মাদক সম্রাট পাবলো ও এল চ্যাপোর পরের অধ্যায়, সংঘবদ্ধ অপরাধের পর্দা উন্মোচনে লাতিন আমেরিকায় অনুসন্ধানী বার্তাকক্ষগুলো যেভাবে কাজ করছে
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
ইকুয়েডরের বন্দর শহর গুয়াকিল। সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সদস্যরা গেল জানুয়ারিতে এই শহর ঘেরাও করে ফেলে। মুখোশ পরে সাবমেশিন গান (এসএমজি) আর গ্রেনেড হাতে তারা হামলা চালায় হাসপাতাল ও স্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে। লাইভ অনুষ্ঠান সম্প্রচারের সময় সাংবাদিকদের জিম্মি করতে তারা ঢুকে পড়েছিল বার্তাকক্ষের স্টুডিওতে । এ এক নজিরবিহীন ঘটনা। এক সময়ের শান্তিপূর্ণ ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ আমেরিকাকে কেন মাদক-পাচারকারী গোষ্ঠী আর সংঘবদ্ধ অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে হয়েছিল এই ঘটনাটি তা-ই বুঝতে সাহায্য করে।
ইকুয়েডরের এই ঘটনাটি লাতিন আমেরিকার চরম সহিংস পরিস্থিতিরই ফলাফল। ২০১৬ সালে রেভল্যুশনারি আর্মড ফোর্সেস অব কলম্বিয়া (এফএআরসি) বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সরকার শান্তিচুক্তি করে। আর এর পরপরই ওই অঞ্চলের দখল নিয়ে নেয় এল ট্রেন দে আরাগুয়া। এই দলটি ছিল মূলত কারগার থেকে পরিচালিত একটি সন্ত্রাসী সংঘ (প্রিজন গ্যাং)। এক সময়ের প্রিজন গ্যাং বর্তমানে বহুজাতিক অপরাধী চক্রের চেহারা নিয়েছে। এ দিকে হাইতির সরকার পোর্ট-অ-প্রিন্সের গ্যাংগুগুলোর সঙ্গে আর পেরে উঠছে না। আমাজনের রেইনফরেস্ট আর কলম্বিয়া ও পানামার সঙ্গে সংযুক্ত ড্যারিয়েন গ্যাপের মতো দুর্গম জায়গাগুলো এখন মানব পাচার, মাদক , অবৈধ খনিসহ নানা কারবারের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘের ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম অফিসের ২০২৩ গ্লোবাল স্টাডি অন হোমিসাইড বলছে, “উপ-অঞ্চল অনুসারে বিশ্বব্যাপী সংঘবদ্ধ অপরাধের কারণে মানুষ হত্যার হার এখানে সর্বাধিক।”
এই গবেষণা খুনোখুনির পেছনে প্রধানত তিনটি কারণের কথা বলা হয়। এগুলো হলো, মাত্রাতিরিক্ত মাদক উৎপাদন ও পাচার, ভারী অস্ত্র রয়েছে এমন সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিস্তার ও অন্তর্কোন্দল, এবং বন্দুক নিয়ন্ত্রণ ও আইন প্রয়োগে দুর্বলতা। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের আলাদা এক জরিপে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী যত খুনের ঘটনা তার এক-তৃতীয়াংশই ঘটে লাতিন আমেরিকায়।
এ অঞ্চলে সংঘবদ্ধ অপরাধ ছড়িয়ে পড়ছে ক্যান্সারের মতো। যা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকেও ঠেলে দিচ্ছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের দিকে। তবে হুমকিগুলো তুলে ধরতে এ বিটের সাংবাদিকেরা কিন্তু নিজেদের বৃদ্ধিমত্তা আর সৃজনশীলতার প্রমাণ রাখছেন। যেমন হ্যাকটিভিস্টরা (হ্যাকার অ্যাক্টিভিস্ট) ডেটা স্ক্র্যাপের জন্য নতুন সব উপায় বের করছেন। মাদক ব্যবসা কীভাবে এই সমাজের শিশু-কিশোরদের প্রভাবিত করছে ভিডিও গেমের সাহায্যে তারা তা তুলে ধরছেন।
