প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

বিষয়

মেক্সিকো থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল থেকে ফিলিপাইন : জিআইজেএনের অনুসন্ধানী বইয়ের তাকে

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

মেক্সিকোর খ্যাতনামা সাংবাদিক কারমেন আসেতেগিউ এর কাছে জানতে চেয়েছিলাম উদীয়মান সাংবাদিকদের জন্য তাঁর পরামর্শ কি। জবাব ছিল সোজাসাপ্টা, “পড়ুন”। এই দুনিয়া সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে তাঁর মতে বিভিন্ন স্বাদের বই এর একটি তালিকা সাংবাদিকদের জন্য অপরিহার্য টুল। কারণ বই আমাদের সামনে খুলে দেয় নতুন দিগন্ত। আমরা নিত্যনতুন ধারণা পাই বই থেকে, বই আমাদের কল্পনার জগতে খোরাক যোগায়।

বোইয়ং লিম পুলিশ কর্মকর্তা থেকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। পুলিৎজার সেন্টারের এআই অ্যাকাউন্টেবিলিটি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছেন এখন। তিনি বলছিলেন, পুরো কেরিয়ার জুড়ে তিনি বই পড়ে আর সিনেমা দেখে যা শিখেছেন তা-ই কাজে লাগিয়েছেন।

 

চেক সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম এর প্রতিষ্ঠাতা ও অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) এর সেন্ট্রাল ইউরোপ সম্পাদক পাভলা হলকোভার মতে, বই পড়া একজন সাংবাদিককে শ্রান্তি থেকে ‍মুক্তি দেয়। তিনি বলেন, “বিছানায় যাওয়ার আগে বই পড়ুন,উপন্যাস পড়ুন। এই অভ্যাস আপনি যে প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করছেন তা থেকে ক্ষণিকের বিরতি নিতে সাহায্য করে।”

কেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বই পড়া উচিত সে সম্পর্কে তাঁরা প্রত্যেকেই শক্তিশালী যুক্তি তুলে ধরেছেন। আর গত কয়েক বছরে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় বলতে গেলে আশাতীত অগ্রগতি হয়েছে। সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকাতেও সেরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের লেখা বই স্থান পেয়েছে।

আমাদের এই তালিকাটি ২০২৩ বা ২০২৪ সালে প্রকাশিত হার্ডব্যাক অথবা পেপারব্যাক থেকে বেছে নিয়েছেন জিআইজেএনের বৈশ্বিক দলটি। ফিলিপাইন থেকে মাল্টা, বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাহিনী এখানে স্থান পেয়েছে। (আমরা একই দেশ থেকে দুজন লেখকের বই বেছে নিয়েছি…কারণ আমাদের দল কী পড়ছে তার উল্লেখ আছে এই বইয়ের তাকে। ) এই বইগুলো লিখতে সাংবাদিকেরা দুর্গম শরনার্থী শিবিরে গেছেন, তাঁরা অভিলেখাগারে থাকা নথিপত্র কিংবা বিচারিক কাগজপত্র তন্ন তন্ন করে খুঁজেছেন। বইয়ের শিরোনামগুলোয় ঐতিহাসিক ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা অথবা করপোরেট দুনিয়ার চেপে যাওয়া তথ্য প্রকাশের চেষ্টা আছে। আবার কেউ কেউ গভীর অনুসন্ধানের পথে হেঁটে এমন কিছু উদ্ঘাটন করেছেন, যা শক্তিমানরা লুকিয়ে রাখতে চান। – লরা ডিক্সন, জ্যেষ্ঠ সম্পাদক


ওয়াগনার: এল হিস্টোরিক সেক্রেতে ডেস মারসেনার্স ডি পোউটিন (ওয়াগনার: দি সিক্রেট হিস্ট্রি অফ পুটিনস মার্সেনারিস)

লেখক : ম্যাথিউ অলিভিয়ের ও বেঞ্জামিন রজার 

প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: থিয়েরি চাভান্ত 

ছবি: স্ক্রিনশট, দ্যা সিক্রেট হিস্ট্রি অব পুটিনস মার্সেনারিজ

লেখক ম্যাথিউ অলিভিয়ের ও বেঞ্জামিন রজার রাশিয়ার সশস্ত্র ভাড়াট সৈনিক দল ওয়াগনারের আফ্রিকা থেকে ইউক্রেন পর্যন্ত উত্থানের সচিত্র বিবরণ দিয়েছেন বইটিতে। ভূমিকায় তাঁরা লিখেছেন, “এই বই যেন সত্য পুনঃস্থাপন করতে সমর্থ হয়, সেই সত্য যা গোপন রাখার চেষ্টা করেছেন কেউ কেউ । “ ২০২১-২০২৩ সাল পর্যন্ত আফ্রিকা কেন্দ্রিক ও প্যারিস ভিত্তিক একটি মাসিক ম্যাগাজিন Jeune Afrique জিউন আফ্রিকের জন্য করা অনুসন্ধানী ধারাবাহিকের ওপর বইটি লেখা। এই বইতে উঠে এসেছে কীভাবে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক (সিএআর) ওয়াগনারদের পরীক্ষাগারে পরিণত হয়েছিল সেই ২০১৮ সালে। ফরাসী সরকার ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে’ শক্তিশালী করতে তিনবছর ব্যাপী অপারেশন সেনগারিস নামে একটি সামরিক অভিযান চালায় দেশে। কিন্তু তখনও তারা ওয়াগনারদের সক্ষমতা ও তারা কী বিপদ ডেকে আনতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে তেমন একটা পাত্তাটাত্তা দেয়নি। ওয়াগনারের হামলার বেশ কিছু ঘটনার বিবরণ আছে বইতে। যেমন, সিএআর এ ওয়াগনারের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে প্রাণ হারানো রুশ সাংবাদিকের প্রসঙ্গ আছে এতে। শুধু তাই নয় পত্রিকার প্রথম পাতায় যাদের ছবি ছাপা হয় এমন পরিচিত মুখও স্থান পেয়েছে বইটিতে। যেমন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও বহুবছর ধরে মিলিশিয়া এই গোষ্ঠীর নেতা শতকোটি পতি ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন। আভ্যন্তরীণভাবে ওয়াগনারকে ‘দি অর্কেস্ট্রা’ নামে ডাকা হয়। কিন্তু ইউক্রেন ‍যুদ্ধের “কন্ডাক্টর” প্রিগোঝিনের যে চমকপ্রদ পতন , তা আফ্রিকায় রাশিয়ার প্রভাবের ইতি কিংবা, বিশ্বজুড়ে ওয়াগনারের কার্যক্রমের সমাপ্তি অদূর ভবিষ্যতে ঘটাবে বলে মনে হয় না। – অ্যালসিওনি ওয়েমার, ফরাসী সম্পাদক

