Attendees at GIJN's Asian Investigative Journalism in 2018.
দ্বাদশ গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে কর্তৃত্ববাদ, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য, মিথ্যা তথ্য, সংগঠিত অপরাধ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলা অনুসন্ধানের অত্যাধুনিক টুল ও কৌশল। আর এই বিষয়গুলো নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক এবং ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা।
সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১-৫ নভেম্বর। পুরোপুরি অনলাইনে। ওয়াচডগ রিপোর্টিং নিয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভিজ্যুয়াল ইনভেস্টিগেশন, অনলাইন সার্চ, পডকাস্ট, ফ্লাইট ট্র্যাকিং, স্যাটেলাইট ইমেজারি, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের ওপর ওয়ার্কশপ এবং প্যানেলও থাকবে। আরও থাকবে, এক ডজনেরও বেশি নেটওয়ার্কিং সেশন, যেখানে গোটা বিশ্ব থেকে সাংবাদিকরা জড়ো হবেন এবং একে অপরের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তুলবেন। গত ১১টি সম্মেলনে এ ধরনের পিয়ার নেটওয়ার্কিং অনেক পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানের পেছনে মূল অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।
১১৭ দেশের এক হাজারেরও বেশি সাংবাদিক এরই মধ্যে জিআইজেসি২১-এ অংশ নেওয়ার জন্য নাম লিখিয়েছেন। আর নিবন্ধন শেষ হচ্ছে ২৫ অক্টোবর।
সম্মেলনটির এজেন্ডা হবে বৈশ্বিক ও পরিবর্তনশীল। প্রায় ৮০টি সেশন অনুষ্ঠিত হবে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার মত বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত সময় ধরে।
চলতি মাসে, দুই অনুসন্ধানী সম্পাদক — ফিলিপাইনে জিআইজেএনের সদস্য র্যাপলারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মারিয়া রেসা এবং রাশিয়ার নোভায়া গেজেটার সহ-প্রতিষ্ঠাতা দিমিত্রি মুরাতভ — এর নোবেল শান্তি পুরস্কার জয় আরও একবার প্রমাণ করেছে যে গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার পক্ষে দাঁড়াতে গোটা বিশ্ব এখন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার দিকে তাকিয়ে আছে।
প্যান্ডোরা পেপারস, পেগাসাস স্পাইওয়্যার কেলেঙ্কারি এবং ইউএস ক্যাপিটল হামলার সঙ্গে জড়িতদের উন্মোচনের মত অবাক করা অনুসন্ধানে অংশ নেওয়া সাংবাদিকরাও জিআইজেসি২১ -এ কথা বলবেন।
অভিজ্ঞতা শোনা যাবে দমনমূলক শাসনে প্রচণ্ড চাপে থাকা সাংবাদিকদের মুখ থেকেও, যাদের মধ্যে রয়েছেন রোমান আনিন – রাশিয়ার আইস্টোরিজ -এর সম্পাদক, যার অ্যাপার্টমেন্টে এই বছর অভিযান চালানো হয়েছিল – এবং জিম্বাবুয়ের হোপওয়েল চিনোনো, যিনি গত বছরে তার প্রতিবেদনের জন্য বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এই সম্মেলনে বেশ কয়েকটি নতুন গাইড এবং টুলও প্রকাশিত হবে:
- জিআইজেএনের সংগঠিত অপরাধ অনুসন্ধানের গাইড, যার নয়টি অধ্যায়ে মানব পাচার ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা থেকে শুরু করে সাইবার ক্রাইম এবং মাফিয়া রাজ্য পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখেছেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্রাইম রিপোর্টাররা।
- জিআইজেএনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ফ্যাক্ট-চেকিং গাইড, যেটি লিখেছেন সুইডেনের প্রধান টিভি নিউজ ম্যাগাজিনে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দেওয়া একজন সম্পাদক।
- জার্নালিস্ট সিকিউরিটি অ্যাসেসমেন্ট টুল, একটি অনন্য রিসোর্স যা ডিজিটাল এবং শারীরিক হুমকির বিরুদ্ধে নিরাপত্তা উন্নত করার একটি রোডম্যাপ দেবে বার্তাকক্ষগুলোকে। ফোর্ড ফাউন্ডেশনের সঙ্গে অংশীদারিত্বে গড়ে তোলা “জেস্যাট,” এই সম্মেলনের একটি নিরাপত্তা কর্মশালায় উদ্বোধন করা হবে।
বরাবরের মতো, জিআইজেসি২১ সম্মেলনেও সময়সূচির এক চতুর্থাংশ সময়জুড়ে থাকবে ডেটা জার্নালিজমের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ; যেখানে ডেটা বিশ্লেষণ, ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণ, ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন, ম্যাপিং, ক্লিনিং, স্ক্র্যাপিং এবং আর ও পাইথনের মত কোডিং ভাষা নিয়ে সেশন থাকবে।
সব মিলে সম্মেলনে বক্তা হিসেবে থাকছেন প্রায় ২০০ জন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার যে সব সমস্যা আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব বলে মনে করা হয়, সেগুলো সমাধানের অত্যাধুনিক রূপরেখা তুলে ধরবেন এদের অনেকেই। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, স্থপতি ও জিওস্পেশাল বিশ্লেষক অ্যালিসন কিলিংয়ের কথা। তিনি ডিজিটাল সেন্সরশিপকে ডেটা হিসেবে ব্যবহারের উপায় খুঁজে বের করেছেন। জিনজিয়াং প্রদেশে চীনের মুসলিম সংখ্যালঘুদের গণ আটকের চিত্র উন্মোচনের জন্য এবছর পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছেন কিলিং ও তার বাজফিডের দুই সহকর্মী। এবছর জিআইজেএনের জন্য লেখা একটি প্রবন্ধে, কিলিং ব্যাখ্যা করেন: কীভাবে তিনি এবং তার দল চীনের বাইদু টোটাল ভিউ স্যাটেলাইট ম্যাপিং প্ল্যাটফর্মে ফাঁকা “টাইলস” ব্যবহার করে লুকানো বন্দীশালার একটি নেটওয়ার্কের নিদর্শন খুঁজে পেয়েছিলেন।
সম্মেলনে এমন কিছু বক্তাও থাকছেন যারা অনুসন্ধান করেছেন সেই অস্ত্রগুলো নিয়ে, যা তাদের ওপর অত্যাচারের জন্যই ব্যবহার করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতীয় অলাভজনক গণমাধ্যম দ্য ওয়্যার -এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সিদ্ধার্থ ভরদরাজনকে পেগাসাস ডিজিটাল নজরদারির জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। সহযোগিতামূলক পেগাসাস প্রকল্পে অংশ নিয়ে তাঁরা এই স্পাইওয়্যার উন্মোচনে সাহায্য করেন।
অন্যান্য সেশনে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদিবাসী সাংবাদিকদের করা যুগান্তকারী অনুসন্ধানের ওপর আলোকপাত করা হবে। আরও থাকছে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে সম্পদ লুণ্ঠন, দানের পণ্যের রপ্তানি ট্র্যাকিং, এবং অনলাইন ভুয়া তথ্য প্রচারের উৎস চিহ্নিত করার মতো বিষয়।
সাইবার অনুসন্ধানী হেঙ্ক ফন এস ও পল মায়ার্সের অ্যাডভান্সড অনলাইন সার্চ কর্মশালা থেকে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা জানতে পারবেন, কীভাবে অনুসন্ধানে একেকটি বিন্দুকে সংযুক্ত করতে হয় এবং ডিজিটাল সম্পদের ভান্ডার খুঁজে বের করতে হয়।
তাই আসুন এবং GIJC21 এ আপনার ভবিষ্যতের অংশীদার এবং পরবর্তী বড় প্রকল্পগুলি সন্ধান করুন। ভাষা এবং সীমানা জুড়ে সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করুন। সর্বশেষ তথ্য এবং সাইবার দক্ষতায় প্রশিক্ষণ নিন। খারাপ লোকেরা অনেক আগে আন্তর্জাতিক হয়ে গিয়েছিল। ভালো ছেলেদের ধরার সময় এসেছে।
দ্রষ্টব্য: ১২ তম গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্স (#GIJC21) এর রেজিস্ট্রেশন ২৫ অক্টোবর শেষ হচ্ছে। পাঁচ দিনের অনুষ্ঠানের জন্য ফি ১২৫ মার্কিন ডলার (শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০ ডলার)। নিবন্ধনের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন
গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সের জন্য নিবন্ধন শুরু
নিউ ডেটা টুলস অ্যান্ড টিপস ফর ইনভেস্টিগেটিং ক্লাইমেট চেঞ্জ
হোয়াই জার্নালিস্টস ইন অটোক্রেসি শুড রিপোর্ট অ্যাজ ইফ দে আর ইন এ ডেমোক্রেসি
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএন-এর রিপোর্টার। দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসে কাজ করেছেন প্রধান প্রতিবেদন হিসেবে। বিদেশী প্রতিনিধি হিসেবে রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন বিশ্বের দুই ডজনেরও বেশি দেশ থেকে।