কলম্বিয়া, হন্ডুরাস আর মেক্সিকোর সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি এ অঞ্চলের ওপর কাজ করছেন এমন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছে জিআইজিএন। অনুসন্ধানগুলো তাঁরা কীভাবে করেছেন, বিটটিতে নতুন কী নিয়ে এসেছেন, আর সাধারণ মানুষের ওপর সংঘবদ্ধ অপরাধের ক্ষতিকর প্রভাব তাঁরা কীভাবে তুলে এনেছেন কথা বলেছেন তা নিয়ে।
নারকোফাইল: ‘অপরাধ সাম্রাজ্যের’ অজানা ঘটনা উন্মোচন
বোগোটা কফি শপে বসে অনুসন্ধানী সাংবাদিক লরেঞ্জো মোরালেস একটি ন্যাপকিনের ওপর কয়েকটি শব্দ লিখেছিলেন। তারপর তা পাঠিয়ে দেন অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিআরপি)-এর লাতিন আমেরিকার সম্পাদক নাথান জ্যাকার্ডের কাছে। তার ওই বার্তাতে কলম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের এমন সব ইমেইল ফাঁসের কথা লেখা ছিল, যা নিয়ে কারো কোনো ধারণাই ছিল না।
হ্যাকটিভিস্ট সংগঠন গুয়াকামায়া লিকসের ফাঁস করা ওই ইমেইলের আকার পাঁচ টেরাবাইটেরও বেশি। আর মিডিয়া অ্যাপ্লিকেশন টুল দিয়ে আপনি সেখানে ঢুকতে পারেন।
“অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের একটি গাফিলতির সুযোগ নেয় গুয়াকামায়া,” বলেন জ্যাকার্ড। একটি সিকিউরিটি প্যাচের (সফটওয়ার আপডেট করার পদ্ধতি) কথা বলেছেন তিনি। তিনি বলেন, মাইক্রোসফটের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছিল। এরপরও জেনারেল অফিসের কর্মকর্তারা তা ডাউনলোড করে সফটওয়্যারটিকে আপডেট করেনি।
তিনি আরো বলেন,”ফাঁস হওয়া ডেটাতে কলম্বিয়ার বেশ কিছু মিডিয়া আউটলেট স্বাধীনভাবে প্রবেশ করতে পেরেছিল। আমরা চেয়েছিলাম একটি সহযোগিতামূলক উদ্যোগ নিতে। কারণ অতীতে আমরা দেখেছি, এ ধরনের ডেটা ফাঁসের পর মেক্সিকার মিডিয়াগুলো একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। তাদের এ মনোভাবের পুনরাবৃত্তি ঘটুক, আমরা এমনটা চাইনি।”
ছবি: ওসিসিআরপির জন্য এ অলংকরণটি করেছেন জেমস ও’ব্রায়েন, তার ছবি থেকে নেয়া স্ক্রিনশট
তথ্য ফাঁস নিয়ে আমাদের এই উদ্যোগ কলম্বিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হয়ে ওঠে। ওসিসিআরপি একে বলেছে “লাতিন আমেরিকায় সংঘবদ্ধ অপরাধ উন্মোচনের বৃহত্তম অনুসন্ধানী প্রকল্প।”
চল্লিশটি মিডিয়া আউটলেট নারকোফাইলস ফাঁস নিয়ে যৌথভাবে কাজ করেছে। এ থেকে তারা ৭০টিরও বেশি ঘটনা সামনে আনে। যার মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে কোকেন পাচারের নতুন রুট উন্মোচন, হ্যাকাররা কীভাবে মাদক চোরাচালান করতে ইউরোপীয় বন্দরের সিটি সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করে, লাতিন আমেরিকান ও ইউরোপীয় সিন্ডিকেটের মধ্যকার জোট এবং দুবাই কীভাবে মাদক সম্রাটদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে—এমন সব ঘটনা।
