Image: Shutterstock, Robert Adrian Hillman
জলবায়ু সংকট অনুসন্ধানের জন্য কয়েকটি পরামর্শ
পুলিৎজার সেন্টারের রেইনফরেস্ট ইনভেস্টিগেশন নেটওয়ার্ক (আরআইএন)-এর পরিবেশগত অনুসন্ধানী সম্পাদক গুস্তাভো ফালেইরোস বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিষয়ে পাঠকদের আরও ভালোভাবে জানানোর জন্য সাংবাদিকদের অবশ্যই জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। দ্বাদশ গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে, “জলবায়ু পরিবর্তন অনুসন্ধান” সেশনে তিনি আরও বলেন, “জলবায়ু রিপোর্টিংয়ের মূল চরিত্রই এমন। প্রায়ই এই কাজের সীমা, সীমান্ত পেরিয়ে যায় এবং এ কারণে আন্তসীমান্ত প্রকল্পগুলো গুরুত্বপূর্ণ।”
“পরিবেশগত ইস্যুগুলো খুব জটিল। কখনো কখনো এর প্রভাব দেখা যায় একের বেশি জায়গায়। ইকোসিস্টেম/বাস্তুতন্ত্র বা নদীপ্রবাহের প্রভাব থাকে বেশ কয়েকটি দেশে,” বলেন ফালেইরোস।
তিনি একই সঙ্গে এটিও তুলে ধরেছেন যে, কীভাবে নানাবিধ অনুসন্ধানী কর্মকাণ্ড সাংবাদিকের জন্য নিরাপত্তাগত ঝুঁকির কারণ হতে পারে এবং কীভাবে সহযোগিতা এই ঝুঁকি কমাতে পারে। যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যায়: সাংবাদিকেরা দল বেঁধে কাজ করলে, হামলা-হুমকির পরিস্থিতিতে একে অপরের দিকে নজর রাখতে পারেন। সংখ্যার একটা ক্ষমতা আছে।
গ্লাসগোতে এ সপ্তাহে শুরু হয়েছে জাতিসংঘের ২০২১ জলবায়ু সম্মেলন (কপ ২৬) । তারই পটভূমিতে জিআইজেসি২১-এর এই সেশনে, এই ইস্যুতে আরও ইন-ডেপথ অনুসন্ধান করার জন্য সাংবাদিকদের কিছু পরামর্শ এবং টুলের হদিস দিয়েছেন বক্তারা।
পরিবেশবিষয়ক নিউজ সাইট মোঙ্গাবে ইন্দোনেশিয়ায় কাজ করেন সাংবাদিক হান্স নিকোলাস জং। তিনি জানিয়েছেন, ডেটা পাওয়া, গবেষণা এবং প্রতিবেদনের ধারণার জন্য তিনি প্রায়ই বিভিন্ন ওপেন সোর্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন। তিনি এমন চারটি সাইট ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন, যেগুলি তিনি প্রায়ই ব্যবহার করেন নিজের জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত রিপোর্টিংয়ে।
১. ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার: এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আপনি জলবায়ু পরিবর্তনের স্থানীয় ও বৈশ্বিক—দুই ধরনের চিত্র পাবেন। বিভিন্ন দেশের সরকার, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে (যেখানে বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রির মধ্যে এবং সম্ভব হলে ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল) কী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং সত্যিই কী করছে, তারও একটি হিসাব রাখে সাইটটি। নির্দিষ্ট কোনো অঞ্চল বা দেশের জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশকও পাওয়া যায় এখানে।
২. ক্লাইমেট অ্যানালিটিকস: এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পাবেন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চল ধরে গবেষণার সুযোগ। এবং এখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং কীভাবে এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে, তা দেখানো হয়েছে। অর্থনীতির দিক দিয়ে এই নিষ্ক্রিয়তার মূল্য কত, তারও একটি হিসাব দেখায় প্ল্যাটফর্মটি এবং বিশ্বজুড়ে বর্তমানে কী পরিমাণ কয়লার ব্যবহার হচ্ছে, তারও একটি চিত্র পাওয়া যায় এখানে।
৩. গ্লোবাল এনার্জি মনিটর: ওপেন সোর্স এই অনলাইন ট্র্যাকারটি বিশ্বজুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পের দিকে চোখ রাখে। প্ল্যাটফর্মটিতে বৈশ্বিক জ্বালানি ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। এটি ডেটা ও গবেষণারও ভান্ডার।
৪. এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস অ্যাটলাস: জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত কারণে বিশ্বজুড়ে যেসব দ্বন্দ্ব-সংঘাত শুরু হয়েছে, সেগুলো তুলে ধরে এই মানচিত্র। এবং ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট কোনো দেশ বা অঞ্চলের দিকেও মনোযোগ দিতে পারেন।
অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক ফ্রিল্যান্স ডেটা সাংবাদিক আদ্রিয়ানা হোমোলোভা বলেছেন আরেকটি প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া বিষয়ের কথা। সেটি হলো এই ইস্যুতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অস্বীকার করা মানুষদের ভূমিকা। তিনি সাংবাদিকদের আহ্বান জানিয়েছেন এসব ভুয়া তথ্যের আসল উৎস এবং কারা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে, তা উন্মোচনের জন্য। যেমন, ২০১৭ সালে, নেদারল্যান্ডসে জলবায়ু পরিবর্তন সংশয়ীদের নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য তিনি তিন মাসের ৭ হাজার ৪৩০টি টুইট এক জায়গায় করেছিলেন। এরপর বিশ্লেষণ করে দেখেছিলেন যে, সেগুলো কারা পোস্ট করছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কী ধরনের বিভ্রান্তিকর আলোচনা হচ্ছে।
“আমার মনে হয় এটি গুরুত্বপূর্ণ…যে, তারা কারা, তাদের উদ্দীপনা কোথা থেকে আসে, কারা তাদের এসব বক্তব্য প্রচারের জন্য অর্থ দেয় ইত্যাদি বিষয় উন্মোচন করা জরুরি,” বলেছেন হোমোলোভা।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অনুসন্ধানে সহায়তার জন্য সাংবাদিকদের জন্য বেশ কয়েকটি রিসোর্স তৈরি করেছে জিআইজেএন। দেখুন আমাদের গাইড: জলবায়ু সংকট: অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য আইডিয়া এবং সংঘবদ্ধ অপরাধ অনুসন্ধানের গাইডে জলবায়ুসংক্রান্ত অপরাধ নিয়ে অধ্যায়। গাইডটি প্রকাশিত হয়েছে জিআইজেসি২১-এর প্রথম দিনে।