প্রবেশগম্যতা সেটিংস

CORRECTIVE Secret Master Plan Against Germany investigation
CORRECTIVE Secret Master Plan Against Germany investigation

Image: Screenshot, CORRECTIV

লেখাপত্র

বিষয়

আন্ডারকভার রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে জার্মানির চরম ডানপন্থী দলের গোপন বৈঠকের তথ্য উন্মোচন

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

বার্লিনের ২০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত প্রুশিয়ান প্রাসাদের নিও-বারোক ভিলা। ওয়েমার যুগে নির্মিত মনোরম ভবনটি পটসডাম লেক থেকে খুব দূরে নয়। হাঁপাতে হাঁপাতে ভিলায় প্রবেশ করলেন একজন দৌড়বিদ। তিনি এক কাপ কফি অর্ডার করতে চাইছিলেন।

এই দৌড়বিদ মূলত একজন সাংবাদিক। তিনি অনুসন্ধানী নিউজরুম কারেক্টিভের হয়ে কাজ করেন এবং ছদ্মবেশ নিয়ে ঐতিহাসিক ল্যান্ডহাউস অ্যাডলন হোটেলে শুরু হওয়া একটি সমাবেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন।

২০২৩ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে প্রতিবেদক ঘটনাক্রমে জানতে পারেন জার্মানির ডানপন্থী দল এডিএফের (অলটারনেটিভ ফর জার্মানি) সঙ্গে উগ্র ডানপন্থী বলে স্বীকৃত ব্যক্তি এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্র সংঘের উচ্চ-পদস্থ সদস্যদের একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যেখানে চিকিৎসক, আইনজীবি, উদ্যোক্তাসহ জার্মানির কেন্দ্রীয় ডানপন্থী দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ)-এর দুই সদস্যও আছেন। তাদের উদ্দেশ্য জার্মানি থেকে লাখ লাখ অভিবাসীকে বহিষ্কারের মাস্টার প্ল্যান দাঁড় করানো, যার মধ্যে জার্মান নাগরিকেরাও রয়েছেন।

সূত্রের মাধ্যমে বৈঠকটি সম্পর্কে জানার পর কারেক্টিভের প্রতিবেদকেরা ল্যান্ডহাউস অ্যাডলনে দুই রাতের জন্য বুকিং দেন এবং নিজেদের মামুলি ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করতে রঙিন পরচুলা ও কিম্ভূত-দর্শন চশমা পরে সেখানে উপস্থিত হন।

সম্মেলনের দিন সকালে ছদ্মবেশধারী প্রতিবেদকেরা পরিচয় গোপন করে নিজেদের হাস্যকরভাবে উপস্থাপন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সকালে উঠে প্রাতভ্রমণে যেতে যেতে আশেপাশের লোকেদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন, হোটেলে ফিরেই তারা কফি খেতে চান। জগিংয়ের পোশাক আর কানে হেডফোন পরা অবস্থায় যখন যাকে সামনে পান তাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলতে বলতে জগিংয়ে বেরিয়ে পড়েন। চল্লিশ মিনিট পর যখন হোটেলে ফিরে আসেন, ততক্ষণে বৈঠক উপলক্ষে আসা বিশেষ অতিথিরা ঢুকতে শুরু করেছে। চারপাশে কী হচ্ছে সেদিকে কোনো রকম পাত্তা না দিয়ে এবং নিজেদের ভেতরের চরম উত্তেজনাকে লুকিয়ে তারা অনবরত জিজ্ঞেস করতে থাকেন “আচ্ছা, এক কাপ কফি কোথায় পেতে পারি?”

নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ না করে সেই প্রতিবেদক জিআইজেএনকে বলেন, “আপনি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন, মনে মনে চরম উত্তেজনা বোধ করছেন, তবে এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাহ্যিকভাবে আপনাকে ভীষণ শান্ত থাকতে হবে।” তিনি আরো বলেন, “সত্যিই, তখন আপনার মাথার মধ্যে অন্য কিছু চলছে, নিজেকে আপনার সাইবর্গের মতো মনে হবে; আমি মনে মনে খানিকটা ভয় পাচ্ছি, কিন্তু বাইরে থেকে দেখাচ্ছি যে খুব আনন্দে আছি, একদিকে ভীষণ উদ্বিগ্ন আবার খুব সতর্ক থাকতে হচ্ছে।”

হোটেলের নকশা। ছবি: কারেক্টিভ/ স্ক্রিনশট

নিজেদের এমন উদ্ভটভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে তারা আশেপাশের মানুষদের সন্দেহ দূর করতে সক্ষম হন। এরপর গোপন বৈঠকে অংশকারীদের উদ্দেশে রাখা চিঠিগুলো যে টেবিলে রাখা আছে, সেদিকে অগ্রসর হন এবং গোপন ফোন দিয়ে তা চিত্রধারন করেন। সেই সন্ধ্যায়, প্রতিবেদকের সহকর্মীরা ভাড়া করা একটি সাউনা জাহাজ থেকে টেলিস্কোপিক লেন্স দিয়ে উপস্থিত অতিথিদের ছবি তুলতে থাকেন। এদিকে অলাভজনক সংস্থা গ্রিনপিসের সহযোগীরা আগে থেকেই হোটেলের সামনে দুটি গাড়ি পার্ক করে রাখেন। হোটেলে কে কখন প্রবেশ করছে তা নিরীক্ষণ করতে গাড়ির ড্যাশবোর্ড ক্যামেরা বসানো হয়। এভাবে যৌথ অনুসন্ধানের মাধ্যমে উন্মোচিত ঘটনাটি গোটা জার্মানি জুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

পরিচয় উন্মোচিত হওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রতিবেদক বলেন, “আমি নিশ্চিত ছিলাম যে তারা অন্তত আমাকে মেরে ফেলবে না, বড়জোর যা ঘটতে পারতো তা হলো ভারী কিছু কিল-ঘুষি খেতে হতো।”

এ অনুসন্ধানের অন্য প্রতিবেদক মার্কাস বেন্সম্যান বিভিন্ন অঞ্চলের কয়েকজন এএফডি সদস্যের সঙ্গে কথা বলেন, যাদের বিবৃতি অন্যান্য সূত্রের মাধ্যমে সাংবাদিকরা নিশ্চিত করতে সক্ষম হন।

(অনুসন্ধান সম্পর্কিত পর্দার পিছনের কিছু ঘটনা এখানে তুলে ধরেছে কারেক্টিভ)

ছয় সপ্তাহ ধরে পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রকাশিত এ অনুসন্ধানটি দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয়। পরিণত হয় জার্মান সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে। অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যমে অনেকেই দলটিকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানান। রয়টার্স অনুসারে, ছয় মাসের মধ্যে দলটির প্রতি সমর্থন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়।

‘মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে’

জার্মান ফেডারেশন অব জার্নালিস্ট (ডিজেভি)-এর মুখপাত্র পল এসচেনহেগেন বলেন, “ঘৃণাত্মক অভিবাসন পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হওয়া এ বৈঠকের তথ্য উন্মোচন… অনেক লোকের চোখ খুলে দিয়েছে। সাংবাদিকতা জনগণকে আলোকিত করার হাতিয়ার হিসাবে খুব কম ক্ষেত্রেই এমন ভাল কাজ করতে পারে।”

গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী বছরে ঘটনাটি প্রকাশ হওয়াতে জার্মানির জাতীয় রাজনৈতিক ছন্দে বড় ধরনের আঘাত লেগেছে। যদিও গোটা ইউরোপ জুড়েই ডানপন্থীরা বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে, এর মধ্যে জার্মানির ডানপন্থীরা সবচেয়ে বেশি নির্মম।

“জার্মানিতে দুটি দল আছে: একটির প্রতিনিধিত্ব করছে অভিবাসী শ্রেণী। অন্যটি নাৎসি ঘরানার লোকেরা,” বলেন কারেক্টিভের সাংবাদিক জিন পিটার্স, যিনি অনুসন্ধানে নেতৃত্ব দিয়েছেন৷ “সুতরাং এটি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।”

অনুসন্ধানের প্রধান প্রতিবেদক মার্কাস বেন্সম্যান সবচেয়ে বিস্মিত হয়েছেন উগ্রপন্থীদের  “সংকল্প ও আত্মবিশ্বাস” দেখে। উচ্চ-পদস্থ এএফডি সদস্যরা সরাসরি এএফডি জাতীয় বোর্ড, আইনজীবী, উদ্যোক্তা এবং ডানপন্থী চরমপন্থীদের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত, যারা জার্মানি থেকে লাখ লাখ লোককে বহিষ্কারের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। মনে মনে তারা এ ধারণাটি পোষন করতেন, কিন্তু এই হোটেলে… বিষয়টিকে রীতিমতো বাস্তবে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়,” জিআইজেএনকে বলেন তিনি।

“ঠিক এ বিষয়টিই মানুষকে আলোড়িত করে। দলটির মুখোশ খুলে পড়ে। এখন, অনেকেই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেন যে, এই হোটেলের অতিথিরা যদি কখনো জার্মানিতে রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভ করেন তাহলে কী ঘটতে পারে,” বলেন তিনি।

২০১৪ সালে অলাভজনক অনুসন্ধানী সংবাদ আউটলেটটিতে যোগ দেন বেন্সম্যান। ২০১৬ সাল থেকে এএফডির পেছনে লাগেন। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেলআউট কর্মসূচির বিরোধিতা করে পার্টি গঠনের তিন বছর পরের ঘটনা। দেশব্যাপী দ্বিতীয় জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে, কট্টরপন্থী দলগুলোর সঙ্গে জার্মানির চরম ডানপন্থী অভিবাসন-বিরোধী দল হিসাবে এএফডি কঠোর ভূমিকা পালন করেছে।

দলটির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা চলতি নির্বাচনী বছরে বিশেষ উদ্বেগজনক অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয়। দেশের অভ্যন্তরে অনেকেই দলটিকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং এর কর্মকাণ্ডকে অসাংবিধানিক বলেও ঘোষণা করেছেন। ২০২৪ সালে জার্মানিসহ আসন্ন ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনে ডানপন্থী দলগুলোর সম্ভাব্য কৌশল বোঝার জন্য গত বছরের গ্রীষ্ম থেকেই কারেক্টিভ বিষয়টি নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

অনুসন্ধানী দলটি কীভাবে ওই গোপন বৈঠক সম্পর্কে জানতে পেরেছিল, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বেন্সম্যান বলেন, “আমাদের জন্য বৈঠকের তথ্য ফাঁসের ঘটনা কিন্তু অনুসন্ধানের শুরু নয়, বরং ফলাফল। আমরা যে প্রশ্নটি নিয়ে কাজ করতে চাই তা তুলে ধরি এবং শিকারের জন্য জাল ফেলতে চাই।”

বছরের পর বছর ধরে চরমপন্থী দল এএফডিকে ঘিরে সূত্রের নেটওয়ার্ক তৈরি ও তা মূল্যায়নের কাজে সময় ব্যয় করেছেন বেন্সম্যান। অভিজ্ঞতার ওপর ভর করে অর্জিত অন্তদৃষ্টির মাধ্যমে তিনি চরম ডানপন্থী সূত্রগুলোকে খুঁজে পেতে সমর্থ হয়েছেন। “আপনি যদি জাহান্নাম সম্পর্কে লিখতে চান তাহলে আপনাকে শয়তানদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, কারণ ফেরেশতারা কেবল জাহান্নাম সম্পর্কে শুনেছেন, সেখানে কী হয় তারা তা জানেন না,” তিনি পরামর্শ দেন। “আপনাকে এমন লোকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে যাদের সঙ্গে আপনি সহমত পোষণ করেন না এবং যাদের বক্তব্যকে আপনি খারাপ মনে করেন। কিন্তু আপনি যখন এ ধরনের দলগুলো নিয়ে অনুসন্ধান চালাবেন, তখন আপনাকে একটি নীতি মনে রাখতে হবে। আর তা হচ্ছে: আপনি আপনার সামনে উপস্থিত ব্যক্তির মনোভাব পাল্টাতে আসেননি বা তার নিন্দা করতে চান না, বরং আপনি তাকে সূত্র হিসাবে কাজে লাগাতে চান।”

এ কথার দ্বিতীয় অংশের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ যে উপদেশটি চলে আসে তা হচ্ছে: “সূত্রের সঙ্গে কথোপকথন অনেকটা যৌথ নৃত্যের মতো, যেখানে আপনাকে নেতৃত্ব ধরে রাখতে হবে বা সময়মতো ইতি টানতে হবে।”

পিটার্সের পরামর্শ হলো: সূত্র ‍সংগ্রহের সময় তাদেরকে আপনার কাছে আসতে দিন। “আমি কে— ঠিক সেই কারণেই সূত্রগুলো আমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছিল। তারা আমাকে বিশ্বাস করেছিল। তারা চেয়েছিল আমি এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করি, আমার ক্যারিয়ারের কারণে নয়, বরং বিষয়বস্তুর কারণে। তাই তাদের কাছে নিজের পরিচয় লুকাবেন না।”

“আমি মনে করি অনেক সাংবাদিক নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেন, ভাবেন যে এটি পেশাদার বলে মনে হবে। সত্য সবসময় সত্যই। কোনো আদর্শই দিয়ে তা পরাজিত করা যাবে না। আমার বক্তব্য হচ্ছে: আপনার অবস্থান পরিস্কার থাকতে পারে, আর সেই সঙ্গে শোভন সাংবাদিকতাও করতে পারেন, তথ্য যাচাই করতে পারেন এবং প্রসঙ্গ টানতে পারেন। সাংবাদিকতা স্কুল থেকে এ কৌশলটি যে কেউ শিখতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিত্ব হচ্ছে সেই জিনিস যা বন্ধ দরজাগুলোকে খুলে দেয়,” বলেন তিনি।

Protester holds a creative sign against revealed deportation plans at a protest against right-wing extremism in front of Reichstag building in Berlin, Germany.

চরম ডানপন্থী দলের অভিবাসন পরিকল্পনার হওয়া বিরুদ্ধে জার্মানির বার্লিনের রাইখস্ট্যাগ বিল্ডিংয়ের সামনে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী এক প্রতিবাদকারীর প্রতিক্রিয়া ৷ ছবি: শাটারস্টক

সহযোগিতাই যেখানে মূল চাবিকাঠি

কারেক্টিভের সাংবাদিকেরা জোর দিয়ে বলেন, এই অনুসন্ধানে পারস্পরিক সহযোগিতা তাদের সাফল্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গ্রিনপিসের সঙ্গে কাজের বিষয়টি রয়েছে, যাদের সঙ্গে তারা তাদের অনুসন্ধান ভাগ করে নিয়েছেন। আর সমর্থকের ভূমিকায় কাজ করতেও তাদের কোনো দ্বিধা ছিল না।

পিটার্স বলেন, অলাভজনক সংস্থার কাছ থেকে সাংবাদিকদের অনেক কিছু শেখার আছে, যেখানে কোনো গবেষণা বা প্রাপ্ত তথ্য পরস্পরের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে অহংকার বা অনিচ্ছা দিয়ে তাড়িত হতে হয় না।

তবে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আপনার একেবারেই ভুলে যাওয়া উচিত নয় তা হচ্ছে: কিছু নাৎসিপন্থী যারা আপনাকে হত্যা করতে চায়, আর কিছু সহকর্মী যারা আপনার কাজে ঈর্ষান্বিত, তারা ছাড়া নিবন্ধের নীচে কার নাম লেখা আছে, লোকেরা তা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না। নিবন্ধটি কে লিখেছেন তা কেউ জানে না, কেউ পরোয়া করে না,” বলেন পিটার্স।

“আমরা একসঙ্গে কাজ করি এবং আমাদের দলের প্রতিটি সদস্য পরস্পরের দক্ষতাগুলোকে সম্মান করেন। কোন বিষয়টি কারেক্টিভের জন্য সফলতা বয়ে এনেছে ,আমরা তা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি নতুন পদ্ধতি নিয়েও কাজ করতে চেষ্টা করি,” বলেন বেন্সম্যান।

অনুসন্ধানী দলটি ছিল ভীষণ কৌতূহলী ও বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতাসম্পন্ন। সাংবাদিক জিন্স পিটার্সের নেতৃত্বে যা গবেষণা ও দারুণ উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন লোকগুলোকে একত্রিত করে। গণ্ডির বাইরে গিয়ে চিন্তা করার ক্ষমতা পির্টাসকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, পারফরমেন্স ও মিডিয়া আর্ট, পেশাদার ক্লাউনিং, আর্ট জার্নালিজম, চিত্রনাট্য লেখার বৈচিত্র্যময় পেশা নিয়ে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।

সাংবাদিকতার জগতে পিটার্স নিজেকে “একজন বহিরাগত” হিসাবে বর্ণনা করেন— যদিও এর আগে তিনি বড় বড় অনুসন্ধানে মূখ্য ভূমিকায় ছিলেন, তবে শিল্প জগৎ নিয়েই বেশি কাজ করেছেন। বিষয়টিকে “যথেষ্ট সাহসী,” হিসেবে আখ্যায়িত করে পিটার্স বলেন, “পারফরম্যান্স এবং মিডিয়া আর্ট কভার করে এমন কাউকে আমন্ত্রণ জানানোর কারণ হচ্ছে তাদের কাছে সাংবাদিকতাকে নতুনভাবে চিন্তা করার সরঞ্জাম, চিন্তাভাবনা ও পদ্ধতি রয়েছে।”

এরই ধারাবাহিকতায় অন্য দুইজনকে সঙ্গে নিয়ে একটি নাটক লিখেন পিটার্স। নাটকটি এএফডি নিয়ে কারেক্টিভের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর পরই মঞ্চস্থ হয়। একঘন্টার এ নাটকটি দেশজুড়ে সব শ্রেণীর দর্শকের জন্য বিনামূল্যে প্রদর্শিত হয়। উদ্দেশ্য হলো জনসাধারণকে কারেক্টিভের অনুসন্ধানে উপস্থাপিত তথ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান। নাটকটি দেখার মাধ্যমে, দর্শক অনুসন্ধানটির গভীরে প্রবেশ করতে পারে এবং বিষয়বস্তু সম্পর্কে আরও সমৃদ্ধ ধারণা অর্জন করতে পারে। সামগ্রিকভাবে, নাটকটি জনসাধারণের কাছে সৃজনশীল ও সহজে তথ্য পৌঁছানোর উপায় হিসাবে কাজ করে।

নাটকটির জনপ্রিয়তা, এবং জার্মানি জুড়ে থিয়েটারগুলোর পক্ষ থেকে করা সহযোগিতা ছিল পিটার্সের জন্য আনন্দদায়ক। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মতো নাট্যজগতকেও তিনি চরম ডানপন্থার বিপরীতে ভূমিকা রাখতে দেখেন।

“এখন যা যা ঘটছে তা সাংবাদিকতা ও নাট্য জগতের জন্য অনন্য,” বলেন পিটার্স। “ফ্যাসিবাদের বিপরীত হচ্ছে প্রেম। তাই মানুষ যদি ফ্যাসিবাদ না চায়, তারা প্রেম এবং মানবিক সংহতির আহ্বান জানায়, এটি একটি দুর্দান্ত ফলাফল,” বলেন তিনি।

‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্র অস্তিত্বহীন”

যেখানে ভালোবাসা, সেখানে ঘৃণাও আছে।

জার্মান জার্নালিজম ফেডারেশনের এসচেনহেগেন বলেন, “এএফডি এবং তার সমর্থকরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে কী ভাবছে তা অনেকটাই আমরা ধারণা করতে পারি। ‘জার্মানির বিরুদ্ধে গোপন পরিকল্পনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকে, কারেক্টিভের ওপর ঘৃণা ও হুমকির বর্ষণ চলছে।” তবে কারেক্টিভ দলের জন্য, হুমকিগুলো যতটা চমকপ্রদ, ততটা বিস্ময়কর নয়। কেননা ২০১৬ সালে চরম ডানপন্থীর হাতে খুন হন রাজনীতিবিদ ও এএফডি সমালোচক ওয়াল্টার লুবকে।

“এই মুহূর্তে কারেক্টিভ দলের বিরুদ্ধে অনেক ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। ডানপন্থীরা সহিংসতা উসকে দেওয়ার জন্য শিস বাজাচ্ছে, যা বেদনাদায়ক,” বলেন পিটার্স।  তিনি আরো বলেন “আর যদি আমার বা আমাদের অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে কিছু ঘটে, তবে প্রবাহিত রক্তরেখা সরাসরি দলের প্রধানের কাছে নিয়ে যাবে, কারণ তারা এটি প্রচার করেছে।”

“কিন্তু যে লোকগুলো আমাদের পিছনে দাঁড়িয়ে আমাদের সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছেন, বিরোধীদের ঘৃণা কখনই তাদের লড়াইয়ের সৌন্দর্যকে কমাতে পারে না” যোগ করেন পিটার্স।

ভীতি প্রদর্শন, সহিংসতার উস্কানির পাশাপাশি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ক্ষোভ ছড়ানোর প্রচেষ্টা গণতান্ত্রিক আলাপে স্থান পায় না।” বলেছেন এসচেনহেগেন। সংস্থাটি কারেক্টিভের সদস্যদের পাশাপাশি উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সমস্ত মিডিয়া পেশাদারদের জন্য সংহতি প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে। “কারণ গণতন্ত্র ছাড়া সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই— এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্র অস্তিত্বশূণ্য।”


সারাহ কারাকস বার্লিনভিত্তিক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। তিনি ইউরোপিয়ান জার্নালিজম অবজারভেটরির ফেলো ছিলেন। তার কাজ সিএনএন, ডের স্পিগেল, নিউ স্টেটসম্যান এবং সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে প্রকাশিত হয়েছে।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

BBC Africa Eye undercover investigation codeine cough syrup black market

পদ্ধতি পরামর্শ ও টুল

আন্ডারকভার রিপোর্টিং? আফ্রিকার অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু পরামর্শ

আন্ডারকভার রিপোর্টিং কৌশলগুলো কীভাবে কাজে লাগাবেন তা আরও ভালভাবে তুলে ধরার জন্য জিআইজেএন কথা বলেছে আফ্রিকার অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সঙ্গে। আন্ডারকভার রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে এই সাংবাদিকেরা যুগান্তকারী সব প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।

টেকসইতা পদ্ধতি

সাংবাদিকতার প্রভাব পরিমাপ — আমরা নতুন যা জানি

সব সংবাদমাধ্যমই চেষ্টা করে তাদের রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে সমাজে প্রভাব তৈরির জন্য। কিন্তু এই প্রভাব পরিমাপ করার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে একেক ধরনের সূচক। পড়ুন, এ নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে নতুন কী জানা গেছে।

পদ্ধতি

পাইলোস জাহাজডুবি নিয়ে অনুসন্ধানটি যেভাবে হল

২০২৩ সালের ১৪ জুন ভোরে গ্রিসের পাইলোস উপকূলে কয়েকশ অভিবাসীকে বহনকারী একটি ছোট মাছ ধরার ট্রলার ডুবে প্রায় ৬০০ জনের মৃত্যু হয়। কোস্ট গার্ড, ঘটনার পর দায়সারা উদ্ধার অভিযান পরিচালনার অভিযোগে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে। তারা দাবি করে যে জাহাজে থাকা অভিবাসীদের সহায়তার প্রস্তাব দিলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও গবেষকদের অনুসন্ধানে সত্যটা বেরিয়ে আসে।

পদ্ধতি

ভেনেজুয়েলার শত শত সরকারি কর্মকর্তার ফ্লোরিডায় থাকা গোপন সম্পদের তথ্য যেভাবে উন্মোচন করেছে আরমান্ডোডটইনফো

যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ ও বসবাসের অনুমতি পাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে ভেনেজুয়েলার সরকারের যোগসূত্র খুঁজতে গিয়ে সাংবাদিকদের হাতে আসে বিস্ময়কর সব তথ্যপ্রমাণ। এমন শত শত কোম্পানি এবং সম্পদের মালিকদের নাম পাওয়া যায়, যারা দেশটির সমাজতান্ত্রিক সরকারের আমলে সাবেক কর্মকর্তা বা সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। পড়ুন, কীভাবে হয়েছে আরমান্ডোডটইনফোর এই অনুসন্ধান।