দেশের সীমানা ছাড়িয়ে তারা মিয়ামি হেরাল্ড ও জেডডিএফ-এর মতো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মিডিয়া আউটলেটগুলোর কাছেও পৌঁছায়। সংঘবদ্ধ অপরাধের বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক উন্মোচনে লাখ লাখ ইমেইল স্ক্র্যাপ করার জন্য তাদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছিল। এভাবে তারা হংকংয়ে অবৈধভাবে হাঙ্গরের পাখনা পাচারের মতো ঘটনাকেও তুলে ধরতে সক্ষম হয়।
জ্যাকার্ড চমৎকার একটি তথ্য দেন। তিনি বলেন, নারকোফাইলস নিয়ে কাজের সময় ইউরোপীয় ও লাতিন আমেরিকান সাংবাদিকদের মধ্যে তিনি দারুণ একটি পার্থক্য লক্ষ্য করেন। যেমন বয়স্ক অভিজ্ঞ সাংবাদিকেরা সাধারণত আর্থিক অপরাধগুলো নিয়ে মেতে থাকেন। আর নতুনদের সংঘবদ্ধ অপরাধ নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা বেশি। ভালো বা মন্দ—পরিণতি যাই হোক, লাতিন আমেরিকার সংঘবদ্ধ অপরাধ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের মানে সাংবাদিকরা এগুলো তুলে আনতে সক্ষম, বলেন তিনি।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ইমেইল থেকে তথ্য বের করার কাজকে সহজ করে ওসিসিআরপির আলেফ প্ল্যাটফর্ম। এটি ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও নথি খোঁজা যায়। আবার অন্যান্য ডাটাবেসের সঙ্গেও মিলিয়ে দেখা যায়।
এর টুলগুলো কাজ করে গুগল ওয়েব ব্রাউজারের মতোই। অর্থাৎ কীওয়ার্ড, তারিখ আর ইমেইল দিয়ে আপনি আরো কাঠামোগত অনুসন্ধান করতে পারবেন,” ব্যাখ্যা করেন জ্যাকার্ড।
“এটি ডেটা থেকে তথ্য খোঁজার কাজকে সহজ করে। ইমেইলে কী ধরনের তথ্য থাকতে পারে, সে সম্পর্কেও ধারণা দেয়। প্রথমে আমরা ভাবিনি যে, এ থেকে দুর্নীতি, সংঘবদ্ধ অপরাধ, পরিবেশগত অপরাধ, বা গোপন ব্যবসার তথ্য বেরিয়ে আসবে” উল্লেখ করেন তিনি।
গেম, ডেটা আর ডিজিটাল প্রযুক্তি দিয়ে যেভাবে বাজিমাৎ করেছে কলম্বিয়ার কোয়েশ্চেন পাবলিকা
নারকোফাইলস প্রকল্পের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্ল্যাটফর্ম কোয়েশ্চেন পাবলিকা। ২০০৮ সালে ক্লডিয়া বায়েজ, ডায়ানা স্যালিনাস ও ডেভিড তারাজোনা মিলে এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
কলম্বিয়ার বড় বড় মিডিয়া আউটলেটগুলো যখন টাকা বাঁচাতে বাজেট কমানো বা বার্তাকক্ষের অনুসন্ধানী দলগুলোকে বিলুপ্ত করছিল, কোয়েশ্চেন পাবলিকার প্রতিষ্ঠাতারা তখন অনলাইনকে একটি সুযোগ হিসেবে চিন্তা করে তা কাজে লাগানোর কথা ভাবেন।
অনুসন্ধানের পাশাপাশি গভীর ও নির্ভুল ডেটা নিয়ে কাজের পণ করেছে তারা। তাদের উদ্দেশ্য বিপুল সংখ্যক পাঠক-শ্রোতা-দর্শক বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুসন্ধানী গল্পগুলোকে কীভাবে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলে ধরা যায়। সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এআই টুল এবং অত্যাধুনিক গেমিফিকেশন প্ল্যাটফর্ম (ওয়েবসাইট, অনলাইন কমিউনিটি, লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা বিজনেস ইন্ট্রানেটের মতো ভার্চুয়াল হাবে ব্যবহারকারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের গেম ব্যবহার) ব্যবহার করে কলম্বিয়ার রাজনীতির সঙ্গে সংঘবদ্ধ অপরাধের সম্পর্ক নিয়ে প্রতিবেদন করেছে কোয়েশ্চেন পাবলিকা।
তাদের একটি ইন্টারেক্টিভ প্ল্যাটফর্ম (ভিডিও, ছবিসহ বিভিন্ন টুলের সাহায্যে ভার্চুয়াল কনন্টেন্ট ও ব্যবহারকারীর মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন) এর নাম “উই নো হোয়াট ইউ ডিড লাস্ট লেজিসলেইচার”। বাংলায় যার মানে দাঁড়ায় “আমরা জানি যে গতবারের আইনসভায় আপনি কী কাণ্ড ঘটিয়েছেন।”
সংসদীয় দুর্নীতি কোয়েশ্চেন পাবলিকার অনুসন্ধানী এই দলটি কাজ করেছে। আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্রার্থী এবং সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের মধ্যে কথিত সম্পর্ককে “ডিসএনচ্যান্টমেন্ট” (স্প্যানিশ ভাষায় “ডিসএনক্যান্টো”) নামে একটি অনলাইন গেমের মাধ্যমে তুলে ধরেছে। যা মূলত ডিজনির “অ্যানক্যান্টো” চলচ্চিত্রের কৌতুকপূর্ণ সংস্করণ।
বায়েজ বলেন, “সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রগুলো কীভাবে স্থানীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত করে তা তুলে ধরতে ‘ডিসএনক্যান্টো’ নিয়ে আমরা বড় রকমের বাজি ধরি। ২০২৩ সালে কলম্বিয়ার স্থানীয় নির্বাচনের অন্ধকার দিকগুলো তুলে আনার জন্য নকশা করা হয় এ গেমটি।
“আমরা এ গ্যামিফিকেশন প্ল্যাটফর্মটির জন্য মাইক্রোসফ্ট পাওয়ার বিআই (বিজনেস ইনটেলিজেন্স) ব্যবহার করেছি। এ টুলটি মূলত বিআই (ডেটা সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, বিশ্লেষণ বিষয়ক প্রযুক্তি), ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং ড্যাশবোর্ডের জন্য তৈরি। তবে আমরা দেখেছি, এটিকে গেম ডিজাইন করার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে” বলেন কোয়েশ্চেন পাবলিকার ডেটা সম্পাদক এডিয়ের বুইট্রাগো।
ডিজিটাল এ উদ্ভাবনে আমরা বিচার বিভাগের তথ্যকে উৎস হিসাবে ব্যবহার করেছি, যা মাদক পাচারকারী সংগঠন বা এ ধরনের গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্ভাব্য যোগাযোগ রয়েছে এমন রাজনৈতিক প্রার্থীদের চিহ্নিত করতে জনসাধারণকে সাহায্য করে।
একই বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে দলটি ওডিআইএন (অপ্টিমাইজড ডেটা ইন্টিগ্রেশন নেটওয়ার্ক) প্রকল্প হাতে নেয়। এটি মূলত শক্তিশালী একটি টুল। ২০২৩ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাংবাদিকতা চ্যালেঞ্জে কোয়েশ্চেন পাবলিকার এ উদ্ভাবনকে গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে ওডিআইএন টুলটি এক্স (টুইটার) থ্রেডের সাহায্যে আলোচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্কে ব্যবহারকারীকে অনেক তথ্য দিতে পারে। কোয়েশ্চেন পাবলিকার আধা-কাঠামোগত ডেটাবেস ‘ভোটের খেলা‘ এবং ‘আমরা জানি আপনি গত আইনসভায় কী করেছিলেন” থেকেও তথ্য নিতে পারে ওডিআইএন। ব্যবহারকারীরা এর মাধ্যমে রাজনীতিকদের নিয়ে প্রকাশিত খবর এবং সংঘবদ্ধ অপরাধের সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে কিনা— জানতে পারেন।
এটি কোয়েশ্চেন পাবলিকাকে তরুণদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে বলে মনে করেন বায়েজ। “আমরা জানি, ৩৫ বছরের লোকেদের রাজনৈতিক মতামত পরিবর্তন করাটা বেশ কঠিন। তবে তরুণেরা তাদের রাজনৈতিক দর্শন ঠিক করছে। তাদের কাছে যদি সঠিক তথ্য থাকে তবে তারা সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আর আমরা ঠিক এ কাজটিই করি: তাদেরকে তথ্য সরবরাহ করুন যাতে নাগরিকরা শোভন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারে,” বলেন বায়েজ।
হন্ডুরাসের কন্ট্রাকোরিয়েন্ট: মাদক সম্রাটরা কীভাবে সম্প্রদায়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে, কাছ থেকে তা দেখুন
লাতিন আমেরিকার সংঘবদ্ধ অপরাধ নিয়ে কাজের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কুখ্যাত মাদক সম্রাট আর তাদের নেটওয়ার্ককে সামনে আনার পাশাপাশি মাদক ব্যবসার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা।
শুরু থেকেই হন্ডুরাসের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্ল্যাটফর্ম কন্ট্রাকোরিয়েন্টের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, সংঘবদ্ধ অপরাধ সমাজকে কীভাবে পরিবর্তন করে এবং সম্প্রদায় ও পরিবেশের পরিবর্তন ঘটাতে থাকে—তারা তা তুলে ধরবে।
সহপ্রতিষ্ঠাতা জেনিফার আভিলা বলেন, “২০১৭ সালে আমরা যখন কন্ট্রাকোরিয়েন্ট শুরুর সিদ্ধান্ত নিই, তখন এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি নিউজ আউটলেটের মতামত চেয়েছিলাম। তারা সবাই উত্তর দিয়েছিল যে, এটি অসম্ভব।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্ল্যাটফর্ম তৈরির স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়া। শুধু অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নয়, একটি স্টার্টআপ তৈরি করতেও আমরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ি।”
ট্রান্সন্যাশনালস অব ফেইথ অনুসন্ধানটি তাদের পরিচিতি এনে দেয়। প্রতিবেদনটি ২০২০ সালে ওর্তেগা ওয়াই গ্যাসেট সাংবাদিকতা পুরস্কার জিতে নেয়। লাতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি নিউজরুমের যৌথ সমন্বয়ের মাধ্যমে হন্ডুরাসে মৌলবাদী খ্রিস্টান সংগঠনগুলোর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার তথ্য প্রকাশ করে কন্ট্রাকোরিয়েন্ট।
দ্য ড্রাগ লর্ড’স সেকরেড মাউনটেইন প্রতিবেদনে কন্ট্রাকোরিয়েন্টের সিলিয়া পুসার তুলে ধরেছেন চোলোমা পার্বত্য শহরের কৃষকদের কথা। এই অঞ্চলের কৃষকেরা কীভাবে মাদক ও অবৈধ খনি খননের মতো কাজে যুক্ত হতে বাধ্য হয়েছেন তার বিবরণ পাওয়া যায় এই প্রতিবেদনে।
“হন্ডুরান সাংবাদিকতা সেখানকার সম্প্রদায়ের ওপর সংঘবদ্ধ অপরাধের প্রভাব সম্পর্কে যৎসামান্যই তুলে ধরে,” উল্লেখ করেন আভিলা। তিনি আরও বলেন, “তার বিপরীতে এ প্রতিবেদনটি মাদক পাচার, দায়মুক্তি ও ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় এবং সুরক্ষিত এলাকাগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে সৃষ্ট সমস্ত নেতিবাচক দিকগুলোকে সামনে আনে।”
সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক প্রার্থীদের সম্পর্কে জানাতে কন্ট্রাকোরিয়েন্ট টিকটক ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের তথ্য জানিয়েছে পাঠকদের জানায়। দেশে সংঘবদ্ধ অপরাধের প্রভাব কেমন সে সম্পর্কেও প্রতিবেদন প্রকাশ করে তারা।