হাউ টু স্ট্যান্ড আপ টু এ ডিক্টেটর : দি ফাইট ফর আওয়ার ফিউচার

লেখক : মারিয়া রেসা

ছবি : স্ক্রিনশট, স্ট্যান্ড আপ টু এ ডিক্টেটর

মারিয়া রেসার সাম্প্রতিক বইটি একজন শক্তিশালী প্রবর্তকের ততধিক শক্তিশালী স্মৃতিচারণমূলক লেখা। এখানে রেসা একজন নারী যিনি ফিলিপাইনের ডিজিটাল ও ইনভেস্টিগেটিভ মিডিয়া র‌্যাপলারের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও ২০২১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী

রেসা শুরু করেছেন তাঁর সংগ্রামমুখর শৈশব থেকে। সেখান থেকে কীভাবে তিনি ধীরে ধীরে তাঁর নিজের মতামত ও অস্তিত্বকে জোরালোভাবে জানান দিলেন তার বিবরণে আছে এখানে। এই বইতে তিনি উদযাপন করেছেন ভগ্নিত্বের বোধকে। র‌্যাপলারের সহপ্রতিষ্ঠাতারা কত জরুরি ভূমিকা পালন করেছেন সে কথা গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন রেসা। আরও বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইনজীবী আমাল ক্লুনির কথা, যিনি এই বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন । এর বাইরেও আছেন কাওলিফিয়ন গ্যালাঘার কেসি। এই কাওলিফিয়ন রেসাকে সরকারের দায়ের করা অগণিত মামলা লড়তে সাহায্য করেছেন। এর মধ্যে রেসা তাঁর সাংবাদিক জীবনের কথা বলেছেন। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় সিএনএনের প্রধান অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা, এবিএস-সিবিএনের প্রধান বার্তা সম্পাদকের ভূমিকার কথা এসেছে এতে। তিনি লিখেছেন, শেষোক্ত জায়গায়  তিন সহকর্মীকে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করতে তাঁকে কীভাবে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যেতে হয়েছিল। আপনি এই বইটি নৃতাত্ত্বিক লেন্স থেকেও দেখতে পারেন। বিশ্বব্যাপী কীভাবে অপতথ্যের বিস্তৃত জাল কাজ করছে এবং এর সঙ্গে কর্তৃত্ববাদের উত্থানের সম্পর্ক কি ? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিপদ ও ক্ষমতা সম্পর্কে সতর্কতা জারির কাজটিও করেছে বইটি। প্রাথমিকভাবে র‌্যাপলার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পরিবর্তনের সহায়ক মাধ্যম হিসেবে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরে এই মাধ্যমগুলোই ভুয়া ও অপতথ্য ছড়িয়ে গণতন্ত্রকে ভঙ্গুর করে তোলে।

বইটির অডিও সংস্করণটি অমূল্য। কারণ রেসা নিজেই বইটি পড়েছেন। এই বইটি পড়া শেষে আপনি শোশানা যুবফের “দ্যা এজ অফ সার্ভেইল্যান্স ক্যাপিটালিজম” এবং প্যাট্রিসিয়া ইভানজেলিস্তার স্মৃতিচারণমূলক বই ”সাম পিপল নিড কিলিং” (নিচে বইটির রিভিউ আছে) পড়ে দেখতে পারেন। দুটিই রেসার বই এর সম্পূরক বলতে পারেন)। – গ্যাব্রিয়েলা ম্যনুলি, উপপরিচালক 

দ্যা স্টোলেন ওয়েল্থ অফ স্লেভারি : এ কেস ফর রেপারেশনস

লেখক : ডেভিড মন্টেরো

ছবি: স্ক্রিনশট, দ্যা স্টোলেন ওয়েলথ অব স্লেভারি

দাসপ্রথার ক্ষতিকর অনেক প্রভাবই আসলে অঙ্ক দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। কিন্তু ডেভিড মন্টেরোর অনুসন্ধানী ইতিহাস ক্ষতিপূরণ বা অপরাধের কারণে সৃষ্ট ক্ষত নিরসনের উদ্যোগ নিয়ে যে আলোচনা তাতে নতুন করে আলো ফেলেছে। দাসদের কাজে লাগিয়ে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো যে বেশুমার লাভ করেছে এবং তারপর “করপোরেট ক্ষতিপূরণের” কথা বলেছে সেসব তথ্য তিনি একত্র করেছেন। দাসপ্রথা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে সীমাবদ্ধ ছিল এবং গৃহযুদ্ধের পরপরই এই সম্পদ শেষ হয়ে যায়, এমন কল্পকথা তিনি মিথ্যে প্রমাণ করতে চেয়েছেন। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, বেশিরভাগ সম্পদ দেশটির উত্তরের প্রতিষ্ঠানগুলোয় চলে যায়। এই শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে নিউ ইয়র্ক, বোস্টন, ও ফিলাডেলফিয়া। জমি-জিরেত ক্ষেত-খামান আর বনজঙ্গলের মালিকদের এ অঞ্চেলের লোকজন টাকা ধার দিতেন, তারপর সেই টাকা দিয়ে গড়ে তুলতেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এভাবেই গড়ে উঠেছিল মার্কিন অর্থনীতি।

ক্ষতিপূরণ বিষয়ক কিছু মাইলফলক মামলা থেকে বেরিয়ে আসা তথ্য ছিল মন্টেরোর এই বইয়ের ভিত্তি। তিনি পেশায় সাংবাদিক, কাজ করেছেন দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস, দ্যা নেশন ও হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউতে। ১৮শ সাল থেকে কোম্পানির লেজার আর নথিপত্রের মধ্যে ডুবে থেকেছেন তিনবছর। ওই সময়টায় যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি পণ্যের শীর্ষে ছিল তুলা। মন্টেরো দেখতে চাইছিলেন উত্তরের ব্যবসা বাণিজ্যের দক্ষিণে দাসদের দিয়ে চাষবাস করানোর কোনো সম্পর্ক আছে কি না। একটা উদাহরণ: নিউ অরলিয়েন্সে উনিশ শতকে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ব্যাংকটি নিয়মিত সেইসব মক্কেলদের বন্ধক দিত যাদের ক্রীতদাস জামানত হিসেবে রাখার সামর্থ ছিল। এই ব্যাংকটি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহত্তম। এর প্রধান শাখা নিউইয়র্কে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম “চোখ ধাঁধানো” লাভ করে এসেছে। এই লাভের শুরু সেই ১৮শ সালে।

মন্টেরো যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেশনগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান – যেমন বিশ্ববিদ্যালয় ও চার্চের কথা বলেছেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলোও “দাসপ্রথাকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঘটে যাওয়া ভুল, অন্যায়, মূল্যবোধের খামতির কথা প্রকাশ করে, যা ছিল অভূতপূর্ব।” এই জাতীয় সংলাপেও করপোরেশনগুলোর নীরবতা বিকটভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। – অ্যালেক্সা ভ্যান সিকেল, সহযোগী সম্পাদক

আই ফিল নো পিস : রোহিঙ্গা ফ্লিইং ওভার সিজ অ্যান্ড রিভার্স

কামিল আহমেদ

ছবি : স্ক্রিনশট, আই ফিল নো পিস

পুরো বই জুড়ে গার্ডিয়ান সাংবাদিক কামিল আহমেদ বারবার একটি বাক্যই ব্যবহার করেছেন, “অশান্তি লাগে।” এই পুনরুক্তি সজোরে ধাক্কা দেয়, মনে করিয়ে দেয় সারাক্ষণ হুমকির মুখে থাকা রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আমাদের অগণিত ব্যর্থতার কথা। রাগ, দুঃখ আর অসহায়ত্বের বোধ ছাড়া এই এই বিবরণ পড়া কঠিন।

রোহিঙ্গারা বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত সংখ্যালঘু জাতিগুলোর একটি। ২০১৭ সালের আগস্টে সশস্ত্র হামলা, সহিংসতা ও মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘনের কারণে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। লেখক ঐতিহাসিক সাক্ষ্য প্রমাণ, এই সম্প্রদায়কে কেন্দ্র করে চলা জটিল সব বিতর্ককে তুলে এনেছেন। তাঁর গবেষণাকে সমৃদ্ধ করেছেন বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে নিয়মিত গিয়ে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা দেশত্যাগ করে এসব শিবিরে আশ্রয় নেন।

বইয়ের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বর্ণনা রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে মানবজাতির সম্মিলিত ব্যর্থতার বয়ান, যেখানে মিয়ানমারের বর্তামান নেতৃত্ব থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের প্রধান অং সাং সুকি, বাংলাদেশ থেকে শুরু করে জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থার সবাই ব্যর্থ। একটি জাতিকে যখন পুরোপুরি মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে, তখনও তারা সাড়া দিতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল।

স্বজনের লাশ আর পুড়তে থাকা ঘরদোর ফেলে জীবন হাতে নিয়ে রোহিঙ্গারা দেশ ছাড়েন। এই যাত্রায় তাদের সঙ্গী ছিল উত্তাল সাগর, জঙ্গল, মানবপাচারকারী। কেউ কেউ মারা গেছেন সাগরেই, কেউ অনাহারে থেকেছেন, কেউ কেউ শিকার হয়েছেন প্রতারণার। যাঁরা বেঁচে গেছেন তাঁরা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। এই শিবির বিশ্বের বৃহত্তম। তাদের অনেককেই মৃত্যুভয় তাড়িয়ে বেড়ায়। আহমেদের প্রশ্ন, এতসব কিছুর মধ্যে কে শান্তি পাবে? – শেখ সাবিহা আলম, বাংলা সম্পাদক

এ ডেথ ইন মাল্টা : অ্যান অ্যাসাসিনেশন অ্যান্ড এ ফ্যামিলি’জ কোয়েস্ট ফর জাস্টিস

লেখক : পল কেরুয়ানা গ্যালিযিয়া

ছবি: স্ক্রিনশট , এ ডেখ ইন মাল্টা

ড্যাফনে কেরুয়ানা গ্যালিজিয়া মাল্টার প্রথিতযশা অনুসন্ধানী সাংবাদিক ছিলেন। নাম করেছিলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে রিপোর্টিং করে। ২০১৭ সালে গাড়িবোমা বিস্ফোরণে তিনি নিহত হন। ড্যাফনের তিন সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোটটি পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও লেখক পল কেরুয়ানা গ্যালিযিয়া । তিনি তাঁর মায়ের হত্যাকাণ্ড এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতে তাঁর পরিবারের যে যুদ্ধ সে কথা তুলে এনেছেন বইতে।

তিনি বইটি শুরু করেছেন মাল্টার ইতিহাস দিয়ে। দারুন সে বর্ণনা। মাঝে মাঝে ঠাট্টার ছলে লিখেছেন, পারিবারিক ইতিহাস থেকে ধার করে মজার সব ঘটনাকে জুড়ে দিয়েছেন। বইটি যত এগোয় ততই আমরা বুঝতে পারি দেশটির জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে। কীভাবে এই পরিস্থিতি হত্যার পরিকল্পনায় গড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর মা খুন হন ধীরে ধীরে আমরা সে জায়গায় গিয়ে পৌঁছাই।

প্রতিটি অধ্যায়ে লেখক যেন স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসেছেন, সেখানে দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ ঘটনা উঠে এসেছে বিস্তারিতভাবে, দরদের সঙ্গে তিনি তাঁর মায়ের ছবি এঁকেছেন, ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর প্রথাভাঙা চরিত্রকে। আবার তাঁর খোলাখুলি বর্ণনা থেকে পাঠকরা বুঝতে পারেন, বছরের পর বছর হয়রানি ও পৈশাচিক ভীতিজাগানিয়া কার্যক্রমের কী প্রভাব ড্যাফনে ও তাঁর কাছেপিঠে থাকা মানুষগুলোর ওপর পড়েছিল। খুঁটিনাটি এই বর্ণনাগুলো জরুরি, যদিও বেশিরভাগ সময় এসব নিয়ে আলোচনা হয় না, আমরা জানতেও পারিনা সাংবাদিকদের ওপর এই ভয় দেখানোর প্রভাব কেমন হয়। সবশেষে, আমরা প্রবেশ করি তাঁর হৃদয়বিদারক, কিন্তু উৎসাহব্যঞ্জক যাত্রায়, যেখানে তাঁর পরিবার, বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান ড্যাফনে হত্যাকান্ডের বিচারের জন্য যে নিরন্তর প্রচার তাতে সমর্থন যুগিয়ে গেছে।

মাল্টার অধিবাসী ও সাংবাদিক হিসেবে, “এ ডেথ ইন মাল্টা“ নানাভাবে দেশের কথা স্মরণ করায়। কিন্তু আধুনিক গণতন্ত্রে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ভূমিকা নিয়ে যাঁরা ভাবেন তাঁদের জন্য এই বই অবশ্যপাঠ্য। – জোয়ানা ডিমার্কো, ভিজ্যুয়াল অ্যান্ড নিউজলেটার এডিটর

সাম পিপল নিড কিলিং: আ মেমোয়ার অব মার্ডার ইন মাই কান্ট্রি

লেখক: প্যাট্রিসিয়া ইভানজেলিস্টা

ছবি: স্ক্রিনশট, সাম পিপল নিড কিলিং

২০১৬ সালে ক্ষমতায় এসে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে “মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” নামার ঘোষণা দেন। ২০২২ সাল পর্যন্ত তাঁর শাসনামলের ছয় বছরে হাজারো বেসামরিক মানুষ খুন হন। সাদাচোখে নীতিটি দেশের মাদক সমস্যা নির্মূলের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হলেও দুতার্তে প্রশাসন দমন-পীড়নের কাজেই তা ব্যবহার করেছে। বইটি দুর্বিসহ ওই সময়ের স্মৃতিকথা, যা সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা আর অসংখ্য বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নির্মমতার বয়ান তুলে ধরে।

দুতার্তে ছিলেন দাভাও সিটির মেয়র। ছোটখাটো সন্ত্রাসী আর মাদক ব্যবসায়ীদের হত্যার মাধ্যমে কীভাবে তিনি জনগণের মন জয় করে মেয়র থেকে রাষ্ট্রপতি বনে যান? কীভাবে তাঁর এহেন কর্মকাণ্ড জনমনে ভীতি সৃষ্টির পরিবর্তে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করে? দুতার্তের ক্ষমতায় আসার পটভূমি হিসেবে ব্যাপক দুর্নীতি আর স্বৈরাচারী শাসনের ইতিহাসকে তুলে ধরেছেন র‌্যাপলারের প্রাক্তন অনুসন্ধানী প্রতিবেদক প্যাট্রিসিয়া ইভানজেলিস্টা। তাঁর মতো এমন এক স্বৈরশাসককে কেনইবা জনগণ বারবার ভোট দিয়েছে? কী তাদের উৎসাহ যুগিয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তেরে আকর্ষণীয় যুক্তি-প্রমাণ হাজির করে বইটি। জনগণ কেন এ নেতাকে সমর্থন করেছিল ব্যাখা করে তাও।

ইভানজেলিস্টা তাঁর বইয়ে মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে সৃষ্ট সহিংসতা থেকে শুরু করে আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর যন্ত্রনা, ভুক্তভোগী ব্যক্তি আর তাদের নিকটজনদের গল্পগুলো নিয়ে এসেছেন। প্রথম-পুরুষে লেখা এ বইটি মাদকযুদ্ধের ভয়াবহতার অসামান্য দলিল: মাদকযুদ্ধের জের ধরে ঘটা নৃশংসতাগুলো কেন এতটা দীর্ঘ সময় ধরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলতে পেরেছিল তা বিশদভাবে বর্ণনা করে। আমদের দেখায় যে, কীভাবে একটি সমাজকে সহজেই বড় বড় কথার মাধ্যমে প্ররোচিত করে প্রশাসনিক জবাবদিহিহীনতাকে সমর্থন বা উৎসাহিত করা যায়। – ইউনিস আও, গ্লোবাল টিম ম্যানেজার

ওয়েস্টল্যান্ড: দ্য ডার্টি ট্রথ অ্যাবাউট হোয়াট উই থ্রো অ্যাওয়ে, হোয়ার ইট গোস, অ্যান্ড হোয়াই ইট ম্যাটারস

লেখক: অলিভার ফ্রাঙ্কলিন-ওয়ালিস

ছবি: স্ক্রিনশট, ওয়েস্টল্যান্ড

পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানী সাংবাদিক অলিভার ফ্র্যাঙ্কলিন-ওয়ালিসের এ বইটি বিশ্বজুড়ে বর্জ্য সংকটের অন্ধকার বাস্তবতার ওপর আলো ফেলে। পতিত জমি, রিসাইক্লিং সেন্টার এবং অবৈধভাবে আবর্জনা ফেলা হয় এমন জায়গাতে গিয়ে তথ্য যোগাড় ও তা বিশ্লেষণ করেন ওয়ালিস। বিভিন্ন অনুসন্ধানী কৌশলের সাহায্যে সরকারি সংস্থা, এনজিও ও একাডেমিক গবেষণার প্রতিবেদন আর ডেটা ব্যবহার করে বর্জ্য উৎপাদন, নিষ্কাষণ এবং পুনর্ব্যবহার পরিসংখ্যানের ওপর আলোকপাত করেন।

বর্জ্য ফেলার জায়গাগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথা বলেন: যার মধ্যে ছিলেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী থেকে শুরু করে পরিবেশকর্মী, নীতিনির্ধারক, বিজ্ঞানী ও স্থানীয় ব্যক্তি। এভাবে তিনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বৈশ্বিক সমস্যার বিভিন্ন দিকগুলো তুলে ধরেন।

নয়া দিল্লির পতিত জমি থেকে ঘানার সেকেন্ড-হ্যান্ড পোশাক বাজারের সুনির্দিষ্ট ঘটনা তুলে ধরেছেন, যেখানে উঠে এসেছে বর্জ্য সংকটের বিভিন্ন দিক। বিস্তারিত গবেষণামূলক বর্ণনা পদ্ধতি আপনার পাঠ্য গতির লাগাম খানিকটা টেনে ধরতে পারে, কিংবা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বৈশ্বিক আলাপে মধ্যপ্রাচ্যের অনুপস্থিতির বিষয়টি চোখে লাগলেও সামগ্রিকভাবে বইটি পড়া অত্যন্ত জরুরী বলেই আমি মনে করি। এ বছর আমার পড়া সেরা বইয়ের একটি।– মাজদোলিন হাসান, আরবি সম্পাদক

ক্রসিং দ্য লাইন: দ্য ইনসাইড স্টোরি অব মার্ডার, লাইজ অ্যান্ড ফলেন হিরো

লেখক: নিক ম্যাককেনজি

ছবি: স্ক্রিনশট, ক্রসিং দ্যা লাইন

অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত বীরযোদ্ধা; যুদ্ধক্ষেত্রে করা ভয়ঙ্কর অপরাধের অভিযোগ; সবকিছু ধামাচাপা দেওয়ার ষড়যন্ত্র; আদালতে করা নাটক কীভাবে গোটা জাতিকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিল—বাস্তবের এসব ঘটনা ছিল হলিউডের সিনেমার মতো অসংখ্য নাটকীয়তায় ভরপুর। “ক্রসিং দ্য লাইন”-এ অনুসন্ধানী সাংবাদিক নিক ম্যাককেনজি তুলে ধরেন কীভাবে তিনি ও তাঁর সহকর্মী কর্পোরাল বেন রবার্টস-স্মিথের বিরুদ্ধে আনা হত্যাকাণ্ড এবং নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ প্রমাণ করেন। অস্ট্রেলিয়ার এলিট স্পেশাল এয়ার সার্ভিসের সদস্য ছিলেন বেন রবার্টস-স্মিথ, যিনি আফগানিস্তান যুদ্ধের সময় ভিক্টোরিয়া ক্রস পুরস্কার পেয়ে খ্যাতি ও সম্পদের মালিক হয়ে যান।

রবার্টস-স্মিথ একজন সুঠামদেহী সুদর্শন সৈনিক । সারা দেশ যাকে “ফাদার অব দ্য ইয়ার” খেতাবে ভূষিত করে। বইটির ষষ্ঠ অধ্যায়ে তাই সঙ্গত কারণেই তাকে “সুপারম্যান” বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে সামরিক বাহিনী থেকে তাঁর অবসরের কিছুদিন পরেই উন্মোচিত হতে থাকে আসল ঘটনা। জানা যায় তিনি তাঁর সহকর্মী সৈন্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। শুধু তাই-ই নয় নিরস্ত্র আফগান বন্দীদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এরপর অস্ট্রেলিয়ার এসএএস (স্পেশাল এয়ার সার্ভিস) বাহিনীর আচরণ নিয়ে  অভ্যন্তরীণভাবে তদন্ত চালায় সরকার। সে তদন্তের জের ধরে রবার্টস-স্মিথের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো নিয়ে অনুসন্ধানে নামেন অস্ট্রেলিয়া’স সিক্সটি মিনিটস-এর সাংবাদিক নিক ম্যাককেনজি এবং টিভি ও সংবাদপত্রের ঝানু প্রতিবেদক ক্রিস মাস্টার্স। বছরের পর বছর ধরে তাঁরা সাক্ষীদের খুঁজে বের করেন। বিভিন্ন সময়ে কী ঘটেছিল তা খতিয়ে দেখেন। জড়ো করেন সব তথ্য-প্রমাণ। তাঁদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো মিডিয়ায়জুড়ে ঝড় তোলে। রবার্টস-স্মিথ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। তাঁর বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরিচিত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় সাংবাদিক ও তাদের প্রকাশনার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন।

একটি দেশ, যেখানে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এমন অসংখ্য মামলার কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে রবার্টস-স্মিথের কর্মকাণ্ডের অঘোষিত বিচার  আর অপ্রিয় সত্য প্রকাশের অধিকারকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা মানহানি মামলাটি তাই ভীষন গুরুতর হয়ে ওঠে। বিচারক মামলাটি খারিজ করে দেন। যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য একটি যুগান্তকারী বিজয় হিসেবে দেখা হয়। এই  অনুসন্ধান আর পরবর্তী আইনি লড়াই নিয়ে আরও বিস্তারিত জানার জন্য গার্ডিয়ান পডকাস্টের দ্য মিডিয়া ভার্সেস বেন রবার্টস-স্মিথ শিরোনামের পর্বগুলো শুনতে পারেন।– রিড রিচার্ডসন, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক

ওভারডোজ তুর্কিয়ে (ওভারডোজ তুর্কি)

লেখক: চেঙ্গিজ এরদিন্চ

ছবি: স্ক্রিনশট, ওভারডোজ তুর্কি

জ্যেষ্ঠ অনুসন্ধানী সাংবাদিক এফ. চেঙ্গিজ এরদিন্চের পাঁচশ পৃষ্ঠার এ বইটি মাদক ব্যবসার সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক উপস্থাপন করেছে। বিভিন্ন আর্কাইভ ঘেঁটে তথ্য বের করেছেন তিনি। বর্তমান সময়ের বৈজ্ঞানিক ডেটা ব্যবহার করে দেখিয়েছেন বছরের পর বছর ধরে কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে মাদক ব্যবসা।

এরদিন্চ বইটির প্রথম সংস্করণটি লিখেছিলেন ১৯৯০-এর দশকে। যেখানে ইস্তাম্বুলের তিনটি আফিম কারখানার গল্প, আর মাদকচক্রের সঙ্গে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের যোগসূত্রকে গোপন কূটনৈতিক নথিপত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেন। বইটির নতুন সংস্করণে, এরদিন্চ সাম্প্রতিক বছরগুলোর ওপেন সোর্স প্রতিবেদন ব্যবহার করেন। যেখানে ২০২১ সালের ময়লা পানি বিশ্লেষণের তথ্যও অন্তর্ভুক্ত। এ তথ্যগুলো সাধারণ জনগণের মধ্যে মাদক ব্যবহারের ব্যাপকতাকে তুলে ধরে। তিনি দেখিয়েছেন মাদক শুধু বড় শহরেই নয়, তুরস্কের ছোট শহর আর নগরেও ছড়িয়ে পড়েছে। গভীর বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন কীভাবে সংঘবদ্ধ অপরাধচক্র বৈধ ওষুধ উৎপাদনকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বব্যাপী অবৈধ মাদক বাজারে আফিম ও মরফিন সরবরাহ করে।

মাদক পাচারের বৈশ্বিক বাজারের ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে, এরদিন্চ আমাদের সামনে এনেছেন কীভাবে বিভিন্ন দেশের সরকার মাদক উৎপাদন ও বিতরণে প্রভাব ফেলে। সরকারের নীতিমালা কীভাবে ব্যবসাকে গোপনে পরিচালিত করতে বাধ্য করে। তিনি বৈশ্বিক বাণিজ্যের অর্থনৈতিক দিকটি বিশ্লেষণ করেছেন এবং মাদক কীভাবে জনস্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে তা বর্ণনা করেছেন। আরো তুলে ধরেছেন মাদকের কারণে ঘটা মর্মান্তিক মৃত্যুগুলোকেও।

তুরস্কের সংঘবদ্ধ অপরাধ, মাফিয়াদের সম্পর্ক এবং মাদকের বিস্তার নিয়ে চমৎকার আলোচনা করেছেন লেখক। ব্যবহার করেছেন আর্কাইভ তথ্য, অবহেলিত প্রতিবেদন আর আদালতের রেকর্ড। বইটির বর্তমান সংস্করণ নিয়ে তাঁর ব্যাখ্যাসহ একটি ইউটিউব ভিডিও রয়েছে। তুরস্ক সম্পর্কে আরও জানতে চাইলে, ফুরকান কারাবাইয়ের লেখা “গুরবান: ফ্রম দ্য রেড আর্মি টু সিলিভরি” বইটির কথাও আমি উল্লেখ করবো। তিনি একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক, যিনি তুরস্কের ওপর মাফিয়াদের প্রভাব নিয়ে করা কাজের মাধ্যমে নাম করেছেন। – পিনার দাগ, তুর্কি সম্পাদক

মাস্টার্স অব দ্য লস্ট ল্যান্ড: দ্য আনটোল্ড স্টোরি অব দ্য ফাইট টু ওন দ্য অ্যামাজন

লেখক: হেরিবার্তো আরাউজো

ছবি: স্ক্রিনশট, মাস্টার্স অব দ্য লস্ট ল্যান্ড

নেহাৎই একটি সূত্র ধরে অনুসন্ধানী সাংবাদিক হেরিবার্তো আরাউজো পৌঁছে যান ব্রাজিলের রন্ডন ডো পারাতে। একটা সময় উত্তর ব্রাজিলের শান্ত এ নগরে মানুষ আসতো তাদের ভাগ্য গড়তে। জঙ্গল পরিস্কার করে গরুর খামার আর কাঠের কারখানা বানিয়েছিল তাঁরা। তিনি গিয়ে দেখলেন, বনভূমি জুড়ে চলছে সম্পদ আহরণের লড়াই। “মানবিক প্রতিযোগিতার ভূমি” নামে পরিচিত রন্ডনে জমি দখলেকে ঘিরে ক্ষুদ্র কৃষকেরা এখন ধনী বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন। উপেক্ষিত আইনের শাসন। বইটির গল্প এগিয়ে গেছে ইউনিয়ন নেতা ডেজিনহোকে ঘিরে। যিনি ভূমিহীন কৃষকদের পক্ষ নিয়ে কাজ করছিলেন, বেশ কয়েকদফা হুমকির পর তাকে বাড়ির বাইরে খুন করে ফেলে রাখা হয়।

অনুসন্ধানে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত দিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি। যেখানে নোট আকারে সংক্ষিপ্ত বিবরণই আছে ৭০ পৃষ্ঠারও বেশি। ২০০ লোকের সাক্ষাৎকার রয়েছে। ডেজিনহো হত্যা মামলায় জড়িত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি আইন প্রণেতা, বিচারক, এবং প্রসিকিউটরের সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। লেখক “প্রায় ১,০০,০০০ পৃষ্ঠার অপ্রকাশিত নথির কথা উল্লেখ করেছেন” যেগুলো ব্রাজিলের প্রশাসন ও ফেডারেল আদালত, নোটারি পাবলিক অফিস, দৈনিক পত্রিকা, সরকারি ও বেসরকারি আর্কাইভ এবং লাইব্রেরি থেকে সংগ্রহ করা। যা কাহিনীর পটভূমির সত্যতাকে তুলে ধরে। গল্প বলার জন্য ব্রাজিলের তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও সংগ্রহ করেন আরাউজো।

ন্যায়বিচার পেতে ডেজিনহোর পরিবারকে যে কঠোর আইনি লড়াইয়ের মোকাবেলা করতে হয়েছিল রয়েছে সেই বিস্তারিত বিবরণ। বইটিতে আমরা একাধিক কেন্দ্রিয় চরিত্রের গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি দেখতে পাই, যারা পাঠককে ঘটনার গভীরে টেনে নেয়। এ বইটির মূল শক্তি হচ্ছে একটি পরিবারের গল্পের গভীর উপস্থাপন এবং তাদের কাহিনীতে নিমজ্জন। ডেজিনহোর মতো আমাজন সীমান্তের অন্যান্য স্থানে ঘটা সমস্যার ওপরও আলো ফেলার কথা বলে। রন্ডনের মতো একালাগুলোতে চলা সহিংসতা ও আইনের অভাব কীভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে প্রভাবিত করেছে—এটাই আরাউজোর বইয়ের অন্যতম শক্তিশালী বার্তা ।

আরাউজো লেখেন, ” পরিবেশবাদী কর্মী, আদিবাসী নেতা, ভূমি অধিকারকর্মী এবং সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কর্মকর্তাদের ওপর আমাজন বনের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। প্রতিদিন তারা সামাজিক সংঘাতের মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেন, সামনের সারিতে থাকেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই বইটি লিখতে বসে আমি অনেকবার ভেবেছি যে তারা আসলে ব্যক্তিগতভাবে কী মূল্য পরিশোধ করেন।” ডেজিনহোর কন্যা জোয়েলমিনহা তাকে বলেছিলেন: “আমার বাবা জানতেন যে তিনি মারা যাবেন, এবং তাঁর মৃত্যুর পর, ফাজেন্দাগুলো [ফার্ম] অন্যের হাতে চলে যাবে… যদিও আমাদের গল্পটা সুন্দর কোনো বিজয়ের গল্প নয়, কারণ আমাদের কাছ থেকে আমাদের বাবাকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।” – লরা ডিক্সন, জ্যেষ্ঠ সম্পাদক

হাউ টু স্টিল আ গোল্ডমাইন: দ্য অরোরা স্টোরি

লেখক: ডায়ান হকার

ছবি: স্ক্রিনশট, হাউ টু স্টিল আ গোল্ডমাইন

নন-ফিকশন লেখাগুলো আমাকে সবসময়ই কল্পকাহিনীর চেয়েও বেশি মুগ্ধ করে। আমার ধারণাকে আরো পোক্ত করেছে ডায়ান হকারের এ বইটি। তিনি এমন একজন সাংবাদিক যিনি তাঁর পেশাজীবনের বেশিরভাগ সময়জুড়ে আইনি নিয়ে রিপোর্টিং করে কাটিয়েছেন। নথিপত্রে ঘাঁটাঘাটি করেছেন। খুঁজে বের করেছেন সোর্স ও সাক্ষীদের। নিশ্চিত করেছেন তথ্যের সত্যতা। সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করেছেন চারপাশের চলমান ঘটনা। যাতে দক্ষিণ আফ্রিকার খনিশিল্পকে কেন্দ্র করে অফিসকক্ষ থেকে মাইনফিল্ডে চলা দাঙ্গা-হাঙ্গামার সত্যিকার চিত্তাকর্ষক গল্পকে উন্মোচিত করা যায়।

২০০৯ সালে পামোদজি গোল্ড মাইনসকে কিনে নেয় কৃষ্ণাঙ্গ মালিকানাধীন কোম্পানি অরোরা এমপাওয়ারমেন্ট সিস্টেমস। উদ্দেশ্য ভঙ্গুর দশা থেকে পামোদজিকে পুনউদ্ধারের চেষ্টা। অরোরা এমপাওয়ারমেন্ট রাজনৈতিকভাবেও শক্তিশালী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। পামোদজির ব্যর্থ ব্যবসাকে পুনরুজ্জীবিত এবং কর্মীদের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে অঙ্গীকার করে তাঁরা—হকারের গল্প গড়ে উঠেছে এ ঘটনাটিকে ঘিরে। অথচ দেখা যায় বিনিয়োগকারীরা বর্ধিত একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাণিজ্য চুক্তির অধীনে কোম্পানিটি চালাচ্ছিলেন, করেছিলেন ভিন্ন পরিকল্পনা। দুই বছরের জন্য তাঁরা কর্মীদের বেতন না দিয়ে স্বর্ণ উত্তোলন চালিয়ে যান, আর কোম্পানির সম্পদ গোপনে লুট করেন। কর্মীরা যখন বকেয়া বেতনের জন্য ধর্মঘট শুরু করেন, তখন এই প্রতারণামূলক কার্যকলাপের প্রকৃত মাত্রা প্রকাশ পায়। যা আরো খারাপ দিকে মোড় নেয়।

হকার তাঁর লেখায়  পর্দার আড়ালের ঘটনা আর লুকানো চরিত্রগুলোর মুখোশ খুলে দেন। অরোরা কেসে যা ঘটেছিল তা ব্যাখ্যা করেন। তাঁর উন্মোচিত তথ্য ছাড়া কারো পক্ষেই হয়তো উপলব্ধি করা সম্ভব ছিল না যে,দক্ষিণ আফ্রিকার খনিশিল্প, অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ঘটনাটি কী ধরনের প্রভাব ফেলেছিল।

দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসের কারণে, হকারের বইতে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম, স্থান এবং ব্যবসায়িক সূত্রগুলোকে সংযুক্ত করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে। আপনার যদি এখানকার মানুষের জীবন সম্পর্কে গভীর ধারণা নাও থাকে তবে হকারের লেখনী এবং সূক্ষ্ম বিবরণ, বর্ণিত দৃশ্য আর  উন্মোচিত জটিল তথ্যগুলো সবকিছু বুঝতে সাহায্য করবে। এটি যদি বাস্তব জীবনের জটিল কর্পোরেট অপরাধের কাহিনী না হতো, তাহলে গল্পটি ঠিক কল্পকাহিনীর মতো শোনাতো। — বেনন হারবার্ট ওলুকা, আফ্রিকা সম্পাদক

লিলিয়ানা’স ইনভিন্সিবল সামার: সিস্টার’স সার্চ ফর জাস্টিস

লেখক: ক্রিস্টিনা রিভেরা গারজা

ছবি: স্ক্রিনশট, লিলিয়ানা’স ইনভিন্সিবল সামার

বইটির লেখক ক্রিস্টিনা রিভেরা গার্জা। যিনি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে ঘটা নিদারুণ ঘটনার গভীর অনুসন্ধান করেছেন। তাঁর লেখা এ স্মৃতিকথাটি ২০২৪ সালে পুলিৎজার জয় করে। বোন লিলিয়ানার জীবন ও অকাল মৃত্যুর রহস্য খুঁজেছেন ক্রিস্টিনা । লিলিয়ানকে কেন মরতে হলো তা জানার চেষ্টা করেছেন। দিনের পর দিন যে মৃত্যু তাকে তাড়া করে ফিরেছে। বোনের ব্যক্তিগত নোট ও নথি জড়ো করে তাই তিনি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন, ৩০ বছর আগে মেক্সিকোতে কী ঘটেছিল। কী ঘটেছিল যখন লিলিয়ানা তাঁর নির্যাতনকারী প্রাক্তন প্রেমিকের হাতে খুন হন। এখানে তিনি সেই সত্য উন্মোচন করেন। বইটি লিলিয়ানার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাঞ্জলি। একইসঙ্গে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে তোলা কণ্ঠস্বর।

এ স্মৃতিকথাটি অন্যায়, শোক, এবং নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা টিকিয়ে রাখতে সহায়ক ব্যবস্থা ও সমাজের ব্যর্থতার দিকে আঙ্গুল তোলে। ক্রিস্টিনা কেবল স্মৃতিকথা এবং অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতাকে মিশিয়ে বেদনাদায়ক পারিবারিক ট্র্যাজেডি তুলে ধরেননি; সমাজ কীভাবে প্রায়ই নারীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়, আর তাদের গল্পগুলো কীভাবে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়—গুরুত্বপূর্ণ এ প্রশ্নও রেখেছেন। পুলিৎজার পুরস্কারের বিচারকরা যেমন বলেন, এটি “একটি ধ্রুপদী কাহিনী, যা স্মৃতিকথা, নারীবাদী অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতা এবং কবিতার মতো করে জীবনের গল্পের মিশেলে তৈরি, যা প্রিয়জন হারানোর শোক থেকে নেওয়া দৃঢ় প্রতিজ্ঞার মিশ্রন।

সাংবাদিকদের জন্য বইটি বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক, বিশেষ করে যে সব দেশে নারী হত্যার ঘটনা ঘটে। এখানে ভুক্তভোগীর নাম রয়েছে এবং তাঁর কাহিনী জানিয়ে, এই বর্ণনা পরিসংখ্যানের বাইরে গিয়ে একটি মানবিক গল্পকে ফুটিয়ে তোলে। এটি লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে নৈতিক সাংবাদিকতার গুরুত্বও তুলে ধরে। কীভাবে মর্যাদার সঙ্গে এমন গল্প বলা যায় সে বিষয়ক একটি মডেলও সরবরাহ করে। — আন্দ্রেয়া আরজাবা, স্প্যানিশ সম্পাদক

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

IJF24 Reframing Visual Journalism AI Deepfake

পদ্ধতি পরামর্শ ও টুল সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ডিপফেকের যুগে ভিজ্যুয়াল সাংবাদিকতা: সত্য যাচাই ও আস্থা অর্জন

ভিজ্যুয়াল সাংবাদিকতা এখন তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এগুলো হলো সিন্থেটিক কনটেন্টের “উত্তাল সমুদ্রে” মৌলিক বিষয়বস্তু শনাক্ত; জনগণের আস্থা ধরে রাখা; এবং “প্রকৃত ছবি” দিয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।

environmental spill ocean liquid natural gas terminal

পরামর্শ ও টুল সংবাদ ও বিশ্লেষণ

কীভাবে খুঁজবেন, পরিবেশের ক্ষতির পেছনে কে বা কারা জড়িত?

পরিবেশ সম্পর্কিত যে কোন অবৈধ কাজের সঙ্গে অনেক বেশি আর্থিক সংশ্লেষ থাকে। আর তা উন্মোচনের জন্য নিবিড়ভাবে জানতে হয় বিভিন্ন অঞ্চল, আর সেখানকার আইন কানুন, গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। এ ধরনের প্রতিবেদন তৈরিতে কিছু কৌশল সাংবাদিকদের সাহায্য করতে পারে।

AI fact checking 2024 elections

পরামর্শ ও টুল সংবাদ ও বিশ্লেষণ

নির্বাচনে ভুয়া তথ্য ঠেকাচ্ছে জেনারেটিভ এআই, বৈশ্বিক দক্ষিণে প্রভাব কম

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এআই ব্যবহার করে ভুয়া তথ্যের প্রচার যেমন চলছে, তেমনি সত্যতা যাচাইয়ের কাজও করছে এআই। কিন্তু পশ্চিমের বাইরের দেশগুলোয় তথ্য যাচাইয়ে এআই খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারছে না। আছে নানা সীমাবদ্ধতা।

data journalism missing piece mistake

ডেটা সাংবাদিকতা সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ডেটা সাংবাদিকতার ১০ সাধারণ ভুল

যে কোনো বিষয়ে জোরালো তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে ডেটা সাংবাদিকতা পুরো সংবাদের জগতে সাড়া ফেলে দিয়েছে। কিন্তু ডেটা সাংবাদিকতা কি সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে? জানতে পড়ুন রোয়ান ফিলিপের বিশ্লেষণ।