

জিআইজেসি২৩-তে সহযোগিতামূলক রিপোর্টিং সংক্রান্ত সেশনে কথা বলছেন ওসিসিআরপির প্রধান সম্পাদক মিরান্ডা প্যাট্রুসিচ। ছবি: এডউইন লুন্ডভিস্ট, জিআইজেএন।
গত দশকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়টি রীতিমতো জনপ্রিয় কৌশল (কিলার অ্যাপ) হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দশকে, টিকে থাকার স্বার্থেই এ ধরনের যৌথ প্রকল্পগুলোকে আরও অনেক বেশি কার্যকর, বৈচিত্র্যময়, নিরাপদ ও সম্প্রসারিত হতে হবে। এর পাশাপাশি একই কাজের পুনরাবৃত্তি এড়ানো এবং অহংকার বিসর্জন দেওয়ার ক্ষেত্রেও মনোযোগী হতে হবে।
এই সহযোগিতামূলক সাংবাদিকতার মূল যুক্তি ছিল যৌথ প্রকল্প হলে এবং ফাঁস হওয়া তথ্য ও সোর্স পরস্পরের সঙ্গে অবাধে ভাগাভাগি (র্যাডিকেল শেয়ারিং) করে নিলে সীমিত-সামর্থ্যের নিউজরুমগুলোর দক্ষতা কয়েকগুণ বাড়বে এবং তা অপরাধীদের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল ও বৈশ্বিক পদাঙ্ক অনুসরণেও সহায়ক হবে।
সাংবাদিকতার এই ধারা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যৌথভাবে প্রকাশিত ও সম্প্রচারিত প্রতিবেদনগুলো যেমন বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে, তেমনি পেগাসাস স্পাইওয়্যার, ক্রস-বর্ডার মানি লন্ডারিং থেকে শুরু করে স্টেট ক্যাপচারের মতো বিষয়গুলো সবার সামনে এসেছে। এভাবে উদীয়মান নব্য হুমকিগুলোর বিপরীতে যথা সময়ে উচিৎ জবাবও ছুঁড়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোতে সাংবাদিকেরা যখন নিজ নামে প্রতিবেদন প্রকাশে সাহস পান না, আন্তর্জাতিক জোটবদ্ধতা তখন তাদের নিরাপত্তা ”সুরক্ষা” দিতে পারে। এভাবে তারা পর্দার আড়ালে থেকেই সেই অনুসন্ধানে অংশগ্রহণ করতে পারেন। তাছাড়া, সহযোগিতামূলক প্রকল্পের অংশীদারেরা একে অপরের প্রতিবেদনকে ছড়িয়ে দিয়ে মাধ্যমে বেশি সংখ্যক পাঠক ও দর্শক আকর্ষণ করতে পারে। দলে ভারি হওয়ার কারণে রির্পোটারদের ওপর শারীরিক আক্রমণ বা হয়রানিমূলক মামলার বিড়ম্বনাও কমে আসে। সম্ভবত, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে: এ ধরনের সাংবাদিকতা গণমাধ্যম ঘিরে তৈরি হওয়া আস্থার অবক্ষয় রোধ করে পাঠকের আস্থা ফেরাতে সাহায্য করতে পারে, কেননা একসঙ্গে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম একই ধরনের এজেন্ডা নিয়ে অগ্রসর হলে প্রশ্নও কম ওঠে।
তাহলে, ভবিষ্যতের স্বার্থে এই মূল্যবান ও নতুন অনুসন্ধানী মডেলটির বিবর্তন কেমন হওয়া উচিত?
সুইডেনের গোথেনবার্গে ১৩তম গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে (#জিআইজেসি২৩) “ক্রস বর্ডার রিপোর্টিং: দ্য নেক্সট স্টেপস” প্যানেলে আলোচনার বিষয় ছিল এটি। সেখানে বিভিন্ন আইকনিক সহযোগিতামূলক প্রকল্পের নেতৃত্বে থাকা তারকা সম্পাদকেরা আলোচনা করেন, কীভাবে এ অংশীদারিত্ব অটুট রাখার পাশাপাশি আগামী দশকে তা আরো জোরালো করা যায়।
সেশনে উপস্থিত ছিলেন অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের (ওসিসিআরপি) প্রধান সম্পাদক মিরান্ডা প্যাট্রুসিচ, পেপার ট্রেল মিডিয়ার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফ্রেডেরিক ওবারমায়ার, ফরবিডেন স্টোরিজের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক লরেন্ট রিচার্ড, ইন্দোনেশিয়ার টেম্পো মিডিয়া গ্রুপের ডিজিটাল শাখা ইনফো মিডিয়া ডিজিটালের প্রধান নির্বাহী ওয়াহিউ ধ্যাতমিকা এবং গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক এমিলিয়া ডিয়াজ-স্ট্রাক, যিনি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট (আইসিআইজে)-এর ল্যাটিন আমেরিকান সমন্বয়কারী ও গবেষণা সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন।
প্যানেলের সবাই স্বীকার করে নেন যে, কোন ধরনের প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা প্রয়োজন তা সবার আগে খুব যত্ন করে বাছাই করতে হবে। রিচার্ড যেমনটা বলেছেন: “প্রতিটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনেই জোটবাঁধার প্রয়োজন পড়ে না। এগুলো নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, তবে এর কারণে আপনার কাজের গতি কমে যেতে পারে এবং আপনার সোর্সদের সুরক্ষিত রাখার বিষয়টিও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।”
তবে, সবাই একমত: সহযোগিতামূলক কাজ আরো বেশি এবং আরো বৈচিত্র্যময় হওয়া উচিৎ – যেখানে গণমাধ্যমের বাইরের অংশীদার রয়েছে সেখানেও।
কিন্তু এ ধরনের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা প্রয়োজন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সোর্স সম্পর্কিত স্পর্শকাতর তথ্য ভাগাভাগির ক্ষেত্রে আপনাকে কী ধরনের নিরাপত্তা মানদন্ড অনুসরণ করতে হবে? প্রাইভেসি আইনের কারণে আপনার সঙ্গের অন্য অনুসন্ধানী সাংবাদিককে যখন তার দেশ গোপন অডিও রেকর্ডিং ব্যবহারের অনুমতি দিবে না, তখন কী করণীয়? যৌথভাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে ব্রডকাস্ট অংশীদারের যখন আরো খানিকটা সময়ের প্রয়োজন হয়, তখন পত্রিকার সম্পাদকের প্রতিক্রিয়াই বা কি হবে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে হবে।
ডিয়াজ-স্ট্রাক বলেন, “আমি মনে করি, বিশ্বজুড়ে আমরা শত শত অনুসন্ধানী সাংবাদিক রয়েছি, যারা নিয়মিত যৌথভাবে কাজ করছি, যাই হোক, আমাদের আরো হাজার হাজার সহকর্মীর প্রয়োজন, যারা সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজগুলো করতে পারেন।” তার মতে, “তাই নতুন প্রজন্মের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন; প্রয়োজন সম্পাদক ও রিপোর্টাদের প্রশিক্ষিত করা, যাতে নেটওয়ার্কগুলো সিদ্ধান্ত নিতে পারে কোন দেশে কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং এতে করে কাঙ্ক্ষিত বৈচিত্র্যও পাওয়া যাবে।”
তিনি আরো বলেন, “বিশ্বজুড়ে নানা ধরনের ঘটনা ঘটছে, আমরাও খুব অল্প সময়ের মধ্যে সম্মিলিতভাবে একাধিক দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি — নিউজরুমগুলোকে চলমান নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন খবর প্রচার করতে হচ্ছে ; কখনো অভ্যুত্থান বা হঠাৎ বড় ধরনের কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে হচ্ছে। তাই আমাদের হাজার হাজার সাংবাদিক প্রয়োজন, যাদের সহযোগিতামূলত অনুসন্ধানী কাজের দক্ষতা রয়েছে। কেউ কিন্তু এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত পোষণ বা কোনো প্রশ্ন করেন না যে, ‘কেন আমি সহযোগিতা করব?’ কেননা, জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করার সুবিধাগুলো স্পষ্ট, আর আমরা জোটবদ্ধভাবে শক্তিশালীও।”
তাছাড়া সহযোগী অংশীদার বা নিউজরুমে শক্রভাবাপন্ন কোনো সদস্য আছে কিনা— যে কিনা আপনার সোর্সদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে, কিংবা প্রকল্পটি গিলে ফেলতে পারে— সে সব নিয়েও কেউই আজ আর মাথা ঘামায় না। কারণ গত এক দশকে যত সহযোগিতামূলক কাজ হয়েছে তার একটিতেও অংশীদারদের মধ্যে চুল পরিমাণ বিশ্বাসের বিচ্যুতি ঘটার রেকর্ড পায়নি জিআইজেএন। সাংবাদিকেরা আজ আর বিভাজিত নয়, তারা সবাই একত্রিত, একটি পক্ষ।
প্যানেল আলোচকেরা ভবিষ্যতের জন্য সহযোগিতার বেশ কিছু কৌশল তুলে ধরেছেন— যা এখানে রইলো।
অনুসন্ধানের শেষ দিকে নতুন সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানোর কথা বিবেচনা করুন
ছয় মাসব্যাপী একটি বড় প্রকল্পের পেছনে সময় দেওয়ার মত যথেষ্ট সামর্থ্য ছোট নিউজরুমগুলোর নেই। আবার প্রকল্পের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোরও ফাঁস হওয়া তথ্যে দূরের কোনো দেশ বা শহরে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে আভাস পেলে তা নিয়ে কাজ করার বা সেখানে গিয়ে খোঁজার সময় থাকে না। প্যাট্রুসিচ বলেন, এমন পরিস্থিতিতে, প্রকল্প সম্পাদকদের জন্য স্থানীয় আউটলেটগুলোর সঙ্গে যোগাযোগে দ্বিধায় পড়ার বা লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। এমনকি ফলোআপ প্রতিবেদন তৈরি বা এরইমধ্যে হাতে আসা তথ্য নিয়ে কাজ করার জন্য তারা কোনো রিপোর্টার নিয়োগ করতে পারবেন কিনা তা-ও জানতে চাইতে পারেন।
প্রতিবেদনে কার কতোটা অবদান তার সঙ্গে বাই লাইন সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নিয়ে চিন্তা করবেন না। “তাছাড়া শুরু থেকেই সবার সমন্বিত হয়ে কাজ করারও দরকার নেই,” তিনি বলেন। “আমরা যে অনুসন্ধানগুলো নিয়ে কাজ করছি তা নতুন সম্পাদকদের দিয়ে বলতে পারি যে দেখেন, এই হলো আমাদের খসড়া; আমরা এক মাসের মধ্যে প্রকাশ করতে চাই, এবং আমরা আপনাদের পক্ষ থেকে আরো বেশি বেশি রিপোর্টিং দেখতে আগ্রহী।’ এভাবে গল্পগুলো ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়, তাছাড়া ছোট নিউজরুমগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি প্রতিবেদনের পুনরাবৃত্তিও এড়ানো যায়।”
ওবারমায়ারও একমত হন এবং তার সঙ্গে যোগ করে বলেন: “তুলনামূলক ছোট আউটলেটগুলোর জন্য আমাদের টেকসই মডেলের কথা ভাবতে হবে। তাদের কোনো একটি বিটের একজন রির্পোটার আমাদের হয়ে কাজ করবে, যেমন পরিবেশ বিটের রিপোর্টার। তাদের আগে থেকে যৌথ কাজের অভিজ্ঞতা না থাকলেও চলবে।”
শুরুতেই বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক অ্যাঙ্গেল নির্ধারণ করুন
“কখনও কখনও আমরা একই ডেটাসেটে তথ্য খুঁজি: ‘যা হয়তো একটি দেশের জন্য খুব আকর্ষণীয় খবর, কিন্তু আমার দেশের নয়, তবুও দেখা যায় প্রতিবেদনের ওই একই অ্যাঙ্গেলের পেছনে আমি সমপরিমান সময় ও শক্তি খরচ করছি,” ব্যাখ্যা করেন প্যাট্রুসিচ। “এটি মোটেও কার্যকর নয়। প্রকল্পের গোড়ার দিকেই ব্যাপক সম্পাদকীয় আলোচনা প্রয়োজন। যেমন, ‘আমি কোন দিকটিকে গুরুত্ব দিচ্ছি— এবং আমাদের সবার কাছে কী গুরুত্বপূর্ণ?’ আমরা প্রত্যেকে আলাদা করে ঠিক কোন বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে পারি?’’
রিচার্ড যোগ করেন: “বড় আকারের প্রতিবেদন তৈরির সময় আমাদের কাজগুলো ভাগ করে নিতে হবে: ‘যেমন হত্যাকাণ্ড নিয়ে কে অনুসন্ধান করবে?; মুদ্রাপাচার অনুসন্ধানে কে নেতৃত্ব দিচ্ছে? দুর্নীতি কিংবা রাজনৈতিক দিকগুলো কে সামলাবে?’”
ফ্যাক্ট-চেকার ও আইনজীবীদের দলে নিন
“অনেক যৌথ প্রতিবেদনে আমি সাংবাদিকদের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে কাজ করতে দেখি, কিন্তু একটা সময় পর দেখা যায় যে ফ্যাক্ট-চেকিং দলের সঙ্গে আর যোগাযোগ হচ্ছে না,” ওবারমায়ার বলেন। “আমাদের ফ্যাক্ট-চেক টিমগুলোকে দলে আনতে হবে এবং পুনরাবৃত্তি এড়াতে হবে— কেননা, তারা একই ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে। আইনজীবীদের ক্ষেত্রেও তাই: আমরা সবাই জানি যে আইনজীবী নিয়োগ খানিকটা ব্যয়বহুল। তাহলে, আসুন তাদের সঙ্গে দলবদ্ধ হয়ে কাজ করি!”
বাইলাইন ক্রেডিট নিয়ে মানসিক সংকীর্ণতার লাগাম টানুন
ওবারমায়ার ও রিচার্ড, দুজনেই বলেন যে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিতে কার অংশগ্রহণ কতটা, বা কে-কি করেছে বা পুরস্কারে কাকে উদ্ধৃত করা হয়েছে— তা নিয়ে দ্বন্দ্ব ও কলহে লিপ্ত হওয়াটা নেতিবাচক এবং ভবিষ্যতের জন্য নিরুৎসাহজনক।
“আমি প্রায়ই সম্পাদকদের একটা কথা বলতে শুনি: ‘বাইলাইনে আমাদের কি সত্যিই দ্বিতীয় বা তৃতীয় ব্যক্তির নাম দেওয়ার প্রয়োজন আছে?'” ওবারমায়ার বলেন। “আমাদের এ ধরনের কথাবার্তা থেকে মুক্ত হওয়া জরুরী। সম্পাদকদের ক্রেডিট আটকে রাখার মতো বাজে চিন্তায় মনোযোগ দেওয়া বন্ধ করা শেখাতে হবে।” রিচার্ড আরও একধাপ এগিয়ে বলেন: “বেশি অহংকারী লোকেদের সঙ্গে কাজের বিষয়টি এড়াতে হবে। আপনি যদি একাই কৃতিত্বের দাবিদার হতে চান, পুরস্কার ভাগ করে নিতে অন্যদের সঙ্গে মঞ্চে উঠতে রাজি না থাকেন, তাহলে দয়া করে সহযোগিতামূলক প্রকল্পে কাজ করতে আসবেন না।”
জোটবদ্ধ কাজের দুনিয়ায় কেন “কোনো কালো তালিকা নেই”, তা ব্যাখা করতে গিয়ে রিচার্ড বলেন, আপনার সঙ্গে কেউ নতুনভাবে যুক্ত হতে চাইলে সেই সম্পাদকদের দলগত কাজের দক্ষতা আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে, সহযোগিতামূলক প্রকল্প শুরুর আগেই প্রতিষ্ঠিত নেটওয়ার্ক যেমন আইসিআইজে, ওসিসিআরপির কাছে জানতে চাইতে পারেন।
নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স ব্যবহার করুন— এবং শর্ত মেনে চলুন
ওয়াহিউ ধ্যাতমিকা বলেন, অনানুষ্ঠানিক সহযোগিতামূলক নেটওয়ার্কগুলো নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন তৈরিতে সমষ্টিগত শক্তিকে কাজে লাগাতে পারে; যেমন ২০ সদস্যের এনভায়রনমেন্টাল রিপোর্টিং কালেক্টিভ। এ নেটওয়ার্কের অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে র্যাপলার, দ্য অয়্যার, মোঙ্গাবে, মালয়েশিয়াকিনি এবং টেম্পো। তিনি বলেন, ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে যে কোনো মিডিয়াকে নেটওয়ার্কটির বিভিন্ন অনুসন্ধান অবাধে পুনঃপ্রকাশের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তটি পরিবেশগত সমস্যা সমাধানে বড় ধরনের অবদান রাখছে।

ইন্দোনেশিয়ার ইনফো মিডিয়া ডিজিটালের প্রধান নির্বাহী ওয়াহিউ ধ্যাতমিকা জিআইজেসি২৩ সম্মেলনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিবেশগত সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা নেটওয়ার্ক তৈরিতে তার প্রচেষ্টা সম্পর্কে আলোচনা করছেন৷ ছবি: এডউইন লুন্ডভিস্ট, জিআইজেএন।
উদাহরণস্বরূপ, এই দলটি অবৈধ মৎস আহরণ বালি উত্তোলন এবং বনরুই পাচার ঘিরে গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কাজগুলো তদারক করেছেন নয়টি দেশের সম্পাদকদের একটি দল, এবং তারা দেখতে পেয়েছেন যে “সাংবাদিকেরা একে অপরের তৈরি প্রতিবেদনের শূন্যস্থানগুলো পূরণে একত্রে কাজ করেন, বিশেষ করে যখন সীমান্তের ওপারের পরিবেশবিষয়ক অপরাধগুলো নিয়ে অনুসন্ধান করা হয়।”
যাইহোক, ধ্যাতমিকা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, অনুসন্ধান সুসংগঠিত হওয়া সত্ত্বেও সদস্য নিউজরুমগুলোর সহযোগিতার কাঠামো থেকে বিচ্যুৎ হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। কারণ অনেক সময় দেখা যায় নেটওয়ার্কের খুব বিশ্বস্ত সম্পাদকদের মধ্যে কেউ হয়তো পুরানো চাকরি ছেড়ে নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন, ফলে এক ধরনের আঞ্চলিক সংকট তৈরি হয়। “তাহলে পাঁচ বছর ধরে আমরা কীভাবে এ উদ্যোগগুলোকে টিকিয়ে রাখব? একেবারে নতুন সম্পর্কগুলো কীভাবে টিকে থাকবে?” তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন। “আমাদের অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে আমরা শুধুমাত্র একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির লক্ষ্যে উদ্যোগটি হাতে নিচ্ছি না; প্রকল্পগুলো দীর্ঘমেয়াদী— আর এ ধরনের মানসিকতা প্রতিটি অনুসন্ধানী কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এজন্য ব্যক্তিগত বিশ্বস্ত সম্পর্কের বদলে নিউজরুমগুলোর সঙ্গে বরং স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তোলা জরুরী।”
সংকট সামাল দিতেও জোটবদ্ধ কাজ শুরু করা যেতে পারে
“কিরগিজস্তানে যখন আমাদের একজন বন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন মুহুর্তের মধ্যে একটি দল তৈরি করে আমরা খুঁজে বের করতে চেষ্টা করি তাকে গ্রেপ্তারের নেপথ্যের কারণগুলো কী এবং মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করি,” বলেন প্যাট্রুসিচ। “গার্ডিয়ান, ডের স্পিগেল ও অন্য মিডিয়াগুলোর সঙ্গে জোট বেঁধে আমরা এক মাসের মধ্যে একটি বিস্তারিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করি। তবে একজন সম্পাদক হিসাবে, এই মুহূর্তে আমি ভীষণ চাপ অনুভব করছি, কারণ মাত্র ছয় সপ্তাহের ব্যবধানে আমাদের চারটি যৌথ প্রতিবেদন প্রকাশের সময়সীমা বেধে দেওয়া আছে। আমি আমার দলের দিকে তাকাচ্ছি আর ভাবছি যে: ‘আমরা কীভাবে কাজগুলো শেষ করব?'”
তিনি বলেন: “এ ধরনের চাপ একটি বাস্তবতা, তবে প্রত্যেকে যদি তাদের দক্ষতা এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলোর দিকে মনোনিবেশ করে তাহলে স্বল্পমেয়াদী প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব।”
বিশেষজ্ঞ সোর্সদের প্রতিবেদনের অংশীদার করুন
সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধানী প্রতিবেদগুলোতে স্থাপত্য, অ্যাক্টিভিজম, একাডেমিক গবেষণার মতো বিশ্বের বিশেষজ্ঞ গবেষকদের শুধুমাত্র সোর্স হিসাবে নয়, প্রতিবেদনের সহযোগী হিসেবেও স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। ডিয়াজ-স্ট্রাক বলেন, এ ধরনের চর্চার মাধ্যমে নিউজরুমের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এমন অংশীজনদেরও গুরুত্ব দেওয়া সম্ভব হয়।
“সহযোগিতামূলক কাজের বিভিন্ন ধরন আছে, যেগুলো ঘিরে আমাদের অবশ্যই অগ্রসর হতে হবে এবং আমরা হবো,” বলেন ডিয়াজ-স্ট্রাক। “গল্প বলার জন্য আমরা শুধু নিউজরুমগুলোকে নিয়ে কাজ করবো এমন নয়, বরং লাখ লাখ রেকর্ড বা জটিল নিরাপত্তা সমস্যাগুলো নিয়ে কাজের সময় সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়েও কাজ করতে হবে। যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত বোঝাপড়া তৈরির জন্য শিক্ষবিদ কিংবা কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সাহায্য করার জন্য আমরা কীভাবে এআই ব্যবহার করব? এটি এমন একটি বিষয় যা নিয়ে আমরা এরই মধ্যে কাজ করতে শুরু করেছি। এ ধরনের অংশীদারিত্ব অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কমিউনিটি হিসাবে আমাদের অগ্রগতি ধরে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য।”
কাজের চাপে নিঃশেষ হওয়ার আগেই সেটি মোকাবেলা করুন
ওবারমায়ারের মতে, বিভিন্ন টাইমজোনের একাধিক অংশীদারের সঙ্গে সিগনাল অ্যাপের মাধ্যমে আপনি যখন সংযুক্ত থাকবেন তখন দলের কোনো সদস্য যদি একের পর এক গ্রুপে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকে তাহলে সারা রাত ধরে আপনার ফোনটি হয়তো বাজতে থাকবে। “আমি সিগন্যালকে ভালবাসি, আবার ঘৃণাও করি!” তিনি খানিকটা রসিকতার ছলে বলেন। “তবে অ্যাপটি যে উচ্চমাত্রার নিরাপত্তা সুরক্ষা দেয় তা রীতিমতে উদযাপন করার মতো বিষয়, কিন্তু আপনি যদি অ্যাপটিকে সঠিকভাবে পরিচালনা না করেন, তাহলে এটি রীতিমতো আপনার মাথা ব্যাথার কারণ হতে পারে— ধরুন, আপনি আপনার পরিবারের সমস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে গেছেন কিংবা শারিরিক শ্রান্তিগুলোকে দূর করতে চান। তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করুন: ‘আমি এই চাপের অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে কী করছি?’ খেলাধুলা? ঘোরাঘুরি? ফূর্তি?’ আসুন কাজের চাপে নিঃশেষ হওয়া নিয়ে কথা বলি।”
ডিয়াজ স্ট্রাক আরো যোগ করে বলেন, সহযোগিতামূলক কাজের ক্ষেত্রে চাপ এবং বিশ্রাম বিষয়ে খোলামেলা কথা বলুন। যেমন ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য ব্যবহারিক কৌশল প্রয়োজন, কারণ অনলাইনে সাংবাদিকদের হেয় করে করা প্রচারণা মানসিক চাপকে (বার্নআউটকে) বাড়িয়ে দিতে পারে।
প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সম্পাদকদের প্রশিক্ষণ দিন — এবং আরও ভালো কাজের জন্য চাপ দিন
“যে বিষয়গুলো আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়, প্রকৃত দক্ষ সম্পাদকেরা তা ধরিয়ে দিতে পারেন: ‘আমাদের ঠিক এটাই প্রয়োজন; এটি প্রতিবেদনকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ করে; শুধুমাত্র তথ্য-প্রমাণই যথেষ্ট নয়” ব্যাখা করেন প্যাট্রুসিচ। “আমি মনে করি আমরা সম্পাদকেরা প্রায়ই রিপোর্টার বা অন্যান্য সম্পাদকদের যথাযথভাবে সঠিক সত্যটা বলতে পারি না। একটা অখাদ্য প্রতিবেদন দেখেও আমরা বলবো যে ‘ওহ চমৎকার কাজ’।
জিআইজেএনের নির্বাহী পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দশ ঘন্টার মধ্যে প্যানেল আলোচনার সময় ডিয়াজ-স্ট্রাককে নতুন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে প্যাট্রুসিচ বলেন:” জিআইজেএনের দায়িত্ব নিয়ে ডিয়াজ-স্ট্রাক নিশ্চয়ই প্রকল্প ব্যবস্থাপনার ওপর সম্পাদকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মতো ব্যাপক কর্মযজ্ঞে হাত দেবেন।” সেশনের মডারেটর মার্গো স্মিট সায় দিয়ে বলেন: “বিভিন্ন ধরনের কৌশল ও পরামর্শসমৃদ্ধ ভালো গাইড রয়েছে জিআইজেএনের। আমি দেখতে পাচ্ছি যে, জিআইজেএন ‘প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট’ নামে এবার নতুন একটি গাইড আনতে যাচ্ছে। ডিয়াজ-স্ট্রাক উত্তরে বলেন “আমাদের আরও ভালো ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় প্রয়োজন, আর… হ্যাঁ, জিআইজেএনের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহযোগিতাগুলো অব্যহত থাকবে।”