A burn pit at US military base in Afghanistan, circa 2006. Image: Shutterstock
প্রশ্নোত্তর: একজন প্রতিবেদক যেভাবে মার্কিন সামরিক বাহিনীর বার্ন পিট কেলেঙ্কারি উন্মোচন করলেন
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
গত সপ্তাহে, মার্কিন সিনেটে প্যাক্ট আইন পাস হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে সামরিক দায়িত্ব পালনকালে সম্ভাব্য বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসা লক্ষাধিক সাবেক সেনা সদস্যের (ভেটেরান) জন্যস্বাস্থ্য সেবা ও সুবিধা বাড়ানো হয়। এই পদক্ষেপের ফলে, বিশেষ করে, ইরাক ও আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করা সাবেক সেনা সদস্যদের বেশ কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরূপণের আগাম সুযোগ তৈরি করে, কারণ সেখানে খোলা আকাশের নিচে বর্জ্য পোড়ানো ছিল খুবই সাধারণ বিষয়। বছরের পর বছর ধরে, পরিত্যক্ত রাসায়নিক পদার্থ থেকে শুরু করে অবিস্ফোরিত অস্ত্র, এমনকি চিকিৎসা বর্জ্য পর্যন্ত সব কিছু সৈন্যদের খাওয়া-ঘুমের জায়গার অদূরে পুড়িয়ে আসছিল সামরিক বাহিনী। ওয়ার হর্সের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কেলি কেনেডি হচ্ছেন ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে খোলা জায়গায় বর্জ্য পোড়ানোর (বার্ন পিট) ঘটনা এবং পরিণতিতে সেখান থেকে ফেরা সেনা সদস্যদের অসুস্থতা নিয়ে কাজ করা প্রথম রিপোর্টার।
প্রশ্ন: বার্ন পিট নিয়ে আপনার প্রথম স্টোরি প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৮ সালে। সে সময় আপনি মিলিটারি টাইমসে ছিলেন। সেই স্টোরি কীভাবে পেলেন, তা নিয়ে কিছু বলুন।
কেলি কেনেডি: ড্যান ক্লেয়ার [এয়ার ন্যাশনাল গার্ডের হয়ে] পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অফিসার হিসেবে কাজ করছিলেন । সে সময় তিনি ডিজেবল্ড আমেরিকান ভেটেরানস-এর জন্যও কাজ করছিলেন। তাই তিনি বালাদে [ইরাকের একটি বিমান বাহিনী ঘাঁটি] কর্মরত ছিলেন। আমি বালাদে ছিলাম, এক বছর আগে ঠিক সেখান দিয়েই আসতাম। সেখানকার বিমানচালকেরা বার্ন পিটকে ল্যান্ডমার্ক হিসেবে ব্যবহার করতেন, কারণ কয়েক মাইল দূর থেকে সেই আগুনের শিখা ও ধোঁয়া দেখা যেত। একসময় বালাদ, কেবল একটি খোলা গর্তে প্রতিদিন ২৪0 টন আবর্জনা পোড়াত।
ড্যান কয়েক জায়গায় এই আলোচনা তুলেছিলেন। আমাকে অন্য রিপোর্টারেরা বলতেন, বিষয়টি একদম পাগলামি। রীতিমত দেখা যাচ্ছে। সামরিক বাহিনী কখনই এমন নির্লজ্জ কিছু করবে না, তাই না? ড্যান আমাকে ড্যারিন কার্টিসের [বালাদের সাবেক বায়ো-এনভায়রনমেন্টাল ফ্লাইট কমান্ডার] লেখা একটি চিরকুট পাঠিয়েছিলেন। তাতে লেখা ছিল, “আমি এই পিটগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন।” মানুষ যে এই কারণে কত রকমের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে পারে, তিনি মূলত এর সবই উল্লেখ করেছেন। অন্য সাংবাদিকদের অবস্থা ছিল ঠিক এমন, “কোনো ভুল নেই। কোনো রাখঢাকও ছিল না। ঠিক চোখের সামনে।” আর সাবেক সামরিক সদস্য হিসেবে আমার মনে হয়েছিল, “আমি তো জানি-ই।”
তাই আমি আইনকানুন ও প্রতিবেদন নিয়ে ঘাঁটতে শুরু করি। সব কিছু অনলাইনেই ছিল। মার্কিন সামরিক আইনে ছিল, “কোনো বার্ন পিট নয়।” স্টোরিটি ম্যাপ করা বেশ সহজ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে আপনার বাড়ির উঠানে আগুন জ্বালানোর অনুমতি নেই, তাই না? অথচ এখানে ২৪০ টন বর্জ্য আর একটি উন্মুক্ত পিট। তাই সত্যি কথা বলতে কী, এ নিয়ে রিপোর্ট করা মোটেও কঠিন ছিল না। কিন্তু অন্য কেউ তা করেনি।
প্রশ্ন: প্রথম স্টোরিতে কেমন সাড়া মিলেছিল?
কে কে: কী আর বলব, সে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা! আমার মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা; গল্পগুলো শুনে, এত এত ফোনকল আর ইমেইল পেয়ে আমার বিস্ময়ের সীমা ছিল না। এত কিছু দেখে আমি তাজ্জব বনে যাই। কয়েক ডজন থেকে শত শত। পাগল হওয়ার মত অবস্থা। এত মানুষের অসুস্থতার খবর শুনে আমার চোখে পানি এসেছিল, লজ্জায় মুখ লুকাতে চেয়েছিলাম।
আর নিঃসন্দেহে, প্রতিরক্ষা বিভাগের ভাবটা ছিল অনেকটা এমন, “ওহ, একটির সঙ্গে অন্যটির সম্পর্ক আছে কি না, আমাদের জানা নেই।” তবে বিজ্ঞান এ বিষয়ে তাদের কর্মকাণ্ড সমর্থন করেনি।
প্রশ্ন: আপনি এই স্টোরিতে আটকে গেলেন, বার্ন পিট নিয়ে একের পর এক লিখে চললেন। এ ব্যাপারে কিছু বলুন আর একটি স্টোরি নিয়ে এতটা সময় থাকার অর্থ কী।
কে কে: সেই প্রথম স্টোরির মূল বিষয় ছিল সংখ্যা আর বিজ্ঞান। পরের স্টোরিটি ছিল একটি (সেনা) ইউনিটের সন্ধান পাওয়া। তারা থাকতেন বার্ন পিট থেকে মাইল খানেক দূরের একটি আবাসিক এলাকায়। ঘুরে ঘুরে তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে দেখা করতে পারা — তত দিনে তারা অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছেন। সেটাও ছিল হৃদয়বিদারক। তাদের দুজন এরইমধ্যে অক্সিজেন ট্যাংক সঙ্গে নিয়ে চলাফেরা করছিলেন।
আর তারপর, মানুষের সঙ্গে যোগযোগের আশায় আমি ভুক্তভোগীদের অভিযোগে চোখ রাখছি। ভ্যানডারবিল্টে এক চিকিৎসককে ডেকে বলেছিলাম, “আরে, আমি কেবল ১০১ তম [এয়ারবর্ন ডিভিশন] নিয়ে আপনার করা গবেষণাটি পড়েছি আর তাদের ফিরে আসা, শ্বাসকষ্ট এবং কুচকে যাওয়া ব্রঙ্কিওলাইটিসের গল্প সেখানে উঠে এসেছে।” তিনি আরও বলেছেন, “হ্যাঁ, আপনি জানেন যে ব্যাপারটি বেশ মজার। আমরা যেটাকে কারণ হিসেবে ভেবেছিলাম, তাদের সবাই সেই সিমেন্ট কারখানার আগুনে আক্রান্ত হয়নি।” আর আমি বললাম, “আচ্ছা, আপনি কি বার্ন পিটের কথা শুনেছেন?” এরপর দেখা গেল, তিনি কংগ্রেসের সামনে সাক্ষ্য দিচ্ছেন।
এসব যোগাযোগগুলো ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল। বহু বছর ধরে এই স্টোরির পেছনে লেগে ছিলাম বলেই, অনেক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরিতে কাজে এসেছে— কেবল আমিই নয়, অন্যান্য লোকজনের ওপর চোখ রাখতে ও বুঝতেও কাজে এসেছে। আর চিকিৎসকেরাও এ নিয়ে তাদের রোগীদেরকে বলতে শুরু করেছেন। ব্যাপারটি সত্যিই জরুরি।
প্রশ্ন: সিনেট সম্প্রতি প্যাক্ট আইন পাস করেছে। বিষাক্ত দ্রব্যের সংস্পর্শে আসার বিষয়টি স্বীকৃতি পেয়েছে দীর্ঘ প্রচার-প্রচারণার ফল হিসেবে। যখন থেকে বার্ন পিট কাভার করা শুরু করলেন, তারপরের বছরগুলোতে কী হয়েছে?
কে কে: পুরোটাই ছিল হাঁটি হাঁটি পা পা করে চলা আর হোঁচট খাওয়া। শিশুর মত ছোট ছোট পদক্ষেপ। আমরা যখন প্রথম এটি নিয়ে রিপোর্ট করা শুরু করি, তখন কংগ্রেসের শুনানি চলছিল — আমরাও চাচ্ছিলাম বার্ন পিটগুলো বন্ধ হোক। তো, তারা সেখানে চুল্লি বসানো শুরু করল। আর তখন সবাই ভয় পেয়ে গেল, শুনানিতেও শোরগোল শুরু হল। তারপর আবার তা মিইয়ে গেল।
অন্য রিপোর্টাররা এটি নিয়ে কাজ করছিলেন, যেমন: লিও শেন থার্ড ও প্যাটি কিম। এ সবই চলছিল, অনেকটা নিচু পর্যায়ের বিষয় হিসেবে; কিন্তু কোনো শেষ দেখা যাচ্ছিল না। ছোটখাট বিষয় অনুমোদিত হচ্ছিল। শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের সমস্যাকে আমলে নিয়ে ভেটেরান বিষয়ক মন্ত্রণালয় তাদের নীতিমালাও বদলাল। কিন্তু ক্যান্সার প্রমাণ করা বেশ কঠিন হল।
তো, বছরখানেক আগে, আমি নাইন-ইলেভেন এবং ঘটনাগুলোর মিল নিয়ে একজনের সঙ্গে কথা বলা শুরু করলাম। দালানগুলোতে বিমানের আঘাতের কথা চিন্তা করলে দেখবেন, এটিও একটি বড় বার্ন পিটে পরিণত হয়েছে, তা-ও নিউইয়র্কের কেন্দ্রস্থলে। বার্ন পিটের [সংস্পর্শে আসা লোকজন] এর মতোই জরুরী সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যেও একই ধরনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, বছর গড়াতে গড়াতে, সেই একই ক্যান্সার ও সমস্যা আমরা দেখতে পাব। তারপর জন স্টুয়ার্ট বার্নপিট৩৬০ নামের একটি ভেটেরান অ্যাডভোকেসি গ্রুপের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন, যেটি এই বিষয় নিয়ে তৎপরতা কখনোই থামায়নি। তিনি জরুরী সেবায় নিয়োজিতদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। কংগ্রসেকেও অপমানে জর্জরিত করে গেছেন, যতক্ষণ না তারা কিছু করেছে। আর তিনি আবারও একই কাজ করেছেন।
প্রশ্ন: যখন প্যাক্ট আইন পাস হতে দেখলেন, আপনার মাথায় তখন কী ঘুরছিল?
কে কে: [বিষয়টি ছিল] অনেকটা অম্লমধুর। এই মানুষগুলো এখনও অসুস্থ, অথচ এই অসুখ বেশ ভালোভাবেই ঠোকানো যেত। যুদ্ধের পেছনে এত টাকা ঢালতে দেখি অথচ তার প্রভাব সামাল দিতে অর্থ ব্যয়ে এই উদাসীনতা হতাশাজনক। তাই শেষ পর্যন্ত এটি হতে দেখে আমি সত্যিই খুশি। তবে আমি এক বন্ধু হারিয়েছি, আর কয়েক বছর ধরে আমি অনেক সোর্সকে হারিয়ে যেতে দেখেছি। অনেকটা সময় চলে গেছে। এটি অনুমোদন পেয়েছে দেখে আমি আনন্দিত – আমি সত্যিই খুশি। সত্যিই খুশি যে ড্যান প্রথম দিকে চিরকুটটি ফাঁস করেছেন। তবে মনে হয় আরও ভালো উপায় আছে।
প্রশ্ন: দ্য ওয়ার হর্স-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবে এখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কাজের ক্ষেত্রে এই স্টোরির অভিজ্ঞতা আপনার কতটা কাজে আসে?
কে কে: আমার মনে হয়, সেই স্টোরি থেকে ওয়াল্টার রিড স্টোরির মধ্যের সময়টাতে আমি অনেক কৌশল জেনেছি। আমি জানি কে কী বলবে। কেউ বলবে, “এসবে বিজ্ঞানের কোন বালাই নেই” আবার কেউ হয়ত বলবে, “ওহ, অমুক এটি করেছে।” আমার এক গুরুত্বপূর্ণ সোর্স আফগানিস্তানে চলে যাচ্ছে, তাই তারা আমার সঙ্গে আর কথা বলতে পারবে না। শুধু এই অস্পষ্টতাটুকুই।
তবে, আমাদের প্রতিদিনের কভারেজ নিয়ে কথা বলতে গেলে আমার প্রতিদিনের মূলমন্ত্র “চলো পৃথিবীকে বাঁচাই” এর পেছনে কিছু সমর্থন পাই। আমরা কীভাবে সমস্যা কাটিয়ে উঠব? কোনো কিছু ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আমরা কীভাবে কোনো অপকর্ম প্রকাশ্যে আনবো?
দৈর্ঘ্য ও স্পষ্টতা রক্ষার জন্য উপরের সাক্ষাৎকারটি সম্পাদনা ও সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। স্টোরিটি মূলত জিআইজেএনের সদস্য প্রতিষ্ঠান দ্য ওয়ার হর্স-এ প্রকাশিত হয়েছিল এবং প্রতিষ্ঠানটির পুনঃপ্রকাশ নির্দেশিকা মেনে এখানে পুনর্মুদ্রিত হয়েছে।
আরও পড়ুন
ইনভেস্টিগেটিং টক্সিক মিলিটারি বেসেস অ্যান্ড দেয়ার লিংকস টু ক্যান্সার
ট্র্যাকিং এনভায়রনমেন্টাল ক্রাইমস ডিউরিং দ্য ওয়ার ইন ইউক্রেন
ডেটা ও ভিজ্যুয়াল দিয়ে পরিবেশ বিষয়ক অনুসন্ধানী স্টোরিকে সমৃদ্ধ করুন
সোনার কেয়ার্ট দ্য ওয়ার হর্স-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদক। সেখানে তিনি সামরিক বিষয়াবলী ও জলবায়ু পরিবর্তন, ভুল তথ্য এবং জেন্ডার নিয়ে সাংবাদিকতা করেন। তাঁর কাজ নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়্যার্ড ম্যাগাজিন, ইনসাইড ক্লাইমেট নিউজ, ভার্জ এবং অন্যান্য প্রকাশনায় জায়গা পেয়েছে। তিনি মার্কিন কোস্ট গার্ডে অফিসার হিসেবে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন।