Prairie landscape with old fence line.
‘বিনামূল্যের জমির প্রকৃত মূল্য’: আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওয়ার ব্যক্তিগত ও জাতীয় ইতিহাস
আজ যে দেশটি বেলারুশ নামে পরিচিত, সেই বেলারুশের মিনস্ক শহরের বাসিন্দা ছিলেন সিনিকিনসরা। ওরা রুশ ইহুদি। বিশ শতকের গোড়ার দিকে সিনিকিনরা চলে আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ইহুদি বিদ্বেষ, নির্যাতন, অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতা থেকে বাঁচতে তখন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অভিবাসীদের স্রোত।
দক্ষিণ ডাকোটার এক তৃণভূমিতে তাঁরা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলেন। অন্যান্য অভিবাসীদের মতো তাঁরাও হোমস্টিড অ্যাক্টে বিনামূল্যে জমি পেয়েছিলেন। শর্ত ছিল, জমির উন্নয়ন বা এটিকে আবাদযোগ্য করে তোলা।
নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিল পরিবারটি, তবে শেষ পর্যন্ত তারা সফল হয়। সিনিকিনসদের প্র-প্রপৌত্রী রেবেকা ক্লারেন বলেন, অভিবাসীদের নিয়ে লেখা পাণ্ডুলিপির একটা আদর্শ উদাহরণ ছিল তাঁদের পরিবার। তাঁরা কঠোর পরিশ্রম করেছেন। এগিয়েছেন। কিন্তু এই গল্পের আরও কিছুটা বাকি রয়ে গেছে।
অরেগনের পোর্টল্যান্ডভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও লেখক ক্লারেন গত কয়েকদশক ধরে আমেরিকার পশ্চিম অঞ্চল নিয়ে লিখেছেন। তিনি ছয়বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন তাঁর পরিবারের অজানা ইতিহাস খুঁড়ে বের করায়।
পীড়াদায়ক বাস্তবতা হলো, তাঁর মতো আমেরিকার আরও বহু পরিবারের সাফল্য ও সম্পদ এসেছে বহু মানুষের সম্পদের বিনিময়ে। সিনিকিনসরা যখন রাশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন, তখন মার্কিন সরকার আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের করা অসংখ্য চুক্তি ভেঙে চলেছে। বিশাল তৃণভূমির বড় অংশ বিক্রি করছে, বা স্রেফ বিলিয়ে দিচ্ছে। লাকোটার সাত জাতিগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত এই ভূমি বিনামূল্যে হস্তান্তর করা হচ্ছে শ্বেতাঙ্গদের কাছে।
ক্লারেনের এই অনুসন্ধানের ফসল তাঁর সর্বশেষ প্রকাশিত বই, “দ্যা কস্ট অব ফ্রি ল্যান্ড, জিউস, লাকোটা অ্যান্ড আমেরিকান ইনহেরিটেন্স।” অনুসন্ধান ও পারিবারিক ইতিহাস খুঁড়ে পাওয়া তথ্যের মিশেল এই বই। এ হলো “তাঁর চাষবাসে যুক্ত ইহুদি পূর্বপুরুষ ও দক্ষিণ ডাকোটার তৃণভূমিতে তাঁদের প্রতিবেশী লাকোটাদের যে যুক্ত ইতিহাস তা নতুন করে বলা।” এই গল্পের মধ্যে তিনি আরও একটি প্রশ্নের জবাব খোঁজেন। তিনিসহ আরও যাঁরা আছেন তাঁরা রাষ্ট্রীয় নীতির সুবিধাভোগী। আর এর জন্য চরম মূল্য দিতে হয়েছে যাঁদের,তাঁরা হলেন নেটিভ আমেরিকান। তাঁরা কী করে এই অন্যায্য আচরণের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারেন সেই প্রশ্ন তাড়িত করেছে লেখককে।
