানে চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের অনুসন্ধানী দল সার্চলাইট দাবি করেছে, এক বাংলাদেশি সংসদ সদস্যের স্ত্রী কানাডায় লক্ষাধিক ডলারের সম্পদ ক্রয় করেছেন এবং সেই সাংসদ মহামারিতে নিজস্ব নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে সেখানে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। নিম্ন মধ্যবিত্ত একটি পরিবারে জন্ম নিয়ে, শুধু রাজনীতি করে, একজন ব্যক্তি কীভাবে বিপুল সম্পদের মালিক বনে যান – সেই যাত্রাটিও তারা এখানে তুলে ধরেছে। এই প্রতিবেদনে সম্পত্তির রেকর্ড ও সোশ্যাল মিডিয়ার ছবি বিশ্লেষণের পাশাপাশি গোপন ক্যামেরা দিয়ে দেশে তার আরেকটি বিলাসবহুল বাড়ীর চিত্রও দর্শকের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। অনুসন্ধানটি বাংলাদেশে ব্যাপক সাড়া জাগায় এবং শুধু ইউটিউবে ভিডিওটি ১৭ লাখের বেশি বার দেখা হয়েছে। কানাডার সিটিভির অনুসন্ধানী ইউনিট ডব্লিউ ফাইভ এই অনুসন্ধানে সহযোগিতা করেছে।

সাইবার নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

ছবি: শাটারস্টক

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য অন্যতম অন্তরায় বলে মনে করা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে, যেখানে নেতিবাচক প্রোপাগান্ডার জন্য ১৪ বছর পর্যন্ত সাজার বিধান আছে। জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলো, দুই বছর ধরে ঢাকা সাইবার ট্রাইবুনালে (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও এই আইনের পূর্বসূরী আইসিটি আইনের আওতায় দায়েরকৃত মামলাসহ) নথিভুক্ত প্রায় ২৬০০ মামলার রেকর্ড সংগ্রহ করে। ৭৬৮টি নিস্পত্তিকৃত মামলার গভীরে অনুসন্ধান করে তারা তুলে ধরে, ৯৭ শতাংশের ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের কোনও সাজা হয়নি। কারণ, হয় অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি, অথবা আসামিরা অব্যাহতি পেয়েছেন। 

সাইবার আইনগুলো যে কথা বলার অধিকারকে সংকুচিত করছে, এবং এর অপপ্রয়োগের কারণে যে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন – এমন অভিযোগকে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করেছে এই ডেটাভিত্তিক প্রতিবেদন। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তদের যে  আর্থিক, মানসিক ও শারীরিক ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাও তুলে এনেছে এই ধারাবাহিক। অন্য দুটি পর্বে, সাইবার মামলার ধরনগতভৌগলিক প্রবণতা তুলে ধরা হয়। বেরিয়ে আসে, অধিকাংশ মামলার বিষয়বস্তু হয় মানহানি, নয়তো মিথ্যা সংবাদ বা অশ্লীল দৃশ্য প্রচারের অভিযোগ। বলে রাখা ভালো, ২০২০ সাল থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা ৬৬৮টি মামলা বিশ্লেষণ করে বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ দেখতে পেয়েছে, এদের মধ্যে ২০ শতাংশের বেশি সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে।

নিঃশ্বাসে সীসার বিষ

Ekattor lead pollution

ছবি: স্ক্রিনশট (একাত্তর টিভি)

একাত্তর টেলিভিশনের এই অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কাছেই দুই ডজনেরও বেশি কারখানা থেকে বেরোনো সীসা কিভাবে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠেছে। কোনও রকম অনুমোদন এবং সরকারি তত্ত্বাবধান ছাড়াই গড়ে ওঠা এসব কারখানা, পুরনো লিড-অ্যাসিড ব্যাটারি থেকে সীসা সংগ্রহ করে। রিপোর্টটিতে তুলে ধরা হয়, চুল্লির ধোঁয়া এবং কারখানা থেকে নিঃসরিত বিষাক্ত সীসার কারণে স্থানীয় শিশুদের শরীরে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে পাঁচ থেকে ১৯ গুণ পর্যন্ত বেশি সীসার অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে, এবং এটি এলাকার অধিবাসী, বিশেষ করে প্রসূতি ও নবজাতকের জন্য কত বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে।  

ড্রোন ছবি ব্যবহার করে পরিবেশের ওপর বিষাক্ত সীসার বিরূপ প্রভাবের সচিত্র প্রমাণও তুলে এনেছে পাঁচ পর্বের এই প্রতিবেদন। রিপোর্টার সরেজমিনে গিয়ে দেখিয়েছেন, এলাকাটিতে কীভাবে রাতের অন্ধকারে ব্যাটারি পোড়ানো হয় এবং তিনি এক কারখানা মালিকেরও মুখোমুখি হন। তুলে ধরেন, কম দামী ব্যাটারির অবৈধ ব্যবসা এবং  চীনা নাগরিকদের বিনিয়োগ এই ধরনের কারখানার প্রসারে কতটা ভূমিকা রেখেছে। ধারাবাহিকটি প্রকাশিত হওয়ার পর ঢাকার ডেমরা এলাকার ১৬টি অবৈধ সীসা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গুঁড়িয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে এরকম অন্তত ৫০০ টি কারখানা রয়েছে।

স্বাস্থ্য যখন মুনাফার বলি

Bangladesh clinic diagnosing profits over women's health

চিত্র: স্ক্রিনশট (নিউজবাংলাটুৃয়েন্টিফোর ডট কম)

২০২০ সালে, ফ্রিল্যান্স রিপোর্টার জেসমিন পাপড়ি প্রায় চার মাস ধরে বাংলাদেশের দক্ষিণপূর্ব উপকূলে হাজার হাজার নারীর শরীরে লবণাক্ত পানির প্রভাব নিয়ে অনুসন্ধান করেছিলেন। গত বছর তিনি সেই উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর কাছে ফিরে যান এবং অনুসন্ধান করেন, এই নারীদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে একটি দুষ্ট স্বাস্থ্যব্যবস্থা কিভাবে ফুলে-ফেঁপে উঠছে।

এবার পাপড়ি ৭৫জন বিভিন্ন বয়সী নারীর সাক্ষাৎকার নেন, যারা লবণাক্ত পানি থেকে বিভিন্ন রোগ ও সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জরায়ু ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি দেখতে পান, চিকিৎসার তাগিদে অনেক নারীকে হিস্টেরেক্টমি বেছে নিতে হয়েছে, অথচ বেশ কিছু ঘটনায় অস্ত্রোপচারের আগে তাদের যথাযথ মেডিকেল পরীক্ষাই করা হয়নি। ব্যয়বহুল এই সার্জারিতে গোটা জরায়ু কেটে ফেলে দিতে হয়। মেডিকেল পরীক্ষার রিপোর্টের ফলাফল, রোগের ইতিহাস, ও বিশেষজ্ঞ পর্যালোচনার ভিত্তিতে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, এই ব্যবস্থার ফলে কোন ধরনের তত্ত্বাবধান ছাড়াই গড়ে ওঠা ক্লিনিকের ব্যবসা বাড়ে এবং হাসপাতাল মালিক, সার্জন ও গ্রাম্য চিকিৎসকদের পকেট ফুলে ফেঁপে উঠে। এই চিকিৎসকরা বিকল্প পন্থায় না গিয়ে তুলনামূলক ব্যয়বহুল সার্জারির পরামর্শ দিয়ে থাকে।

মহাসড়ক নিলামে

Dhaka highway for sale

ছবি: স্ক্রিনশট (যমুনা টিভি)

আপনি হয়ত ভিক্টর লুস্টিগের কথা শুনে থাকবেন, যিনি আইফেল টাওয়ার বিক্রি করেছিলেন। কারসাজির বিচারে তুলনামূলক ছোট মাত্রার, তবে নাটকীয়তায় ভরা, এমনই এক ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি মহসড়ককে ঘিরে। সম্প্রতি এই রাস্তার একটি অংশ “বিক্রি” হয়েছে, এবং ক্রেতা সেই জায়গা বন্ধক রেখে ১৮ লাখ ডলার সমপরিমান অর্থ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। ব্যাংকটি কোনরকম যাচাই বাছাই ছাড়া ঋণ দিয়েছে এবং পরবর্তীতে এই অর্থ উদ্ধারে মরিয়া হয়ে লাগোয়া আরেকটি জমি নিলামে তুলে দিয়েছে। বছর দুয়েক ধরে আদালতে এই যুদ্ধ চলছে, তবে যমুনা টেলিভিশনের অনুসন্ধানী দল এই কেলেঙ্কারি জনসমক্ষে এনেছে।

পঞ্চাশ বছরের ভূমি রেকর্ড বিশ্লেষণ এবং সরকারি কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে রিপোর্টার এই অনুসন্ধানে দাবি করেন, অপরাধটির সঙ্গে কমপক্ষে তিনটি সরকারি দপ্তর জড়িত ছিল। যমুনা টিভির অনুসন্ধানী দল থ্রি-সিক্সটি ডিগ্রী, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ক্রেতা, বিক্রেতা, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদেরও সনাক্ত করেছে।

ভাঙার জন্য গড়া

PM Housing for the Poor

ছবি: স্ক্রিনশট (ডেইলি স্টার)

আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ভালো ছিল: বাংলাদেশের গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারগুলোর জন্য স্থায়ী আবাসের ব্যবস্থা করা। কিন্তু এক বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের অধীনে তৈরি দুই কক্ষবিশিষ্ট বাড়িগুলোর অনেকগুলোতে ফাঁটল ধরে এবং এমনকি বেশ কিছু ধ্বসে পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে এবং স্থানীয় প্রশাসনের বাস্তবায়নাধীন একটি প্রকল্পের এমন শোচনীয় অবস্থা নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক ছড়ায়।

এমন প্রেক্ষাপটে বাড়িগুলো ভেঙ্গে পড়ার কারণ খতিয়ে দেখে দ্য ডেইলি স্টার। সরেজমিন পরিদর্শন এবং ঠিকাদার, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ভুক্তভোগী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে, তারা একটি উপসংহারে পৌঁছায়: বাড়িগুলো যেন তৈরিই করা হয়েছিল ভেঙ্গে পড়ার জন্যে। রিপোর্টে উঠে আসে: প্রকল্প বাজেট থেকে (মোটাদাগে অপর্যাপ্ত) বাস্তবায়নের সময়সীমা (অতি উচ্চাকাঙ্খী) বা নকশার ত্রুটি (প্রকল্পের জন্য বাছাই করা জায়গাগুলো ছিল নিচু এলাকা) পর্যন্ত, প্রকল্পটি আগাগোড়াই ছিল সমস্যা জর্জরিত। অন্তত একটি জেলায় শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিল, বাড়িগুলো ভেঙে পড়তে পারে, কিন্তু এই আপত্তি আমলে না নিয়ে তাদেরকে কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়।

জনসাধারণের সমালোচনার মুখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিষয়টি তদন্ত করে এবং সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, এক লাখ বিশ হাজারের বেশি বাড়ির মধ্যে মাত্র কয়েকটিতে অতিবর্ষণের কারণে ফাটল ধরেছে, খুব সামান্য দুর্নীতি হয়েছে এবং গণমাধ্যমের খবরে আসা ক্ষয়ক্ষতির অধিকাংশই দুস্কৃতিকারীদের কাজ। আর বিরোধী দল এই দাবির সমালোচনায় বলেছে, এখন রাষ্ট্র দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। 

লাগামহীন গণমাধ্যম

Rogue Media illustration

ছবি: স্ক্রিনশট (ডেইলি স্টার)

ইন্টারনেট প্রসারের কারণে বাংলাদেশে নিউজ পোর্টাল থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যম নির্ভর চ্যানেলসহ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে। তবে এদের সবগুলোই যে সমাজের জন্য শুভ শক্তি হিসেবে কাজ করছে, তা নয়। দেশের তিনটি শীর্ষ সংবাদমাধ্যম আলাদাভাবে এমন বেশ কিছু দুর্বল সংবাদ প্রতিষ্ঠান এবং তাদের কার্যক্রম গভীরভাবে অনুসন্ধান করেছে। মাছরাঙা টিভির এই অনুসন্ধানে উঠে আসে, কথিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও পত্রিকাগুলো কীভাবে নিজেদের আর্থিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য চাঁদাবাজি ও প্রতারণা করে। এখানে দেখা যায়, একজন ব্যবসায়ী একটি ছোট্ট ব্যবসায়িক অফিস থেকে একইসাথে একটি সংবাদপত্র, একটি নিউজ সাইট, ও একটি সংবাদ চ্যানেল চালান। রিপোর্টার নিয়োগ না দিয়ে পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তাদেরকে দিয়ে মানুষকে হয়রানি করান এবং অন্য একটি প্রতিষ্ঠান মানহানিকর রিপোর্ট প্রকাশের হুমকি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করেন।  

যমুনা টিভিডেইলি স্টারের অন্য দুই অনুসন্ধানে ইন্টারনেট ভিত্তিক টেলিভিশনের (আইপিটিভি) কার্যক্রম তুলে এনেছে। উঠে এসেছে, এসব প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকসহ রিপোর্টারদের বেতন দেয়া হয় না, বরং স্পন্সরড কন্টেন্টের নামে তথাকথিত সাংবাদিকদের আয় করা অর্থ থেকে টাকা কেটে রাখে। এমনও এক প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়, যেটি নারী ও ব্যবসায়ীদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি প্রকাশের হুমকি দিয়েছে।

স্বপ্নের শিকার

Third Pole - Rohingya migrants

ছবি: স্ক্রিনশট (থার্ড পোল)

২০১৮ সালের মার্চ থেকে এক বছরে মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রায় ১৬০০ সদস্য বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছেন। পরের বছরই সংখ্যাটি প্রায় ১০ গুণ বেড়ে যায়। পাচার হওয়া এই মানুষদের একটি বড় অংশই নারী ও শিশু বলে জানাচ্ছে দ্য থার্ড পোলে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি। এখানে তুলে ধরা হয়েছে কক্সবাজার থেকে অবৈধপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাতে গিয়ে কীভাবে শত শত মানুষ মারা যাচ্ছেন অথবা জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন। এই প্রতিবেদনে ডেটার বিশ্লেষণ, যাত্রাপথের বিবরণ, পাচারকারীদের বক্তব্য, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা – এমন অনেক কিছুই রয়েছে। তবে ভুক্তভোগীদের উন্নত জীবনের স্বপ্ন এবং সেটি অর্জনের জন্য তাদের মরিয়া চেষ্টাকে ধারণ করার মাধ্যমেই অনুসন্ধানটি অনন্য হয়ে উঠেছে। এটি  তুলে ধরেছে, পাচারকারী ও সংগঠিত অপরাধীরা কীভাবে তাদের সেই স্বপ্নকে ধুলিস্যাৎ করে দিচ্ছে। গত কয়েক বছরে রোহিঙ্গা মানব পাচার নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে অনেক রিপোর্ট হয়েছে। সেখানে মূলত অপরাধের ধরন ও অপরাধীদের নিয়েই আলোকপাত হয়েছে বেশি। এই স্টোরি একটি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে: প্রাণ হারাতে হতে পারে জেনেও তারা কেন দেশত্যাগের ঝুঁকি নিচ্ছেন।

আরও পড়ুন

মানব পাচার অনুসন্ধান: চোখের সামনেই লুকোনো যে অশুভ শক্তি

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় জরিপ: যে খবর এড়িয়ে যাওয়া কঠিন

সম্পাদকের বাছাই: ২০২০ সালে বাংলাদেশের সেরা অনুসন্ধান


মিরাজ আহমেদ চৌধুরী, জিআইজেএন-এর বাংলা ভাষার সম্পাদক। তিনি জিআইজেএন-এর সদস্য সংগঠন, গণমাধ্যম উন্নয়ন সংস্থা, এমআরডিআই-এর হেড অব প্রোগ্রাম অ্যান্ড কমিনউনিকেশনস হিসেবে কাজ করেছেন। সাংবাদিকতায় তাঁর রয়েছে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা, যার বড় অংশই টেলিভিশনে।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

আইনি সুরক্ষা ও জরুরি সহায়তা সংবাদ ও বিশ্লেষণ

হয়রানিমূলক মামলার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বার্তাকক্ষের পাশে দাঁড়াচ্ছে রিপোর্টার্স শিল্ড

অনেকটা শূন্য থেকেই গত বছর যাত্রা শুরু করা রিপোর্টার্স শিল্ড বিশ্বেজুড়ে সংবাদমাধ্যমগুলোর পাশে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছে। অলাভজনক সংস্থাটি স্ট্র্যাটেজিক ল-স্যুটস অ্যাগেইনস্ট পাবলিক পার্টিসিপেশন—সংক্ষেপে স্ল্যাপের (জনস্বার্থ বিরোধী কৌশলগত মামলা) বিপরীতে আর্থিক ও প্রয়োজনীয় সমর্থন দিয়ে থাকে। স্ল্যাপ মূলত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিকে নিরুৎসাহিত আর অনুসন্ধানী বার্তাকক্ষকে ধ্বংসের হাতিয়ার হিসেবে প্রয়োগ করা হয় ।

data journalism missing piece mistake

ডেটা সাংবাদিকতা সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ডেটা সাংবাদিকতার ১০ সাধারণ ভুল

যে কোনো বিষয়ে জোরালো তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে ডেটা সাংবাদিকতা পুরো সংবাদের জগতে সাড়া ফেলে দিয়েছে। কিন্তু ডেটা সাংবাদিকতা কি সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে? জানতে পড়ুন রোয়ান ফিলিপের বিশ্লেষণ।

BBC Newsnight NHS investigations lessons learned

কেস স্টাডি

যেভাবে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যসেবা কেলেঙ্কারির স্বরূপ উন্মোচন করেছে বিবিসি নিউজনাইট

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিয়ে ছোট একটি অনুসন্ধানের পরিকল্পনা করেছিল বিবিসি নিউজনাইট। কিন্তু পরবর্তীতে এক বছরব্যাপী অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নানাবিধ অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার বিস্তারিত চিত্র। পড়ুন, পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানটির নেপথ্যের গল্প ও অভিজ্ঞতা-পরামর্শ।

Studio, headphones, microphone, podcast

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ঘুরে আসুন ২০২৩ সালের বাছাই করা অনুসন্ধানী পডকাস্টের জগত থেকে

নানাবিধ সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে প্রকাশিত হয়েছে সাড়া জাগানো কিছু অনুসন্ধানী পডকাস্ট। এখানে তেমনই কিছু বাছাই করা পডকাস্ট তুলে এনেছে জিআইজেএনের বৈশ্বিক দল।