প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

বিষয়

জিআইজেএনের ২০২৪ সালের সেরা অনুসন্ধানী টুল

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

কৌতূহল, সাহস ও অংশিদারত্ব—এই তিন গুণাবলী ২০২৪ সাল জুড়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে । তবে গল্পের সূত্র ও তথ্যপ্রমাণ জোগাড়ের মাধ্যমে জবাবদিহিতা তৈরিতে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে নতুন সব ডিজিটাল টুল ।

এ বছর বেশ কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হয়েছে, যেগুলো নতুন ওপেন সোর্স টুল ছাড়া সম্ভব হতো না। যেমন যুক্তরাজ্যের আই-পেপার অনুসন্ধানে গাজার বেসামরিক লোকেদের ওপর ইসরায়েলের অস্ত্র ব্যবহারের মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনার ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরেছে। এদিকে ব্রাজিল ও মধ্য আফ্রিকা অঞ্চলের বিভিন্ন প্রতিবেদনে নতুন ডেটাবেস ব্যবহার করে বৈশ্বিক দক্ষিণের বন উজাড়ের জন্য দায়ী কোম্পানিগুলোর পেছনে যে সব বেসরকারি ও সরকারি বিনিয়োগকারীরা রয়েছেন, তাদের খুঁজে বের করা হয়েছে।

নতুন নতুন এআই টুল ব্যবহারের সুবিধা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সৃষ্ট হুমকি—এই দুইয়ের মিশেলে বিদায়ী বছরটি বেশ সাড়া জাগিয়েছে। জিআইজেএনও বিভিন্ন এআই টুল সম্পর্কে বিচক্ষণতা ও সতর্কতার সাথে সাংবাদিকদের তথ্য দিয়ে গেছে। বিশেষ করে এআই টুলগুলো কীভাবে অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের সূত্র খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে। কেবল প্রমাণ হাজির করা নয়, তথ্যের উৎস হিসেবেও টুলগুলো যাচাইয়ের ধাপ ব্যাখ্যা করার পাশাপাশিএতে তুলে ধরা হয়েছে টুল ব্যবহারের নৈতিক দিকগুলোও ।

গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধানী টুলগুলোকে আরও  দক্ষভাবে ব্যবহারের দিকে জোর দেয়া হয় এই বছর। অনেক সাংবাদিক যেমন নিয়মিত চর্চা, অনুশীলন, যাচাই-বাছাই আর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ডকুমেন্টক্লাউড এবং পিনপয়েন্টের অতিরিক্ত ফিচারগুলো ব্যবহার করতে শিখেছেন। আবার ওসিসিআরপির আলেফের হিডেন মানি ডেটাবেসের সাথে পরিচিত হয়েছেন অনেক বেশি সাংবাদিক। শক্তিশালী ক্রস-রেফারেন্স ফিচার ব্যবহারও শুরু করেছেন অনেকে। প্রধান ডেটা সম্পাদক ইয়ান স্ট্রজিক  এখানে জিআইজেএন টিপস প্রতিবেদনে এই বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন।

জিআইজেএনের ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি অনুসন্ধানী পরামর্শ ও টুলস, ডেটা সাংবাদিকতা এবং অন্যান্য বিভাগগুলো অসংখ্য ডিজিটাল রিসোর্স খুঁজে পাবেন। যা আপনার অনুসন্ধানে কাজে লাগতে পারে। তবে নিচে আমরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য ২০২৪ সালের উল্লেখযোগ্য আটটি টুলের তালিকা দিয়েছি।

বেলিংক্যাটের অনলাইন ইনভেস্টিগেশন টুলকিট

এ ছবিটি বেলিংক্যাটের জন্য অলংকরণ করেছেন অ্যান কিয়ার্নান

বেলিংক্যাট ২০২৪ সালে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য দারুণ এক উপহার হিসেবে তাদের বিশাল ও সহযোগিতামূলক ড্যাশবোর্ড উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। বেশিরভাগই ফ্রি ডিজিটাল টুল। এগুলো তৈরি করা হয়েছে সাংবাদিক আর গবেষকদের প্রয়োজনের কথা চিন্তা করেই।

অনলাইন ইনভেস্টিগেশন টুলকিটের ফিচারে শত শত আধুনিক ওপেন সোর্স ও প্রোপ্রাইটারি (যে টুলগুলো ব্যবহারের জন্য সাধারণত অনুমতি বা লাইসেন্স প্রয়োজন) টুল রয়েছে। যা ভৌগলিক অবস্থান নির্ধারণ (জিওলোকেশন), অর্থের গতিপ্রবাহ অনুসরণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশ্লেষণ থেকে শুরু করে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। সবচেয়ে চমৎকার বিষয় হচ্ছে, টুলগুলো ব্যবহারবান্ধব পোর্টালে রাখা হয়েছে। যেখানে “ফ্রি,” “পেইড” বা “আংশিক ফ্রি” হিসেবে টুলগুলো চিহ্নিত করা আছে।

এই রিসোর্সটি নির্দিষ্ট সময় পর পর আপডেট করা হবে। পাশাপাশি ওপেন সোর্স গবেষণা কমিউনিটির কাছে নতুন টুল সংযোজনের আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে। এখানে আপনি একটি ফর্ম খুঁজে পাবেন। যেটি পূরণ করে সাংবাদিকেরা এই আর্কাইভে নেই এমন টুল সম্পর্কেও জানাতে পারবেন। প্রতিটি টুলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া আছে। সাংবাদিকরা তাই সহজেই বুঝতে পারবেন যে, টুল ব্যবহারের জন্য কমান্ড-লাইন বা গিটহাবের মতো কোডিং দক্ষতার প্রয়োজন আছে, নাকি কম্পিউটার বিষয়ক বিশেষ জ্ঞানের কোনো দরকারই নেই।

পোর্টালটি সাজিয়েছেন জোহান্না ওয়াইল্ড। বেলিংক্যাটের পোস্টে তিনি লিখেছেন: “আপনি কি কখনো এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন, যেখানে একটি টুল কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তা বোঝার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করার পর জানতে পারলেন, টুলটির গুরুত্বপূর্ণ ফিচারগুলো  এখন আর কাজ করছে না। বা বিনামূল্যের টুলটি এখন এতটাই ব্যয়বহুল যে তা আপনার সাধ্যের বাইরে? আমাদের নতুন অনলাইন ইনভেস্টিগেশন টুলকিট শুধু স্যাটেলাইট ছবি ও মানচিত্র, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, পরিবহন বা আর্কাইভিংয়ের মতো সুনির্দিষ্ট টুল খুঁজে পেতে সাহায্য করে না, বরং প্রতিটি টুল কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তা শিখতেও গবেষকদের সহায়তা করে।”

ওপেন সোর্স মিউনিশনস পোর্টাল

ওপেন সোর্স মিউনিশনস পোর্টাল। ছবি: স্ক্রিনশট

বেসামরিক মানুষের ওপর বোমাবর্ষণের জন্য দায়ী পক্ষদের কিভাবে জবাবদিহির আওতায় আনবেন— এই ডেটাবেসটি  সাংবাদিকদের তেমন একটি নতুন কৌশল সম্পর্কে জানাচ্ছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক নজরদারি সংস্থা এয়ারওয়ার্স এবং প্রযুক্তিবিষয়ক গোয়েন্দা পরামর্শক সংস্থা আর্মামেন্ট রিসার্চ সার্ভিসেস (এআরইএস)-এর উদ্যোগে তৈরি ওপেন সোর্স মিউনিশনস পোর্টাল (ওএসএমপি)। টুলটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং এনজিওগুলোর শেয়ার করা ছবি থেকে তথ্য নিয়ে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করতে সাহায্য করে। সামরিক সরঞ্জাম বিশেষজ্ঞ এবং ইউক্রেনীয় ও আরবিভাষী গবেষকরা টুলটির বিকাশে সহায়তা করেছেন।

সামরিক অস্ত্র শনাক্ত করার জন্য সাংবাদিকরা সাধারণত CAT-UXO আর্কাইভের মতো ডিজিটাল রিসোর্স ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু ওএসএমপির বিশেষত্ব হচ্ছে এটি বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র  বেশ ভালোভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম। সাংবাদিক আর তাদের সূত্রগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে বোমার গর্তের পাশে পোড়া স্টিলের ধ্বংসাবশেষ দেখে যেভাবে বলতে পারেন, ওএসএমপিও তেমনভাবে ধ্বংসাবশেষের ছবি দেখে বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্রের ধরণ বলতে পারে।

যদিও আর্কাইভটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে ইউক্রেন বা ফিলিস্তিন ভূখণ্ড থেকে সংগৃহীত প্রায় ৬০০ ব্যবহৃত মিউনিশনের ছবি রয়েছে এখানে। সংগ্রহের তালিকা দ্রুত সমৃদ্ধ হচ্ছে। এরইমধ্যে দুটি বড় অনুসন্ধানেও সহযোগিতা করেছে টুলটি।

জিআইজেএনের অক্টোবরের প্রতিবেদন অনুসারে, ওএসএমপির রিসোর্স ব্যবহার করে স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ড্যানওয়াচ প্রমাণ করে যে ডেনমার্কের সরবরাহ করা যুদ্ধবিমান গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে

নিনা  

লাতিন আমেরিকার সব ধরণের পাবলিক ডকুমেন্ট, চুক্তি এবং ডেটাসেটের একটি সহযোগিতামূলক ডেটাবেস নিনা (NINA)। টুলটি তৈরি করেছে লাতিন আমেরিকার অলাভজনক সংস্থা এল ক্লিপ। টুলটি প্রচলিত আন্তঃসীমান্ত ডেটাবেসগুলোর চেয়ে ভিন্ন। এটি রিয়েল-টাইমে সহযোগী ডেটাবেসগুলোর সাথে সংযুক্ত হয়ে একটিমাত্র ইন্টারফেস থেকে একাধিক ডেটা সোর্স অনুসন্ধানের সুযোগ করে দেয়। এতে ওপেন স্যাংশনস, আলেফ অফশোর লিকস ডেটাবেস এবং ওপেন কর্পোরেটস-এর মতো টুল রয়েছে।

চমৎকার এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারের জন্য কোনো কোডিং বা বিশেষ কম্পিউটার দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে না। লাতিন আমেরিকার বার্তাকক্ষগুলোর জন্য এটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। যেন তাঁরা তাদের নিজস্ব ডেটাসেট সহজে আপলোড, ইনডেক্স, অনুসন্ধান এবং শেয়ার করতে পারেন। যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে অগোছালো ডেটা বিশ্লেষণও সক্ষম। সম্প্রতি বেশ কিছু বড় অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে টুলটি। যেমন লাতিন আমেরিকান অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কেন্দ্র এল ক্লিপের দুটি অনুসন্ধান— চিলি ও আর্জেন্টিনায় লিথিয়ামের চাহিদা অত্যধিক বৃদ্ধির সূত্র ধরে সৃষ্ট সংঘাত এবং ডোমিনিকান রিপাবলিক, মেক্সিকো ও ইকুয়েডরে নির্বাচনী দুর্নীতির অনুসন্ধান।

নিনা বিকাশের কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন এল ক্লিপের ডেটা আর্কিটেক্ট রিগোবার্তো কারভাজাল। জিআইজেএনকে তিনি বলেন: “আমরা [বার্তাকক্ষ]-এর কাছ থেকে এই টুলের জন্য বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছি। এটি এমন একটি টুল হয়ে উঠেছে, যেটি যেকোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য নিয়মিত ব্যবহার করা উচিত।”

পারপ্লেক্সিটি এআই 

অনেক ধরনের এআই চ্যাট টুল রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করে পক্ষপাত বা ভুল তথ্যে পাওয়ার ঝুঁকি থাকে।  যুক্তরাষ্ট্রের এনআইসিএআর২৪ (NICAR24) ডেটা সাংবাদিকতা সম্মেলনে অংশ নেয়া অভিজ্ঞ সাংবাদিকরা জিআইজেএনকে বলেন, পারপ্লেক্সিটিডটএআই এর “অ্যানসার ইঞ্জিন” অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য জটিল বা অপরিচিত বিষয়গুলো সহজে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম।

এই ফ্রি টুলটি ব্রিফিং রিসোর্স হিসেবে কাজ করে। আপনি যদি জটিল অনুসন্ধানমূলক প্রশ্ন করেন, টুলটি তাহলে আপনাকে সংক্ষেপে প্রাসঙ্গিক উত্তর সরবরাহ করবে। পাশাপাশি যাচাইকৃত উৎস এবং আপনার কাজে লাগবে এমন গুরুত্বপূর্ণ ফলোআপ প্রশ্নের তালিকাও সরবরাহ করবে। তবে এ থেকে আপনি যে তথ্যই পান না কেন সেগুলো সবসময় যাচাই করে নেবেন। কেননা নির্ভরযোগ্য প্রমাণ হিসেবে নয়, টুলটি বরং কার্যকর সূত্র হিসেবে অনেক ভালো কাজ করে। পারপ্লেক্সিটি এমনভাবে উত্তরগুলো হাজির করে, দেখে আপনার মনে হতে পারে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সাথে প্রাথমিক সাক্ষাৎকার শেষে তথ্যগুলো হাজির করা হয়েছে। এ কাজটি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই করতে সক্ষম টুলটি। যেমন, “আমাজন থেকে কীভাবে কাঠ পাচার করা হয়?” এমন প্রশ্ন করা হলে, পারপ্লেক্সিটি আপনাকে মঙ্গাবে, আর্থ রেস্টোরেশন সার্ভিস এবং কর্পোরেট অ্যাকাউন্টেবিলিটি ল্যাবের তথ্যপ্রমাণসহ একটি বিশদ ও প্রাসঙ্গিক সারসংক্ষেপ হাজির করবে।

সাংবাদিকরা বলেছেন, অন্যান্য অনেক চ্যাটবটের তুলনায় পারপ্লেক্সিটি ব্যবহার করে অনুসন্ধান চালালে আপনি যেখানে যেতে যান সেখানে পৌঁছতে পারবেন। আপনি চালকের আসনেই থাকবেন।

নিউইয়র্কের কিউনি গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব জার্নালিজমের শিক্ষকতা ও শিক্ষণ পরিচালক জেরেমি ক্যাপলান বলেন, “যে কোনো বিষয়ে দ্রুত দক্ষতা অর্জনের জন্য এটি খুবই উপযোগী টুল।”

তিনি আরো যোগ করেন, “যে কেউ গুগলে সার্চ করে শত শত লিংক পাবেন। কিন্তু পারপ্লেক্সিটি আপনাকে জটিল প্রশ্নগুলো বুঝতে সহায়তা করে, পাশাপাশি বিভিন্ন তথ্য ও প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন সরবরাহ করে।”

সায়ারি এবং রুপেপ: বড় অংকের লুকানো অর্থ অনুসন্ধানের ডেটাবেস

কোনো অর্থকড়ি খরচ না করেই ব্যবহার করতে পারেন এমন গুরুত্বপূর্ণ উন্মুক্ত ডেটাবেস— যেমন, আইসিআইজের অফশোর লিকস ডেটাবেস, ওসিসিআরপির আলেফ, এবং ওপেন কর্পোরেটস। বিশ্বজুড়ে অর্থ পাচার, শেল কোম্পানি এবং লুকানো সম্পদ অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ টুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

আইসিজেএর ক্যারি কিহো বলেন, বিভিন্ন ধরনের আইনী মারপ্যাচ আর অলিগার্ক ও ছদ্মবেশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা “আসল মালিকদের” সাহায্যকারী অসাধু ব্যক্তিদের কৌশলের কারণে অনুসন্ধানকারী সাংবাদিকদের বিভিন্ন ডাটাবেজে থাকা নামগুলো পরীক্ষা করতে হবে, যাতে তাঁরা অবৈধ উৎসগুলো শনাক্ত করতে পারেন।

সায়ারি (Sayari) একটি কর্পোরেট রিস্ক প্ল্যাটফর্ম। যেটি বড় ওপেন সোর্স ডেটাবেসগুলোতে না থাকা সংযোগগুলো খুঁজে পেতে আপনাকে সাহায্য করে। টুলটি সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক হলেও কিছু ফ্রি ট্রায়ালের সুযোগ রয়েছে। শেল কোম্পানি নিয়ে গবেষণা সময়সাপেক্ষ কাজ। টুলটি তাই রিপোর্টারদের জন্য বেশ কাজের। কারণ এখানে সংযোগগুলো চিহ্নিত করার বিশেষ সুবিধা রয়েছে। যেমন রেড ফ্ল্যাগ আইকনের সাহায্যে “নিষেধাজ্ঞা তালিকাভুক্ত” কিনা তা ইঙ্গিত করে।  “জাতীয় পতাকা”এর চিহ্ন ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট দেশ বোঝানো হয়। তবে, অরবিস (Orbis) এবং ফ্যাকটিভা (Factiva)-র মতো পেইড টুলগুলোরও খুব কার্যকর।

