ভূ-সাংবাদিক গুস্তাভো ফালেইরোসের প্রিয় অনুসন্ধানী টুল
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
জিআইজেএন-এর “আমার প্রিয় টুল” সিরিজে, এবার আমরা কথা বলেছি ব্রাজিলিয় সাংবাদিক গুস্তাভো ফালেইরোসের সঙ্গে। তিনি পুলিৎজার সেন্টারের পরিবেশ-বিষয়ক অনুসন্ধানের সম্পাদক। সেখানে তিনি নেতৃত্ব দেন রেইনফরেস্ট ইনভেস্টিগেশন নেটওয়ার্ক (আরআইএন)-এর। বিশ্বের তিনটি প্রধান ক্রান্তীয় বনাঞ্চলে (অ্যামাজন, কঙ্গো বেসিন ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া) জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্নীতি এবং সরকারি কর্মকাণ্ডের প্রভাব নিয়ে সাংবাদিকতা করে আরআইএন।
চিরহরিৎ বনাঞ্চল নিয়ে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রিপোর্টিং করেছেন ফালেইরোস। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন ডেটা জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ড ও গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ড। ২০১২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ইনফোঅ্যামাজোনিয়া। বেশ কয়েকটি ভাষায় পরিচালিত এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে স্যাটেলাইট ছবি ও উন্মুক্ত ডেটা ব্যবহার করে অ্যামাজন অঞ্চলের নয়টি লাতিন আমেরিকান দেশ নিয়ে রিপোর্ট করা হয়। “ইনফোঅ্যমাজনিয়া শুরু করতে আমাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে ভূমির পরিবর্তন, যা দেখে বোঝা যায় সেখানে কী ঘটে চলেছে — বন উজাড়, খনিজ আহরণ, তেল নিঃসরণ,” বলেন ফালেইরোস। তিনি এখনো কাজ করছেন সাইটটির নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে। এর আগে তিনি ব্রাজিলের পরিবেশ বিষয়ক নিউজ সাইট ও ইকো-র সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
জিও-সাংবাদিকতায় আগ্রহী সাংবাদিকদের কিছু ফ্রি টুল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন ফালেইরোস। যেমন গুগল আর্থ প্রো, ওপেন সোর্স জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম কিউজিআইএস ও গুগল শিটস। এগুলো ব্যবহার করা খুব একটা জটিল নয়।
ফালেইরোসের মতে, গুগল আর্থ প্রো থেকে “খুবই আকর্ষণীয়” স্যাটেলাইট তথ্য পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন, “আপনি এখানে অতীতের সাথে পরিবেশগত পরিবর্তনগুলো তুলনা করে দেখতে পারবেন। এখানে ওভারলে লেয়ারও আছে, যেটি ভিজ্যুয়ালাইজেশনের জন্য অপরিহার্য। জিওস্পেশাল বিশ্লেষণ করতে চান, এমন যে কারো জন্য স্বাভাবিকভাবে দ্বিতীয় ধাপটি হবে কিউজিআইএস-এর ব্যবহার। এখানে অনেক বিশ্লেষণী টুল আছে। এবং ডেটাবেজ হিসেবে সংযুক্ত করার কাজটি করা যাবে গুগল শিটসের মাধ্যমে।
ম্যাপিং
গুগল আর্থে যে কোনো জায়গার খোঁজ করা যায়। ডেস্কটপ ভার্সনের অ্যাডভান্সড টুলগুলো ব্যবহার করে আপনি ম্যাপ তৈরি করতে পারবেন, জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ডেটা ইমপোর্ট বা এক্সপোর্ট করতে পারবেন, এমনকি রেট্রোস্পেকটিভ তৈরির জন্য ঐতিহাসিক সব ছবিও ব্যবহার করতে পারবেন। ফালেইরোস বলেছেন, “ইনফোঅ্যামাজোনিয়াতে আমি যত কাজ করেছি, এবং এখন পুলিৎজার সেন্টার ও আরআইএন-এর হয়ে যা করতে যাচ্ছি, তাদের সব কিছুর মূলে আছে ভৌগলিক ডেটা নিয়ে গবেষণা। ১০ বছর আগে, দাবানলের ভিজ্যুায়ালাইজেশন তৈরির জন্য আমি গুগল আর্থ ব্যবহার শুরু করেছি। সেসময় আমরা কেউ ‘ডেটা সাংবাদিকতা’ নিয়ে কথা বলাও শুরু করিনি।”
কিউজিআইএস একটি ওপেন সোর্স জিআইএস বা জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম। এটি ব্যবহার করা হয় জিওস্পেশাল বিশ্লেষণের কাজে। নিজের কিছু প্রতিবেদন আরো তলিয়ে দেখার জন্য কিউজিআইএস ব্যবহার শুরু করেছিলেন ফালেইরোস। এর ডেস্কটপ ভার্সনের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ডেটা দেখতে, সম্পাদনা ও বিশ্লেষণ করতে, এবং প্রিন্ট-উপযোগী ম্যাপ তৈরি করতে পারবেন। “উদাহরণ হিসেবে বলা যায়: অ্যামাজনের আদিবাসী বসতিগুলোর কাছে বন-ধ্বংস বা দাবানলের ঘটনা বেশি ঘটছে কিনা, তা জানার জন্য আমি এটি ব্যবহার করি,” বলেন ফালেইরোস।
ইনফোঅ্যামাজনিয়ায় ভিজুয়্যালাইজেশনের অনেক কাজ করা হয় ম্যাপবক্সের মাধ্যমে। এখানে অনলাইনে ম্যাপ তৈরির সুযোগ পাওয়া যায়। তাদের একটি বিনামূল্যের ট্রায়াল পিরিয়ড আছে। এরপর ব্যবহার অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ করতে হয়। ফালেইরোস ব্যাখ্যা করে বলেন, “এটি মূলত ভিজুয়্যালাইজেশন টুল। কিন্তু এখানে আপনি রেঞ্জ ধরে ফিল্টার করতে পারবেন। অনেক পারসোনালাইজড ম্যাপও তৈরির সুযোগ পাবেন, এবং তাদের ভিজুয়্যাল বৈশিষ্ট্যগুলোও খুব দারুন।”
ফালেইরোস আরো বলেন, “ইনফোঅ্যামাজোনিয়ার ম্যাপগুলো দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন, সেগুলো সবই আলাদা ধরনের। এই জিনিসটি ম্যাপবক্স দিয়ে করা যায়। এটি একই সঙ্গে ম্যাপ তৈরি ও ডেটা ভিজুয়্যালাইজ করার মতো শক্তিশালী। আমাদের জন্য এটি একটি অপরিহার্য টুল।”
স্যাটেলাইট ছবি
বিভিন্ন ডেটা সোর্স থেকে স্যাটেলাইট ছবি ব্রাউজ করা, দেখা ও বিশ্লেষণ করার ওপেন সোর্স ওয়েব টুল, ইও ব্রাউজার। এখানে আপনি নির্দিষ্ট সময়ের একটি ম্যাপ বিশ্লেষণ করে দেখতে পারবেন। ভিজুয়্যালাইজেশন, টাইম ল্যাপস তৈরি ও ছবি ডাউনলোডের সুযোগ পাবেন। ফালেইরোস বলেছেন, “আমি এটি ব্যবহার করেছি এমন সব আদিবাসী অঞ্চল নিয়ে গবেষণার কাজে, যেখানে কোনো রাস্তা বা পথচিহ্ন প্রায় নেই বললেই চলে। এটি দারুন একটি টুল। তথ্য সংগ্রহের জন্যও এটি কার্যকরী।
নাসা ওয়ার্ল্ডভিউ দিয়ে আপনি দেখতে পারবেন পৃথিবীর অতীত ও বর্তমানের চিত্র। দাবানলের মৌসুমে ফালেইরোস প্রতিদিনই এই সাইটে গিয়েছেন। “এখানে প্রতিদিন তথ্য হালনাগাদ করা হয়। এবং আপনি সত্যিই দেখতে পারবেন কোথায় থেকে ধোঁয়া আসছে। এই স্যাটেলাইট ছবিগুলো দিয়ে আপনি কোনো দাবানলের ধোঁয়া নির্গমন বা পরিবেশ দূষণের চিত্র ভিজ্যুয়ালাইজ করে দেখাতে পারবেন,” বলেছেন ফালেইরোস।
টেবিল ও ভিজ্যুয়ালাইজেশনের টুল
“আমি এক্সেলের চেয়ে গুগল শিটস অনেক বেশি ব্যবহার করি। যখনই কোনো ধরনের ভিজ্যুয়ালাইজেশনের কাজ আসে, আমি এটিই ব্যবহার করি। ডাইনামিক টেবিল তৈরি বা নানা ধরনের বিশ্লেষণের কাজে মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে গুগল শিটসের ডেটা,” বলেছেন ফালেইরোস। তাঁর কাছে, এক্সেলের চেয়ে গুগল শিটসের বড় সুবিধা হলো এটি ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত। এর ফলে নানান লিংক সরাসরি সেখানে যোগ করা যায়। “এবং এটি অনেক বেশি ডায়নামিক। অ্যাপ্লিকেশনটিই বলে দেয় কোন ফাংশনগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।”
ইনফোঅ্যামাজেরনিয়ার একটি আবশ্য-পাঠ্য প্রতিবেদন ছিল “নাসা স্যাটেলাইটস রিভিল হাই ফায়ার রেট অ্যালংসাইড ডিফরেস্টেশন।” এখানকার চার্টগুলো তৈরি করা হয়েছে ডেটার্যাপার দিয়ে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে দেখানো হয়, অ্যামাজনে আগুন লাগার শঙ্কা বেড়ে গেছে ৩৮ শতাংশ এবং যে সাতটি জায়গায় সবচে বেশি আগুন দেখা গেছে, সেখানেই পাওয়া গেছে সবচে বেশি বন-ধ্বংসের চিত্র।
প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ না জানা থাকলেও আপনি ডেটার্যাপার দিয়ে সহজে ইন্টারঅ্যাকটিভ ম্যাপ ও চার্ট তৈরি করতে পারবেন। “এটি খুবই চমৎকার একটি টুল। তা সে ডেটা লেখা, হাইলাইট করা বা কলাম তৈরি – যে কাজের জন্যই হোক না কেন। ডেটার্যাপারের সৌন্দর্য্য এর বিস্তারিত তথ্যে ঢোকার ক্ষমতায়। সব মিলিয়ে এটি খুবই দারুন ও কাজের টুল। এবং এর মাধ্যমে অনেক ভালো গ্রাফিক্সও তৈরি করা যায়।
আরো পড়ুন
স্যাটেলাইট ছবি কোথায় পাবেন এবং কীভাবে ব্যবহার করবেন?
প্রিয় টুল ২০২০: সেরা সাংবাদিকরা যেসব টুল নিয়মিত ব্যবহার করেন
গেট ইউর গুগল আর্থ অন: এ ট্রেইনার’স গাইড
ম্যারিয়েল লোজাদা জিআইজেএন-এর স্প্যানিশ ভাষার সহযোগী সম্পাদক এবং ভেনেজুয়েলার ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। তিনি ডিজিটাল সাংবাদিকতায় কাজ করেছেন পাঁচ বছর ধরে। পুরো লাতিন আমেরিকাজুড়ে রিপোর্ট করেছেন স্বাস্থ্য, জেন্ডার ও মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে। তিনি লা তেরসেরা নিউজলেটারের অংশ, এবং জোট বেঁধে কাজ করেন স্যালুদ কন লুপা ও সোয় আরেপিতার সঙ্গে।