ব্যক্তিগত আখ্যানের অনুসন্ধান
ক্লারেন ফান্ড ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম এর কাছ থেকে এই প্রকল্প শেষ করার জন্য অনুদান পেয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ইনসাইড দ্যা ইনভেস্টিগেশন ওয়েবিনারে ক্লারেন বলেন, কীভাবে তিনি তাঁর গবেষণা ও অনুসন্ধানের কাজটি করেছেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত ও জাতীয় ইতিহাসের মিশেল ঘটাতে তাঁকে এক অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়।
ক্লারেন তাঁর অনুসন্ধান ও গবেষণার বড় অংশই করেছেন কোভিড-১৯ এর সময়। এ সময় আদি ছয় সিনিকিনদের উত্তরসূরিদের প্রত্যেকের সাক্ষাৎকার নেন তিনি। পারিবারিক কোন গল্পগুলো তাঁরা শুনেছেন, কোনগুলো অনুচ্চারিত থেকেছে আর কোন গল্প পরিবারের নানান শাখাপ্রশাখায় কীভাবে বলা হয়েছে তা খুঁজে বের করাই ছিল উদ্দেশ্য।
ক্লারেনের সৌভাগ্য। তাঁর পরিবারের লোকজনের অভ্যাস ছিল সবকিছু ‘তুলে রাখা’। তাই গবেষণার সময় তিনি তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ছবি ও শিল্পকর্ম পেয়েছেন। কিছু কিছু জিনিসের গায়ে ইয়েডিশ ভাষায় (আশকেনাজি বা ইউরোপ ও পূর্ব ইউরোপের ইহুদিদের ভাষা, যা হিব্রু থেকে আলাদা) কিছু কথা উৎকীর্ণ করা আছে। কোনো কোনো জিনিস এই পরিবারটি যখন যুক্তরাষ্ট্রে এসে বসত গড়ে তখনকার। কোথাও তাঁর পূর্বপুরুষেরা লাকোটা প্রধানের সঙ্গে বিশেষ ভঙ্গিতে ছবি তুলেছেন। সেই ছবির রং বাদামি। (লাকোটা প্রধানের সঙ্গে তাঁরা কেন ছবি তুলেছিলেন তার কোনো ব্যাখ্যা নেই)।
ক্লারেন মিনেসোটায় কি করে তাঁর এক খালার বাসায় যান এবং কীভাবে হাজার হাজার নথিপত্র ফোনে স্ক্যান করে নিয়ে আসেন সে কথা বলছিলেন। খালার বাড়িতে যা ছিল তা মহামূল্যবান জিনিসের আকর। ওখানে লুকিয়ে ছিল অগণিত ছবি, ১৯১১ সাল থেকে আয়কর তথ্য বিবরণী এবং তাঁর প্র প্রপিতামহীর কাছে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব দ্য ইনটেরিয়রের কাছ থেকে পাঠানো নথিপত্র।
ক্লারেন কথা বলেন লাকোটাদের মুরুব্বী ও সমাজের সদস্যদের সঙ্গে। তিনি লাকোটা আদিবাসী গোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্যদের তোলা ছবি দেখান। আদিবাসী ঐতিহাসিকেরা ছবিতে থাকা তাঁদের কাউকে কাউকে শনাক্ত করেন, নতুন কিছু তথ্য ও প্রেক্ষিতের কথা বলেন। তিনি বলেন, আদিবাসী সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজের অতীত অভিজ্ঞতা না থাকলে এবং ভারসাম্যপূর্ণ কাজ করতে না পারলে, তাঁর পক্ষে লাকোটা সম্প্রদায়ে গিয়ে এভাবে অনুসন্ধান চালানো সম্ভব হতো না।
ক্লারেন বলেন, ‘আমার সংগ্রহ বেশ বড়, যেকোনো সম্ভাব্য সূত্র এগুলো দেখতে ও পড়তে পারেন…এই সংগ্রহ আমার জন্য় দুয়ার খুলে দিয়েছিল।” তিনি আরও বলেন, এই বইয়ে যে লাকোটার সঙ্গে তিনি কথা বলেছিলেন, তাঁকে তিনি তাঁর প্রথম দিককার খসড়া সংশোধন করতে দিয়েছিলেন। লাকোটাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে সংবেদনশীলভাবে লেখার ব্যাপারেও পরামর্শ নিয়েছিলেন।
তাঁর পরিবারের উদ্বেগ তাও স্থান পেয়েছে ক্লারেনের গবেষণায়। তাঁর প্রপিতামহী তাঁকে পারিবারিক ইতিহাসের কিছু অধ্যায় যেমন,জাল মদ বা রেকর্ড কেনাবেচা বা পারিবারিক সহিংসতার বিষয়গুলো বই এর বাইরে রাখতে অনুরোধ করেছিলেন। দীর্ঘ আলোচনার পর তাঁরা ঐকমত্যে পৌঁছান ও পুরো গল্পটিই পরে বই এ জায়গা পায়।
ইতিহাসের খোঁজ
দক্ষিণ ডাকোটায় ক্লারেন তাঁর পরিবার ও জমি-জিরেত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের জন্য আরও কিছু সরকারি ও বেসরকারি উৎসের দ্বারস্থ হন।
লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে তিনি ‘ইন্ডিয়ান ল্যান্ড ফর সেল’ নামে একটা সরকারি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পান । ন্যাশনাল আর্কাইভসে জমি-জিরেতের সব নথিপত্র আছে। ক্লারেন বলেন, “যাঁরা গবেষণার জন্য ডেটা নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী, তাঁদের কাছ থেকে ২৫ ডলারের মতো মোটা টাকা নিয়ে ন্যাশনাল আর্কাইভস যে কোনো জমির মূল নথি পাঠিয়ে দেবে।”সঙ্গে জুটবে অনেক অনেক মাসের অপেক্ষা।
তারপরও,তাঁর মতে এই নথিগুলো ‘অমূল্য’ সম্পদ। তিনি বলেন, ”এই নথিগুলোয় শুধু জমিটা কোথায় ছিল সে খবরই দেবে না। আমার প্র প্রপিতামহ কাগজপত্রে যে সইসাবুদ করেছেন, যেখানে বলা আছে বাড়িগুলো কোথায় ছিল, তাঁরা কি শস্য উৎপাদন করেছিলেন, কেমন যাচ্ছিল দিনকাল – এ সবকিছুই নথিতে রয়েছে।”
ক্লারেন জানান, এই নথিগুলো থেকেই তিনি জানতে পেরেছিলেন চাষবাস ভালো হচ্ছিল না।
তিনি বলেন, “প্রথম দফায় ওদের সব ফসল মার যায়, তিনবছর এভাবেই যায়।” ফলে দ্রুতই সিনিকিনসরা পশু পালনের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
ক্লারেন ইহুদির ইতিহাস ও আদিবাসীদের ইতিহাসের ওপর আলো ফেলেছেন। তাদের নির্যাতনের ইতিহাস, বাস্তুচ্যুতি, বৈরী নীতি এবং সহিংসতা। এই দুই জাতির প্রতি স্ব স্ব দেশের সরকারের নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গিও ছিল একই রকম।
তিনি ব্যুরো অব ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট থেকেও গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগ্রহ করেন। এই অফিসটি ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব ইনটেরিয়রের অধীনে। ব্যুরো অব ল্যান্ড ম্যানেজমেন্টরে কাছে একটি ডিজিটাল ডেটাবেস আছে। এখানে নাম অথবা দেশের নাম লিখলে জমির প্রকৃত অবস্থা ও কোন পরিবারের কাছে জমি হস্তান্তর করা হয়েছে সেই তথ্য পাওয়া যায়। ব্যুরো তাঁকে মানচিত্র পাঠিয়েছিল বলে জানান তিনি। সেখানে তিনি কার জমি কোথায় ছিল তা শনাক্ত করতে সক্ষমত হন। এটা ছিল একটা জরুরি ভিজ্যুয়াল টুল। তিনি ১৯৫০ সালে ত্রিশের মতো ইহুদি পরিবারের সন্তানদের তাঁদের নিজেদের ওই এলাকায় জমিজিরেতের কি অবস্থা সেই খোঁজ পান।
এর বাইরে তাঁর পরিবারের সদস্যরা দক্ষিণ ডাকোটায় যতগুলো জমির মালিকানা পেতে কিংবা বন্ধকের জন্য যতগুলো চুক্তিপত্রে সাক্ষর করেছিল তার প্রতিটি যোগাড় করেন তিনি।
ক্লারেন বলেন, “এভাবেই আমি বোঝার চেষ্টা করেছি কীভাবে জমির হাতবদল ঘটছিল আর আমাদের জমি বাড়ছিল। ১৯৫০ এর দিকে আমাদের ৬০০ একর জমিতে গরুর খামার ছিল। ” মূলত, তাঁর প্রপিতামহী এই জমিগুলো কেনেন।
ক্লারেন বলছিলেন, “যদিও এই গল্পটি আমার বইয়ের বড় অংশ নয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই কাঠামোর ওপর আমি আমার ভাষ্য দাঁড় করাই।” আসল নথিপত্রের সঙ্গে বন্ধকের কাগজপত্রের তুলনা, তাঁর পারিবারিক গল্প ও চিঠি পড়ে ক্লারেন বুঝতে পারেন তাদের জীবনে কী ঘটেছিল। তাঁর পরিবারের সমৃদ্ধির ছবিটিও তাঁর কাছে পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
সংবাদপত্রের অভিলেখাগারে থাকা বিভিন্ন নিবন্ধের সঙ্গে তিনি তাঁর পরিবারের গল্প মেলান। তিনি বলেন, “আমি একটা বড় সময়রেখা তৈরি করতে পেরেছিলাম। সব গবেষণার নির্যাস, আমি নথিপত্র পড়ে যা বুঝেছি, সংবাদপত্রের ছাপা নিবন্ধে যা আছে সব মিলিয়ে আমি ওটা তৈরি করেছিলাম…আমি প্রতিটা জায়গায় তারিখ দিয়ে রেখেছিলাম, তারপর বন্ধকের তারিখের সঙ্গে মিলিয়ে দেখি।”
এ প্রক্রিয়ায় তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বন্ধক কীভাবে কাজ করেছিল। এই বিনামূল্যের জমির বিপরীতে তারা কত অল্প টাকা নিয়েছিল। আর এভাবে তার পরিবার বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়ে উঠেছিল। যেমন, তারা নতুন নতুন ব্যবসায় জড়িয়েছিল অথবা আরও জমির মালিক হয়েছিল। ক্লারেন বুঝতে পেরেছিলেন, কীভাবে এই বিনে পয়সার জমি তাদের এগিয়ে দিয়েছিল, প্রতিবেশি আদিবাসীদের খরচের খাতায় ফেলে।
দ্যা হলোকস্ট অ্যাট হোম
ক্লারেন ইহুদির ইতিহাস ও আদিবাসীদের ইতিহাসের ওপর আলো ফেলেছেন। তাদের নির্যাতনের ইতিহাস, বাস্তুচ্যুতি, বৈরী নীতি এবং সহিংসতার অভিজ্ঞতা অভিন্ন। এই দুই জাতির প্রতি স্ব স্ব দেশের সরকারের নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গিও ছিল একই রকম।
এই বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের শিরোনাম, ”দ্যা হলোকোস্ট অ্যাট হোম”। এই অধ্যায়ে লাকোটা নেতার সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের দীর্ঘ বিবরণ আছে। ক্লারেন তাঁর ব্যক্তিগত ইতিহাস ও লাকোটার সেই মুরুব্বীর ইতিহাসকে মিলিয়ে দেখেন। মহিষ হারানো থেকে শুরু করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নানান চুক্তি সই ও আমেরিকার সেগুলো ভেঙে ফেলাসহ এই কথোপকথনে আসে আরও বহু কিছু।
নিউ মেক্সিকোতে পিবিএসের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্লারেন একজন ইহুদি লেখক হিসেবে কেন ইচ্ছাকৃতভাবে “হলোকস্ট” শব্দটি অধ্যায়ের শিরোনামে ব্যবহার করেছেন তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
ক্লারেন বলছিলেন, “আমার ধারণা ছিল আমি হলোকস্ট সম্পর্কে জানি। কিন্তু লাকোটাদের মুরুব্বী ডাগ হোয়াইট বুলের সঙ্গে আমার আলাপ না হওয়া পর্যন্ত আসলে আমি জানতাম না। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আপনি জানেন, আপনার ইহুদি পরিবার হলোকস্ট থেকে বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। কিন্তু আমাদের এখানে হলোকস্ট চারশ বছর ধরে চলেছে এবং কেউ কখনও এই প্রসঙ্গে মুখ খোলেনি’।”
ক্লারেন আরও কিছু মিল খুঁজে পান। তার ওপর ভর করেই তিনি শব্দগুলো পছন্দ করেন। তিনি বলেন,“হিটলার ও তাঁর আইনবিশারদেরা এমন সব নীতি গ্রহণ করেছিলেন, যাতে করে ইহুদিদের অধিকার সংকুচিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকার ঠিক এই কাজটাই করেছে নেটিভ ও এই দেশের কালোদের সঙ্গে।
ক্লারেন নিউ মেক্সিকো পিএনএসকে বলেন, “তাই হ্যাঁ। আমি ইচ্ছে করেই এই শব্দগুলো ব্যবহার করেছি। কারণ ওই লাকোটা নেতা, যাঁর সঙ্গে আমি কথা বলেছিলাম তিনি এভাবেই বলেছিলেন…শিশুরা খুন হয়েছিল, ইচ্ছে করে অভুক্ত রাখা হয়েছিল সাধারণ মানুষকে। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছিল সরকার। তাদেরকে একটা সুনির্দিষ্ট জায়গায় আটকে ফেলা হয়েছিল, ঠিক হিটলার যেমন করে কনসেট্রেশন ক্যাম্পের নীলনকশা করেছিলেন, সেভাবে।”
প্রথমত, কোনো ক্ষতি করবেন না
ক্লারেন্স তাঁর বই এ আরও যে প্রশ্নটির জবাব খুঁজেছেন, সেটি হলো নির্যাতনের শিকার পরিবার কী করে অন্যদের নির্যাতন করে লাভবান হয়। তাঁর এই অনুসন্ধানী বইটি অন্যদেরও আমন্ত্রণ জানায় এই একই অনুশীলনে। কীভাবে অন্যদের ক্ষতি হয় এমন নীতি থেকে তাঁরা উপকৃত হয়েছেন, আর এই যুগে কীভাবে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া যায় সেই সব মানুষ ও সমাজের জন্য যাঁরা জমি চুরির শিকার হয়েছেন কিংবা অন্যভাবে নির্যাতিত হয়েছেন তা ভাবতে উৎসাহ দিয়েছেনে লেখক।
ক্লারেন্স ইহুদি পন্ডিতদের উদ্ধৃত করেছেন, বিশেষ করে দার্শনিক মাইমোনাইডস ও তাঁর অনুতাপের আইন বিষয়ক মতবাদকে। তাঁর মতে ‘সবকিছুকে ঠিক করে ফেলা’ই হবে অনুতাপের সম্ভাব্য কৌশল। এটা অনেকটা হিপোক্রিটিক ওথের মতো, ‘প্রথমত, অন্যের ক্ষতি বন্ধ কর। এরপর আসবে সকল অন্যায্য আচরণের দায় স্বীকার করা ও এই আচরণের কথা প্রকাশ্যে ও সজোরে উচ্চারণ করা। এই প্রক্রিয়ার সবশেষ ধাপ হবে – কেউ যদি মনে করেন একই ধরনের ক্ষতির কারণ তিনি হবেন, তাহলে সেই পথ না মাড়ানো।
পুরো ওয়েবিনারটি দেখুন ফান্ড ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের ইউটিউব চ্যানেলে।
অ্যালেক্সা ভ্যান সিকল জিআইজেএনের সহযোগী সম্পাদক, সাংবাদিক ও অভিজ্ঞ সম্পাদক। কাজ করেছেন ছাপা পত্রিকা, বই প্রকাশ ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠনে। জিআইজেএনে যোগ দেওয়ার আগে তিনি আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বিষয়ক ম্যাগাজিন রোডস অ্যান্ড কিংডমসের জ্যেষ্ঠ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।