প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

বিষয়

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ‘হাব’ যেভাবে একটি প্রজন্মের রিপোর্টারদের তৈরি করেছে

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

স্থানীয় সরকারের দাপ্তরিক ডেটাবেজে হারানো শিশুদের নামগুলো আর লেখা হয়নি কখনও। এদিকে দূষিত পানীয়-জলের কারণে লোকেদের রক্তে আর্সেনিকের মাত্রাও বাড়ছিল । স্থানীয় সরকার উত্তর মেক্সিকো জুড়ে ভুয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে লাখ লাখ মেক্সিকান পেসো সরিয়েছে। তবে বর্ডার হাবের চৌকস সাংবাদিকতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকোর সীমান্ত অঞ্চল নিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কেবলই অভিবাসন ইস্যুতে প্রতিবেদন তৈরিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আরও বেশিকিছু।

আমি একজন সম্পাদক হিসেবে মেক্সিকো বর্ডার ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং হাবে কাজ করছি। ২০১৮ সালের কথা। সাংবাদিক, আলোকচিত্রী, সম্পাদক এবং ভিডিও প্রযোজকদের একটি নেটওয়ার্ক দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে এক হন। তাঁরা গড়েই তোলেন একটি উন্নয়ন সংস্থা, যেখানে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে সাংবাদিকদের তাদের প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করা হবে। এভাবেই ভূমিষ্ঠ হয় বর্ডার হাব। 

প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ও প্রশিক্ষণের অভাবের কারণে বছরের পর বছর ধরে ভুগতে হয়েছে সীমান্ত অঞ্চলের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের। কর্মশালা, সম্মেলন আর অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয় তহবিল প্রাপ্তির মতো বিষয়গুলো মূলত মেক্সিকো সিটির সাংবাদিক কিংবা বড় বড় সংবাদ সংস্থায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

মেক্সিকো সিটি থেকে শুরু করে চিহুয়াহুয়া বা বাজা ক্যালিফোর্নিয়ার মতো রাজ্যের সঙ্গে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তথ্য আদানপ্রদান সহজ ছিল না মোটেও। তাই, এই অঞ্চলের সাংবাদিকরা মেক্সিকোর মূলধারার গণমাধ্যমের গণ্ডির বাইরেই ছিলেন।

অনুকূলে ছিল না নিরাপত্তা পরিস্থিতিও। গোটা মেক্সিকোয় দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকরা কাজ চালিয়ে যেতে বাধার মুখে পড়ছিলেন। বিশেষ করে সীমান্ত অঞ্চলে মাদক পাচারকারীদের আধিপত্যের কারণে সেখানে সাংবাদিকদের কাজ করাটা আরো কঠিন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন হুমকি থেকে বাঁচতে তাদের প্রায়ই আত্মনিয়ন্ত্রণের পথ বেছে নিতে হয়েছে। এদিকে নিজেদের দুর্নীতি লুকাতে মরিয়া হয়ে ওঠা প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শন সাংবাদিকদের আরও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ফেলে দেয়। উপরি পাওনা হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষার অভাব নিয়েও লড়তে হয় তাদের।

যখন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর জার্নালিস্টস (আইসিএফজে) এবং ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএইড)-এর অনুদানে বর্ডার হাব সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা কর্মসূচী চালু করে,তখন মেক্সিকো সিটি এবং সীমান্ত অঞ্চলের দূরত্বও কমতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিবন্ধন কর্মসূচী মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় সদস্যদের।

২০১৯ সালে তিজুয়ানা, হারমোসিলো এবং সিউদাদ জুয়ারেজ শহরে শুরু হওয়া প্রাথমিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ইতিবাচক সাড়া দেন উত্তর মেক্সিকোর সাংবাদিকরা।এই প্রশিক্ষণগুলোতে অঞ্চলভিত্তিক চাহিদা অনুসারে ডেটা সাংবাদিকতা, তথ্য প্রাপ্তির অধিকার, এবং সাংবাদিকদের শারীরিক ও ডিজিটাল নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল।

প্রশিক্ষণের পর সাংবাদিকদের রিপোর্টিং প্রকল্পেও সহায়তা করা হয়। সুযোগ করে দেয়া হয় ফেলোশিপে আবেদনের। মহামারি শুরুর পরও চালু ছিল প্রশিক্ষণ। ক্লাস নেয়া হতো অনলাইনে।

A photograph from a Border Hub training day in Hermosillo, Sonora, with reporters from the north of Mexico. The image is from July 2022. Source: Priscila Hernández Flores.

২০২২ সালে জুলাইয়ে হারমোসিলো, সোনোরায় অনুষ্ঠিত বর্ডার হাবের প্রশিক্ষণের একটি ছবি।যেখানে উত্তর মেক্সিকোর বিভিন্ন প্রান্তের সাংবাদিকরা অংশ নেন। ছবি: প্রিসিলা হার্নান্দেজ ফ্লোরেস।

বর্ডার হাবের কমিউনিটি সমন্বয়ক প্রিসিলা হার্নান্দেজ ফ্লোরেস বলেন, নির্দিষ্ট অঞ্চল নির্বাচন করে সেখানে কর্মশালা নেয়া, কোর্স করানো আর অন্যান্য ভার্চুয়াল ও সরাসরি কার্যক্রম সাংবাদিকদের সংযোগ তৈরিতে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

তিনি আরো বলেন, “মেক্সিকোর সীমান্ত অঞ্চলে আমাদের সহকর্মীরা প্রতিনিয়ত অনিরাপত্তা আর সহিংসতার শিকার হচ্ছিলেন। বিষয়টি আমলে এনে সাংবাদিক সম্প্রদায়কে শক্তিশালী করা এবং সাংবাদিকদের জন্যে একটি নেটওয়ার্ক তৈরির উদ্যোগ নেয়ার সময় আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলা। ভার্চুয়াল সভাগুলো সাংবাদিকদের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের সাথে যোগাযোগ তৈরি করে দিয়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনগুলো কীভাবে কাজ শুরু করেন, অনুসন্ধানী টুল ব্যবহার করেন— একাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে তা তুলে ধরা হয়েছে। যেন সাংবাদিকরা ওই টুলগুলো নিজেদের প্রতিবেদন তৈরিতে ব্যবহার করতে পারেন।”

এ উদ্যোগটি যে কতটা সফল, প্রাপ্ত ফলাফল দেখেই তা বোঝা যায়। ২০১৯ সালে প্রথম অনুদান দেয়ার পর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বর্ডার হাবের নতুন প্রশিক্ষিত সাংবাদিকরা ২০০টি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, যা অসংখ্য লুকায়িত সত্যকে উন্মোচন করেছে। দীর্ঘমেয়াদী সাংবাদিকতাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে পাঁচ বছরে বর্ডার হাব বিভিন্ন পর্যায়ে ,৩০০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে

টোরেওন কোয়াহুইলার সাংবাদিক লুইস আলবার্তো লোপেজ। তিনিও বর্ডার হাব থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। নিচে আপনারা তাঁর সম্পর্কে জানবেন। তিনি বলেন, “এখান থেকে প্রশিক্ষণ নেয়াটা ছিল আমার পেশাগত উন্নয়নের একটি মাইলফলক। যা আমাকে একজন সাধারণ বিট রিপোর্টার থেকে অনুসন্ধানী সাংবাদিক হয়ে ওঠার সুযোগ দিয়েছে।”

মেক্সিকোর অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ সংবাদমাধ্যম এল ইউনিভার্সাল এর অনুসন্ধানী ইউনিটের পরিচালক সিলবার মেজা কামাচো। তিনি বলেন, মেক্সিকোর বিভিন্ন অঞ্চলের সাংবাদিকদের জন্য এ ধরনের প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, “বর্ডার হাবের পাঁচ বছরের প্রকল্পটি সাংবাদিকদের গবেষণার ও নিরাপত্তা মানদণ্ড সম্পর্কে জানতে সহায়তা করেছে। সহায়ক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে নৈতিক চর্চাকেও উৎসাহিত করা হতো। … আমার মনে হয় এ মডেলটি চমৎকার। যা চালিয়ে যাওয়া এবং মেক্সিকোর অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়া উচিৎ।”

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত অঞ্চল সিউদাদ জুয়ারেজের অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম লা ভেরদাদ-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদকীয় বিভাগের পরিচালক রোসিও গালেগোস রদ্রিগেজ । ছবি: সিলবার মেজা কামাচো

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত অঞ্চল সিউদাদ জুয়ারেজের অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম লা ভেরদাদ-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদকীয় বিভাগের পরিচালক রোসিও গালেগোস রদ্রিগেজ । ছবি: সিলবার মেজা কামাচো

চিহুয়াহুয়ার সিউদাদ জুয়ারেজের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রতিষ্ঠান লা ভেরদাদ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও জুয়ারেজ জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা রোসিও গালেগোস রদ্রিগেজ বলেন, গত কয়েক বছর ধরে “গোলাগুলির মধ্যে” সীমান্ত অঞ্চলে সাংবাদিকতা চালিয়ে যেতে হয়েছে, যা জোট গঠনকে অপরিহার্য করে তুলেছিল।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “সীমান্ত অঞ্চলগুলোয়  কাজ করা কঠিন।কারণ সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র এই অঞ্চলগুলো ঘিরে তৎপর থাকে ও সহিংসতা ছড়ায়। পাশাপাশি মাদক, অস্ত্র ও মানব পাচারের মতো অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। সীমান্ত অঞ্চলের সাংবাদিকদের বহু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। সাংবাদিকতা চালিয়ে যেতে আমরা প্রতিনিয়ত লড়াই করেছি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করে গভীরভাবে কাজ করে যাওয়ার লক্ষ্যে দলগত শক্তি অন্বেষণ এবং অন্যান্য সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে নেটওয়ার্ক তৈরি করা ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না।

যদিও আইসিএফজে এবং ইউএসএইডের পাঁচ বছরের প্রকল্পের অর্থায়নের মেয়াদ শেষ। তবে প্রকল্পটিকে এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যেন নাগরিক সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সীমান্ত সাংবাদিকদের জোটটির সংযোগ দীর্ঘস্থায়ী হয়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের একটি গোটা প্রজন্মকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বর্ডার হাব, যাঁরা এখনো নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা জারি রেখেছে।

হোয়াটসঅ্যাপে একটি গ্রুপ রয়েছে, যেখানে বর্ডার হাবের সাবেক সাংবাদিকরা নতুন নতুন আইডিয়া, কাজের সুযোগ এবং ফেলোশিপ সম্পর্কে তথ্য দেন। তবে সাংবাদিকদের নিরাপদে কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাই এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তাঁরা পরস্পরকে নিজেদের অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কেও সতর্ক করেন।

সরকারি চুক্তি, নিখোঁজ শিশু, এবং বিষাক্ত পানি নিয়ে অনুসন্ধান

লুইস আলবার্তো লোপেজ কোয়াহুইলা অঞ্চলে মিলেনিও নিউজগ্রুপের একজন সংবাদ প্রতিনিধি। এটি একটি মাল্টিমিডিয়া নিউজ প্ল্যাটফর্ম, যাদের একটি ছাপা পত্রিকা এবং একটি টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে । ২০২০ সালের শেষে নিউজরুমগুলোতে যখন মহামারির প্রভাব পড়তে শুরু করে তখন বর্ডার হাবের অনুদানের জন্য আবেদন করেন তিনি। এ পদক্ষেপটি যে তাঁর পেশাগত জীবনের গতিপথ বদলে দিতে পারে, তিনি তা ভুলেও ভাবেননি।

Luis Alberto López, a reporter from Coahuila

কোয়াহুইলার সাংবাদিক লুইস আলবার্তো লোপেজ। তিনি বর্ডার হাব থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। নিজের  অভিজ্ঞতার আলোকে শুরু করেছেন অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম ওপেন উইন্ডস । ছবি:

যখন তিনি জানতে পারেন স্থানীয় প্রাদেশিক সরকার র‌্যাপিড ট্রানজিট বাস সিস্টেম নির্মাণের জন্য প্রায় ৪৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করেছে। তখনই তিনি ধরেতে পেরেছিলেন যে, এটি বিস্তারিত ও গভীর অনুসন্ধানের দাবি রাখে।

ঘটনাটির কথা উল্লেখ করে লোপেজ বলেন, “এই প্রথম সরকারি নথিপত্র ছাড়াও, ওপেন সোর্স ডেটা, ফোয়া অনুরোধ এবং পাবলিক কমার্স রেজিস্ট্রির মতো টুলগুলো আমরা ব্যবহার করেছি। এর মাধ্যমে আমরা তথ্য নিতে পারবো যে, কোন কোম্পানিগুলো গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়ন বিষয়ক নির্মাণে জড়িত ছিল।”

তিনি তিন মাসের একটি মেন্টরিং প্রোগ্রামে অংশ নেয়ার সুযোগ পান। কীভাবে প্রকল্প পরিকল্পনা তৈরি করতে হয়, কাজের সময়সূচী ঠিক করতে হয়, সোর্স বাছাই করতে হয় এবং যাচাইকৃত প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করতে হয়—তা শিখেন।

তাঁর হাত দিয়ে তৈরি হয় দ্য আনএন্ডিং রুট অব দ্য লাগুনা মেট্রোবাস শিরোনামের প্রতিবেদন। যা সরকারের অদক্ষ ব্যয়, সরকারি কর্মকর্তাদের অবহেলা, জবাবদিহিতার অভাব, এবং  প্রকল্প ঘিরে সম্পদ ব্যবস্থাপনার অস্বচ্ছ চিত্র উন্মোচন করে। অথচ ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষের জন্য গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নের উদ্দেশ্যের লক্ষ্যে নেয়া হয়েছিল প্রকল্পটি।

কয়েক বছর পর, আবারও বর্ডার হাবের সহায়তায় মানবাধিকার নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেন লোপেজ। এটি ছিল কোয়াহুইলা রাজ্যে শিশুদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা নিয়ে ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স অব মাইনরস ইন কোয়াহুইলা। অনুসন্ধানী এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়, রাষ্ট্র ও ফেডারেল কর্তৃপক্ষের ভুল রেজিস্ট্রেশন কীভাবে নিখোঁজ শিশুদের দুর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়েছে।

“আমার প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে, এটিই ছিল সবচেয়ে প্রভাবশালী। কারণ এখানে জাতীয় রেজিস্ট্রিতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের নাম নিবন্ধনে অস্বাভাবিকরকমের ভুলগুলোকে সামনে আনা হয়। তুলে ধরা হয় ডেটাবেস এবং গণনা পদ্ধতির সমস্যা। বলা হয় নিখোঁজ ব্যক্তিদের শুমারি করার প্রয়োজনীয়তার কথাও ” ব্যাখ্যা করেন লোপেজ। তাঁর এ প্রতিবেদনটি জায়গা করে নেয় ব্রিচ ভ্যালডেজ জার্নালিজম অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ডে। এ পুরস্কারটি দেয়া হয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ওপর আলো ফেলে এমন কাজকে সম্মান জানাতে।

এরপর, ২০২৩ সালের এপ্রিলে কোয়াহুইলায় পানিতে আর্সেনিকের স্তর নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন লোপেজ। যেখানে তুলে ধরা হয়, জাতীয় ও স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ কেন এই অঞ্চলের পানিতে আর্সেনিক দূষণের সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে জনস্বাস্থ্যের উপর কী ধরনের প্রভাব পড়েছে।

প্রতিবেদন তৈরির পাশাপাশি লোপেজ নিজের সংবাদমাধ্যম ওপেন উইন্ডস শুরু করতেও বর্ডার হাবের সহযোগীতা নেন। তিনি বলেন, “অনুদানের মাধ্যমে আমি আমার স্বাধীন সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা মানবাধিকার ও সচেতনতা তৈরিতে কাজ করি,” বলেন লোপেজ। তাঁর প্রতিষ্ঠানে এখন  জন কর্মী কাজ করছেন।

তিনি অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন, তা হচ্ছে: নাছোড়বান্দার মতো গেলে থাকো। “হাল ছেড়ো না। বর্ডার হাবের অনুদান পাওয়ার আগে, অর্থ জোগাড়ের জন্য বিভিন্ন দরজায় কড়া নাড়তাম। কখনো সহায়তা পেতাম, কখনো পেতাম না। মূল কথা হলো, সামনে এগিয়ে যাওয়া এবং আমরা যে ধরনের সাংবাদিকতার বিশ্বাস করি, সেটি চালিয়ে যাওয়া,” বলেন তিনি।

ডেটা সাংবাদিকতাকে অনুসন্ধানী  টুল হিসেবে ব্যবহার

হেরমোসিলোর সোনোরা শহরের একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক জেসুস ইবারা ফিলিক্স। অঞ্চলটি  অ্যারিজোনার টুসন থেকে ৪০০ কিলোমিটার (২৪৮ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বর্ডার হাবের সহায়তায় তিনি তিনটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন।

The reporter Jesús Ibarra lives in Hermosillo, Sonora and carried out three investigative stories with the support of the Border Hub.Crédito: Jesús Ibarra

হেরমোসিলোর সোনোরা শহরের সাংবাদিক জেসুস ইবারা ফিলিক্স। তিনি বর্ডার হাবের সহায়তায় তিনটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। ছবি: জেসুস ইবারা ফিলিক্স

বর্ডার হাবের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, “যৌথ সহযোগিতার সংস্কৃতি তৈরি করেছে বর্ডার হাব। এমন সব ক্ষেত্রে সমর্থন দিয়েছে যা গবেষণা পরিবেশ, কাজের সময়সূচী এবং বাজেট তৈরি থেকে শুরু করে একটি স্পষ্ট, যৌক্তিক এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রকল্প পরিকল্পনা পর্যন্ত ব্যাপ্ত।”

একটি অনুসন্ধানের জন্য, বর্ডার হাব থেকে শেখা ডেটা সাংবাদিকতার দক্ষতা ব্যবহার করে ইবারা একটি ডেটাবেস নকশা করেন।

মিথ্যা চুক্তির স্কিম ব্যবহার করে সম্পদ সরানোর জন্যপৌরসভাগুলো কী উপায়ে অবৈধ কোম্পানি আর প্রতিষ্ঠানকে অর্থ প্রদান করছিল   তা তুলে ধরা হয় এই প্রতিবেদনে। “আমরা দেখতে পাই যে, সোনোরা অঞ্চলজুড়ে বিশেষ করে নোগালেস পৌরসভায় কাঠামো ও পদ্ধতিগতভাবে এই কোম্পানিগুলোকে ২২২ মিলিয়ন পেসো (১১.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) দেওয়া হয়েছে,” তিনি ব্যাখ্যা করেন।

এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা তাঁকে আরও কঠিন ও জটিল অনুসন্ধান পরিচালনাতেও সক্ষম করেছে, যেখানে তিনি চুক্তির বৃত্তান্ত, রশিদ, সরবরাহকারীর নিবন্ধন সম্পর্কিত তথ্য ও বিশাল ডেটাবেস বিশ্লেষণ করেছেন।

ইবারা বলেন, “আপনাকে আপনার কাজের প্রতি দায়বদ্ধ হতে হবে এবং সত্য তথ্য আনতে মনোযোগী হতে হবে। পাশাপাশি যতটা সম্ভব নির্ভুল ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে আগাতে হবে। আপনার অনুসন্ধানের বিষয় যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন, আপনি যদি এই শর্ত মেনে নিজের কাজের প্রতি মোহগ্রস্ত না হন তাহলে কখনও কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করতে পারবেন না।”

প্রশিক্ষণের জন্য বর্ডার হাবের কাছে তিনি চিরকৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, “এখানে এসে আমরা যাদের সঙ্গে পরিচিত ও সংযুক্ত হয়েছি তাঁরা সবাই আমাদের শিখিয়েছে যে, আইনি হয়রানি বা শারীরিক নিরাপত্তার হুমকি ও আক্রমণের সম্ভাবনাকে পাশ কাটিয়ে পদ্ধতিগত ও শৃঙ্খলা মেনে সমাজে প্রভাব রাখতে পারে এমন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করা মেক্সিকোতে অসম্ভব নয়।”

An infographic for the investigation conducted by Jesús Ibarra that dug into how more than 200 million Mexican pesos had been paid to “ghost” companies. Image: Carlos Mendoza.

ইবারার অনুসন্ধানে উঠে আসা সরকারের পক্ষ থেকে “বেনামি যে সব কোম্পানিকে” অর্থ দেয়া হয়েছে তার একটি ইনফোগ্রাফিক। ইলাস্ট্রেশন: কার্লোস মেনডোজা

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ঘিরে সব ধরনের ভয় এবং কুসংস্কারগুলো কাটিয়ে ওঠা গুরুত্বপূর্ণ।” — এল ইউনিভার্সাল অনুসন্ধানী  ডেটা সাংবাদিক মিরিয়াম রামিরেজ

ফোয়ার মাধ্যমে দুর্নীতি উন্মোচন:

সিনালোয়ার সাংবাদিক মিরিয়াম রামিরেজ। যিনি এক দশকেরও বেশি সময় নিয়ে মাদক পাচার, দুর্নীতি, রাজনীতি এবং মানবাধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিবেদন করছেন। বর্তমানে তিনি এল ইউনিভার্সাল পত্রিকার ডেটা ও অনুসন্ধান বিভাগে কাজ করছেন। তিনি দুর্নীতির গভীরে গিয়ে সত্য তুলে আনতে চেয়েছেন। এখানে কী পরিমাণ দুর্নীতি হয় আমরা তা সরকারি সম্পদ অন্যত্র সরানো, যেমন রাস্তা নির্মাণ কিংবা দরিদ্র শিশুদের সহায়তা কর্মসূচীর অচ্ছতা থেকে আন্দাজ করতে পারি।

বর্ডার হাবের সঙ্গে কাজ করতে আসার আগে থেকেই রামিরিজ জানতেন তথ্য চেয়ে কীভাবে ফোয়া অনুরোধ জানাতে হয়। তবে এখানে এসে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এবং সহায়তা তথ্য প্রাপ্তির বিষয়ে তাঁর জ্ঞানকে আরও ব্যাপ্ত করেছে। তিনি কর্তৃপক্ষের করের রশিদ খুঁজতে শুরু করেন। রামিরেজ  বলেন, “আমরা অসংখ্য তথ্য হাতে পেয়েছিলাম। বিভিন্ন প্রদেশ আর পৌরসভা কর্তৃপক্ষের হাজার হাজার রশিদ। কীভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ভুয়া কোম্পানির নাম দিয়ে জনসাধারণের তহবিল আত্মসাৎ করেছে— যা খুঁজে পাওয়াটা ছিল দারুণ বিষয় ।”

The journalist Miriam Ramírez advises reporters to put their fears about investigative reporting to one side, learning how to manage the time demands of the job, and putting the effort in to getting skilled up.Image: Miriam Ramírez

অনুসন্ধানী সাংবাদিক মিরিয়াম রামিরেজ। যিনি সঠিক টুল সম্পর্কিত প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরেন। ইলাস্ট্রেশন:

এর ফলে প্রকাশিত হয়, পেপার বর্ডারস নামের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। যেটি উন্মোচন করে কিভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি তহবিল সরিয়ে নেয়। আর জাল কাগজ তৈরি করে ব্যয়, সরকারি কাজ এবং সেবার দৃশ্যমানতা তৈরি করে। রামিরেজ জানান, কিভাবে সময় ব্যবস্থাপনা করতে হয়, যে সম্পর্কিত দক্ষতা আর সঠিক প্রশিক্ষণ ছাড়া এ প্রতিবেদনটি করা সম্ভব হতো না।

“অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে সব ধরনের সংশয় আর কুসংস্কার কাটিয়ে ওঠা জরুরী। আমাদের প্রায়ই বলা হয় প্রতিবেদনের গভীরে পৌঁছানো বা অনুসন্ধান করার মতো সময় হাতে নেই। এ অবস্থায় আপনাকে চেষ্টা করতে হবে, ধৈর্য রাখতে হবে, এবং বিভিন্ন টুল ব্যবহার করতে হবে।” — মিরিয়াম রামিরেজ

রামিরেজ আরো বলেন, মেক্সিকোতেই এমন অনেক টুল তৈরি করা রয়েছে, সাংবাদিকরা যা ব্যবহার করতে পারেন। যেমন ন্যাশনাল ট্রান্সপারেন্সি প্লাটফর্ম এবং পাবলিক কমার্স রেজিস্ট্রি-এর ওয়েবপেজ, যেখানে সব ধরনের ব্যবসার রেকর্ড  ও নথিপত্র পাওয়া যায়। তবে এগুলো আপনি কীভাবে ব্যবহার করবেন সে জন্য প্রশিক্ষণ এবং সময় বের করা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যাঁরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির পথে পা বাড়াতে চান তাদের জন্য।

“প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। যদি আমরা আমাদের কাজের জন্য প্রশিক্ষিত না হই, তবে আমাদের নিজ উদ্যোগে কর্মশালা এবং কোর্স খুঁজে বের করতে হবে।” — মিরিয়াম রামিরেজ


Priscila Cárdenas

প্রিসিলা কার্দেনাস একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও শিক্ষক। মেক্সিকোর সোনোরাতে থাকেন। তথ্য অধিকার, জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। বর্ডার হাবে সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম প্রোজেক্টো পুয়েন্টেতে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্বে নিয়োজিত। তিনি  সোনোরা অবজারভেটরি ফর অ্যাক্সেস টু পাবলিক ইনফরমেশন এর তত্ত্বাবধান করেন। ২০১৯ সালে মেক্সিকোর জাতীয় সাংবাদিকতা পুরস্কার জয় করেন । কানেকটাস, প্রোজেক্টো পুয়েন্টে এবং আরিস্টেগুই নিউজ থেকে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য ইন্টার-আমেরিকান প্রেস অ্যাসোসিয়েশন থেকে সম্মাননা লাভ করেছেন।

 

 

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

জিআইজেএন রিসোর্স সেন্টারের ২০২৪ সালের সেরা গাইড ও টিপশিট

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধাপে ধাপে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় সাংবাদিকদের। তথ্য সংগ্রহ, অংশীদারত্বমূলক কাজ, প্রকল্পের অর্থ যোগান , পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা জ্বালানী বিষয়ক প্রতিবেদন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার রসদ পেতে বেশ কিছু গাইড প্রকাশ করেছে জিআইজেএন। দেখুন এই প্রতিবেদন।

পরামর্শ ও টুল সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পাদকের বাছাই

জিআইজেএনের ২০২৪ সালের সেরা অনুসন্ধানী টুল

কৌতূহল, সাহস ও অংশিদারত্ব বছরজুড়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে এগিয়ে নিয়েছে। এই সাংবাদিকতাকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছে দারুন কিছু টুল। একনজরে দেখে নিন চলতি বছরের সাড়া জাগানো অনুসন্ধানে ব্যবহৃত টুল ছিল কোনগুলো।

সম্পাদকের বাছাই

প্রাণঘাতী আন্দোলন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি অনুসন্ধান: ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

আরও স্থান পেয়েছে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে অনুসন্ধান, জনসংখ্যার ডেটা নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গরমিল ও ক্ষমতাধর পুলিশ প্রধানের শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রসঙ্গ।

অনুসন্ধান পদ্ধতি গবেষণা

ডেনমার্কের কল্যাণ সংস্থার অ্যালগরিদমপদ্ধতি নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অনুসন্ধান

কল্যাণ সহায়তা বণ্টন পদ্ধতিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে অ্যালগরিদমভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করছিল ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠান। অনুসন্ধানে দেখা গেল, বৈষম্য বিলোপে নেওয়া এই উদ্যোগে উল্টো বাড়ছে বৈষম্য।