অন্যদিকে, রুশ অলিগার্করা কিন্তু নিজেদের সম্পদ লুকানোর ক্ষেত্রে বেশ চৌকস। এঁরা প্রায়ই কোম্পানির পরিচালক হিসেবে নিজেদের আত্মীয় ও প্রেমিকাদের নাম নিবন্ধন করেন। এই ধরনের গোপন সম্পদ খুঁজতে সাংবাদিকরা রুপেপ (RuPEP) নামের নতুন একটি টুল ব্যবহার করতে পারেন। এটি রাশিয়া, বেলারুশ এবং কাজাখস্তানের হাজার হাজার “পলিটিক্যালি এক্সপোজড পারসনস”-দের আত্মীয় ও ব্যক্তিগত সংযোগগুলোর প্রোফাইল তৈরি করে।

ওপেন মেজার্স 

“কিউঅ্যানন” শব্দ ব্যবহার করে ওপেন মেজার্স সাইটের টাইমলাইন অনুসন্ধানের ফলাফল দেখতে পারছেন। ছবি: স্ক্রিনশট।

ডানপন্থী উগ্রপন্থা নিয়ে কাজ করেন এমন পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিকরা উল্লেখ করেন যে, এই ধরনের ব্যক্তি ও দলগুলো নিয়ে অনুসন্ধানের সময় তাদের ভেতরের কথোপকথোনগুলো পড়া, শোনা বা অনুসন্ধানের বিকল্প নেই। তা সে ফ্রিঞ্জ সোশ্যাল মিডিয়া (মূল ধারার প্ল্যাটফর্মগুলো হতে আলাদা) থেকে শুরু করে পডকাস্ট বা রাস্তার আলোচনা হোক না কেন।

যাইহোক, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকার পাশাপাশি এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করাটাও বেশ ঝক্কির। কারণ এ ধরনের কন্টেন্টগুলো বেশ বিরক্তিকর। আর অসংখ্য বিদ্বেষমূলক মন্তব্য ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব খুঁজতেও বেশ সময় লাগে। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন ওপেন মেজার্স। যদিও ওপেন সোর্স এই টুলটি খুব বেশি ব্যবহার করা হয়না। টুলটি বিকল্প বা কম জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম—যেমন ৮কুন, ব্লুস্কাই, বিটচিউট, ওডিসি (8kun, Bluesky, BitChute, Odyssey) এবং এ ধরনের আরো অনেক চ্যানেল থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডেটা অনুসন্ধান ও সংগ্রহ করতে পারে। সাংবাদিকরা এখন পাইরা (Pyrra) ব্যবহার করছেন। এটি একটি পেইড টুল। যা ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং সম্ভাব্য সহিংস পোস্টগুলো খুঁজে বের করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, আরো অনেক নতুন নতুন টুল তৈরি হচ্ছে। যা ডানপন্থী ইংরেজি ভাষার পডকাস্টগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রান্সক্রাইব করে  তা থেকে তথ্য উদ্ধার করতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাঙ্কিপিডিয়া (Junkipedia)-এর অডিও ফিচার। ওপেন মেজার্স ও অন্যান্য টুল সাংবাদিকদের সময় বাঁচিয়ে দক্ষতার সাথে উগ্র ডানপন্থীদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করছে।

গুগলের রিপেইড ফ্যাক্টচেক টুলস

ডিজিটাল অপতথ্য আর ছবির কারসাজি এখন এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে সাংবাদিক ও ফ্যাক্টচেকারদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে দ্রুত শনাক্তকরণ, বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নয়। এই অবস্থায় গুগল নিউজ ইনিশিয়েটিভ সম্প্রতি তিনটি টুল নিয়ে এসেছে। যেগুলো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ভুয়া বা ক্ষতিকারক কন্টেন্ট শনাক্ত করতে সক্ষম।

  • অ্যাবাউট দিস ইমেজ (About This Image)। নতুন এই ফিচারটি সাংবাদিকদের কয়েকটি সহজ ধাপের মাধ্যমে ছবি যাচাই করতে সহায়তা করে। প্রথমে গুগল ইমেজেসে একটি ছবি বাছাই করুন। ছবির ওপর ক্লিক করুন, তারপর পাশে থাকা তিনটি উল্লম্ব ডট-এ ক্লিক করুন। এরপর নতুন “About this image” ট্যাবটি নির্বাচন করুন। টুলটি সাথে সাথে তুলে ধরবে এই ছবিটি বা একই ধরনের ছবি গুগলে কতদিন ধরে রয়েছে। এটি দ্রুত  ছবি সম্পর্কিত দাবি খণ্ডন করতে পারে যে ছবিটি সম্প্রতি তোলা হয়েছে কিনা, নাকি পুরানো। এটি মেটাডেটা থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও সরবরাহ করে, যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ছবিটি সম্পাদিত হয়েছে কিনা।
  • ফ্যাক্টচেক এক্সপ্লোরার (Fact Check Explorer)। কোনো সন্দেহজনক দাবি বা কোনো ছবি এরই মধ্যে কোনো অনুমোদিত ফ্যাক্ট-চেকিং সংগঠনের মাধ্যমে যাচাই করা হয়েছে কিনা—এ টুলটি সে তথ্য দেয়। এটি মূলত ভেরিফায়েড ফ্যাক্ট চেকের জন্য ডেডিকেটেড সার্চ ইঞ্জিন। যা সাংবাদিকদের দ্রুত সংক্ষিপ্ত তথ্য এবং যাচাইকৃত প্রতিবেদনের লিঙ্ক দিয়ে থাকে।
  • ইমেজ সার্চ বেটা এবং গুগল ইমেজ কনটেক্সট (Image Search Beta and Google Image Context)। সহজ একট ফর্ম পূরণের মাধ্যমে আবেদনের করে আপনি এ টুলটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি মেটাডেটার ওপর নির্ভর না করে সরাসরি ছবির উপর কাজ করে। এমনকি সন্দেহজনক ছবির স্ক্রিনশটও আপনি এখানে ব্যবহার করতে পারেন। এর ইমেজ কনটেক্সট ফিচারটি আপনাকে জানাবে, ছবিটি প্রথম কবে ব্যবহার করা হয়েছিল। পাশাপাশি ছবিটির সূত্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করে। এই টুলগুলো দ্রুততার সাথে নির্ভুলভাবে ভুয়া তথ্য এবং মিথ্যা দাবিগুলো শনাক্ত করে সাংবাদিকদের দারুণভাবে সহযোগিতা করছে।

ইও ব্রাউজার 

স্যাটেলাইট ছবিটি খুব কাছ থেকে গাজার একটি স্থানের ক্লোজ-আপ দেখাচ্ছে— রিপোর্টাররা এতটা জুম ইন করতে পারবেন যে তাঁরা সুনিদিষ্ট রাস্তাও চিহ্নিত করতে সক্ষম হবেন। চিত্র: ২৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে তোলা একটি ছবির স্ক্রিনশট।

এটি একটি বহুমুখী অনুসন্ধানী টুল। ভীষণ কার্যকরও। বিভিন্ন বার্তাকক্ষ টুলটি অনেক বেশি ব্যবহার করছে। বিন্যমূল্যের এ টুলটি কোনো শর্ত ছাড়াই আপনি ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য কোনো বিশেষ কোডিং দক্ষতারও প্রয়োজন নেই।

সেন্টিনেল হাব এর ইও (আর্থ অবজারবেশন) ব্রাউজারটি স্যাটেলাইট ছবি সার্চের একটি সহজ আর্কাইভ। যেখানে অনেকগুলো স্যাটেলাইট তথ্য প্রদানকারী সংস্থা রয়েছে। যেমন ইউরোপের সেন্টিনেল-২। রিপোর্টাররা ছবিগুলো সহজে ফিল্টার করে ডাউনলোড করতে পারেন। এখানে অনুসন্ধানের জন্য আপনি নিখুঁত স্যাটেলাইট ডেটাবেস নির্বাচন করেছেন কিনা তা নিয়ে বাড়তি চিন্তা করতে হবে না। কারণ এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেন্টিনেল-২ ব্যবহার করে, যেটি সপ্তাহে দু’বার একই জায়গার ছবি তোলে। নতুনদের জন্য এটি ব্যবহার করা খুবই সহজ। এতে রয়েছে স্লাইডার বার, যা দিয়ে মেঘে ঢাকা ছবি বাদ দেয়া যায়। রাস্তা ও শহরের মানচিত্র দেখানোর অপশনও আছে, যা জায়গা চিনতে সাহায্য করে। আপনি ছবির তারিখ দেখতে পারেন এবং কয়েকটি ক্লিকেই টাইম-ল্যাপস ভিডিও তৈরি করতে পারেন। যদিও খুব উচ্চ মানের ছবি বেসরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকেই নিতে হবে। তবে ইও ব্রাউজার এবং গুগল আর্থ প্রো আপনার বেশিরভাগ কাজের জন্যই যথেষ্ট। নাসা ওয়ার্ল্ডভিউ পোর্টালেও জটিল ফিচার রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্যাটেলাইট ছবি নিয়ে রিপোর্টিংয়ের জন্য ইও ব্রাউজার এবং গুগল আর্থ প্রো-ই যথেষ্ট।


রোয়ান ফিলপ জিআইজেএন-এর সিনিয়র রিপোর্টার। তিনি পূর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসের প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। একজন বিদেশী সংবাদদাতা হিসেবে তিনি বিশ্বের দুই ডজনেরও বেশি দেশের সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি এবং সংঘাতের বিষয়ে রিপোর্ট করেছেন।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

ডেটা সাংবাদিকতা পরামর্শ ও টুল

গুগলশিট ব্যবহার করে কীভাবে দরকারি ডেটা খুঁজবেন

স্প্রেডশিট থেকে ডেটা বাছাই কিংবা প্রয়োজনীয় তথ্য দ্রুত কীভাবে খুঁজতে হয়, তা জানা প্রয়োজন। আর এ জন্য স্প্রেডশিট ব্যবহারে দক্ষতা থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতে করে আপনি তুলে আনতে পারবেন দারুন সব গল্প।

data journalism missing piece mistake

ডেটা সাংবাদিকতা সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ডেটা সাংবাদিকতার ১০ সাধারণ ভুল

যে কোনো বিষয়ে জোরালো তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে ডেটা সাংবাদিকতা পুরো সংবাদের জগতে সাড়া ফেলে দিয়েছে। কিন্তু ডেটা সাংবাদিকতা কি সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে? জানতে পড়ুন রোয়ান ফিলিপের বিশ্লেষণ।

টিপশীট ডেটা সাংবাদিকতা পরামর্শ ও টুল

টিপশিট: আপনার অনুসন্ধানে কীভাবে সামুদ্রিক ডেটা ব্যবহার করবেন

সমুদ্র সংক্রান্ত ডেটার ধরন হতে পারে বহুবিচিত্র। সমুদ্রে দূষণ, জীববৈচিত্র্য পরিস্থিতি অথবা অর্থবাণিজ্য— এমন বিভিন্ন ধরনের ডেটা, সাংবাদিকেরা ব্যবহার করতে পারেন তাদের রিপোর্টিংয়ে। এই টিপশিটে পাবেন অনুসন্ধানে সামুদ্রিক ডেটা ব্যবহারের পরামর্শ ও রিসোর্সের খোঁজ।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

২০২৩ সালে বাংলাদেশের সেরা অনুসন্ধান: ভুয়া বিশেষজ্ঞের লেখা, টেলিগ্রামে ব্ল্যাকমেইল, সেচপাম্প মালিকদের আর্থিক নিষ্পেষণ

২০২৩ সালে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রকাশিত ৮টি প্রতিবেদন জায়গা করে নিয়েছে জিআইজেএনের সম্পাদকের বাছাইয়ে। যেখানে উঠে এসেছে ভুয়া লেখক-বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে ছড়ানো অপতথ্য; টেলিগ্রামে ব্ল্যাকমেইল; বিদেশে রাজনীতিবিদের সম্পদের খোঁজ— এমন নানা বিষয়।