প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

বিষয়

আমেরিকার দক্ষিণে শিশুশ্রম নিয়ে যেভাবে অনুসন্ধান করেছে রয়টার্সের একটি দল  

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

English

investigating child labor Goldsmith Prize finalist Reuters

রয়টার্সের এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে বেশ কিছু কোম্পানি অভিবাসী শিশু শ্রমিকদের কাজে নিয়োগ দিচ্ছে, যাদের অনেকের বয়স বড়জোর  ১২ বছর হবে। সাংবাদিকেরা সতর্ক করে বলেছেন, “মধ্য আমেরিকা থেকে অভিবাসন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কিছু শিশুও সেই স্রোতে যোগ দিচ্ছে।” ছবি: শাটারস্টক

সম্পাদকের নোট: প্রতি বছর হার্ভার্ডের শোরেনস্টাইন সেন্টার যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয়, রাজ্য বা স্থানীয় পর্যায়ে সরকার, রাজনীতি ও নীতিমালার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলা অনুসন্ধানী প্রকল্পের জন্য ২৫,০০০ মার্কিন ডলার মূল্যমানের গোল্ডস্মিথ পুরস্কার দিয়ে থাকে। এবার পুরস্কারটির জন্য ছয়টি অনুসন্ধান ফাইনালিস্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। এদের একটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক কোম্পানিতে অভিবাসী শিশুদের শ্রম-নিপীড়ন নিয়ে। রয়টার্সের যে দল এই  অনুসন্ধান করেছে, তাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লেখাটি লিখেছেন ক্লার্ক মেরিফিল্ড। স্টোরিটি দ্য জার্নালিস্টস রিসোর্সে প্রকাশিত হয়েছে এবং তাদের অনুমতি নিয়ে এখানে পুনঃপ্রকাশ করা হলোএকটি বড় কল্যাণ তহবিল কেলেঙ্কারির সঙ্গে প্রাক্তন গভর্নর ও একজন সুপারস্টার ক্রীড়াবিদের জড়িত থাকার ঘটনা উন্মোচনের জন্য এ বছর পুরস্কারটি জিতেছেন মিসিসিপি টুডে-র আনা উলফ।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের অ্যালাবামা রাজ্যে মুরগির মাংস প্রক্রিয়াকরণ ও গাড়ি নির্মাণ কারখানায় অভিবাসী শিশুদের শ্রম-নিপীড়ন নিয়ে তিন-পর্বের এই ধারবাহিক প্রকাশ করে রয়টার্স। এর প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে।

প্রতিবেদক জশুয়া স্নায়ার, মিকা রোজেনবার্গ ও ক্রিস্টিনা কুকের এই অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ১২ বছরের কম বয়সী এই শিশুরা প্রায়ই বিপজ্জনক যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করত এবং এ কারণে তাদের জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। কুকের পুরনো এক সোর্সের দেওয়া সূত্র ধরে তৈরি হয় প্রথম পর্বটি। অ্যালাবামার এন্টারপ্রাইজ শহরে মুরগির মাংস প্রক্রিয়াকরণের একটি কারখানায় কর্মরত গুয়াতেমালার ১৬ বছর বয়সী এক অভিবাসীকে কেন্দ্র করে শহরটিতে শিশুশ্রমের এই গল্প গড়ে ওঠে।

প্রতিবেদকের ভাষ্যমতে, “শ্রমিকের চাহিদা পূরণে মার্কিন পোল্ট্রি শিল্প কর্মী নিয়োগে অভিবাসী শ্রমিক ও কর্মী নিয়োগকারী সংস্থাগুলোর ওপর নির্ভরশীল। মধ্য আমেরিকা থেকে অভিবাসন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কিছু অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুও সেই পথে চলে আসছে।”

স্টোরিটি প্রকাশের পর প্রতিবেদকেরা আরও সূত্র পেতে শুরু করেন। সেই সোর্সেরা প্রতিবেদকদের জানান, অ্যালাবামার গ্রামাঞ্চলে পোলট্রি শিল্পের বাইরেও শিশুশ্রমের সমস্যা রয়েছে, এবং গাড়ি নির্মাণ শিল্পের দিকেও তাদের নজর দেওয়া উচিত।

এই সূত্র ধরে জুলাই ও ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয় ধারাবাহিকের দ্বিতীয়তৃতীয় পর্ব। এতে হুন্দাই মোটর কোম্পানি ও একই গ্রুপের অধীন কিয়া কর্পোরেশনের জন্য গাড়ির যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী চারটি প্রতিষ্ঠানে শিশুশ্রমের অস্তিত্ব উন্মোচন করা হয়। সেই যন্ত্রাংশ সরবরাহকারীদের মধ্যে স্মার্ট অ্যালাবামা ছিল হুন্দাইয়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠান।

স্নায়ার বলেন, “কোম্পানির নথি এবং সোর্সের দেয়া উপকরণ পর্যালোচনা করে আমরা বুঝতে পারি, সেই প্রতিষ্ঠানটি [সরবরাহকারী] আসলে হুন্দাইয়ের মালিকানাধীন একটি সাবসিডিয়ারি। তখনই আমরা নড়েচড়ে বসি। ভাবছিলাম, আরে, তাই তো। এতো হুন্দাই। শিশুরা হুন্দাইয়ের জন্য কাজ করছে। মার্কিন ক্রেতাদের কাছে বিক্রি হওয়া কিছু জনপ্রিয় গাড়ি ও এসইউভির যন্ত্রাংশ তারা জোড়া লাগাচ্ছে। এটি দেশের তৃতীয় বৃহত্তম গাড়ি প্রস্তুতকারক।”

বিপজ্জনক কর্ম পরিবেশে শিশুশ্রম কাজে লাগিয়ে বড় সংস্থাগুলোর উদ্বেগজনক কর্মকাণ্ড নিয়ে অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন হলেও রয়টার্সের অনুসন্ধানে অভূতপূর্ব বিশদ ও ব্যক্তিগত নানা গল্প উঠে এসেছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনের সপ্তাহখানেক পর অ্যালাবামায় হুন্দাইয়ের একটি সরবরাহকারী কারখানায় কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্যের কর্মকর্তারা আকস্মিক পরিদর্শনে যান এবং সেখানে সাতজন অপ্রাপ্তবয়স্ক কর্মী খুঁজে পান। এর পরপরই গ্রাহকেরা তাদের বিরুদ্ধে ক্লাস-অ্যাকশন মামলা করেন। রয়টার্স ও অন্যান্য সাংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন সম্প্রতি একটি আন্তঃসংস্থা টাস্ক ফোর্সের মাধ্যমে শিশুদের শ্রম-নিপীড়নের ঘটনা তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে। সম্প্রতি হুন্দাইও শেয়ারহোল্ডারদের জানিয়েছে যে রয়টার্সের প্রতিবেদনে শনাক্ত হওয়া শিশুশ্রমের সঙ্গে জড়িত যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তারা বিনিয়োগ সরিয়ে নেবে।

ধারাবাহিকটির সবগুলো পর্বেই প্রতিবেদকেরা ভিন্ন ভিন্ন মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে বিভিন্ন ধরনের সম্ভাব্য সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এদের মধ্যে রয়েছে কর্মী ও তাদের পরিবার, কারখানা ব্যবস্থাপক, স্কুল, অভিবাসীদের পক্ষে কাজ করা অলাভজনক সংগঠন, রয়টার্সের সহকর্মী এবং গাড়ি শিল্পের সরবরাহ চেইনের খুঁটিনাটি জানা অন্যান্য বিশেষজ্ঞ।

investigating child labor Reuters chicken processing Guatemala migrant

যুক্তরাষ্ট্রে অপ্রাপ্তবয়স্ক কর্মীদের নিয়ে স্টোরিগুলোর একটি – অ্যালাবামার একটি মুরগির মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় কর্মরত একজন কিশোর৷ ছবি: স্ক্রিনশট, রয়টার্স

এই ধারাবাহিকে সরেজমিন রিপোর্টিং করতে হয়েছে অনেক। ট্রেলার পার্ক, অ্যাপার্টমেন্ট, স্কুল, গীর্জা, কর্মীসরবরাহকারী সংস্থা, শেরিফ অফিস ও নগর ভবনের দরজা দরজায় তাদের যেতে হয়েছে। দলটি শেষ পর্যন্ত, ১০০ জনের বেশি অভিবাসী শ্রমিকের সাক্ষাৎকার নেয়। কর্পোরেট নথি, পুলিশ রেকর্ড, অভিবাসন সম্পর্কিত নথি, শিল্প-দুর্ঘটনার প্রতিবেদন ও আদালতের নথির হাজার হাজার পৃষ্ঠা প্রতিলিপি থেকে ডেটাবেস তৈরির মাধ্যমে তাঁরা জানতে পারেন, গাড়ির আঞ্চলিক সাপ্লাই চেইন কীভাবে কাজ করে। 

রিপোর্টারেরা, বিশেষ করে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিশু ও নির্বাসনের ঝুঁকিতে থাকা অন্যান্যদের সাক্ষাৎকার নেয়ার ক্ষেত্রে সংবেদনশীল ছিলেন।

অনেক ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুরা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল বেশি আয়ের চাকরির আশায় এবং পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্যের উদ্দেশ্যে।

রোজেনবার্গ বলেন, “তারা আছে এক উভয় সংকটে। বেশিরভাগের জীবন যাপনই বেশ দুর্দশাগ্রস্ত। এই শিশুরা গুয়াতেমালায় খুব অল্প বয়সে কফি ক্ষেতে কফি সংগ্রহ এবং খুব বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে চিনির প্লানটেশনে কাজ করেছে। এখানে আমরা যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের অনেকের ধারণা অনেকটা এমন, ‘দেখুন, আমরা এখানে অর্থোপার্জন করতে এসেছি, আর আমাদের সাধ্যমত সবই করছি।’ আমি মনে করি, এ কারণেই আমরা মনোযোগ দিয়েছি কোম্পানিগুলোর ওপর এবং দায়টাও এদের কাঁধেই দিতে চেয়েছি।

অবৈধ শ্রম-চর্চা উন্মোচন করা দলটির চিন্তা-ভাবনা জানতে আমরা স্নায়ার, রোজেনবার্গ, ও কুকের সঙ্গে কথা বলেছি। 

১. ডেটায় অস্বাভাবিক ওঠানামা খোঁজ করুন – চাপা পড়ে থাকা স্টোরির ইঙ্গিত পেতে পারেন

২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে পুরনো এক সোর্স কুককে বলেছিলেন, কর্মকর্তারা অ্যালাবামার এন্টারপ্রাইজ শহরের নিকটবর্তী এলাকায় নিঃসঙ্গ অভিবাসী শিশুদের সংখ্যা বাড়তে দেখছেন।

সেই সোর্স বলেছিলেন, এই শিশুগুলো পাচার বা নিপীড়নের ঝুঁকিতে থাকতে পারে। কুক বলেন, “এ ধরনের বিষয়গুলো আমাদের আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে।”

তিনি ইউএস অফিস ফর রিফিউজি রিসেটেলমেন্ট এর ডেটা খুঁটিয়ে দেখেন। যে কাউন্টিগুলোতে সাধারণত স্থানীয় পরিবারের হাতে অভিবাসী শিশুদের ছেড়ে দেওয়া হয়, সেগুলোর ওপর নজর রাখে এই দপ্তর। সেখান থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার হয় যে, এন্টারপ্রাইজ এলাকাটি অল্প সময়েই নিঃসঙ্গ অভিবাসী শিশুদের পুনর্বাসনের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে।

পরবর্তী ধাপ ছিল এই গ্রামীণ অঞ্চলে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা অলাভজনক সংগঠন ও অন্যদের খুঁজে বের করা।

রোজেনবার্গ বলেন, “আমরা যাদের নাগাল পেতে চেয়েছিলাম তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়, তবে আমরা অভিবাসীদের সহায়তাকারী সংগঠন, স্কুল, এবং এলাকাটি সম্পর্কে জানাশোনা লোকদের খুঁজে পেতেও জাল ছড়িয়েছিলাম। সোর্সের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, মুরগির মাংস প্রক্রিয়াকরণের এমন অনেক কারখানা রয়েছে, আর সেটি ছিল উদ্বেগের একটি ক্ষেত্র।”

২. জটিল কর্মপ্রক্রিয়ার সহজ ডেটাবেস তৈরি করুন

গাড়ি নিয়ে স্টোরির ক্ষেত্রে প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল যন্ত্রাংশের স্থানীয় সরবরাহকারীদের অবস্থান শনাক্ত করা এবং এই অঞ্চলের প্রাথমিক উৎপাদন কারখানাগুলোতে সরবরাহ পদ্ধতি খুঁজে বের করা। 

তাঁরা শ্রমিকের ঠিকাদারদের একটি চক্র খুঁজে পান, যেখানে কিছু ক্ষেত্রে একই ব্যক্তিকে একাধিক কোম্পানির মালিকানায় দেখা যায়, যেগুলো দ্রুত গড়ে উঠে এবং বন্ধও হয়ে যায়।

“আমরা অ্যালাবামা ও জর্জিয়ার ব্যবসায়িক রেকর্ডে নজর দিয়ে অনেক কাজ করেছি,” রোজেনবার্গ বলেন।

আঞ্চলিক সরবরাহ চেইনগুলো ক্রমেই তাদের কাছে স্পষ্ট হতে থাকে এবং তাঁরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও সাক্ষাৎকার নেন। এদের মধ্যে শ্রমিক যোগানের ঠিকাদারও ছিল। বড় কারখানায় সরবরাহকারীদের সঙ্গে স্থানীয় কর্মী যোগানদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পর্ক তুলে ধরে তাঁরা একটি এক্সেল স্প্রেডশিট তৈরি করেন৷

“এটি হুন্দাই ও এর সরবরাহ চেইনের একটি অর্গানিক ব্যবসায়িক অনুসন্ধানে রূপ নেয়,” স্নায়ার বলেন। “আমরা হুন্দাই নিয়ে লিখব, ভাবিনি। রহস্যটি ছিল, ‘আরে, অ্যালাবামায় আসা শিশুদের কী পরিণতি হচ্ছে? ঘটছেটা কী?’ মুরগির মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানা নিয়ে স্টোরিটি করার পরই আমরা বিস্ফোরক তথ্য পাই যে  গ্রামে গাড়ির যন্ত্রাংশের কারখানায়ও অনেক শিশু কাজ করছে।”

Reuters investigating child labor, Hyundai auto plant, Alabama

রয়টার্সের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি গাড়ির যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অ্যালাবামায় হুন্দাইয়ের অটো প্ল্যান্টের জন্য পণ্য তৈরির কাজে শিশুশ্রম ব্যবহার করছে। ছবি: শাটারস্টক

৩. মনে রাখবেন, আস্থা অর্জনের জন্য খাটতে হয় এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার জন্য সোর্সের সুরক্ষা অপরিহার্য

যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত অভিবাসী ও অভিবাসী শিশুদের বিড়ম্বনার শেষ নেই। রয়টার্সের ধারাবাহিক অনুযায়ী, অভিবাসীরা অনেক সময় পাচারকারীদের কাছে হাজার হাজার ডলার দেনা থাকেন, তা-ও চড়া সুদে। তারা যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে চান, কারণ সেখানে কাজ করে এক মাসে যে টাকা পান  নিজ দেশে এই পরিমাণ আয় করতে মাসের পর মাস লেগে যায়।

ধারাবাহিকের প্রথম পর্বে শুরুর অংশে, প্রতিবেদকেরা লিখেছেন:

“১৬ বছর বয়সে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ শিশু হাই স্কুলের অর্ধেক পথ পাড়ি দেয়, অ্যামেলিয়া ডোমিঙ্গো তখন নিজেকে আবিষ্কার করেন এই খামার শহরে মুরগি প্রক্রিয়াকরণ মেশিনের সামনে এবং নিজ দেশ গুয়াতেমালায় মহাজনী ঋণের অতলে নিমজ্জিত অবস্থায় ৷ মেক্সিকো হয়ে পাড়ি দিতে চোরাকারবারিদের জন্য ১০,০০০ ডলার ধার নেওয়ার পর অ্যামেলিয়া গত ফেব্রুয়ারিতে অ্যারিজোনায় পাড়ি জমান এবং অভিবাসন কর্মকর্তাদের কাছে আত্মসমর্পন করেন।”

অ্যামেলিয়াকে তার বোনের কাছে অ্যালাবামায় ছেড়ে দেওয়া হয় এবং সে একটি মুরগির খামারে কাজ শুরু করে। রিপোর্টাররা তাকে আশ্বাস দেন  যে তার পুরো নাম, গুয়াতেমালায় তার নিজ শহর এবং তার বা তার বোনের মুখচ্ছবি ব্যবহার করা হবে না। এরপরই তিনি সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হন। অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা স্থানীয় সংগঠনগুলোর সঙ্গে পূর্বের আস্থার সম্পর্ক অ্যামেলিয়াকে তার গল্প বলতে রাজি করাতে কাজে দিয়েছে।

রোজেনবার্গ বলেন, “সেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগযোগও বেশ কাজে এসেছে, কারণ আমরা কয়েকজন বিশ্বস্ত সোর্স তৈরি করেছিলাম। তাদের কল্যাণেই আমরা ভূমিকা তৈরিতে অবদান রাখা এই মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল। তাই আমরা ইতিমধ্যেই তার কিছুটা বিশ্বাস অর্জনে সহায়ক সম্পর্ক স্থাপন করতে পেরেছিলাম।”

মাঠ পর্যায়ে, তারা যেখানে থাকেন ও কাজ করেন, সেখানে যাওয়াটা আস্থা গড়ে তোলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

“আপনাকে নিজের পরিচয় দিতে হবে,” কুক বলেন। “আপনি জানেন, তাদেরকে জানতে দিন যে আপনি কে, আপনি যে বেনামী সরকারী আমলা নন, বরং একজন সত্যিকারের মানুষ। আপনি একজন প্রতিবেদক, এবং আপনি তাদেরকে দেখতে ও তাদের গল্প শুনতেই এতটা পথ ভ্রমণ করেছেন।”

৪. রিপোর্টিংয়ের সমন্বয় ও অগ্রাধিকার ঠিক করতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করুন

রিপোর্টাররা তাঁদের শিশু শ্রম বিষয়ক অনুসন্ধানের মূল সূত্রের খোঁজ পেতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেছেন। ফেসবুকে কর্মীদের পোস্ট ও ট্যাগ ধরে তারা নিয়োগদাতাদের শনাক্ত করেছেন। এখান থেকেই রিপোর্টাররা নিয়োগদাতা সম্পর্কে, চাকরির ধরন এবং কোন ধরনের কর্মী খোঁজা হচ্ছে, তা জানতে পেরেছেন।

শত শত সম্ভাব্য সোর্সকে তারা ইনডিড ও লিঙ্কডইনে ব্যক্তিগত বার্তা পাঠিয়েছেন এবং এভাবে মুরগির খামারের সাবেক ও বর্তমান কর্মীদের খুঁজে বের করেছেন।

“একবার [জশ] গিয়েছিলেন মন্টগোমারিতে, তখনই আমি ইনডিডে এক নিয়োগকারীর খোঁজ পাই,” কুক বলেন। “আমরা তার ঠিকানা খুঁজে পেয়েছিলাম, আর জশ তার বাড়িতে গিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। জশ সেখানে গিয়েছিলেন বলেই তিনি কথা বলেছেন, কারণ তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না।”

৫. গভীর রাত বা ভোরবেলা হলেও সোর্সের দেওয়া সময়সূচী অনুযায়ী দেখা করুন 

অনেক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও গাড়ির কারখানার শিফটভিত্তিক কর্মীদের সাক্ষাৎকার নিতে সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত রাখুন।

অনেক ক্ষেত্রে রয়টার্স দলটির পক্ষে দিনে বা সন্ধ্যার শুরুতে কর্মীদের সঙ্গে দেখা করা অসম্ভব ছিল।

“তারা রাতভর কাজ করতেন,” স্নায়ার বলেন। “এই রিপোর্টিং ট্রিপে ২৪ ঘন্টা কাজ করতে হতো, যেখানে আপনাকে ভোরবেলায় থাকতে হয় কারখানাগুলোর বাইরে, বা গভীর রাতে দেখা করতে বলা হয় ট্রেইলার বা বাসায় যেখানে তারা বড় পরিবার নিয়ে গাদাগাদি করে থাকেন।”

আরও পড়ুন

ইনভেস্টিগেটিং ইমিগ্রেশন: কিউ অ্যান্ড এ উইথ ক্যাটলিন ডিকারসন

ফোর্সড লেবার অ্যান্ড ফেয়ার রিক্রুটমেন্ট: এ টুলকিট ফর জার্নালিস্টস

মানব পাচার ও জোরপূর্বক শ্রম নিয়ে সাংবাদিকতার টিপস


ক্লার্ক মেরিফিল্ড নিউজউইক ও দ্য ডেইলি বিস্টের রিপোর্টার হিসেবে এবং অর্থনৈতিক মহামন্দা নিয়ে লেখা তিনটি বইয়ের গবেষক ও সম্পাদক হিসেবে কাজ করার পর ২০১৯ সালে পাবলিক পলিসি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য জার্নালিস্টস রিসোর্সে যোগ দেন। তিনি জন জে কলেজ জুভেনাইল জাস্টিস জার্নালিজমের একজন ফেলো ছিলেন এবং তাঁর কাজের জন্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার গুণগত মানোন্নয়নে নিবেদিত অলাভজনক সংগঠন ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টার্স অ্যান্ড এডিটর্সের কাছ থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন।

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

Studio, headphones, microphone, podcast

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ঘুরে আসুন ২০২৩ সালের বাছাই করা অনুসন্ধানী পডকাস্টের জগত থেকে

নানাবিধ সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে প্রকাশিত হয়েছে সাড়া জাগানো কিছু অনুসন্ধানী পডকাস্ট। এখানে তেমনই কিছু বাছাই করা পডকাস্ট তুলে এনেছে জিআইজেএনের বৈশ্বিক দল।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

চিংড়ি চোরাচালান, হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড, তামাক শিল্পের ক্ষতিকর প্রভাব: চীন, হংকং ও তাইওয়ানের ২০২৩ সালের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

অনেক বাধাবিপত্তি ও চ্যালেঞ্জের মুখেও চীন, হংকং ও তাইওয়ান থেকে ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে প্রভাব তৈরির মতো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। এমনই কিছু প্রতিবেদন জায়গা করে নিয়েছে জিআইজেএনের সম্পাদকের বাছাইয়ে।

InterNation international journalism network

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ইন্টারনেশন: (সম্ভবত) বিশ্বের প্রথম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নেটওয়ার্ক

প্রায় ৪০ বছর আগে, গড়ে উঠেছিল অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের (সম্ভবত) প্রথম আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেশন। পড়ুন, এটির নেপথ্যের কাহিনী।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

জিআইজেএনের দুই দশক

জিআইজেএনের বর্ষপূর্তি। কুড়ি বছর আগে কয়েকটি অলাভজনক সংগঠন বিশ্বজুড়ে অনুসন্ধানী ও ডেটা সাংবাদিকতার সমর্থনে একটি নেটওয়ার্ক গঠনের লক্ষ্যে একাট্টা হয়েছিল৷ সেটি ছিল ২০০৩ সালে, কোপেনহেগেনে আয়োজিত দ্বিতীয় গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্স। তারপর থেকে, আপনাদের সবার সহযোগিতায় আমাদের প্রসারে আমরা নিজেরাই বিস্মিত হয়েছি।