প্রবেশগম্যতা সেটিংস

Plagiarism definition, close up view dictionary
Plagiarism definition, close up view dictionary

Image: Shutterstock

লেখাপত্র

বিষয়

রোমানিয়ার অভিজাতদের গবেষণা-চৌর্যবৃত্তি উন্মোচন

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

English

Plagiarism definition, close up view dictionary

ছবি: শাটারস্টক

রোমানিয়ার অনুসন্ধানী সাংবাদিক এমিলিয়া শেরকান বলেন, আমাদের একটি প্রচলিত ধারণা হলো রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি বা দুর্নীতি অনুসন্ধানে সাংবাদিকদের হয় নিজেদের ব্যক্তিগত ঝুঁকিতে ফেলতে হয়, নয়তো ছদ্মবেশ ধরতে হয়।

কিন্তু তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় স্টোরি তেমন নয়। সেগুলো তিনি পেয়েছেন গণগ্রন্থাগারে।

তিনি বলেন, তাঁর অনুসন্ধানের লক্ষ্যবস্তু যারা, “তারা নিজেদের অর্থ সুইজারল্যান্ড ও অন্য দেশের ব্যাংক হিসাবে রাখতে পারে, নিজেদের সম্পদ অন্য ব্যক্তি বা পরিবারের নামে রাখতে পারে, কিন্তু তাদের বই বা ডক্টরেট অভিসন্দর্ভ লুকাতে পারে না।” আর এই কাজগুলো কখনো কখনো তাদের পদোন্নতিতে কাজে আসে। “সেগুলো লাইব্রেরিতেই পাওয়া যায়, যা সবার জন্য উন্মুক্ত।” 

Emilia Sercan

এমিলিয়া শেরকান। ছবি: শেরকানের সৌজন্যে

শেরকান গত সাত বছরে রোমানিয়ার উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের ডক্টরেট অভিসন্দর্ভে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ নিয়ে লেখালেখি করেছেন, যেখানে বিখ্যাত লেখক ও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের কাজ থেকে নকল করার প্রমাণ উঠে এসেছে। এমনকি এও দেখা গেছে যে, সরকারের মন্ত্রীরা বিভিন্ন অধ্যায়ে বিভিন্ন ফন্ট ব্যবহার করেছেন; অর্থ্যাৎ তারা যেখান থেকে নকল করেছেন, সেখানকার টাইপফেস বা পৃষ্ঠা বিন্যাসও পরিবর্তন করেননি।

তিনি প্রায় ৫০ জনের ডক্টরাল গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি ও একাডেমিক জালিয়াতি নিয়ে কয়েক ডজন অনুসন্ধান প্রকাশ করেছেন। তিনি যাদের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ তুলেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন রোমানিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রী, বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর, পুলিশ প্রধান ও আর্মি জেনারেল, প্রসিকিউটর এবং বিচারক। সার্বিক বিবেচনায় তাঁর কাজ, রোমানিয়া সরকারের একটি গোটা শাখার একাডেমিক যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে, যার শুরু হয়েছিল পাদটীকা ও সন্দেহজনক গ্রন্থপঞ্জি পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে।

ঘটনাচক্রে শুরু

প্রতিবেদক ও পরবর্তীতে সম্পাদক হিসেবে, শেরকান বছরের পর বছর ধরে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুর্নীতি অনুসন্ধান করেছেন, পরবর্তীতে একটি সংবাদপত্রে অনুসন্ধান বিভাগ পরিচালনা করতেন। এ সময়কালের অন্যান্য স্টোরির মধ্যে, এমন একটি দুর্নীতি কেলেঙ্কারি রয়েছে যার সঙ্গে দেশটির একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী জড়িত ছিলেন। 

পরে শেরকান নিজে পিএইচডি করেছেন এবং বর্তমানে বুখারেস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি বলেন, গবেষণাপত্র লেখার প্রক্রিয়াটি ছিল কঠিন, জটিল ও সময়সাপেক্ষ। এই পর্যায়ে পড়াশোনা শেষ করতে যে আসলে কী লাগে, তা তিনি এখান থেকেই জানতে পেরেছেন।

একাডেমিক চৌর্যবৃত্তি নিয়ে তাঁর কাজের শুরুটা হয়েছিল “অনেকটা দুর্ঘটনাবশত।” টেলিভিশনের খবরে একদিন জানতে পারলেন, ডক্টরেট ডিগ্রীধারী একজন নেতৃস্থানীয় মন্ত্রীকে রোমানিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। তখন এই ভেবে তিনি অবাক হয়েছিলেন: সত্যিই কি তার একাডেমিক গবেষণাপত্র লেখার সামর্থ্য আছে? এখানেই শেষ নয়, সেই ব্যক্তি পেশাজীবনেও বেশ কয়েকটি শীর্ষ-পর্যায়ের চাকরিতে ছিলেন, তাই তার একাডেমিক পরিসরে গভীর সাধনার ফুরসত মেলার কথা নয়। সন্দেহ আর কৌতূহল শেরকানকে অনুসন্ধানের পথে নিয়ে যায়।

জুলাই মাসে লন্ডনের সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমে (সিআইজে) তিনি বলেছেন, “লাইব্রেরিতে গিয়ে আমি গবেষণাপত্রটি খুলে দেখি – তিনি প্রথম [সর্বোচ্চ গ্রেড] হয়েছেন।” পরে জিআইজেএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, “গোলমেলে কিছু একটার আলামত সেখানে ছিল: তাতে না ছিল ভূমিকা, না ছিল উপসংহার। আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম ভূমিকা ও উপসংহার ছাড়া কীভাবে এ ধরনের কাজ হতে পারে, যেখানে সাধারণ একটি প্রবন্ধেও এই অংশগুলো থাকতে হয়?”

“প্রথম পৃষ্ঠায়, আমি প্রথম পাদটীকা খুঁজে পেয়েছি, যেখানে বলা হয়েছে ‘op cit,’” যা কিনা ল্যাটিন শব্দ “opere citato” এর সংক্ষিপ্ত রূপ, যা আগের উদ্ধৃত রেফারেন্স উল্লেখ করতে একাডেমিক লেখায় ব্যবহৃত হয়। “আমার মনে প্রশ্ন আসে ‘প্রথম পৃষ্ঠায় এটি কীভাবে থাকতে পারে?’ গবেষণাপত্রটিতে সমস্যার এমন সুস্পষ্ট আলামত ছিল। দু’ঘন্টার মধ্যে, আমি প্রায় ৪০ পৃষ্ঠা চৌর্যবৃত্তি সনাক্ত করতে পেয়েছি – এমনকি তার ডক্টরাল তত্ত্বাবধায়কের লেখাও এই চৌর্যবৃত্তি থেকে রেহাই পায়নি, যা এই তত্ত্বাবধায়ক নিজেও লক্ষ্য করেননি। আমি প্রথম স্টোরি প্রকাশ করি: সব কিছুই ছিল নিভৃতে।”

Emilia Sercan at CIJ

রোমানিয়ান সাংবাদিক এমিলিয়া শেরকান সম্প্রতি সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের একটি অধিবেশনে চৌর্যবৃত্তি অনুসন্ধান নিয়ে আলোচনা করছেন৷ ছবি: সিআইজের সৌজন্যে

অর্ন্তবর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজের ফেসবুক পেজে শেরকানের উন্মোচনকে “গণমাধ্যমের বলী” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে টাইমস হায়ার এডুকেশনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরষ্কার ও যোগ্যতার প্রমাণপত্র তদারকির দায়িত্বে থাকা রোমানিয়ার জাতীয় সংস্থা পরবর্তীতে রায় দিয়েছে যে তার গবেষণাপত্রটিতে চৌর্যবৃত্তি করা হয়েছে এবং তারা এটি প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে

শেরকান লাইব্রেরিতে ফিরে গিয়ে এমন আরেকটি ঘটনা খুঁজে পান, তারপর তৃতীয়, ষষ্ঠ – আপাতদৃষ্টিতে সবগুলোতেই সেই একই রাজনীতিবিদের সংশ্লিষ্টতা মেলে, যিনি পরবর্তীতে পিএইচডি তত্ত্বাবধায়কও হয়েছিলেন। শেরকান তাঁর অনুসন্ধান স্বাধীন অনলাইন সংবাদমাধ্যম প্রেস ওয়ানে প্রকাশ করা শুরু করেন৷ তাঁর যাচাইকৃত বেশিরভাগ গবেষণাপত্রে “চৌর্যবৃত্তির আলামত মেলে।” একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও রোমানিয়ার  অন্যতম প্রভাবশালী এক ব্যক্তির আরেক গবেষণাপত্র রহস্যজনকভাবে জাতীয় গ্রন্থাগার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।

বুদ্ধিবৃত্তিক চোরকে যেভাবে ধরা যায়

চৌর্যবৃত্তি সনাক্ত করা কতটা কঠিন? আর কীভাবে এধরনের কাজ করবেন? শেরকান বলেন, কিছু ক্ষেত্রে তিনি প্রথম পৃষ্ঠায় চৌর্যবৃত্তির প্রমাণ পেয়েছেন; অন্যান্য ক্ষেত্রে, এই কাজে দুই বা তিন দিন সময় লাগে। আরও কঠিন পরিস্থিতিতে, এই প্রক্রিয়ায় আরও নিবিড় গবেষণায় কয়েক মাস লেগে যায়। তাঁর করা সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি ছিল একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ডক্টরাল গবেষণাপত্রে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ। তিনি এমন একটি বই থেকে টেক্সট ব্যবহার করেছেন বলে জানা যায়, যা ইন্টারনেটে নেই।  তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “এটি সবচেয়ে কঠিন ঘটনা ছিল।”

 একাডেমিক অভিজ্ঞতা থেকে শেরকান ডক্টরেট গবেষণাপত্র লেখার নিয়ম ও শিষ্টাচার জানতে পারেন, তবে একাডেমিক অনুসন্ধানে আগ্রহী রিপোর্টারদের জন্য তিনি এই পরামর্শ দিয়েছেন:

  • সিভি দেখুন। “কেন? কারণ, আমি যখন ডক্টরেট ডিগ্রীধারী কোনো একজনের সিভি দেখছি, যিনি রোমানিয়া রাজ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, তখন এই ভেবে অবাক হতে হয়: তাদের কি ডক্টরেট পর্যায়ে লেখাপড়ার যথেষ্ট সময় ছিল?” তিনি ব্যাখ্যা করেন। “এটি একটি খণ্ডকালীন চাকরির মতো নয়। অভিসন্দর্ভের কাজে আপনার প্রতিদিন আট থেকে ১২ ঘন্টা সময় দিতে হবে।”
  • নথিপত্রের পিছে ছুটুন। রোমানিয়ায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আইনত সব পিএইচডি গবেবষণাপত্রের একটি অনুলিপি জাতীয় গ্রন্থাগারে পাঠাতে হয়। এর মানে সেগুলো দেখা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা যেতে পারে। রোমানিয়ার কর্মকর্তারা নিয়ম বদলানোর চেষ্টা করেছিলেন। শেরকান বলেন, “তারা ভয় পেয়েছিলেন। তারা জানতেন, পরবর্তীতে তাদের ব্যাপারে খতিয়ে দেখা হতে পারে। তাই তারা জাতীয় গ্রন্থাগারে অভিসন্দর্ভগুলো পাওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন।” পরিবর্তে, ইলেকট্রনিক কপি পেতে তাঁকে একটি অনুরোধপত্র দিতে হয়েছিল, তবে অবশেষে, তিনি বুঝতে পারেন তাকে কী করতে হবে। একাডেমিক কাজে অনেক লিখিত নথির প্রমাণ থাকবেই।
  • চৌর্যবৃত্তির আলামত অনুসন্ধানে কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করুন। চৌর্যবৃত্তি যাচাই করে, এমন একটি সাইটের উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বেশিরভাগ সময় আমি গুগল ব্যবহার করতাম, তবে টার্ন ইট ইন নামের একটি অ্যাপও ব্যবহার করেছি।” তিনি হাতে কলমেও যাচাই করেন। উল্লেখযোগ্য সতর্কতাসূচক আলামতের বর্ণনা দিয়ে তিনি জানান, “আমি প্রথমেই পাদটীকায় নজর দেই। তারপর দেখি গ্রন্থপঞ্জি। এছাড়াও: অভিসন্দর্ভগুলোতে অধ্যায় ভেদে ভিন্ন ফন্ট ব্যবহৃত হয়েছে: টাইমস নিউ রোমান থেকে ক্যালিব্রি।” তিনি বলেন, কোনো একজন লেখক, অন্য জায়গা থেকে নেয়া অংশের ফন্টের সঙ্গে নিজের ফন্টের মিল রাখার ব্যাপারেও উদাসীন ছিলেন – “যা ছিল, তারা ঠিক তেমনটিই রেখে দিয়েছেন।” একটি গবেষণাপত্রে অন্তত ৮0পৃষ্ঠায় সোর্সের উল্লেখ ছিল না, অন্যদের ক্ষেত্রে বাক্যগুলো এখানে-সেখানে এলোমেলো ছিল, অথবা মৌলিক হিসেবে উপস্থাপনের উদ্দেশ্যে প্রতিশব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু বেশিরভাগ সময়, শেরকান জানান, “তারা কেবল কপি ও পেস্ট করছিলেন — এমনকি ভুলগুলোও বাদ পড়েনি। আমি এমন একটি অভিসন্দর্ভ খুঁজে পেয়েছি, যেখানে প্রথম শব্দ থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাতেই চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় নেয়া হয়েছে।”

রোমানিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সাবেক জেনারেল নিকোলাই চিউকার ডক্টরাল গবেষণাপত্রে কথিত চৌর্যবৃত্তি নিয়ে তাঁর স্টোরি – – লাল, সবুজ ও নীল রঙের-কোড ব্যবহার করে থিসিস এবং অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তাঁর পরীক্ষিত টেক্সটগুলোর মিল তুলে ধরেন, যেন পাঠক নিজেরাই মিল থাকা অংশগুলো বা যথাযথভাবে সোর্সের উল্লেখ বিহীন অংশগুলো দেখতে পারেন। একটি ক্ষেত্রে, তিনি ৩১টি অভিন্ন শব্দগুচ্ছ তুলে ধরেছেন। স্টোরির অন্যত্র সঠিকভাবে সোর্সের উল্লেখ বিহীন অনুচ্ছেদসহ বড় একটি অংশ তিনি তুলে ধরেছেন। মোট ১৩৮টির মধ্যে ৪২টি পৃষ্ঠায় চুরি করা আধেয় খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং এই স্টোরির জবাবে বলেছেন যে তার “গবেষণাপত্রটি ডক্টরেট পর্যায়ের বহু বছরের বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফল, যা তার কাজে প্রতিফলিত হয়েছে।” তিনি আরও বলেছিলেন যে তার গবেষণাপত্রটি “সে সময়ের বিদ্যমান আইনী বাধ্যবাধকতা মেনে” লেখা হয়েছিল। এএফপি’র রিপোর্টে এসেছে, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা চৌর্যবৃত্তির আরও তিনটি অভিযোগে তিনি আপত্তি জানানোর পর কারিগরি কারণে আদালত খারিজ করে দিয়েছে। কিন্তু এখন সেই রায়ই তদন্তাধীন।

উল্লেখযোগ্যভাবে, স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী রোমানিয়ান কর্মকর্তারা এই অর্জনের কারণে পদোন্নতি ও বেশি বেতন পেয়ে থাকেন। শেরকান আরও জানান, সম্ভাব্য জেনারেলেরা সাধারণভাবে কিছু কঠিন সামরিক পরীক্ষা এড়াতে একাডেমিক অর্জন ব্যবহার করতে পারেন।

শেরকান তিনটি সামরিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক তত্ত্বাবধানের চর্চা ও ব্যর্থতাকে একটি সমস্যা বলে মনে করেন, যার মধ্যে গোয়েন্দা ও জাতীয় নিরাপত্তা সার্ভিসের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও অর্ন্তভুক্ত।

Sercan investigation into Romanian Prime Minister Ciuca

এই স্লাইডে, এমিলিয়া শেরকান দেখান, তিনি কীভাবে রোমানিয়ার প্রধানমন্ত্রীর অভিসন্দর্ভে চৌর্যবৃত্তির বিভিন্ন রূপ তুলে ধরতে লাল, নীল ও সবুজ টীকা ব্যবহার করেছেন । ছবি: শেরকানের সৌজন্যে

প্রভাব

অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও জিআইজেএনের রোমানিয়া ভিত্তিক সদস্য সংস্থা আটলাসজো এরডেলির প্রতিষ্ঠাতা জোল্টান সিপোস বলেন,  এর আগে নেচার জার্নালের রিপোর্টে আসা পিএইচডিতে চৌর্যবৃত্তি কেলেঙ্কারিতে একজন প্রধানমন্ত্রীর জড়িত থাকার অভিযোগের পর শেরকানের নিবিড় রিপোর্টিং একটি পদ্ধতিগত সমস্যাকে সামনে এনেছে। 

শেরকানের কর্মপদ্ধতি প্রসঙ্গে তিনি জিআইজেএনকে বলেন, “এটি বেশ ভালোভাবে নথিবদ্ধ হয়েছে। এভাবে তিনি চৌর্যবৃত্তির গোটা নেটওয়ার্কটিকে নথিবদ্ধ করতে পেরেছেন। রোমানিয়ায় চৌর্যবৃত্তির একাধিক স্তরবিশিষ্ট বিশাল একটি ব্যবসা ছিল বা এখনো আছে।”

তিনি আরও বলেন: “রোমানিয়ায় অনেক অন্যায় হয়, তাই সাধারণ মানুষ  চায় যেন এই নারী বিষয়টিকে সামনে আনেন। তাই তিনি সেখানে একজন আইকন; একজন তারকা হয়ে উঠেছেন।”

অন্যান্য, সুদূরপ্রসারী প্রভাবও ছিল। শেরকান বলেন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা কর্মীদের পিএইচডি যাচাইয়ে মাঠে নেমেছে, এবং যাচাইকৃতদের অর্ধেকের বেশিতেই চৌর্যবৃত্তি সনাক্ত হয়েছে, ফলে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ডিগ্রী প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে, সংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিষ্ঠানের তদন্তে সন্দেহজনক চৌর্যবৃত্তির হার আরও বেশি এসেছে

তিনটি বইয়ের লেখক ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য ইয়ন রাশিউ পুরস্কার সহ কর্মজীবনে বেশ কয়েকটি পুরষ্কার পাওয়া শেরকান বলেন, ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালীদের নিয়ে প্রতিবেদনে সাত বছর কাটিয়ে দিলেও তিনি কখনো মামলার শিকার হননি। তিনি আরো বলেন, “কারণ আমি যা করি, তার সবকিছুতেই সতর্ক থাকি। একটি ভুল মানেই আমার সবকিছু ভেস্তে যাওয়া।” একজন মন্ত্রী প্রকাশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তা করেননি।

কেউ কেউ তাঁর ফলাফলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছেন যে তারা ভিন্ন নিয়ম অনুসরণ করে তাদের গবেষণা করেছেন এবং সে সময়ের একাডেমিক মানদণ্ডের প্রেক্ষিতে সরল বিশ্বাসে তাদের পিএইচডি জমা দিয়েছেন।

তবে অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রোমানিয়ান পল রাদু বলেন: “দুর্ভাগ্যবশত অযোগ্যরা ডিগ্রী পাচ্ছে, যা একটি জাতীয় রোগে পরিণত হয়েছে। শেরকান এই উপযুক্ত ক্ষেত্রটি খুঁজে পেয়েছেন, এবং খুব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিজের কাজ করেছেন।”

তিনি আরও বলেন: “তাঁর মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ক্ষমতা, যা অনুৃসন্ধানী সাংবাদিকদের থাকা উচিত। এসব ভুয়া ডিগ্রির বদৌলতে এক শ্রেণির মানুষ অভিজাত হয়ে উঠেছে। এ কারণেই তাঁর কাজটি এত গুরুত্বপূর্ণ: তাই এ ধরনের সরকারি কর্মকর্তাদের অন্তঃসারশূন্য দেখায়। মিথ্যার সহায়তায় তারা সত্যিই সেখানে পৌঁছে গেছে।

তবে সরকারের বিপরীতে দাঁড়াতে বা তাদের বিব্রত করতে সাহস লাগে।

“আপনাকে মানসিকতা বুঝতে হবে,” সিপোস বলেন। “তারা সাধারণত খুব প্রভাবশালী, ও ধনী। তারা এই পিএইচডি দিয়ে বোঝাতে চায় যে তারাও বুদ্ধিবৃত্তিক অভিজাত শ্রেণির সদস্য। এই নারী মূলত তাদের খ্যাতিতে নাড়া দিয়েছেন, আর অনেক ক্ষেত্রে তাদের কাছে অর্থ বা ক্ষমতার চেয়ে খ্যাতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি তাদের জন্য সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা।”

আর শেরকানের রিপোর্টিং কখনো বাধার মুখে না পড়লেও তিনি মৃত্যুর হুমকি ও অনলাইন হয়রানির শিকার হয়েছেন।  কয়েক দশক আগে এক সাবেক সঙ্গীর তোলা তাঁর ব্যক্তিগত ছবি অনলাইনে ফাঁস করা হয়েছিল৷ এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।

এপ্রিল মাসে, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস, ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট ও অন্যান্য কয়েকটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক সংস্থা শেরকানকে হয়রানি এবং “রোমানিয়ায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় এর প্রভাব” নিয়ে “গভীর উদ্বেগ” প্রকাশ করেছে

তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচারমূলক প্রচারণার প্রতিক্রিয়ায়, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, “জনস্বার্থ নিয়ে রিপোর্ট করা সাংবাদিকদেরকে হুমকি নয়, বরং সুরক্ষা দেওয়া ও সাধুবাদ জানানো উচিত।” পরবর্তীতে রোমানিয়ার একটি আদালত শেরকানকে দেওয়া হুমকির দায়ে দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে

সিপিজে’র ইউরোপ প্রতিনিধি আটিলা মং, জিআইজেএনকে বলেছেন, “পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে প্রভাবশালীদের মুখোশ উন্মোচন করা সাংবাদিকদের জন্য সহজ নয়, এবং তা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।”

“এমিলিয়ার ক্যারিয়ার ও এই অনুসন্ধানের দিকে নজর দেওয়া – পদ্ধতিগতভাবে বিষয়টিকে প্রকাশ্যে আনা- সম্ভবত নির্দিষ্ট মহলের কাছে তাকে অনেকটা এক নম্বর শত্রু করে তোলে,” মং বলেন৷ “একজন নারী হিসেবে, গোটা বিষয়টি নিশ্চয়ই আরও কঠিন।”

PressOne graphic showing a timeline of Sercan's plagiarism investigations.

শেরকানের একটি স্লাইডে চৌর্যবৃত্তি নিয়ে তাঁর অনেক অনুসন্ধানের একটি সময়ক্রম। ছবি: শেরকানের সৌজন্যে

কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

শেরকান বলেন, অনেকে প্রশ্ন করেন এই কাজ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ – কেন তিনি পাদটীকা ও ডক্টরাল গবেষণাপত্র পরীক্ষা করে এক দশকের সেরা সময় কাটিয়েছেন। কারণ কপিরাইট লঙ্ঘনজনিত সমস্যা বাদ দিলে, রোমানিয়ায় গবেষণা চৌর্যবৃত্তি কোনো অপরাধ নয়।

তাদেরকে তিনি বলেন: “গবেষণা চৌর্যবৃত্তি এক ধরনের চুরি: কারও চিন্তা, শব্দ, পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেখা চুরি করা… একাডেমিক পরিবেশে অন্য ব্যক্তির বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ চুরি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। এ ধরনের অপরাধ, একটি বুদ্ধিবৃত্তিক অপরাধ, বিশেষ করে একাডেমিক বৈধতা বা ডক্টরেট উপাধি পেতে চুরি করা আরও গুরুতর।”

তিনি আরও বলেন: “সত্যি কথা বলতে কী, প্রতারকদের নিয়ে আপনি একটি জাতির মৌলিক বিষয়গুলোকে ধ্বংস করতে পারেন। নৈতিকতা ও সততা তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের মধ্যে বিষয়টি আলোড়ন তুলেছে, এটি আমাদের সমাজের মূল্যবোধকে গুড়িয়ে দেয়, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

এই কেলেঙ্কারি উন্মোচন প্রক্রিয়ায় শেরকান নিজেও নির্মল আনন্দ পেয়েছেন: এমন একটি বিষয়ে নীরবে লাইব্রেরিতে কাজ করে অখ্যাত কেউ লাইমলাইটে আসতে পারে, তা কারো ভাবনায় আসেনি। অথবা, শেরকান যেমনটা বলেন: “আমার অনুসন্ধান এমন একটি বিষয়ে যে সেটি তাদের বা তাদের ভাবমূর্তির ক্ষতি সাধন করতে পারে, তা ছিল ভাবনার বাইরে।”

রাদু বলেন, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এর প্রভাব থাকবে। তিনি আরও বলেন, “জাল ডিগ্রি নিয়ে পদোন্নতির যে ‘প্রচলিত ব্যবসা’ সেটিকে তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন। এই লোকগুলো ব্যাপকভাবে, প্রকাশ্যে অপমানিত হয়েছিল। ভবিষ্যতে, মানুষ পদোন্নতির আশায় এই কাজ আর করবে না। ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যার অর্থ দাঁড়ায় কিছুটা হলেও পরিচ্ছন্ন ভবিষ্যত।”

আরও পড়ুন

শত কোটি ডলারের জালিয়াতি যেভাবে উন্মোচন করল ফাইনান্সিয়াল টাইমস

একাডেমিক-সাংবাদিক সহযোগিতা যেভাবে এগিয়ে নিচ্ছে কানাডার একটি রিপোর্টিং ল্যাব

ক্যান ক্রাউডফান্ডিং সেভ রোমানিয়া’স ইনডিপেনডেন্ট মিডিয়া?


Laura Dixonলরা ডিক্সন ব্রিটিশ ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। সহযোগী সম্পাদক হিসেবে জিআইজেএনে যোগ দেওয়ার আগে তিনি চার বছর কলম্বিয়ায় রিপোর্টিং করেছেন এবং প্যারিস ও টেক্সাসের অস্টিনে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা করেছেন। ফার্ক গেরিলা গোষ্ঠীর সঙ্গে কলম্বিয়ার ৫২ বছরের সংঘাতের অবসান নিয়ে তাঁর কাজ দ্য টাইমস, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য আটলান্টিক ও ইউএস নিউজ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

Anna Wolfe Goldsmith Prize Mississippi Today welfare corruption

কেস স্টাডি

কল্যাণ তহবিলের টাকা নিয়ে নয়ছয় যেভাবে উন্মোচিত হলো এক পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানে 

যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি রাজ্যে দারিদ্রের হার সবচেয়ে বেশি। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জনকল্যান তহবিলে টাকা দেওয়া হলেও দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে তা সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের কাছে পৌঁছায়নি। এ নিয়ে তিন বছর ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে এই আর্থিক কেলেঙ্কারি উন্মোচন করেছেন আনা উলফ। জিতেছেন গোল্ডস্মিথ পুরস্কার। পড়ুন, তাঁর এই অনুসন্ধানের নেপথ্যের গল্প।

কেস স্টাডি সংবাদ ও বিশ্লেষণ

ভ্রমণ ভোগান্তি: সীমান্ত পেরোতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের যত বাধা পাড়ি দিতে হয় 

দুর্নীতি, আর্থিক অপরাধ ও অবৈধ বাণিজ্য ক্রমেই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই এসব ঘটনা উন্মোচনের জন্য অনুসন্ধানও হতে হয় বিশ্বজোড়া। তবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা এই কাজের জন্য এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে নানান সমস্যার সম্মুখীন হন। এই বাধাগুলো যেমন অপ্রত্যাশিত, তেমনি স্বল্প আলোচিত। পড়ুন, তেমন কিছু অভিজ্ঞতার গল্প এবং এসব ভোগান্তি এড়ানোর কিছু পরামর্শ।

কেস স্টাডি পদ্ধতি সংবাদ ও বিশ্লেষণ

প্রশ্নোত্তর: ওসিসিআরপির চেক প্রতিবেদক পাভলা হলকোভা 

সংঘবদ্ধ অপরাধ, সরকারী দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধান করার কারণে প্রায়ই হুমকির মুখে পড়েন চেক রিপাবলিকের অনুসন্ধানী সাংবাদিক পাভলা হলকোভা। তা সত্ত্বেও তিনি চালিয়ে গেছেন এসব অনুসন্ধান। এবং জিতেছেন অসংখ্য পুরস্কার। এই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন তাঁর অনুপ্রেরণা, চ্যালেঞ্জ, ও শিক্ষার কথা। পাশাপাশি নতুন অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্যও দিয়েছেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।

Abandoned Olympic Games ski jump, Cortina, Italy

কেস স্টাডি সংবাদ ও বিশ্লেষণ

অলিম্পিক নিয়ে ৮টি অনুসন্ধান

২০২২ সালের অলিম্পিক গেমস শেষ হয়েছে। কিন্তু তাই বলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ক্রীড়া উৎসব নিয়ে অনুসন্ধানের সুযোগ কি শেষ হয়ে গেছে? মোটেও তা নয়। এখানে আটটি উদাহরণ পাবেন, যা শুধু অলিম্পিক নয়, খেলাধুলার যে কোনো বড় আসর নিয়েই অনুসন্ধানে আগ্রহী করে তুলবে আপনাকে।