তাদের অন্যতম তথ্যের ভান্ডার হচ্ছে পাঁচশ’টির বেশি আইনি নথির একটি সংগ্রহ। এই সংগ্রহে মাদক পাচারের অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হওয়া হনডুরান মাদক কারবারিদের জড়িত থাকার বিবরণ রয়েছে। এ নথিতে মূলত কাদের নাম আছে? এখানে রয়েছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জুয়ান অরল্যান্ডো হার্নান্দেজের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও। মার্কিন আদালতে জুয়ান অরল্যান্ডোকে “মাদক সামাজ্যের” আদলে দেশ পরিচালনার জন্য অভিযুক্ত করা হয়। কন্ট্রাকোরিয়েন্ট যদি এ নথিগুলোকে সবার জন্য উন্মুক্ত না করে দিতো, তাহলে ইএস পেসার প্ল্যাটফর্মে পয়সা দিয়ে সবাইকে তা পড়তে হতো।
“আমি মনে করি লাতিন আমেরিকানরা [সংঘবদ্ধ অপরাধের শিকার হিসাবে] যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তা আমাদের আরও শক্তিশালী করেছে। আমরা তাই বিশ্বাস করতে শুরু করেছি যে, গল্পগুলো বলার মাধ্যমে আমরা এ চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে পারি,” বলেন আভিলা।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমরা এ নীতিটি অনুসরণ করি। আর তাই আমরা এতটা অবিচল।”
মেক্সিকোর স্থানীয় সংঘবদ্ধ অপরাধ নিয়ে পপল্যাবের প্রতিবেদন ‘হাইপার-লোকাল টুইস্ট’
মৃত্যু আর সহিংসতা কীভাবে গুয়ানাজুয়াতোর শিশু-কিশোর ও তরুণদের প্রভাবিত করছে, তা নিয়ে করা একটি প্রতিবেদন। চিত্র: পপল্যাবের পিঞ্চে এইন্নার ছবি থেকে নেয়া স্ক্রিনশট
কয়েক বছর আগেও মধ্য মেক্সিকোর রাজধানী শহর গুয়ানাজুয়াতোতে সংঘবদ্ধ অপরাধ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খুব বেশি খবর আসতো না। সেখানে মানুষ খুনের হার বাড়তে শুরু করলেও জাতীয় মিডিয়ার মনোযোগ ছিল অন্যান্য অঞ্চলগুলোর দিকে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত শহরগুলো ঘিরে। গুয়ানাজুয়াতোর সাংবাদিকদের তাই নিজ এলাকার সহিংস পরিস্থিতি তুলে ধরতে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়।
পপল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রবীণ সাংবাদিক আর্নল্ডো কুয়েলার। এর আগে কোরেও ডি গুয়ানাজুয়াতো এবং এল ন্যাসিওনাল ডি গুয়ানাজুয়াতোর হয়ে কাজ করেছেন তিনি। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ঘিরে দেশটির মূলধারার নিউজরুমগুলোর ঔদাসীন্য থেকেই জন্ম পপল্যাবের।
স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির পর পপল্যাবের দলটি দৃষ্টি দেয় দীর্ঘমেয়াদী অনুসন্ধানে। পাশাপাশি সংঘবদ্ধ অপরাধের ফলে সৃষ্ট সহিংসতার নাটকীয় বৃদ্ধির মতো গুয়ানাজুয়াতোর প্রধান প্রধান সমস্যাগুলোকে নতুনভাবে দেখার চেষ্টা করা। এছাড়া সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের হাতে করুণ পরিণতির শিকার হওয়া ব্যক্তিদের কীভাবে সামনে আনা যায় এবং যে গল্পগুলো অন্যান্য আউটলেটের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে সেগুলোকে কীভাবে তুলে ধরা যায়, সেদিকে মনোযোগ দেয়া।
স্থানীয় প্রধান প্রসিকিউটর কার্লোস জামাররিপার মেয়াদের সঙ্গে মিলে যায় গুয়ানাজুয়াতোর সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের উত্থানের যোগসূত্র। তাই জামাররিপার কর্মকাণ্ডের পর্দা উন্মোচনে তথ্য খুঁজতে নেমে পড়ে পপল্যাব।
২০০৯ থেকে ২০২০ এর প্রথম দশকে ক্ষমতায় ছিলেন জামাররিপা। তার মেয়াদে গুয়ানাজুয়াতোতে মানুষ খুনের হার বছরে ৫০০ এর কম থেকে নাটকীয়ভাবে বেড়ে পৌঁছায় ৪ হাজার ৪৯০-তে। ২০১৯ সালে দেশ জুড়ে বড় ধরনের বিক্ষোভ ও জনরোষ ছড়িয়ে পড়ে। সহিংসতার অবসানের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ১০ হাজার মানুষ জামাররিপার জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবী তোলে।
মেক্সিকোর সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী প্রধান প্রসিকিউটরদের একজন জামাররিপা। তার সময়কালে মানুষ খুনের হারের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির বিপরীতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সংখ্যা ছিল সামান্য। ফেডারেল সরকার তাকে পদত্যাগ করতে বললেও স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা আইনি মারপ্যাচের কারণে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করতে ব্যর্থ হন।
এ পর্যন্ত জমাররিপার ওপর সবচেয়ে বিস্তারিত ও বেশি সংখ্যক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পপল্যাব: “আমরা তার ক্ষমতায় উত্থান, গুয়ানাজুয়াতোতে সংঘবদ্ধ অপরাধের বিবর্তন এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে তার সম্পর্কের ওপর আলো ফেলি,” কুয়েলার বলেন। প্রতিবেদনগুলো প্রকাশের পর দেশব্যাপী অন্যান্য আউটলেটগুলোও জামাররিপার দিকে মনোযোগ দিতে শুরু করে।
পপল্যাবের ইটস নট কোল্যাটারাল ড্যামেজ, ইটস আওয়ার ফিউচার অ্যাট রিস্ক, নামের অনুসন্ধানটি ভোগান্তির শিকার হওয়া মানুষের ওপর তৈরি প্রতিবেদনের একটি উদাহরণ। সংঘবদ্ধ অপরাধ কীভাবে তরুণদের প্রভাবিত করছে, তাদের সহিংস পথ বেছে নিতে বাধ্য করছে, এর পাশাপাশি মুক্ত জীবনের জন্য তাদের সংগ্রামের গল্পকেও তুলে এনেছে। “আমরা ঘটনার শিকার মানুষের অভিজ্ঞতার কথা শুনি। তাঁদের সেই অভিজ্ঞতার সঙ্গে আমাদের হাতে থাকা তথ্য মিলিয়ে দেখি,” ব্যাখা করেন কুয়েলার। পপল্যাবের ব্যবহার করা তথ্যের মধ্যে ছিল গ্রেপ্তার হওয়া অপ্রাপ্তবয়স্কদের সংখ্যা, অপ্রাপ্তবয়স্কদের হত্যা, এবং কোথায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার পরিসংখ্যান।
সংঘবদ্ধ অপরাধের গল্পগুলোকে নতুনভাবে বলা
লাতিন আমেরিকার অন্যতম বড় সংঘব্ধ অপরাধ চক্রের জন্ম ভেনিজুয়েলার কারাগারে। কারা-কর্তৃপক্ষের ব্যাপক দুর্নীতি, বন্দিদের তদারকির অভাব, কারাগারে গোপনে অবৈধ প্রযুক্তি ও যোগাযোগ সরঞ্জামের অনুপ্রবেশের সূত্র ধরে ভূমিষ্ট হয় এল ট্রেন দে আরাগুয়া। যারা ত্রাস সৃষ্টিকারী জেল গ্যাং হিসেবে চিলি, আর্জেন্টিনা থেকে শুরু করে মধ্য আমেরিকার মহাদেশ জুড়ে পরিচালিত একটি বহুজাতিক অপরাধ চক্রে পরিণত হয়।
ভেনেজুয়েলার অনুসন্ধানী প্রতিবেদক রোনা রিস্কেজ গ্যাংটির ক্রমশ: বাড়তে থাকা প্রভাব নথিভুক্ত করতে কয়েক বছর জেলে কাটান। তিনি এল ট্রেন দে আরাগুয়ার ইতিহাস এবং বর্তমান কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ লিখেছেন। এছাড়া ওএলপি: দ্য মাস্ক অব অফিসিয়াল টেরর ইন ভেনেজুয়েলার মতো পুরস্কার-বিজয়ী অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সহ-লেখক তিনি। প্রতিবেদনটি ২০১৯ সালে জিআইজিএনের গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ডের চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করে।
২০২৩ সালের দিকে রোনা অনুধাবন করেন, তিনি তাঁর কাজের পদ্ধতির পরিবর্তন আনতে চান। তাই আর্জেন্টিনার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জোসেফিনা সালোমন এবং গ্রাফিক রিপোর্টার ও তথ্যচিত্র নির্মাতা সার্জিও অরটিজের সঙ্গে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন অনলাইন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্ল্যাটফর্ম ইনডটভিজিবেলস। সংঘবদ্ধ অপরাধকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণনার জন্যই তাদের এ প্রয়াস।
“আমরা নতুনভাবে গল্প বলার কথা বলছি। যার মানে কেবল পাবলো এসকোবার কিংবা চ্যাপো গুজমানের মতো বড় বড় মাদক কারবারীদের চারপাশে না ঘুরে সংঘবদ্ধ অপরাধকে অন্যভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা,“ বলেন রোনা রিস্কেজ।
উদ্যোগটি এখনো “সীমিত” পর্যায়ে রয়েছে। তাদের প্রথম অনুসন্ধানী কাজটি প্রকাশিত হবে এ বছরের শেষের দিকে। সংঘবদ্ধ অপরাধ নিয়ে করা প্রতিবেদনে মূলধারা থেকে বাদ পড়া লোকেদের গল্পগুলো তুলে ধরার পরিকল্পনা আছে তাঁদের। যেমন, মাদক “মিউল” বা মাদক খচ্চর হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিরা। যারা কখনও কখনও অর্থনৈতিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তির আশায় এ কাজে আসে। আবার কখনো ভয় দেখিয়ে তাদের এ কাজে বাধ্য করা হয়। “তারা কি সত্যিই অপরাধ করছে নাকি তারা মানব পাচারের শিকার?” প্রশ্ন রাখেন রিস্কেজ। অদৃশ্য ভোগান্তির শিকার মানুষ আর তাদের গল্পগুলোকে তুলে ধরার প্রয়াসে আমরা প্ল্যাটফর্মটির নাম দিয়েছি: ইনডটভিজিবলস।
“পাঠক চাহিদা রয়েছে, সংঘবদ্ধ অপরাধ সম্পর্কিত এমন সব প্রতিবেদনের মাধ্যমে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা সহজ। তবে ঘটনার আড়ালে জীবন্ত বলি হওয়া মানুষগুলোর গল্প তুলে ধরার বিষয়টিকে আমরা বেছে নিয়েছি… যা একটি সামাজিক প্রতিশ্রুতি এবং সাংবাদিক হিসেবে জনসেবার অংশ,” উল্লেখ করেন রিস্কেজ।
সান্তিয়াগো ভিয়া একজন পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিক। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে লাতিন আমেরিকার সংবাদ আউটলেটের জন্য লিখেছেন। বর্তমানে কলম্বিয়ায় অবস্থান করছেন এবং এল এস্পেকটেডরের সম্পাদকীয় পাতায় কলাম লেখেন। এর আগে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, ভেনিজুয়েলা এবং ইকুয়েডরে বৈদেশিক সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেছেন।