প্রবেশগম্যতা সেটিংস

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

লেখাপত্র

বিষয়

ফ্যাক্ট চেকিং ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে জোরদার করতে আফ্রিকায় সাংবাদিকদের মঞ্চগুলো যেভাবে তৈরি করেছে এআই টুল

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

আফ্রিকাজুড়ে এখন ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর হিড়িক। বিদেশি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব থেকে শুরু করে টিকা (ভ্যাকসিন) বিষয়ক মিথ্যা তথ্য আর সন্দেহজনক রাজনৈতিক বার্তাও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এইসব ভুয়া তথ্য উসকে দিয়েছে বর্ণবাদ, সহিংসতা, নারীবিদ্বেষ এবং অভিবাসীদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব। কৃত্রিম ও বানোয়াট আধেয় (কনন্টেট) অনলাইনের ওপর মানুষের আস্থা কমিয়েছে। আগে থেকেই আফ্রিকার তথ্যের যে পরিবেশ তা একরকম অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে ছিল। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে ছড়ানো অপতথ্য সেই পরিস্থিতিকে ফুলিয়েফাঁপিয়ে তুলেছে।

প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে এসব তথ্য। এদিকে এ অঞ্চলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের সংখ্যাও বাড়ছে বেশ দ্রুততার সাথে। আফ্রিকা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, গত সাত বছরে মহাদেশটির ৩০ কোটি মানুষ সামাজিক মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে, এবং আফ্রিকার ৬০ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সামাজিক মাধ্যম থেকে সংবাদ সংগ্রহে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে

আফ্রিকা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের প্রতিবেদনে ২০২৩ সালে মহাদেশজুড়ে ১৮৯টি বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারণার ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়। ২০২২ সালের তুলনায় যা ৩০০ শতাংশ বেশি। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের দিক থেকে আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে নাইজেরিয়া এবং কেনিয়া। পাশাপাশি তারা ভুল তথ্য সম্পর্কিত শীর্ষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে রয়টার্স ইনস্টিটিউটের ২০২২ সালের ডিজিটাল নিউজ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এ অবস্থায় সাব-সাহারা আফ্রিকার বেশকিছু সাংবাদিকতা প্রতিষ্ঠান এআই টুল (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল) ও কৌশল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, যা ফ্যাক্ট-চেকিং ও অনুসন্ধানী রিপোর্টিংকে জোরদার করছে। আমরা এখানে কয়েকটি এআই টুল নিয়ে আলোচনা করেছি। এখানে এমন দুটো এআই টুল রয়েছে, যেগুলো বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য শনাক্তে ব্যবহার করা যেতে পারে। তৃতীয় টুলটি দিয়ে প্রতিবেদন এবং ডেটা বিশ্লেষণ করতে পারবেন—যা সাংবাদিকদের কাজকে আরো দক্ষতার সাথে শেষ করতে সহায়তা করে।

 মাইএআইফ্যাক্টচেকার টুল

গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক মাধ্যমে সঠিক খবরের তুলনায় ভুয়া খবর ছয় গুণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যা মোকাবেলার জন্য, একটি দল মাইএআইফ্যাক্টচেকার (MyAIFactChecker) নামে একটি টুল তৈরি করেছে। যা ব্যবহারকারীদের দ্রুত ও নির্ভুলভাবে সংবাদ, সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট এবং অন্যান্য ডিজিটাল কন্টেন্ট যাচাই করতে সহায়তা করে।

এই এআইটুলটি তৈরি করেছে ব্রেইন বিল্ডারস ইয়ুথ ডেভলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (বিবিওয়াইডিআই) নাইজেরিয়ার ফ্যাক্টচেকিং শাখা ফ্যাক্টচেকআফ্রিকা২০২৪ সালে টুলটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। টুলটির উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ভুয়া তথ্য বিস্তারের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতেও সক্ষম।

MyAIFactChecker

ছবি: স্ক্রিনশর্ট, মাইফ্যাক্টচেক

ব্রেইন বিল্ডার্স ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের প্রোগ্রাম প্রধান হাবিব আদিসা বলেন, “বার্তাকক্ষে মাইফ্যাক্টচেকার টুলটি বেশ ভালোভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, বিশেষ করে নির্বাচন কিংবা জনস্বাস্থ্য সংকটের সময়গুলোতে।” বিভিন্ন কর্মশালা ফেলোশিপ ও ডিজিটাল অধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে সাংবাদিকদের টুলটি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হচ্ছে। নির্ভুল খবর পরিবেশন নিশ্চিত করতে ‘দৈনন্দিন সংবাদ প্রক্রিয়ায় টুলটি অন্তর্ভুক্ত করার ওপরও জোর দেওয়া হচ্ছে।”

দক্ষিণ-পশ্চিম নাইজেরিয়ার ওয়ো প্রদেশে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নেওয়ার সময় মাইফ্যাক্টচেকার টুলটি সম্পর্কে জানতে পারেন প্রিমিয়াম টাইমসের ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক তোহিব বাবালোলা।

জিআইজেএনকে তিনি বলেন, “প্রশিক্ষণের সময় আমাদের হাতে কলমে শেখানো হয় এবং কিছু বিষয় যাচাই করতে বলা হয়। তারপর থেকেই আমি টুলটি ব্যবহার করছি।”

শিক্ষাব্যবস্থার ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরির সময় প্রথমবারের মতো তিনি টুলটি ব্যবহার করেন। শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত নাইজেরিয়ার শিশুদের সম্পর্কে তথ্য জানতে চান। টুলটির বিশ্ব ব্যাংক ও জাতিসংঘের সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তাকে দেয়।

“আমি শুধু লিখেছিলাম যে ‘স্কুলে যায় না—নাইজেরিয়ার এমন শিশুদের প্রাসঙ্গিক তথ্য দাও।’ টুলটি আমাকে তথ্য সংগ্রহ করে দিয়েছিল” বাবালোলা উল্লেখ করেন। আরো বলেন,  “টুলটি ব্যবহার করা খুব সহজ, আর এটি নির্ভুল তথ্য দেয়—যা দারুণ।”

যদিও টুলটিকে আরও উন্নত করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন তিনি। বিশেষ করে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম—যেমন হোয়াটসঅ্যাপের সাথে সংযুক্ত করার মাধ্যমে। তিনি বিশ্বাস করেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে মাইফ্যাক্টচেকার বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। এটি নির্ভরযোগ্য ও স্বনামধন্য সংবাদমাধ্যমের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সঠিকতা যাচাই করে।  তবে আপনি যে বিষয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, তা যদি নির্ভরযোগ্য কোনো আউটলেটে আগে প্রকাশিত না হয়, টুলটি তাহলে আপনাকে আর কোনো তথ্য দিতে পারবে না।

অন্য কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ফ্যাক্টচেকআফ্রিকা (যে কেউ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারে) টুলটিকে আরো উন্নত ও কার্যকর করার খরচ—যেমন সাবস্ক্রিপশন, হোস্টিং, এবং এপিআই (অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস) খরচ, যা চলমান চিন্তার বিষয়। এছাড়া, জেনারেটিভ এআই মডেলের ভুল তথ্য দেওয়ার প্রবণতার (যা ‘হ্যালুসিনেশন’ নামে পরিচিত) লাগাম টানাটা কঠিন। এর মাধ্যমে মাঝে মাঝে ভুল বা বিভ্রান্তিকর আউটপুট তৈরি হয়। এ কারণে, টুলটি থেকে পাওয়া প্রাথমিক তথ্যগুলো যথাযথভাবে যাচাই করাটা জরুরী। সূক্ষ্ম প্রসঙ্গগুলো বোঝা এবং ভাষা ও উচ্চারণের ভিন্নতাগুলো শনাক্ত করার সক্ষমতা বাড়ানো, বিশেষ করে আফ্রিকার উচ্চারণগুলো কেমন হয় তা চিহ্নিত করা—টুলটিতে এ  ধরনের কিছু পরিমার্জনের প্রয়োজন।

দুবাওয়া এআই চ্যাটবট ও অডিও টুল

Dubawa AI Chatbot

ছবি: স্ক্রিনশট, দুবাওয়া, সেন্টার ফর জার্নালিজম ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট

২০২৪ সালের মে মাসে নাইজেরিয়ার সেন্টার ফর জার্নালিজম ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিজিআইডি) দুবাওয়া প্রকল্পের অধীনে ফ্যাক্ট-চেকিং কার্যক্রমকে জোরদার করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত চ্যাটবট ও অডিও প্ল্যাটফর্ম চালু করে।

দুবাওয়া চ্যাটবটটি এমনভাবে বানানো হয়েছে যা দ্রুত নির্ভুল তথ্য খুঁজে বের করে সাংবাদিকদের পাশাপাশি অন্যদের অনুসন্ধানে সহায়তা করে। এদিকে চ্যাটজিপিটির মতো এআই টুলগুলো খুব দ্রুততার সঙ্গে ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে না। কিন্তু দুবাওয়া চ্যাটবটটি হোয়াটসঅ্যাপের সাথে সংযুক্ত এবং ওয়েব থেকে সর্বসাম্প্রতিক তথ্য সংগ্রহে সক্ষম। আর দুবাওয়া অডিও প্ল্যাটফর্মটি রেডিও প্রোগ্রাম মনিটরের মাধ্যমে অডিও ট্রান্সক্রাইব করে নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ করে। তবে এ ফিচারটি লাইভ রেডিওর তথ্য যাচাইয়ে খানিকটা চ্যালেঞ্জে পড়ে। যেমন অপ্রমাণিত দাবি (তথ্য)—যা সাধারণত যাচাই করা কঠিন। কারণ এ নিয়ে কোনো লিখিত রেকর্ড নেই। লাইভ সম্প্রচারের সময় যখন কোনো বক্তা এ ধরনের অপ্রমাণিত তথ্য দেন, তখন তা যাচাই করাটা জটিল হয়।

দুবাওয়ার গবেষণা ও ডিজিটাল অনুসন্ধান বিষয়ক ব্যবস্থাপক হিসেবে রয়েছেন সাইলাস জোনাথন। এ উদ্যোগের নেপথ্যের প্রেরণা সম্পর্কে তিনি বলেন,“লাইভ রেডিও এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্যের দ্রুত বিস্তার ফ্যাক্ট-চেকারদের জন্য বড় রকমের চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। দুবাওয়ার এআটুলগুলো মানুষের জন্য নির্ভরযোগ্য তথ্য সহজে পাওয়া এবং নির্ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজ করার লক্ষ্যে তৈরি।” তিনি আরও জানান, গত কয়েক মাসে ১ হাজারের বেশি ব্যবহারকারী টুলটি নিবন্ধন করেছেন।

প্রাইম প্রোগ্রেস নাইজেরিয়ার অনুসন্ধানী সাংবাদিক রিজয়েস ট্যাডি। সম্প্রতি একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিতে টুলটি ব্যবহার করেছেন। নিজের সে অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ফেসবুকে একটি বিভ্রান্তিকর অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে দাবি করা হয়, নাইজেরিয়ার ফেডারেল ক্যাপিটাল টেরিটরির এক মন্ত্রী নির্বাচনী কর্মকর্তাদের শাসিয়েছেন। কর্মকর্তারা যদি তার কথা মতো না চলে তবে তাদের হত্যা করা হবে বলে তিনি তাদের হুমকি দিয়েছেন।

ট্যাডি বলেন, “আমি প্রথমে স্ল্যাক অ্যাপ ব্যবহার করে অডিওটি ট্রান্সক্রাইব করার চেষ্টা করেছিলাম, কাজ হয়নি। কারণ কথাগুলো খুব একটা স্পষ্ট ছিল না, “সৌভাগ্যক্রমে, দুবাওয়া অডিও এআইটুলটি ঠিকঠাক কথোপকথনটি ট্রান্সক্রাইব করতে পেরেছিল। এতে নাইজেরিয়ান ইংরেজি এবং পিজিন (ছোট শব্দভাণ্ডার নিয়ে গঠিত অল্প কয়েকটি গোষ্ঠীর স্থানীয় ভাষা) দুটোই ছিল। যা আমার অনেক সময় বাঁচিয়ে দেয় এবং তথ্য যাচাইয়ের কাজে মনোযোগ দিতে সহায়তা করে।”

দ্রুত ফ্যাক্ট-চেক করতে রিজয়েস চ্যাটবটকেও বেশ কার্যকর বলে তিনি মনে করেন। এ সম্পর্কে বলেন, “হাস্যরসের মাধ্যমে কীভাবে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়তে পারে—এ নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির সময় বিভিন্ন ওয়েবসাইট খুঁজে দেখার পরিবর্তে তথ্য যাচাইয়ের কাজে এ চ্যাটবটটি ব্যবহার করি। যা খুব দ্রুত আমাকে আমার প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে দিয়ে গবেষণা কাজকে সহজ করে দেয়।”

তবে, কিছু চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়তে হয় ট্যাডিকে। তার কাছে ইংরেজি ও হাউসা ভাষা মিশানো একটি অডিও ক্লিপ ছিল। ইংরেজি অংশগুলো ট্রান্সক্রাইব করতে গিয়ে তিনি ঝামেলায় পড়েন। “পরে, আমি নিজে নিজে ওগুলো ট্রান্সক্রাইব করি। এ অভিজ্ঞতা থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি,” বলেন তিনি।  এরপরও তিনি দুবাওয়া অডিও টুলটিকে সহায়ক বলে মনে করেন। বিশেষ করে নাইজেরিয়ার বা ঘানার উচ্চারণ বোঝার ক্ষেত্রে। তিনি বলেন “টুলটি মাঝে মাঝে কিছু প্রসঙ্গ বুঝতে ভুল করে বা এমন সব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়, যা ফ্যাক্ট-চেকের প্রয়োজনই পড়ে না। তবে সামগ্রিকভাবে টুলটি ভীষণ কার্যকর।”

ট্যাডির প্রত্যাশা টুলটির কার্যকারিতা বাড়াতে এতে নাইজেরিয়ার বিভিন্ন ভাষা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, “বিভ্রান্তিকর তথ্য বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই অনেক বেশি লোক কথা বলে এমন ভাষায়  ভুল দাবিগুলো (তথ্যগুলো) যাচাই করা গেলে ব্যাপক পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।” তাঁর মতে, এভাবে টুলটি নাইজেরিয়া জুড়ে মিথ্যা তথ্য মোকাবেলায় আরও কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।

নুবিয়া এআই স্টোরি ক্রিয়েশন টুল

Nubia AI Story Creation tool

ইমেজ: স্ক্রিনশট, নুবিয়া

২০২২ সালে, নরওয়ের সংবাদপত্র ফেদ্রেলান্দসভেন্নেনের সাথে মিলে মিডিয়া গবেষণা ও ডেটা অ্যানালিটিকস প্রতিষ্ঠান ডেটাফাইট নাইজেরিয়া নিয়ে আসে এআই টুল নুবিয়া। টুলটি প্রথমে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত সংবাদ বিতরণ প্ল্যাটফর্ম (সংবাদ সংগ্রহ, বিশ্লেষণ করে ব্যবহারকারীর কাছে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে পৌঁছে দেওয়া) হিসেবে তৈরি করা হয়। যেটির কাজ ছিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবাদ বা তথ্য বিতরণ। পরবর্তীতে, ওয়েবক্যাম (যেমন, লাইভ ভিডিও ফুটেজ), ভূ-স্থানিক ডেটা (যেমন, স্যাটেলাইট বা ম্যাপ সম্পর্কিত তথ্য) এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক ডেটা (যেমন, জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক অবস্থা) সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্যভিত্তিক সতর্কতা (ডেটা-ড্রিভেন অ্যালার্ট) এবং প্রতিবেদন তৈরি করা।

নুবিয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রতিবেদন তৈরি ও ব্যবস্থাপনা দক্ষতা। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিবেদন লেখার সাথে টেমপ্লেট তৈরি করতে পারে। ব্যবহারকারীরা সরাসরি এর ইন্টারফেসে কনটেন্টগুলো দেখতে ও কাস্টমাইজ করতে পারেন। যদিও ফিচারটি আমাদের কাজকে সহজ করে, তবে দক্ষ হাতে সম্পাদনা এবং যাচাই করে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।

“নুবিয়া এআই গল্প বলা ও তথ্য বিশ্লেষণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে,” বলেন ডেটাফাইটের প্রোগ্রাম পরিচালক ফেমি আমেল।

ব্যবহারকারীরা নুবিয়াতে অপরিশোধিত ডেটা আপলোডের পর বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করে সুনির্দিষ্ট লেখা ও বিশ্লেষণ পেতে পারেন। টুলটি যদিও টেক্সট ও ভিজ্যুয়ালসহ বিভিন্ন ধরনের আউটপুট দিতে সক্ষম, তবে আউটপুটের গুণমান নির্ভর করে আপনি কী ধরনের ডেটা আপলোড করেছেন তার ওপর। অর্থাৎ সঠিক ডেটা দিলে টুলটি আরও কার্যকর এবং নির্ভুল বিশ্লেষণ ও রিপোর্ট তৈরি করে দিবে।

সম্পাদকীয় কাজের ক্ষেত্রেও সাহায্য করতে সক্ষম নুবিয়া। যেমন লেখার শিরোনাম তৈরি, ডেটা বিশ্লেষণ। যা আপনার সময় বাঁচাতে পারে। তবে টুলটিকে নকশা করা হয়েছে সাংবাদিকদের সৃজনশীলতা ও গঠনমূলক চিন্তাকে সমর্থনের জন্য, গল্প বলার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সৃজনশীলতাকে প্রতিস্থাপন করার জন্য নয়।

ডেটাফাইট নাইজেরিয়ার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ওলুওয়াসেগুন আবিদোয়ে। নাইজেরিয়ার বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার ওপর একটি ডেটা প্রতিবেদন তৈরির কাজে তিনি নুবিয়া টুলের ব্যবহার করেছেন। যা তাঁর অনেকখানি সময় বাঁচিয়ে দেয়। তিনি বলেন, “আমি ডেটা নিয়ে নতুন যা করতে চাইছিলাম। নুবিয়া আমাকে ঠিক তাই করতে সহায়তা করেছে।” টুলটি কেবল আমার সময় বাঁচিয়ে দেয়নি, প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণগুলোও করে দিয়েছে। আমি কেবল মানবীয় সৃজনশীলতা যোগ করে গল্পটি আমার নিজস্ব শৈলীতে সাজিয়েছি। টুলটি ডেটাসেটের প্রতিটি কলাম ও সারি বিশ্লেষণ করেছে। আমাকে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে শ্রমসাধ্য কাজ করা থেকে বাঁচিয়েছে।”

“আর হিসাবগুলো বিশদ ও নির্ভুল ছিল। বিষয়বস্তুকে আমি কেবল আমার লেখার শৈলীর সাথে মিলিয়েছি,” উল্লেখ করেন তিনি। “আমার প্রতিটি তথ্যকে টুলটি বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে। পুরো কাজটি অনেক দ্রুত করেছে।”

আবিদোয়ে পরামর্শ দেন যে টুলটিকে আরও কার্যকর করতে একাধিক ডেটাসেট ইনপুটের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

ডেটাফাইটের আমেল নুবিয়া অবশ্য এআই টুলের কিছু চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করেছেন— যেমন বিভিন্ন ফরম্যাটের নথি বিশ্লেষণ এবং ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী ফিচারগুলো কাস্টমাইজ করা। তিনি বলেন, “আরও ভালোভাবে বিভিন্ন ফরম্যাট নিয়ে কাজ করা এবং স্থানীয় বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন তৈরিতে কাজে লাগে—নুবিয়া এআইতে এমন বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছি আমরা।”

এআই টুলের চ্যালেঞ্জ এবং ব্যবহার বিষয়ক নৈতিকতা

পল ম্যাকনালি একজন সাংবাদিক এবং ডেভলপ এআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা। কীভাবে কার্যকরভাবে ও দায়িত্বশীলতার সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করতে হয়, সাংবাদিকদের সে বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয় কেপটাউন-ভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি বিভিন্ন সেক্টরে প্রকল্প তৈরিতে সহায়তা করে। তিনি বলেন, আর্থিক চ্যালেঞ্জ কমিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে আরও ব্যয়সাশ্রয়ী করতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

আফ্রিকা উপমহাদেশের বিভিন্ন বার্তাকক্ষ যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার এসএবিসি, নামিবিয়ার এনবিসি, এবং লেসোথোর এলএনবিসির সাংবাদিকদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছে ম্যাকনালির দল। এছাড়া, কেনিয়ার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম যেমন  দ্য নেশান এবং রয়েল মিডিয়ার মতো বার্তাকক্ষের ডেটা বিশ্লেষণ ও জটিল গল্পগুলো তুলে ধরার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত প্রযুক্তি গ্রহণ শুরু করেছে।

তবে ম্যাকনেলি মনে করেন, বার্তাকক্ষকে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ঘিরে সাধারণ মানুষ এক ধরনের সন্দেহ পোষণ করেন। তাঁরা মনে করেন এআই মূলত “ভুয়া” কন্টেন্টের তৈরি করে। তাই তিনি সাংবাদিকদের পরামর্শ দিয়েছেন, তাঁরা যখন এআই ব্যবহার করে প্রতিবেদন বা গল্প বলবেন, তখন পাঠকের কাছে খোলাখুলি তা প্রকাশ করবেন। ম্যাকনেলি বলেন, “আমরা জোর দিয়ে বলি, প্রতিবেদন তৈরির যে জায়গাগুলোতে এআই ব্যবহার করা হয়েছে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা উচিত। নিজেদের পাঠক, দর্শক ও শ্রোতার কাছে বিষয়টি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করাটা গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনি আরো বলেন, এই নতুন সময়ে সাংবাদিকতায় এআই টুল ব্যবহার নিয়ে স্বচ্ছতা এবং নৈতিক আচরণ আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। “কেননা কোনও সাংবাদিক যদি অনৈতিকভাবে কাজটি করে বা গোপন করে এবং দর্শক তা ধরে ফেলে, তাহলে তাদের বিশ্বাসও পড়বে হুমকির মুখে। তারা মুখ ফিরিয়ে নেবে, বার্তাকক্ষটিও তার উপার্জন হারাবে।”


Abdulwaheed Sofiullahi

আব্দুলওয়াহেদ সফিউল্লাহি  একজন সাংবাদিক ও গবেষক। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেন।

 

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

অনুসন্ধান পদ্ধতি পরামর্শ ও টুল

নির্বাসিত লোকেদের ওপর রাষ্ট্রের হামলা: ওয়াশিংটন পোস্টের অনুসন্ধানী সিরিজ “দমন নীতির দীর্ঘ হাত” থেকে আমরা যা শিখতে পারি

দ্যা ওয়াশিংটন পোস্টের আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী দল রিপ্রেশন’স লং আর্ম ধারাবাহিকে তুলে ধরেছে, কীভাবে নিজ দেশের সীমানার বাইরে থেকেও নিশানা হচ্ছেন ভিন্ন মতাবলম্বীরা।

অনুসন্ধান পদ্ধতি

আবাসন খাত নিয়ে মেক্সিকোর পুরস্কারজয়ী প্রতিবেদন : যা শিখতে পারি

পানির মতো মৌলিক পরিষেবার সংকট থেকে মুক্তি পেতে মেক্সিকো সিটির দক্ষিণে সান সেবাস্তিয়ান জোকোর মানুষ আবাসন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এককাট্টা হন। আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো আসলে এই এলাকায় কী সঙ্কট সৃষ্টি করেছিল, তা অনুসন্ধানের পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যাবে এই নিবন্ধে।

অনুসন্ধান পদ্ধতি

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ছেন? এই তথ্য ও পরামর্শ আপনার জন্য

ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে নির্মিত “অল দ্য প্রেসিডেন্টস মেন” কিংবা হালের “দ্য পোস্ট”, “স্পটলাইট” এবং “সেইড” এর মতো চলচ্চিত্র অনেককেই সাংবাদিকতায় উদ্বুদ্ধ করে। বাস্তবে কিন্তু সাংবাদিকতা আরও অনেক বেশি রোমাঞ্চকর। যদি আপনি অনুসন্ধানের কলাকৌশলটা শিখে নিতে পারেন, তাহলে সফল আপনি হবেনই।

অনুসন্ধান পদ্ধতি পদ্ধতি

সাংবাদিকতা আর নৃতাত্ত্বিকতার মিশেলে মধ্য আমেরিকার পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধান

দ্য মাস্কিসা: দ্য হন্ডুরান জঙ্গল ড্রোনিং ইন কোকেন শিরোনামে তিন পর্বের ধারাবাহিক ওর্তেগা ওয়াই গ্যাসেট পুরস্কারে ভূষিত হয়। জুরিরা বলেন, প্রতিবেদনটিতে চলমান সময়ের সামগ্রিক বিষয়গুলো উঠে এসেছে। মাদক পাচার, পরিবেশগত সমস্যা বা পরম্পরা ও সংস্কৃতির ওপর হুমকি এ সবই। প্রতিবেদকেরা বলেছেন,তাঁরা নৃতাত্ত্বিক গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন।