প্রবেশগম্যতা সেটিংস

Image: GIJN

লেখাপত্র

বিষয়

ব্যক্তিগত বন্দিশালা, ওয়াটার মাফিয়া, ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ: ২০২৩ সালে পাকিস্তানের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

পাকিস্তান দুই বছরে বিশেষ করে অর্থনীতি ও রাজনীতি উভয় ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ ও উত্থান-পতনের সম্মুখীন হয়েছে। এর প্রভাবে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোও বর্ধিত রাজনৈতিক চাপ ও ব্যাপক সেন্সরশিপের মুখে পড়েছে।

সাংবাদিকদের জন্য রাজনৈতিক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে কাজ চালিয়ে যাওয়া কতটা কঠিন ছিল বিভিন্ন ঘটনা তার ওপর আলোকপাত করে, যেমন ২০২২ সালের শেষের দিকে কেনিয়াতে স্বনামধন্য পাকিস্তানি সাংবাদিক ও টেলিভিশন উপস্থাপক আরশাদ শরীফের সন্দেহজনক মৃত্যু। এরপর গত বছর বিমানবন্দর থেকে সাংবাদিক, উপস্থাপক ও ইউটিউব ক্রিয়েটর ইমরান রিয়াজ খানের গ্রেপ্তারের পর গায়েব হওয়া। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে লাহোর আদালতকে বলা হয় যে, তাকে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তবে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত তিনি চার মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন।

প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও বছর জুড়ে সাড়াজাগানো সব প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে, আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক গল্প সামনে এনেছে। আর স্থানীয় সাংবাদিকরাও তাদের সাধ্যমতো গণ্ডির বাইরে গিয়ে চলমান ঘটনাগুলো তুলে ধরেছেন।

সাংকেতিক বার্তা

Former Pakistani Prime Minister Imran Khan, 2023

২০২৩ সালের মে মাসে একটি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ছবি: শাটারস্টক

পাকিস্তানের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকটের অন্তর্মূলে রয়েছে ২০২২ সালের এপ্রিলে ইমরান খানের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুতির ঘটনা। পরবর্তীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ইমরান খান সবসময়ই দাবি করেছেন যে, বিরোধী দল ও মার্কিন সরকারের মধ্যে যোগসাজশের কারণে তাকে জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। একটি সাংকেতিক বার্তার ওপর ভিত্তি করে দাবিটি করেন তিনি। কূটনৈতিক বার্তাটি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রদূতের মধ্যকার একটি বৈঠকের বিবরণ তুলে ধরে। যেখানে মার্কিন কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে যদি ইমরান খানকে অপসারণ করা সম্ভব হয় তবে তারা এটিকে স্বাগত জানাবে।

গত দুই বছর ধরে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভূখণ্ড ঘিরে যে আলোচনাটি বারবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিল, কূটনৈতিক ওই বার্তাটি সে বিতর্কটিকে উস্কে দেওয়ার পাশাপাশি রীতিমতো আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়। সামরিক উচ্চ মহলের একটি সূত্র থেকে নথি প্রাপ্তির দাবি করে আমেরিকার অলাভজনক সংবাদসংস্থা দ্য ইন্টারসেপ্ট নথির একটি অংশ প্রকাশ করে, যদিও এটি পাকিস্তানের কোনো সাংবাদিকের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়নি। প্রকাশিত নথিটি ইমরান খানের দাবিকে সমর্থন করে কিনা তা নিয়ে এখনও বিতর্ক জারি আছে। তবে ২০২৩ সালে পাকিস্তান সম্পর্কিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিবেদনের একটি ছিল এটি। ইমরান খান ও তার সমর্থকরা সবসময় দাবি করে আসছেন কূটনৈতিক ওই বার্তাটি তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। 

বেলুচিস্তানের গোপন কারাগার

Dawn - Private Prisons in Balochistan

ছবি: স্ক্রিনশট, ডন

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, কয়েকজন ব্যক্তিকে একটি গোপন কারাগারে হত্যা করা হয়েছে। অভিযোগ ওঠে, গোপন ওই কারাগারটির মালিক প্রাক্তন সংসদ সদস্য ও স্থানীয় উপজাতীয় এক নেতা — যিনি স্থানীয়দের কাছে সরদার নামে পরিচিত। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওর মাধ্যমে বিষয়টি সামনে আসে, যেখানে একজন নারীকে তার জীবন ভিক্ষা চাইতে দেখা যায়।

ডন পত্রিকায় মুহম্মদ আকবর নোটজাইয়ের অনুসন্ধানে ঘটনাটি পরীক্ষা করা হয়: যাদের মৃতদেহ পাওয়া গেছে তারা কারা ছিল? ভিডিওতে কী ওই একই ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে? আর এ কাজটি করতে গিয়ে, তিনি এমন একটি বিষয়ের ওপর অনুসন্ধান করতে সক্ষম হন, যা নিয়ে রিপোর্ট করাটা অত্যন্ত কঠিন ছিল: বেলুচিস্তানে স্থানীয় উপজাতীয় নেতাদের গোপন কারাগারগুলোর ব্যাপকতা, এ কারাগারগুলোতে লোকেরা কী ধরনের ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হন এবং যারা এটি পরিচালনা করেন তারা কীভাবে সবকিছুর উর্ধ্বে থাকেন। স্থানীয় ও রাজনৈতিক নেতারা বারবার আঞ্চলিক এ গোপন কারাগারগুলোর অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন, কিন্তু নোটজাইয়ের অনুসন্ধানটি মানুষের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে পদ্ধতিগতভাবে প্রমাণ তুলে ধরেছে।

জলবায়ু অর্থায়ন

The Citizenry - Climate Budget

ছবি: স্ক্রিনশট, দ্য সিটিজেনরির জন্য নূর মমতাজ

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সিন্ধুর প্রাদেশিক সরকার জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কার্যক্রমে কত টাকা ব্যয় করেছে— অনুসন্ধানী এ প্রতিবেদনটি স্প্রেডশীট, মানচিত্র ও ছকের মাধ্যমে তা তুলে ধরেছে। ২০২২ সালে অনেক বৃষ্টিপাতের কারণে পাকিস্তান যখন ব্যাপকহারে বন্যার কবলে পড়ে তখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সিন্ধু প্রদেশ। সেই সময়ে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণকে সম্পূর্ণভাবে দোষারোপ করে ধ্বংসযজ্ঞের দায় এড়িয়ে যায় সরকার।

দ্য সিটিজেনরি-এর জন্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি তৈরি করেন প্রতিবেদক উনিব আজম, আর তাকে সহযোগিতা করেছেন নীতি বিশেষজ্ঞ সাদিয়া সিদ্দিকী। ২০০৭ সাল থেকে পরিবেশ দফতরের বিভিন্ন নাম ও প্রতিষ্ঠানের অধীনে সিন্ধু সরকার কোন খাতে কত ব্যয় করেছে এবং জলবায়ুর প্রভাব প্রশমিত করতে বরাদ্দকৃত অর্থ ধারাবাহিকভাবে কতটা কম ব্যয় করেছে তা ব্যাখ্যা করার জন্য প্রতিবেদনে দেখানো হয় যে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার কথা বলে ক্রমাগতভাবে যে সব উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বেশি পরিমাণ অর্থ খরচ করেছে, তা বরং প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতির কারণ হয়েছে।

ইউক্রেনের জন্য ‘গোপন অস্ত্র চুক্তি’

Soch - Pakistani Arms in Ukraine

ছবি: স্ক্রিনশট, সোচ, ইউটিউব

২০২৩ সালের প্রথম মাসে পাকিস্তান যখন আর্থিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে ও রাজনৈতিক সংকটের কবলে তখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারলে কী হবে তা নিয়ে খবর প্রকাশে ব্যতিব্যস্ত ছিল দেশটির সংবাদমাধ্যম। সময়সীমা শেষ হওয়ার মাত্র এক মাস আগে, পাকিস্তান একটি বেলআউট প্যাকেজ নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়। শেষ মুহুর্তে সম্পাদিত দুই পক্ষের চুক্তির ওপর অনুসন্ধান চালিয়ে দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়— একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ও অন্যটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে।

দ্য ইন্টারসেপ্ট দাবি করে যে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যে একটি চুক্তির ওপর ভিত্তি করে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে (বেলআউট) পাকিস্তানের জন্য ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। ইন্টারসেপ্টের প্রতিবেদন একটি সামরিক সূত্র থেকে ফাঁস হওয়া নথির উল্লেখ করে। (পাকিস্তানি কর্মকর্তারা সুস্পষ্টভাবে ও বারবার করে ইউক্রেন যুদ্ধে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।)

দ্য ইন্টারসেপ্টের অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করে পাকিস্তানভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা সোচ। সরকারী বিভিন্ন নথির মাধ্যমে সাংবাদিকরা তুলে ধরেন যে কীভাবে ওই অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিল। (“সংক্ষেপে, পাকিস্তান থেকে অস্ত্র রফতানি করে… যক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতরের কাছে বিক্রি করা হয়েছিল, মার্কিন সরকার ওই অস্ত্র তখন ইউক্রেনে পাঠিয়েছিল।”) অন্যান্য পাবলিক ডেটার মধ্যে ছিল স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল প্রকিউরমেন্ট ডেটা সিস্টেম ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া ঘোষণাপত্র। যৌথ এ প্রতিবেদনগুলো তুলে ধরে যে কীভাবে একটি আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন স্থানীয় সংবাদ আউটলেটগুলোকে তাদের নিজস্ব পাঠকের জন্য একটি গল্প অন্বেষণ ও আরো বিস্তারিত পরিসরে তা ব্যাখ্যা করতে উৎসাহিত করতে পারে। 

 টিইআরএফ বিতর্কের বাইরে দেখার চেষ্টা

Pakistan Today/The Profit - TERF Wars

ছবি: স্ক্রিনশট, পাকিস্তান টুডে/দ্য প্রফিট

পাকিস্তানে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার পর লকডাউনে বাড়িতে থাকতে বাধ্য করা হলে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ ঋণ চালু করা হয়। অস্থায়ী অর্থনৈতিক ত্রাণ তহবিল বা টিইআরএফ (দ্য টেম্পোরারি ইকোনোমিক রিলিফ ফান্ড) হচ্ছে স্বল্প সুদের ঋণ ব্যবস্থা, যা ব্যবসায়িক ধীরগতির মধ্যে শিল্পকে উৎসাহিত করতে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে।

পাকিস্তান টুডের সাময়িকী, দ্য প্রফিট অনুসারে, এ প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৩৯৮ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি (প্রায় ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়েছে। এই ঋণ থেকে উপকৃত হয়েছে ৬০০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান। ২০২২ সালে পাকিস্তানের সরকার পরিবর্তন হলে অভিযোগ ওঠে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের অর্থ থেকে মূলত উপকৃত হয়েছে ধনী শিল্পপতিরা। এটি টিইআরএফ ঋণ ও সম্ভাব্য দুর্নীতি সম্পর্কে বিতর্ক উস্কে দেয়। এই প্রতিবেদনে, জাইন নাঈম স্কিমটির সঙ্গে সম্পর্কিত সংখ্যাগুলোর রহস্য উন্মোচনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত আক্রমণ বা নেতিবাচক বক্তব্য দিয়ে প্রভাবিত না হয়ে সমর্থক এবং সমালোচক উভয়ের যুক্তিগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, ঋণটি আসলেই তার উদ্দেশ্য অর্জন করতে পেরেছে কিনা।

প্রাক্তন জেনারেলের গোপন সম্পদ

Fact Focus - Stealth Wealth of Retired General

পাকিস্তানি সেনা জেনারেলের বৈদেশিক সম্পত্তির মালিকানা অনুসন্ধানের জন্য সম্পদের বিবৃতিতে গভীরভাবে নজর দিয়েছে ফ্যাক্ট ফোকাস। ছবি: স্ক্রিনশট, ফ্যাক্ট ফোকাস

পাকিস্তানের একটি অপেক্ষাকৃত নতুন স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ফ্যাক্ট ফোকাস। এটি পাকিস্তানের উচ্চবিত্ত, বিশেষ করে প্রাক্তন সামরিক জেনারেল, রাজনৈতিক নেতা বা রিয়েল এস্টেট টাইকুনদের সম্পদের তথ্য প্রকাশের জন্য দ্রুত পরিচিতি লাভ করেছে। এই প্রতিবেদনটি লন্ডন, নিউইয়র্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তানের এক সামরিক জেনারেলের সম্পদের ওপর আলো ফেলেছে। তিনি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার আগে লাহোরে কর্পস কমান্ডার হিসাবে কর্মরত থাকাকালীন বিপুল সম্পদের মালিক বনে যান।

পাকিস্তানে দাখিল করা ট্যাক্স রিটার্নের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয় যে, জেনারেল কীভাবে ওই সময় এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেন। প্রতিবেদনটিতে পাকিস্তানের ফেডারেল ব্যুরো অব রেভিনিউ থেকে ফাঁস হওয়া নথি, নিউইয়র্ক সিটির পৌর ​​সরকারের পাবলিক নথি এবং পানামা পেপারস ও অন্যান্য অফশোর ফাঁসের অংশ হিসাবে প্রকাশিত নথিও ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন অফশোর ফাঁসে নাম আসার পর তার সম্পত্তির কিছু অংশের তথ্য পাকিস্তানে দাখিল করা ট্যাক্স রিটার্নে উল্লেখ করা হয়েছিল। (জেনারেলের পক্ষ থেকে নূন্যতম অন্যায় করার বিষয়টিকে অস্বীকার করে বলা হয় যে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পরে একটি প্রযুক্তি সংস্থায় কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্জিত আয় থেকে কিছু সম্পত্তি ক্রয় করেন তিনি)

একটি গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্রের পতন

Lok Sujag - Collapse of Rural Health Centers

ছবি: স্ক্রিনশট, লোক সুজাগ

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সবচেয়ে অনুন্নত জেলাগুলার মধ্যে একটি রাজনপুর। এ জেলার ফাজিলপুর গ্রামে সরকারী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের চিত্র বলে দেয় যে, অন্যান্য জেলার তুলনায় তারা স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে কেন পিছিয়ে রয়েছে। এক কর্মকর্তা বলেন, এক বছর আগে যেখানে রোগীদের জন্য নির্ধারিত বেশিরভাগ ওষুধ বিনামূল্যে পাওয়া যেত, এখন কর্মচারীদের “প্রতিদিন রোগীদের জন্য মাত্র ৩০টি ওষুধ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের জন্য নিয়োগ বরাদ্দ বৃদ্ধি, উন্নত ও আধুনিক ব্যবস্থার জন্য সরকারের বিনিয়োগ সত্ত্বেও, এখনও উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। বেশিরভাগ রোগী অন্য গ্রাম থেকে এ কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসেন, এ অবস্থায় তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ খুঁজে পাওয়াটা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। কর্মকর্তাদের মতে, নির্দিষ্ট বিভাগে বাজেট বরাদ্দ কমানোর কারণে ওষুধের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

সংবাদমাধ্যম লোক সুজাগ গত এক বছরে এ ধরনের আঞ্চলিক আলোচিত গল্পগুলো তুলে আনার প্রচেষ্টা নিয়ে অগ্রসর হওয়াতে দেশের দরিদ্র অঞ্চলগুলোতে কার্যকরী পরিকাঠামোর অভাবের বিষয়গুলো সামনে আসে। প্রতিবেদক উমাইর আখতারের এ প্রতিবেদনটি দীর্ঘ তালিকায় থাকা অনুরূপ গল্পের একটি, যেটি দরিদ্রপীড়িত এলাকাগুলোতে কার্যকরী সরকারি সুবিধার অভাবের সাক্ষ্য বহন করে। 

করাচির বারোমেসে পানি সংকট

Dawn Investigations - Karachi's Tanker Mafia

ছবি: স্ক্রিনশট, ডন ইনভেস্টিগেশনস

করাচির পানি সমস্যা, বিশেষ করে ঘাটতি ও বিতরণ ব্যর্থতার জন্য বেশ সুপরিচিত। তাছাড়া, শহরের পানি সরবরাহের নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠীর গন্ডি শুধুমাত্র আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ট্যাঙ্কারের মালিক, ঠিকাদার, পয়ঃনিষ্কাশন বোর্ডের কর্মী, রাজনীতিবিদ এবং সামরিক কর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ডন পত্রিকার সাংবাদিকদের মতে, করাচির পানি সরবরাহ ব্যবস্থার “বিশাল চক্র” থেকে অনেক দল লাভবান হয়।

রাজনৈতিক এবং অপরাধমূলক নেটওয়ার্কগুলোর গভীরে গিয়ে অনুসন্ধান চালান ডন পত্রিকার সাংবাদিক নাজিহা সৈয়দ আলী ও আসলাম শাহ। শহরে পানি সরবরাহকারী কলগুলো কারা নিয়ন্ত্রণ করে, পাশাপাশি চুক্তির প্রক্রিয়া ও কী ধরনের চোরা নিয়ম রয়েছে, তা খুঁজে বের করেন। তারা প্রতিটি প্ল্যান্ট, খাল এবং জলবাহী নলের নিচে করাচির পানি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির বিস্তারিত মানচিত্র তৈরি করে দেখান যে, কীভাবে পানি এক বিন্দু থেকে অন্য স্থানে পরিবাহিত হয়। সরকারী কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলেন, যাদের পানির জন্য রীতিমতো যুদ্ধে নামতে হয়। তাদের এ গল্পগুলো তুলে ধরে সম্পদের বৈষম্যই ঠিক করে দেয় যে, কে পানি পাবে আর কে পাবে না। কীভাবে রাজনৈতিক অভিজাতরা ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে বাড়ির সুইমিং পুলের পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে সমর্থ হয়, বিপরীতে দরিদ্রদের দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় পানি পেতে লড়াই করতে হয়।


আমেল ঘানি পাকিস্তান-ভিত্তিক সাংবাদিক। তিনি দেশে ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থান, পরিবেশ, শ্রম অধিকার এবং প্রযুক্তি ও ডিজিটাল অধিকার নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেন। তিনি একজন ফুলব্রাইট ফেলো এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

চীন-পন্থী প্রচারণা, গুপ্তচরবৃত্তির সরঞ্জাম, সবুজ বিভ্রম: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ২০২৩ সালের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

অনলাইনে প্রচারণা, ভুয়া তথ্য, নারী অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর সাইবার হামলা, অবৈধভাবে খনন বা গাছ কাটা বিষয়ে পরিচালিত কয়েকটি অনুসন্ধান জায়গা করে নিয়েছে জিআইজেএনের সম্পাদকের বাছাইয়ে।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

চিংড়ি চোরাচালান, হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড, তামাক শিল্পের ক্ষতিকর প্রভাব: চীন, হংকং ও তাইওয়ানের ২০২৩ সালের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

অনেক বাধাবিপত্তি ও চ্যালেঞ্জের মুখেও চীন, হংকং ও তাইওয়ান থেকে ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে প্রভাব তৈরির মতো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। এমনই কিছু প্রতিবেদন জায়গা করে নিয়েছে জিআইজেএনের সম্পাদকের বাছাইয়ে।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

ভারতের ২০২৩ সালের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন: স্পাইওয়্যার বেচাকেনা, ভারতীয় ভূখণ্ডে চীনা দখলদারিত্ব ও বিষাক্ত কফ সিরাপ

নানাবিধ বাধাবিপত্তি ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ২০২৩ সালে ভারত থেকে প্রকাশিত হয়েছে সাড়া জাগানো কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, যেগুলো উন্মোচন করেছে ধোঁয়াশাপূর্ণ রাষ্ট্রীয় চুক্তি, শ্রম পরিস্থিতি, ঝুঁকিপূর্ণ ওষুধ, সীমান্ত দ্বন্দ্বের মতো বিষয়।

অনুসন্ধান পদ্ধতি পরামর্শ ও টুল

টিকটকে ভুল তথ্য: ডকুমেন্টেড কীভাবে বিভিন্ন ভাষার শত শত ভিডিও যাচাই করেছে 

শুধুমাত্র সঠিক তথ্যের অভাবে কত অভিবাসীই না প্রতারিত হন। অভিবাসন প্রত্যাশী মানুষ কখনও কখনও টিকটকের তথ্যের ওপর ভর করে ঘরবাড়ি ছেড়ে অজানা গন্তব্যে পাড়ি জমায়। কোন অ্যাকাউন্টগুলো এসব অপতথ্য ছড়ায়? কীভাবে পাওয়া যাবে তাদের হদিস? অনুসন্ধান পদ্ধতিই বা কি – জানতে পড়ুন এই প্রতিবেদনটি।