প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

বিষয়

প্রশ্নোত্তর: রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্ত জুড়ে টিকটকের আধেয় অনুসন্ধান

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

English

টিকটক নিয়ে অনুসন্ধান। গ্রাফিক: এনআরকের সৌজন্যে

৪ঠা মার্চ, ইউক্রেনে রুশ হামলার ১০ দিন পার হতে না হতেই  সেনাবাহিনীকে নিয়ে “ভুয়া খবর” ছড়ানোর জন্য ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রেখে রাশিয়ার আইনসভায় নতুন একটি আইন পাস করা হয়। এটি ছিল ইউক্রেন যুদ্ধের ভাষ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্রেমলিনের নেওয়া অনেকগুলো পদক্ষেপের একটি। 

এরপর প্রায় রাতারাতি, যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার অংশের কর্মকাণ্ডের কাভারেজ দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য। রাশিয়ায় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অন্যতম শেষ ঘাঁটি, নোভায়া গেজেটার মতো সংবাদমাধ্যমগুলো বাধ্য হয় তাদের কর্মকাণ্ড স্থগিত করতে। 

তথ্য যুদ্ধ নিয়ে ক্রেমলিনের কর্মকাণ্ডের মধ্যে আরও আছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করা। রাশিয়ার একটি আদালত ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মূল কোম্পানি, মেটা-কে “চরমপন্থী” আখ্যা দেওয়ার পর এগুলো বন্ধ করা হয়। এমন সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাওয়া কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের একটি হলো চীনা মালিকানাধীন টিকটক। তবে সেটিও সম্ভব হয়েছে রাশিয়ার ভেতর থেকে নতুন ভিডিও আপলোড ও সরাসরি সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞার কিছু নিয়মকানুন এবং রাশিয়ার বাইরে থেকে আসা কন্টেন্ট ব্লকিংয়ের কৌশল অবলম্বনের কারণে। 

লুপিং ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটক সবচেয়ে বেশি পরিচিত এর নাচ ও ঠোঁট মেলানো ভিডিওর জন্য। প্রতি মাসে, বিশ্বজুড়ে এক বিলিয়নের বেশি ব্যবহারকারী এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রাজিলে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহারকারী সবচেয়ে বেশি। সক্রিয় ব্যবহারকারীর তালিকায় চতুর্থ সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে রাশিয়া। দেশটিতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫১.৩ মিলিয়ন। (টিকটক চীনে পরিচিত দুউইন নামে। সেখানে এটির দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬০০ মিলিয়ন বলে খবরে বেরিয়েছে।)

ইউক্রেন আক্রমণের পর রাশিয়ায় টিকটক বন্ধ করা না হলেও, এর উন্মুক্ত কন্টেন্টের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মের অ্যালগরিদমের প্রভাব নিয়ে অনুসন্ধান করা ইউরোপীয় অলাভজনক সংস্থা ট্র্যাকিং এক্সপোজড-এর তথ্য অনুযায়ী, রুশ ব্যবহারকারীদের কাছে আগে উন্মুক্ত ছিল, এমন ৯৫% টিকটক কন্টেন্ট ৭ মার্চের পর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে, জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার দাপ্তরিক তথ্যসহ মার্কিন ও ইউরোপীয় কন্টেন্ট রাশিয়ার ভেতরে আর দেখতে পাওয়া যায় না। ট্র্যাকিং এক্সপোজড আরও দেখেছে যে, এপ্রিলের মধ্যেই রাশিয়ার টিকটক কার্যত রাষ্ট্রীয় প্রচারাভিযান যন্ত্রে পরিণত হয়েছে, যেখানে ইউক্রেনে হামলা সংক্রান্ত ৯৩% কন্টেন্ট যুদ্ধের পক্ষের মতকে সমর্থন করে।

রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন সম্পর্কে একেবারে মাঠপর্যায়ের টিকটক ব্যবহারকারীদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল এবং রাশিয়া ও ইউক্রেনের ব্যবহারকারীদের মধ্যে ডিজিটাল ভাষ্যগুলো কিভাবে ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়েছে– তা গভীরভাবে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছিল নরওয়ের পাবলিক ব্রডকাস্টিং কোম্পানি, এনআরকে-র এক দল সাংবাদিক। 

সীমান্তের একদিকে, ব্যবহারকারীরা দেখতে পান বিড়ালের ভিডিও, আর অন্যদিকে, যুদ্ধের সাঁজোয়া যান ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী। ছবি: এনআরকের সৌজন্যে

দুটি কাল্পনিক অ্যাভাটার চরিত্র ব্যবহার করে এনআরকে দেখেছে যে, রুশ টিকটক ব্যবহারকারীদের দেখানো হচ্ছে একটি কুকুরের হাঁসকে পোষ মানানোর  ভিডিও। অন্যদিকে, ইউক্রেন সীমান্তের ভেতরে ব্যবহারকারীরা দেখছেন: বিস্ফোরণ থেকে নির্গত ধোঁয়া, মাঠ পর্যায়ে সৈন্যদের বক্তব্য, এবং ইউক্রেনের যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্টের ভাষণ।

অনুসন্ধানী প্রকল্পটি নিয়ে কথা বলার জন্য ক্রিশ্চিয়ান নিকোলাই বিয়রিকেহেনরিক বো এর সাক্ষাৎকার নিয়েছে জিআইজেএন। তাঁরা এনআরকের ১০ সদস্যের অনুসন্ধানী দলের অংশ। প্রকল্পটিতে তুলে ধরা হয়েছে: টিকটকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার দর্শকদের জন্য যুদ্ধের কাভারেজে কী বিশাল ফারাক ছিল। 

জিআইজেএন: স্টোরির প্রাথমিক ধারণা কী ছিল — কিসের ভিত্তিতে আপনারা এই স্টোরি শুরু করেছিলেন? কোনো অনুমানের ভিত্তিতে নাকি কোনো বৃহত্তর থিম ছিল? 

ক্রিশ্চিয়ান নিকোলাই বিয়রিকে: সেসময় আমরা টিকটক অ্যালগরিদম সংশ্লিষ্ট আরেকটি প্রকল্প নিয়ে গবেষণা করছিলাম, তবে সেটির সঙ্গে এই যুদ্ধের কোনো সম্পর্ক ছিল না। সেখান থেকেই আমাদের মাথায় চিন্তা আসে: “আমরা কী এই পদ্ধতি অন্য কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করতে পারি – হয়তো যুদ্ধের ক্ষেত্রেও?” 

মানচিত্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবনাটা আমাদের মাথায় আসে। সেসময় খারকিভে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছিল আর আমাদের চোখে পড়ে শহরটি, রুশ শহর বেলগোরোদের বেশ কাছে। রুশ তথ্য অধিকার, রুশ জনগণের তথ্য অধিকারের ব্যাপ্তি এবং অবশ্যই ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামের মতো প্রধান সামাজিক মাধ্যমের সাইটগুলো বন্ধের ব্যাপারে আলোচনার প্রেক্ষিতে এই চিন্তাটি আমাদের মাথায় আসে। আমরা প্রশ্ন করি: মাত্র ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল) ব্যবধানে থেকে বেলগোরোদের একজন টিকটক ব্যবহারকারী যে ভিডিও দেখছেন, খারকিভের নাগরিকও কি সেই একই ভিডিও দেখতে পান? 

স্টোরিতে ব্যবহৃত গ্রাফিক্সে টিকটকের রং বিন্যাসের প্রতিফলন ছিল। ছবি: স্ক্রিনশট

হেনরিক বো: টিকটক অ্যালগরিদম নিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি অনুসন্ধান দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। ২০২১ সালে তারা কতগুলো বট [স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য প্রোগ্রাম করা সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন] তৈরি করেছিল। সেটির উদ্দেশ্য ছিল পরীক্ষা করে দেখা যে, দীর্ঘ সময় ধরে নির্দিষ্ট কিছু হ্যাশট্যাগ ও বিষয় সংশ্লিষ্ট ভিডিও দেখার জন্য প্রোগ্রাম করা হলে তা শেষ পর্যন্ত কোথায় গড়ায়। আমরাও একই রকম কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম। ইতিমধ্যেই আমাদের হাতে প্রাথমিকভাবে কার্যকর একটি বট ছিল, যা টিকটকে স্ক্রল করতে পারত এবং এটিকে আমরা  বিভিন্ন ধরনের বিষয় নিয়ে কাজের জন্যও প্রোগ্রাম করতে পারতাম। এভাবেই এই প্রকল্প সংক্রান্ত চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছিল। 

জিআইজেএন: আপনারা বটটি তৈরি করেছেন কীভাবে?

এইচবি: প্রথমেই আমরা দুইটি টিকটক অ্যাকাউন্ট তৈরি করি। তারপর রেসিডেন্সিয়াল প্রক্সি বা স্থান নির্ধারণের মাধ্যমে দুইটি বটকে স্থাপন করি দুইটি ভিন্ন শহরে – খারকিভ ও বেলগোরোদ। আমরা এই দুইটি টিকটক অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারী নির্ধারণ করেছি ১৯ বছর বয়সী পুরুষ হিসেবে। কারণ তরুণ হলেও তাদের যুদ্ধে যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত বয়স হয়েছে। 

অনুসন্ধানের জন্য সাংবাদিকদের তৈরি করা অ্যাভাটার। ডানদিকে, “আলেক্সি” রাশিয়ার বেলগোরোদের জন্য  এবং বাম দিকে ”নিকোলাই”, ইউক্রেনের খারকিভের জন্য। ছবি: স্ক্রিনশট

আমরা এই কাজের জন্য প্রোগ্রামিং ভাষা পাইথন এবং ওয়েব ব্রাউজার নিয়ন্ত্রণের টুল সেলেনিয়াম ব্যবহার করেছি। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে টিকটকের ওয়েব সংস্করণ স্ক্রল করেছে এবং সব ডেটা (যেমন; টেক্সট ও কভার ছবি) সংগ্রহ করেছে। আমরা এরপর কাভার ছবিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বিশ্লেষণের জন্য মাইক্রোসফট আজুর কম্পিউটার ভিশন এপিআই ব্যবহার করেছি, যেন সেটি আমাদের জানাতে পারে যে ছবিটিতে সে কী কী দেখেছে। এখান থেকে আমরা নির্ধারণ করেছি যে, “ভিডিওটি কি যুদ্ধ সংক্রান্ত ছিল নাকি অন্য কিছু?” যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট ভিডিও হলে আমাদের বটগুলো সেটি দেখত আরও বেশি সময় ধরে। তবে একদম শুরুতে, প্রথম কয়েকশ ভিডিও-র ক্ষেত্রে আমাদের বটগুলো প্রতিটি ভিডিওই নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দেখেছে। আমরা দেখতে চেয়েছিলাম: টিকটক সাধারণভাবে আমাদের কী কী দেখায়। কয়েকশ ভিডিও দেখার পর আমরা বটগুলোকে প্রোগ্রাম করি যুদ্ধ সংক্রান্ত ভিডিওতে বেশি আগ্রহ দেখানোর জন্য। কারণ আমরা দেখতে চেয়েছিলাম যে, কিছু সময় যাওয়ার পর রাশিয়ান বটটি যুদ্ধ সংক্রান্ত পোস্ট আরও বেশি করে দেখতে পায় কিনা।  

জিআইজেএন: আপনি যখন স্টোরিটি করেছেন, তখন এই স্টোরিতে টিকটক পেজের ছাপ রাখাটা কি খুব জরুরি ছিল?

এইচবি: হ্যাঁ, কারণ আমরা পাঠকদের এমন অনুভূতি দিতে চেয়েছিলাম যে, তারা টিকটকই ব্রাউজ করছে। আমরা তাদেরকে দুজন ভিন্ন ভিন্ন মানুষের টিকটক ব্যবহারের অভিজ্ঞতা দিতে চেয়েছি। এবং চেয়েছি: আপনি টিকটকে যেভাবে স্ক্রল করেন, সেইভাবেই যেন স্টোরিটি স্ক্রল করতে পারেন। তাই এই স্টোরির কার্ডগুলো আসলে একেকটি টিকটক ভিডিও — যেন আপনি ঠিক টিকটকের মতোই স্ক্রল করে প্রথম থেকে দ্বিতীয়টিতে যেতে পারেন।

সিএনবি: আমরা চেয়েছিলাম, টিকটক প্রজন্ম স্টোরিটি পড়ুক। আমার মতে, গড়পড়তা টিকটক ব্যবহারকারীর বেশি গভীরতাসম্পন্ন লম্বা টেক্সট পড়ার মতো ধৈর্য থাকে না। তাই একটি সহজ পাঠ্য জিনিস তৈরি করা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যেন মনে হয় যে আপনি টিকটক জগতেই আছেন। কারণ বেশিরভাগ টিকটক ব্যবহারকারী স্বাচ্ছন্দ্যে, হালকা মেজাজে পেজটি স্ক্রল করেন। আমরাও একই অনুভূতি তৈরি করতে চেয়েছিলাম।

জিআইজেএন: অনুসন্ধানী প্রতিবেদনকে সবার জন্য সহজবোধ্য করতে স্ক্রোলিটেলিংয়ের মতো বিভিন্ন ধরনের ডেটা উপস্থাপনা কতটা জরুরি বলে আপনি মনে করেন?

এইচবি: আমি মনে করি, এটি অনেকটা নির্ভর করে আপনি কী ধরনের গল্প বলতে চান– তার ওপর। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল মোটাদাগে টিকটকে (বিষয়বস্তুর) ভিন্নতা তুলে ধরা। এটির কাঠামোটিও ছিল টিকটকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফলে এই স্টোরির ক্ষেত্রে এটি খুব ভালো কাজ করেছে। তবে আমরা এমন অনেক উদাহরণও পেয়েছি যেখানে মনে হয়েছে এটি ভালোমতো কাজ করছে না। কারণ কখনো কখনো মনে হচ্ছে আপনি কেবল স্ক্রল করেই যাচ্ছেন আর একটি দুটি ছবি ও সামান্য কিছু টেক্সট পাচ্ছেন… আমার মনে হয়, আপনার যদি খুব স্পষ্ট ধারণা থাকে এবং প্রতিবেদনটি খুব বেশি লম্বা না হয়, তাহলে এটি ভালো কাজ করতে পারে।

সিএনবি: আমরা বিষয়টি নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করেছি। এ ধরনের একটি থিম আমরা আগেও ব্যবহার করেছিলাম। সেখানে দেখা গেছে: এখান থেকে (ব্যবহারকারীর) বেরিয়ে যাওয়ার হার অনেক বেশি। মানুষ এখানে এসে যখন দেখে অনেক স্ক্রল করতে হবে, তখন তাদের মনে হয়: ঠিক আছে, পরে দেখব। তাই প্রতিবেদনটির জন্য এই কাঠামোটি ব্যবহার করা উচিত হবে কি না– তা নিয়ে আমাদের অনেক ভাবতে হয়েছে। শেষপর্যন্ত এটি আমাদের ঠিক মনে হয়েছে টিকটক থিমের কারণে। তবে আমি স্ক্রলিটেলিংয়ের ব্যবহার নিয়ে ক্রমেই সন্দিহান হয়ে উঠছি। 

ইউক্রেনীয় কাল্পনিক টিকটক ব্যবহারকারী নিকোলাই -এর কন্টেন্ট স্ট্রিমে দেখানো কিছু ভিডিও। ছবি: এনআরকের সৌজন্যে

জিআইজেএন: কোনো সংগঠন যখন একটি অনুসন্ধান করে, তখন এটি অনেক জটিল হয়ে উঠতে পারে। আপনার কী মনে হয় যে, এই প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে আপনারা যেমনটি করেছেন, সেভাবে পাঠক-দর্শককেও অনুসন্ধানী প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়াটা অনুসন্ধান পরিচালনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হয়ে উঠতে পারে?  

সিএনবি: অবশ্যই এটি প্রেক্ষাপটের ওপর নির্ভরশীল। প্রকৃতিগতভাবেই টিকটক কিছুটা হালকা প্রকৃতির। প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু পাচার সংশ্লিষ্ট কিছু হলে হয়তো এটি অন্যরকম হতো। আমি বলব যে, আমরা এই অনুসন্ধানের একেবারে শুরু থেকেই স্টোরিটেলিংয়ে অনেক মনোযোগ দিয়েছিলাম, যা প্রতিবেদনটির খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। পাশাপাশি দুইটি শহর নিয়ে কাজ করার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ আপনি দেখতে পারবেন যে খারকিভ এখানে, আর বেলগোরোদ এখানে। যে শহরে আপনার বসবাস, সে শহরকে কল্পনা করা সহজ। আপনি জানেন ৮০ কিলোমিটার পথ কতটা দূরে — বেশি দূরে নয় — অথচ এমন দূরত্বের দুইটি শহরের মানুষের জগত পুরোপুরি ভিন্ন রকম। আমরা জানি যে, তাদের মাঝখানে একটি সীমানা আছে এবং তারা প্রতিবেশী দুই শহর। এটিই একটি স্টোরিটেলিং কৌশল। 

এছাড়াও, আমাদের বটগুলোর নাম ও ছবি দেওয়ার কারণে পাঠকের মনে হবে “ওহ, এই নিকোলাই, সে দেখতে এমন। এই আলেক্সি।” রুশ বা ইউক্রেনীয় বট না বলে, নাম জানা থাকায় এটি ডেটা হলেও একজন ব্যক্তির মতো আবহ তৈরি করে। নামগুলো রাশিয়া ও ইউক্রেনে বহুল ব্যবহৃত শীর্ষ ১০ টি নাম থেকে নেওয়া হয়েছে এবং ছবিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।

জিআইজেএন: মানসিক প্রস্তুতি পর্যায়ে, চিন্তাভাবনা ও উপলব্ধির জায়গা থেকে আপনি একটি স্টোরি নিয়ে কীভাবে এগোন?

সিএনবি: অনুসন্ধানী ও ডেটা সাংবাদিকতায় আমি একেবারেই নতুন, কিন্তু আমি এই কাজের মজাটা ধরতে পেরেছি –  যা সত্যিই দারুণ আর আমি এটা খুব পছন্দও করি। তবে আমার আগের প্রায় ২০ বছরের অভিজ্ঞতা ফিচার লেখায়। নরওয়ের আশেপাশে এবং বিদেশে আমি প্রচুর মানুষের জীবনালেখ্য ও ফিচার লিখেছি। স্টোরিটেলিং নিয়ে আমি অনেক কাজ করেছি, তবে ডেটা সাংবাদিকতায় আমার কাজ খুব কম, তাই আমার জন্য এটি ছিল একটি নতুন ক্ষেত্র। কিন্তু, নতুন একটি  বিষয়ে আপনার আগের অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগাতে পারাটা দারুন ব্যাপার। এটি আমার অন্ধবিশ্বাসও হতে পারে, তবে আমি মনে করি, অনেক ডেটা সাংবাদিক সত্যিই ডেটার মধ্যে ডুবে থাকেন আর প্রায়ই ভুলে যান যে, স্টোরিটেলিংও একইরকম গুরুত্বপূর্ণ। ভিজ্যুয়ালাইজেশনে হেনরিক সত্যিই ভালো, তিনি খুব দুর্দান্ত ভিজ্যুয়ালাইজেশন করতে পারেন এবং তিনি ডেটা নিয়ে কাজেও খুব দক্ষ। আপনি যখন কয়েকটি জিনিসকে এক সুতোয় গাঁথেন, যখন একটি ভিন্ন ক্ষেত্রে আপনার অভিজ্ঞতা থাকে, তখন হয়ত এমন কিছু আপনার চোখে পড়ে যা কেবল ডেটা নিয়ে কাজ করা মানুষগুলো দেখতে পান না।

এইচবি: ক্রিশ্চিয়ান খুব ভালো একজন স্টোরিটেলার। তিনিই প্রথম এই দুইটি শহর শনাক্ত করেন, এবং দেখতে পান যে আমরা একদম নির্দিষ্ট করে এই দুই শহরকে কেন্দ্র করে গল্পটি বলতে পারি। বট দুইটির নাম ও বৈশিষ্ট্য সংক্রান্ত বিষয়গুলোও তিনি ঠিক করেন। অন্যদিকে আমি চিন্তা করছিলাম: ‘যদি একটি কার্ড থেকে আরেকটি কার্ডে যাওয়ার সময়ও সীমান্তরেখাটি থেকে যায়, তাহলে ভালোই হয়’– এই ধরনের বিষয়। 

নর্ডিক মিডিয়া ডেজ উৎসবে বক্তব্য রাখছেন বিয়রিকে (বাঁয়ে) এবং বো। ছবি: কেটিল মোল্যান্ড ওলসেনের সৌজন্যে

জিআইজেএন: এধরনের প্লাটফর্ম কীভাবে কাজে লাগানো যায়, এ ব্যাপারে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আপনার কি কোনো পরামর্শ আছে?

সিএনবি: আমি মনে করি: আপনি কাদের লক্ষ্য করে প্রতিবেদনটি তৈরি করছেন– তা নিয়ে চিন্তা করাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চেয়েছিলাম টিকটক প্রজন্ম এটি পড়ুক, তাই কাছাকাছি ধরনের একটি থিম ব্যবহার করাকেই আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হয়েছে এবং আমরা চেয়েছিলাম: পাঠক-দর্শক যেন পরিচিত একটি জায়গাতেই আছে– এমন অনুভূতি পায়। এনআরকে-তে লেখার ক্ষেত্রে একটি বিষয় আছে যে, মানুষের সামনে অকপটে সহজ সত্যিটা তুলে যেন ধরা যায়। আপনি নিশ্চয়ই ওপর থেকে এভাবে বলেন না, ‘শুনুন! শুনুন! আমি আপনাকে এ ব্যাপারে কিছু বলব, দয়া করে আমার কথা শুনুন।’ এই স্টোরিতে আমরা যা যা করেছি, তার একটি হলো: এমনভাবে উপস্থাপন করেছি, যেন কোনো বন্ধুকে গল্প বলছি। আপনি যখন সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে অনুসন্ধান করছেন, তখন সেখানকার কিছু ভাব-সাদৃশ্য ধরে রাখাটা অন্তত আমি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। 

জিআইজেএন: আপনার সাধারণ কোনো পরামর্শ আছে যে সংঘাতের সময় আর কী নিয়ে অনুসন্ধান করা যায়, কীভাবে দক্ষতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়, এবং অনুসন্ধানে কী তুলে ধরা যায়?

এইচবি: এটা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার যে, আমরা এমন একটি দলের সঙ্গে কাজ করি যাদের একেক জন একেক বিষয়ে দক্ষ। কেউ ফটোগ্রাফি, ভিডিও, ডেটা সাংবাদিকতায় দক্ষ, কেউ বা আবার স্টোরিটেলিংয়ে ভালো। আপনি যখন বিভিন্ন কাজে দক্ষ সঠিক মানুষগুলোর সঙ্গে জোট বাঁধেন, তখন ভালো কিছু করার পথ সহজ হয়ে যায়। একে অন্যকে বিশ্বাস করাও জরুরি। আমি জানি, ক্রিশ্চিয়ান স্টোরিটেলিংয়ে খুব ভালো, তাই তাঁর টেক্সট লেখাটা ভালো ছিল। আমরা অন্য দশটি নিবন্ধে যেভাবে কাজ করি এই কাজটা কিছুটা ভিন্নভাবে করেছি, কারণ আমরা একসঙ্গে এটি করেছি, তবে আমরা একইসঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন নানা কাজও করেছি। যেমন; তিনি যখন লিখছিলেন তখন আমি কার্ডের জন্য গ্রাফিক্স ও ছবি তৈরি করছিলাম এবং আমরা প্রয়োজনে একজন আরেকজনকে ডেকেছি। আমরা একে অন্যের কাজ নিয়ে বলেছি “খুব ভালো হয়েছে” বা “এটা আরেকটু ভালো করা যায়।”

জিআইজেএন: এমন কোনো কিছু কি আছে যা আপনি স্টোরিটিতে ভিন্নভাবে করতে পারতেন? 

এইচবি: এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে: আমরা অনেকগুলো বট নিয়ে গভীর কোনো অনুসন্ধান চালাইনি, বা লম্বা সময় ধরে প্রচুর ডেটা নিয়ে কাজ করিনি। এটি কেবলই একটি চিত্র তুলে ধরেছে, যে সেসময় ঐ অঞ্চলে পরিস্থিতি কেমন ছিল। [আমরা একটি জিনিস শিখেছি]… ভিডিও ইউআরএলগুলো সংগ্রহ করে রাখলে আমরা কাজটিকে আরও সহজ করতে পারতাম। সেটি না করায় আমাদের আবার নতুন করে সেগুলো খুঁজে বের করতে হয়েছিল এবং টিকটকে অনেক ভিডিও খুঁজতে হয়েছিল।

সিএনবি: কারিগরী দিক থেকে চিন্তা করলে, অনেক কিছুই আমরা ভিন্নভাবে করতে পারতাম। অবশ্যই এমন অনেক কিছু আছে যা আমরা আরও গভীরে তলিয়ে দেখতে চাই, কিন্তু আমি মনে করি, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আমাদের শুধু প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোই কাভার করতে হতো। এক অর্থে আমার মতে, আমরা যথেষ্ট গভীরে অনুসন্ধান করেছি এবং একটি স্টোরি বলার মতো অনেক কিছুই হাজির করেছি। নিঃসন্দেহে আমাদের এখনও অনেক প্রশ্ন আছে, আর আমরা সত্যিই খুশি যে অন্যরা এ নিয়ে ফলো-আপ করছে এবং ডেটা অ্যালগরিদম নিয়ে গবেষণা ও অনুসন্ধান করছে

আরও পড়ুন

টিকটকে অনুসন্ধানের গাইড: কিভাবে খুঁজবেন ভিডিও, মিউজিক ও প্রোফাইলের তথ্য?

ইউজিং স্ন্যাপচ্যাট অ্যাজ এন ইনভেস্টিগেটিভ টুল: কিউ অ্যান্ড এ উইথ পল ব্রাডশ

হাও জার্নালিস্টস ক্যান ইনভেস্টিগেট অন টেলিগ্রাম


হান্না ডুগ্গাল লন্ডনভিত্তিক ফ্রিল্যান্স ডেটা সাংবাদিক। তিনি ডেটা ব্যবহার করে পুলিশি ব্যবস্থা, নজরদারি ও বিক্ষোভের মতো বিষয় নিয়ে রিপোর্ট করেছেন। আল জাজিরা এবং দ্য ক্যালভার্ট জার্নালে তাঁর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। 

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

টেকসইতা পদ্ধতি

সাংবাদিকতার প্রভাব পরিমাপ — আমরা নতুন যা জানি

সব সংবাদমাধ্যমই চেষ্টা করে তাদের রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে সমাজে প্রভাব তৈরির জন্য। কিন্তু এই প্রভাব পরিমাপ করার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে একেক ধরনের সূচক। পড়ুন, এ নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে নতুন কী জানা গেছে।

Investigating AI Audio Deepfakes

টিপশীট গবেষণা পরামর্শ ও টুল

২০২৪ সালের নির্বাচন ঘিরে হুমকি এআই অডিও ডিপফেক সনাক্ত ও অনুসন্ধান করবেন কীভাবে

২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সব জাতীয় নির্বাচন। এবং এসব নির্বাচনের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি অডিও ডিপফেক। পড়ুন, এমন ডিপফেক কীভাবে সনাক্ত করবেন এবং সেগুলোর নেপথ্যে থাকা ব্যক্তি, নেটওয়ার্ক নিয়ে কীভাবে অনুসন্ধান করবেন।

CORRECTIVE Secret Master Plan Against Germany investigation

পদ্ধতি

আন্ডারকভার রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে জার্মানির চরম ডানপন্থী দলের গোপন বৈঠকের তথ্য উন্মোচন

ছদ্মবেশে জার্মানির চরম ডানপন্থী দলগুলোর গোপন বৈঠকে ঢুকে পড়েছিলেন কারেক্টিভের রিপোর্টার। সেখান থেকে তিনি জানতে পারেন: কীভাবে জার্মানি থেকে লাখ লাখ মানুষকে বের করে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। পড়ুন, অনুসন্ধানটির নেপথ্যের গল্প।

পরামর্শ ও টুল

ত্রুটিপূর্ণ ও ভুয়া একাডেমিক গবেষণা নিয়ে কীভাবে কাজ করবেন

একাডেমিক গবেষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে নেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত। ফলে ত্রুটিপূর্ণ ও ভুয়া গবেষণা অনেক সময় তৈরি করতে পারে নেতিবাচক প্রভাব। পড়ুন, কীভাবে এমন ত্রুটিপূর্ণ গবেষণা নিয়ে অনুসন্ধান করতে পারেন।