Image: Leonardo Peralta for GIJN
জিআইজেসি২৩-তে গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ড জিতেছে নাইজেরিয়া, ভেনেজুয়েলা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও উত্তর মেসিডোনিয়ার অনুসন্ধান
ভেনেজুয়েলায় অবৈধ খননকার্য, নাইজেরিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে পদ্ধতিগত ডাকাতি, দক্ষিণ আফ্রিকায় পুলিশি বর্বরতা, এবং উত্তর মেসিডোনিয়ায় কোভিড-১৯ থেকে মুনাফা নিয়ে চারটি অনুসন্ধান ১৩তম গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে (জিআইজেসি২৩) গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ড (জিএসএলএ) জিতেছে।
উন্নয়নশীল বা রূপান্তরের পথে থাকা দেশগুলোতে হুমকির মুখে বা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে করা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যে প্রকাশিত বা সম্প্রচারিত প্রতিবেদনগুলোকে এই পুরস্কারের জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে থেকেও অনুসন্ধানগুলো যে প্রচণ্ড সাহস ও অনুসন্ধানী প্রভাব দেখিয়েছে, তা আমলে নিয়ে বিচারকেরা আরও দুইটি প্রতিবেদনকে সার্টিফিকেট অব এক্সেলেন্স পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেগুলো হল: বাংলাদেশের গোপন কারাগার এবং ইউক্রেনের গণকবর নিয়ে দুটি আলাদা অনুসন্ধান।
ছোট ও মাঝারি সংবাদমাধ্যম বিভাগে (যাদের কর্মীসংখ্যা ২০ বা তার কম) যৌথভাবে পুরস্কার জিতেছে ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং ল্যাবের (উত্তর মেসিডোনিয়া) ব্যাড ব্লাড, এবং ভিউফাইন্ডারের (দক্ষিণ আফ্রিকা) অ্যাবভ দ্য ল। বড় সংবাদমাধ্যম বিভাগে যৌথভাবে পুরস্কার জিতেছে বিবিসি আফ্রিকা আইয়ের (নাইজেরিয়া) দ্য ব্যান্ডিট ওয়ারলর্ডস অব জামফারা, এবং আর্মান্ডোডটইনফো (ভেনেজুয়েলা) ও এল পাইসের (স্পেন) কোরেডোর ফারটিভো। জিএসএলএ সার্টিফিকেট অব এক্সেলেন্স জিতেছে রেডিও লিবার্টি/স্কিমসের (ইউক্রেন) হাউ ভলান্টিয়ার্স বারিড সিভিলিয়ানস এন মাস ইন ইজিয়াম এবং নেত্র নিউজের (বাংলাদেশ) সিক্রেট প্রিজনার্স ইন ঢাকা।
২১ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার সুইডেনের গোথেনবার্গে আয়োজিত জিআইজেসি২৩-এর গালা অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে এই দ্বিবার্ষিক পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। পুরস্কারজয়ীদের অভিনন্দন জানান জিআইজেএনের বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক ডেভিড ই. কাপলান ও জিআইজেএনের উপ পরিচালক গ্যাব্রিয়েলা মানুলি।
২০২৩ সালের গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ডের জন্য ৮৪টি দেশ থেকে জমা পড়েছিল ৪১৯টি আবেদন। দুইটি বিভাগে, ১১টি দেশের এক ডজন চূড়ান্ত মনোনয়ন থেকে চারটি জিএসএলএ বিজয়ী ও দুইটি সার্টিফিকেট বিজয়ী নির্বাচন করেছে বিচারক প্যানেল। বিজয়ীদের প্রত্যেকে পেয়েছে একটি স্মারক ফলক ও ২৫০০ ডলার; এবং সার্টিফিকেট বিজয়ীরা পেয়েছে একটি ফলক ও ১০০০ ডলার।
বিচারক প্যানেলে ছিলেন পাঁচটি বৈশ্বিক অঞ্চলের অভিজ্ঞ অনুসন্ধানী সম্পাদকেরা: কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েট স্কুল অব জার্নালিজমের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অধ্যাপক শেইলা কোরোনেল; গার্ডিয়ানের সাবেক অনুসন্ধানী সম্পাদক ডেভিড লেই; জিআইজেএন আফ্রিকার সম্পাদক বেনন ওলুকা; মেক্সিকোর অভিজ্ঞ সাংবাদিক মার্সেলা তুরাতি; এবং ইউক্রেনের গণমাধ্যম উন্নয়ন প্রশিক্ষক ওলেগ খোমেনোক।
“গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ড আমাদের এই বিশ্বাসকে মজবুত করেছে যে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ঐতিহ্য এখনো জীবিত আছে, এমনকি সবচেয়ে বিপজ্জনক ও কঠিন পরিবেশেও,” বলেছেন বিচারক প্যানেলের প্রধান কোরোনেল। “বর্তমান সময়টি অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য খুবই বিপজ্জনক এবং আমাদের বিজয়ীরা দেখিয়েছেন যে, অনেক ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সাহস, দক্ষতা ও নাগরিকদের সহায়তা দিয়ে যুগান্তকারী ও প্রভাব তৈরির মতো রিপোর্টিং করা সম্ভব। আমরা এবছরের বিজয়ীদের সম্মান জানাই। তারা আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা।”
সহমত পোষণ করেছেন জিআইজেএনের কাপলানও। তিনি বলেছেন, “বিশ্বজুড়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সামনে অনেক বাধা ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে, তারপরও আমাদের সহকর্মীরা অসাধারণ কাজ করেছেন, এমনকি কঠিনতম পরিস্থিতিতেও। এই চমৎকার কাজগুলো দেখিয়েছে যে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হারিয়ে যাচ্ছে না। আমরা বরং আরও বড় হচ্ছি এবং বিশ্বের কঠিন জায়গাগুলোতে আরও বেশি করে আলো ছড়াচ্ছি।”
এবছরের পুরস্কারজয়ী দলগুলো বিচারহীন সহিংসতা, কোভিড-১৯ রোগীদের শোষণ ও গোপনে পরিবেশগত অনিয়মের মতো নানা বিষয় নিয়ে কাজ করেছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে থেকে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আর্মান্ডোডটইনফোর উন্নত ডেটা ম্যাপিং এবং ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং ল্যাবের নাছোড়বান্দার মতো নথিপত্র সংগ্রহ থেকে শুরু করে একা একা অফরোড মোটরসাইকেলে চালিয়ে বিবিসি আফ্রিকা আইয়ের হয়ে এক ফ্রিল্যান্সারের সশস্ত্র মিলিশিয়াদের তাৎক্ষণিক সাক্ষাৎকার নেওয়া পর্যন্ত বিচিত্র সব অনুসন্ধানী পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানগুলোতে।
ছোট সংবাদমাধ্যম বিভাগ
যৌথ বিজয়ী
ব্যাড ব্লাড — ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং ল্যাব (উত্তর মেসিডোনিয়া)
দল: সাশকা সিতকোভস্কা, এলেনা মিত্রেভস্কা কুকোভস্কা, মায়া ইয়োভানভস্কা, দায়ানা লাজারেভস্কা, ডেভিড ইলিয়েস্কি, ট্রাইফুন সিতনিকভস্কি, ট্রাজকা আন্তনভস্কি, আতানাস ভেলকভস্কি, গোরিয়ান অ্যাটানোসভ, ম্লাদেন পাভলস্কি, ভ্লাদকো ভ্লাদিমিরভ, লুকা ব্লেজেভ, দেনিকা চাদিকভস্কা, মার্টিনা সিলিয়েনভস্কা, সার্গেই সার্চেভস্কি, বোয়ান স্টোয়েনভস্কি, আলেক্সান্দ্রা দেনকভস্কা, এবং ইভানা নাসতেস্কা।
মহামরির সময় কোভিড-১৯ থেকে মুনাফা করা নিয়ে যেসব উচ্চাভিলাষী অনুসন্ধান পরিচালিত হয়েছে, এই প্রকল্প তার অন্যতম। সম্পূর্ণ নারীদের নিয়ে নিয়ে তৈরি একটি রিপোর্টিং দল উত্তর মেসিডোনিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বেসরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত মৃত্যু, চিকিৎসা ও রোগীদের চিকিৎসা খরচের মতো বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। বেশ কয়েকটি সমান্তরাল দৃষ্টিকোন থেকে কয়েক মাস ধরে অনুসন্ধানের পর, ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং ল্যাব (অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের স্থানীয় সদস্য কেন্দ্র) দেখতে পায় যে, হাসপাতালটি বেশ কয়েকজন রোগীর ওপর অনুমোদনহীন ও অনিরাপদ রক্ত বিশুদ্ধকরণ চিকিৎসা চালিয়েছে, রোগীদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করেছে এবং সংক্রমণের ডেটায় হেরফের করেছে। কাজটির একটি চমকপ্রদ বিষয় হলো, কোভিড-১৯ চিকিৎসার গভীর কারিগরী জটিলতা এবং হাসপাতালের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ক্রমাগত বিভ্রান্তিকর চিকিৎসা তথ্য পাওয়ার পরও রিপোর্টারেরা অবিচল ছিলেন। রিপোর্টার এবং একজন জেষ্ঠ্য সম্পাদককে ক্রমাগত অনলাইনে হয়রানি করা হয়েছে, তাদের নিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়েছে এবং মৃত্যুর হুমকিও দেওয়া হয়েছে। কাজটি সম্পর্কে একজন বিচারক বলেছেন: “এটি একটি প্রভাববিস্তারকারী প্রতিবেদন ছিল, এবং তাদের রিপোর্টিংয়ের প্রক্রিয়া ছিল কঠোর ও পদ্ধতিগত।” আরেক বিচারক যোগ করেছেন: “আমার মনে হয়, কিছু মানুষ এই রিপোর্টারদের অনুসন্ধানকে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি – এবং তারা বাজিমাত করেছেন!”
অ্যাবভ দ্য ল — ভিউফাইন্ডার (দক্ষিণ আফ্রিকা)
রিপোর্টার: ডেনিয়েল নোটজা
দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব তৈরি করা অনেক ধ্রুপদী অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মতো এই কাজটিও কোনো ব্যক্তির ভুলত্রুটি নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতাকে তাদের মনোযোগের কেন্দ্রে রেখেছিল। কয়েক বছর ধরে চলা অনুসন্ধানী ধারাবাহিকটি ধর্ষণ, নির্যাতন, হামলা এবং এমনকি হত্যার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়া পুলিশ কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার অভাব এবং দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশদের আবারও অপরাধে জড়ানোর সুযোগ করে দেওয়া প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোটিকে উন্মোচন করেছে। প্রতিশোধের ঝুঁকির পরও, এই অনুসন্ধান দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি করেছে। দারুন ব্যাপার হলো, ছোট একটি অলাভজনক সংবাদমাধ্যম হলেও ভিউফাইন্ডার একটি অনন্য উন্মুক্ত ডেটাবেস তৈরি করেছে, যেখানে পুলিশের অসদাচরণ নিয়ে হাজার হাজার নিবন্ধিত অভিযোগ আছে। এবং এখানে সহজে সার্চ করা যায়। এই কাজটি প্রসঙ্গে একজন বিচারক বলেছেন, “এখানে খুবই গভীর রিপোর্টিং করা হয়েছে। এটির স্টোরিটেলিংও ছিল খুব ভালো। এবং কয়েক বাক্য পরপরই আপনি একটি লিংক দেখতে পাবেন, যেখানে রিপোর্টার প্রমাণ তুলে ধরেছে। এখানে সব ধরনের নথিপত্র ছিল।”
সার্টিফিকেট অব এক্সেলেন্স
সিক্রেট প্রিজনার অব ঢাকা — নেত্র নিউজ (বাংলাদেশ)
দল: তাসনিম খলিল, নাজমুল আহসান, জুলকারনাইন সায়ের খান, ডেভিড বার্গম্যান এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম প্রকাশ না করা চারজন সাংবাদিক।
সুইডেন থেকে পরিচালিত নির্বাসিত অলাভজনক সংবাদমাধ্যম, নেত্র নিউজের এই গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধান উন্মোচন করেছে একটি গোপন বন্দীশালার কথা। রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত এই ডিটেনশন সেন্টারে বিস্তৃত পরিসরের ভিন্নমতাবলম্বী ও সন্দেহভাজন অপরাধীদের রাখা হত। এই অনুসন্ধানী তথ্যচিত্র ১০ লাখেরও বেশিবার দেখা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। এতে সাবেক বন্দীদের জবানবন্দী, বর্তমান সামরিক কর্মকর্তাদের বক্তব্য, এবং বন্দীশালার ভেতরের বদ্ধ ও অমানবিক পরিস্থিতির স্থিরচিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। একজন প্যানেলিস্ট উল্লেখ করেছেন যে নেত্র নিউজ “দেশটির আড়ালে থেকে যাওয়া বিষয়গুলো কাভার করে এবং তারা সবসময়ই ঝুঁকির মুখে থাকে। এই নির্দিষ্ট প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ‘নির্যাতন কেন্দ্রের’ চিত্র উন্মোচন করেছে, যেটি যেকোনো পরিস্থিতিতে বাংলাদেশী সাংবাদিকতার সবচেয়ে সাহসী উদাহরণ।”
বড় সংবাদমাধ্যম বিভাগ
যৌথ বিজয়ী
কোরেডোর ফারটিভো (ফারটিভ করিডর) — আর্মান্ডোডটইনফো (ভেনেজুয়েলা) ও এল পাইস (স্পেন)
দল: জোসেফ পোলিসজুক, মারিয়া দে লস অ্যাঞ্জেলেস রামিরেজ, ও মারিয়া আন্তোনিয়া সেগোভিয়া
এই প্রকল্পটিতে উন্নতমানের ডেটা ম্যাপিং, উদ্ভাবনী সোর্সিং এবং সাহসী সরেজমিন রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে ভেনেজুয়েলায় অবৈধ খননকার্যের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক উন্মোচন করা হয়েছে। এর ফলে পরিবেশ ও আদিবাসী সম্প্রদায় কতটা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা-ও তুলে ধরা হয়েছে। পুলিৎজার সেন্টারের সহায়তায় পরিচালিত এই অনুসন্ধানটি একই সময়ে প্রকাশিত হয়েছে আর্মান্দোডটইনফো এবং স্প্যানিশ দৈনিক এল পাইস-এ। প্রকল্পটিতে ৩,৭১৮টি অবৈধ খননকার্যের স্থান ম্যাপের মাধ্যমে তুলে আনা হয়েছে। বিস্তৃত যে জায়গাজুড়ে এই খনিগুলো ছড়ানো আছে— তার আয়তন জার্মানির দ্বিগুন। আন্তঃসীমান্ত সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রগুলো কোন পথ ধরে এসব এলাকায় যায়— সেগুলোও এখানে উঠে এসেছে। এই কাজে অনুসন্ধানী দলটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) টুল, ডেটাবেস, স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং প্রোগ্রাম ব্যবহার, এবং দুর্গম জঙ্গলে ঘেরা পথগুলোতে সরেজমিন জরিপের মাধ্যমে এমনভাবে গল্পটি বলেছে যেখানে শক্তিশালী গ্রাফিক্সও অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। একজন বিচারক বলেছেন “এই প্রতিবেদনটি আমাদের ঠিক সেদিকেই নিয়ে যায়, যেদিকে সাংবাদিকতা যাচ্ছে। এবং কাজটি এতোই বিস্তৃত পরিসরের যে, এর রহস্য উন্মোচনের জন্য তাদেরকে এআইয়ের ব্যবহার করতে হয়েছে। তা নাহলে বিষয়গুলো অদেখাই থেকে যেত।” আরেকজন বিচারক বলেছেন, “হ্যাঁ, তারা এআইয়ের মতো টুল ব্যবহার করেছে, কিন্তু সেখানে গেরিলা ও মাদক সংক্রান্ত অপরাধী চক্রেরও ঝুঁকি ছিল। ফলে এটি ছিল কঠিন ও বিপজ্জনক; এবং সত্যিই সাহসী কাজ।
দ্য ব্যান্ডিট ওয়ারলর্ডস অব জামফারা — বিবিসি আফ্রিকা আই (নাইজেরিয়া)
দল: ইউসুফ আনকা, টম সাটের, জামিল মাবাই, ড্যানিয়েল অ্যাডামসন, কাই লরেন্স, কুলামা বুকার্টি, টম রবার্টস
কয়েক বছর পরপরই সাংবাদিকতায় এমন কিছু কাজ দেখা যায় যেগুলো সম্পূর্ণ অজানা এক জগতের চিত্র সামনে আনে – যেগুলো নিয়ে বহির্বিশ্বের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিৎ। অসাধারণ সাহসিকতার সঙ্গে দুই বছরব্যাপী অনুসন্ধান চালিয়ে বিবিসি আফ্রিকা আই উন্মোচন করেছে নাইজেরিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য জামফারায় চলমান সহিংসতা ও ডাকাতির চিত্র। এখানে প্রথমবারের মতো এই সহিংসতার উদ্দেশ্য ও কারণ দেখানো হয়েছে। এই সহিংসতায় ২০২২ সালে শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং আরও হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই রিপোর্টিংয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল যুদ্ধবাজ গোত্রপতি ও তাদের ভুক্তভোগীদের কাছাকাছি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের অনন্য সুযোগ। একজন সাংবাদিক মোটরসাইকেলে করে বিপজ্জনক সব পথ পাড়ি দিয়েছেন এবং একাই বিপজ্জনক সেই সাক্ষাৎকারগুলো নিয়েছেন। বিবিসি আফ্রিকা আইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী: “প্রচণ্ড ব্যক্তিগত ঝুঁকি নিয়ে, একজন তরুণ নাইজেরিয়ান সাংবাদিক ও আইনের শিক্ষার্থী ইউসুফ আনকা দূর্গম সব অঞ্চলে ডাকাত দলের নেতাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এর মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিলেন, যিনি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জানগেবের একটি হাইস্কুল থেকে প্রায় ৩০০ মেয়েকে অপহরণ করেছিলেন।” গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ডের একজন বিচারক বলেছেন, “এটি একটি দারুন কাজ, যেখানে রিপোর্টার এক পক্ষ থেকে আরেক পক্ষের কাছে ছুটে বেড়িয়েছেন, আমাদেরকে প্রেক্ষাপটগুলো জানিয়েছেন। অসাধারণ।” আরেকজন বিচারক যোগ করেছেন, “নাইজেরিয়ার জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর এই দ্বন্দ্বের একেবারে কেন্দ্রে যাওয়ার মাধ্যমে তিনি অসাধারণ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এবং তিনি কিছু ক্ষেত্রে ঠিক ঘটনাগুলো ঘটার সময়ই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি আমাদেরকে এমন সব গল্পের কেন্দ্রে নিয়ে গেছেন, যেগুলো আমি আগে কাউকে বলতে শুনিনি।”
সার্টিফিকেট অব এক্সেলেন্স
হাউ ভলান্টিয়ার্স বারিড সিভিলিয়ানস এন মাস ইন ইজিয়াম — রেডিও লিবার্টি/স্কিমস (ইউক্রেন)
দল: কিরা তলস্তিয়াকোভা, ভ্যালেরিয়া ইয়েগোশিনা, নাতালিয়া সেদলেৎস্কা, কাইরাইলো লাজেরোভিচ, পাভলো মেলনিক, ম্যাক্সিম আসায়কা, হোর্হি শাবায়েভ, এবং আনা পিতারিমোভা
গ্লোবাল শাইনিং লাইট অ্যাওয়ার্ডের জন্য রেডিও লিবার্টির ইউক্রেন সার্ভিসের অনুসন্ধানী প্রকল্প, স্কিমসের পক্ষ থেকে রাশিয়ার সন্দেহজনক যুদ্ধাপরাধ নিয়ে বেশ কয়েকটি দারুন প্রতিবেদন জমা পড়েছিল। সবগুলো প্রতিবেদনই তৈরি করা হয়েছিল ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে। এগুলোর মধ্য থেকে বিচারকেরা একটিকে বেছে নিয়েছেন, যেখানে শুধু খারকিভ অঞ্চলের একটি গণকবরের কথাই উন্মোচিত হয়নি, একইসঙ্গে বেসামরিক মানুষদের নির্যাতনের অনেক প্রমাণও তুলে ধরা হয়েছে এবং এসব পদ্ধতিগত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে রাশিয়ার কোন ব্রিগেড জড়িত ছিল, তাও সনাক্ত করা হয়েছে। রিপোর্টারেরা রাশিয়ান সৈন্যদের আলোচনাও লিপিবদ্ধ করেছে, যেখানে তাদের এসব অপরাধ নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়। অনুসন্ধানী দলটি নানা নথিপত্র ও ওপেন সোর্স টুল ব্যবহার করেছে। কিন্তু আবেগপূর্ণ এই শক্তিশালী প্রতিবেদনটির কেন্দ্রে ছিল স্বেচ্ছাসেবকদের সাক্ষাৎকার, যারা শত শত স্বদেশী ইউক্রেনিয়ানকে নিজ হাতে কবর দিয়েছেন। একজন বিচারক বলেছেন, “এই প্রতিবেদনটি বেসামরিক মানুষ হত্যার নাটকীয়তাকে তুলে এনেছে, যেটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। রিপোর্টারদের এই দলটি একটি একক নিউজরুমে কাজ করেছেন। তাদের একেকজন একেক অঞ্চলে কাজের জন্য নিয়োজিত ছিলেন। তারা এসব অপরাধের চিত্র তুলে এনেছেন এবং রাশিয়ার কোন সেনা ইউনিট এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল সেটিও উন্মোচন করেছেন।”
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের প্রতিবেদক। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমস পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। বিদেশ প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের ২৪টির বেশি দেশে সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন।