প্রবেশগম্যতা সেটিংস

Olof Lundh, a reporter for TV4, who has investigated a series of stories from the world of football, speaks at GIJC23. Image: Heino Ollin for GIJN

লেখাপত্র

বিষয়

ক্রীড়াজগত নিয়ে সাংবাদিকদের যে কারণে অনুসন্ধান করা উচিৎ

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

১৩তম গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে (জিআইজেসি২৩) ড্যানিশ অনুসন্ধানী সাংবাদিক ইয়েপ্পা লরসেন বলেন, “অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে খেলাকে সবসময়ই খানিকটা কম গুরুত্ব দেওয়া হয়”। অথচ অনায়াসে এ গল্পগুলোকে তুলে ধরা সম্ভব। তাছাড়া ক্ষেত্রটি ঘিরে কাজ করাটাও খুব সহজ কারণ কম সংখ্যক লোকই এদিকে নজর দেয়।”

ডেনিশ সংবাদপত্র পলিটিকেনের হয়ে কাজ করেন লরসেন। তিনি, সুইডিশ রেডিওর রিপোর্টার এমেলি রোজেন এবং সুইডিশ টিভিফোরের কলামিস্ট, লেখক ও রিপোর্টার ওলোফ লুন্ড সম্মেলনের একটি প্যানেলে কথা বলেন। এই তিন স্ক্যান্ডিনেভিয় সাংবাদিক তাদের অনুসন্ধান সম্পর্কে পর্দার আড়ালের অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরেন। তার মধ্যে যেমন প্রতিদিন স্টেরয়েড নেওয়ার গল্প আছে, তেমন রয়েছে অলিম্পিকের ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের মৃত্যু এবং ফুটবল ঘিরে আর্থিক দুর্নীতিও ।

যদিও খেলাধুলার এ জগতে প্রবেশের প্রচেষ্টা খানিকটা অসাধ্য বলে মনে হতে পারে, তবে সবাই এ বিষয়ে একমত যে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য তা উন্মোচনের কোনো না কোনো উপায় রয়েছে। যেমন, কাগুজে প্রমাণ সংগ্রহ বা মানব উৎস। তাই অনুসন্ধানের বিষয় হিসাবে খেলাধুলাকে উপেক্ষা করা উচিত নয়, বলেন লুন্ড। তিনি আরো যোগ করেন, ক্রীড়াজগতের গল্পগুলো রাজনীতি, সামাজিক সমস্যা এবং স্বাস্থ্যের সঙ্গে সংযুক্ত; এখানে প্রচুর অর্থকড়িও জড়িত—  যা সাংবাদিকদের এ জগৎ নিয়ে কাজের একাধিক রাস্তা দেখায়।

যেভাবে শুরু করতে পারেন

লুন্ড বলেন, ক্রীড়াজগতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা কাজ করে এমন মানুষদের সঙ্গে কথা বলুন— ক্রীড়াবিদ, এজেন্ট, ডাক্তার—  তারা আপনাকে ভালো দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। প্রকৃত গল্পগুলো বলার জন্য ক্লাব সদস্য বা সমর্থকেরা ক্রীড়া সংস্থাগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে সহযোগিতা করতে পারেন।

অভিজাত অ্যাথলেটিকদের মাদক গ্রহণ, যৌন নিপীড়ন ও সন্দেহজনক হত্যার ঘটনা নিয়ে রোজেনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো “লোপার্করিগেট” বা “দ্য রানিং ওয়ার” (চলমান যুদ্ধ) শিরোনামে পডকাস্টের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। পডকাস্টটি তৈরি করা হয় দশ হাজার মিটারের বিশ্ব রেকর্ডধারী কেনিয়ার প্রাক্তন দৌড়বিদ অ্যাগনেস তিরোপ এবং তার সতীর্থ ও একই শহরের বাসিন্দা ডামারিস মুথি মুতুয়ার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তিরোপের মামলা নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে, রোজেন নিয়ন্ত্রণ ও শোষণের কাহিনী খুঁজে পান।

“যারা বছরের পর বছর ধরে নারী অ্যাথলেট অ্যাগনেসকে পুঁজি করে অর্থ উপার্জন করতো— যেমন তার স্পনসর, তার এজেন্ট—  তারা কতটা জানতো এবং কী করেছিল? তাদের কাছে আমি এই প্রশ্নগুলো রেখেছি,” বলেন রোজেন।

রোজেন বলেন, অনুসন্ধানের সময় সূত্রের সঙ্গে তিনি একাধিকবার আলাপ করেছেন, তবে প্রথম আলাপচারিতা ছিল সম্পর্কের ভিত গড়ার। কথা বলার সময় সোর্সেরা যে বিষয়গুলোর ওপর জোর দেন, তিনি তা নোট করেন এবং পরবর্তীতে তা ফলোআপ করেন যেন তারা বুঝতে পারে তিনি তাদের কথাগুলো গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন; এভাবে তিনি তাদের কাছে আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন।

ক্ষেত্র সম্পর্কে জানা

যে সব সাংবাদিকের ক্রীড়াজগৎ নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই, রোজেন তাদের ক্ষেত্রটি সম্পর্কে বোঝাপড়া তৈরির জন্য শুরুতে ছোট বিষয় ঘিরে অনুসন্ধানের পরামর্শ দেন। রোজেন – যিনি নিজেও কিন্তু একজন ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন না – বলেন যে, “বহিরাগত” তকমাটি বরং সুবিধা তৈরি করে দিতে পারে, আর কাজের ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সরবরাহ করে। যেমন সোর্সদের কেউ কেউ বরং এ জন্য তাকে স্বাগত জানিয়েছে যে, তিনি ক্রীড়া সাংবাদিকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না। আলাপচারিতার একদম শুরুতে তাই সোর্সদের বলতেন যে, খেলা সংক্রান্ত বিশেষ কোনো পরিভাষা তিনি যদি বুঝতে সক্ষম না হন, তারা যেন সেটি শুধরে দেন। এভাবে আস্থা গড়ে ওঠে এবং সোর্সরাও মনে করে যে আপনি তাদের বিশেষজ্ঞ হিসেবে মূল্যায়ন করছেন।

তবে এর উল্টো দিকটি হচ্ছে ক্লাব, ক্রীড়া সংগঠন কিংবা কাতার বিশ্বকাপে মানবাধিকার লঙ্ঘনবিষয়ক অনুসন্ধান শেষ করে খেলার রোজকার প্রতিবেদন তৈরিতে ফিরে আসা। ফিরে এসে, নিজ কর্মস্থল, একটি বাণিজ্যিক সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের হয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলের ম্যাচ কভার করাটা তার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল বলে জানান লুন্ড।

সুইডিশ রেডিওর প্রতিবেদক এমেলি রোজেন বলেন, তিনি দেখেছেন ক্রীড়াঙ্গনে তার “বহিরাগত” তকমাটি তাকে খানিকটা বাড়তি সুবিধা এনে দিতে সক্ষম। ছবি: জিআইজেএন-এর জন্য হেইনো ওলিন

দলীয় সোর্সের সঙ্গে আলাপ

খেলার মধ্যে বিশেষ করে ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবল লিগগুলো নিয়ে কাজ করা খুব কঠিন হতে পারে বলে একমত হন প্যানেলিস্টরা। “ফুটবলে সোর্স তৈরি করা খুব কঠিন, কারণ খেলোয়াড়দের কাছে খুব সহজে পৌঁছানো যায় না,” বলেন লরসেন। যদিও এজেন্টরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের নিজ স্বার্থ সুরক্ষায় মনযোগী থাকে, তবে তারা তথ্যের ভাল উৎস হতে পারে এবং তাদের দেখা অশোভন চর্চাগুলো সম্পর্কে আপনাকে বলে অনুসন্ধান সম্পর্কিত পরামর্শ দিতে পারে।

ধৈর্য ধরুন: এ ধরনের একটি সুরক্ষিত পরিবেশে সোর্স অনুসন্ধানে সময় লাগতে পারে, এবং কখনও কখনও আপনার দীর্ঘদিনের সোর্স “খারাপ লোক” হিসেবেও আখ্যায়িত হতে পারে, লুন্ড যোগ করেন।

লরসেন বলেন, ফুটবল-বিষয়ক অনুসন্ধানের সময়, সোশ্যাল মিডিয়া দরকারী লিড সরবরাহ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ডেনমার্কের ক্লাবগুলো এজেন্টদের নিয়োগ দেয় যেন তারা খেলোয়াড়দের বদলি চুক্তির সময় তাদের অতিরিক্ত ট্যাক্স দেওয়া থেকে বাঁচাতে পারে। এক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলোর মাধ্যমে আপনি দেখতে পারবেন যে, কোন খেলোয়াড়ের সঙ্গে কোন এজেন্টের সংযোগ রয়েছে।

 চিন্তা করুন আন্তর্জাতিকভাবে

নিজেকে অনুপ্রেরণা যোগাতে, প্রতিবেশী দেশগুলোতে ক্রীড়াজগত ঘিরে কী ধরনের অনুসন্ধান হচ্ছে তা দেখুন —  চিন্তা করুন যে, আপনার দেশের জাতীয় ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার জন্য আপনি ঠিক একই ধরনের কাজ করতে পারেন কিনা? ভাবুন আন্তর্জাতিক পরিসর ঘিরেও: খেলাধুলা একটি আন্তঃসীমান্ত ঘটনা, যেখানে আন্তর্জাতিক সংস্থা, ব্র্যান্ড এবং জনপ্রিয়তা জড়িত, বলেন লরসেন। বিভিন্ন অঞ্চলের সাংবাদিকদের সঙ্গে কাজ আপনাকে মূল্যবান লিড খুঁজে পেতে এবং ব্যাপক পরিসরে সহযোগী সোর্সগুলোর কাছে পৌঁছতে সহায়তা করতে পারে।

লরসেন তুলে ধরেন পলিটিকেনের একটি দল কীভাবে ডেনমার্কে প্রতিদিন স্টেরয়েড ব্যবহার এবং মাদকের অনলাইন মার্কেটপ্লেসের ড্যানিশ মালিকদের নিয়ে অনুসন্ধান করেছে। এর জন্য সূত্র খুঁজতে তাদের ভারত পর্যন্ত যেতে হয়। কেননা ড্যানিশ কাস্টমস অফিসারদের জব্দ করা মাদকগুলোতে ঘুরেফিরে বারবার মুম্বাইয়ের একটি ঠিকানা আসছিল। এ অনুসন্ধানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎস থেকে একাধিক নথি জোগাড় করতে হয়েছে; গবেষণার ধারাবাহিকতা রাখতে লরসেন অনুসন্ধান কার্যক্রমকে একটি টাইমলাইন বা স্প্রেডশীটে টুকে রাখার পরামর্শ দেন এবং টাইমলাইনে প্রত্যেকটি ঘটনার সোর্স লিংক যুক্ত করতে বলেন।

নথি, সংগ্রহ করা কঠিন কিন্তু অমূল্য

সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নথি জোগাড় করা। খেলাধুলা, বিশেষ করে ফুটবলে কোনো ধরনের স্বচ্ছতা নেই, বলেন লুন্ড: “আমি সুইডিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে গিয়ে দেখতে আগ্রহী যে তারা ভ্রমণ বাবদ কী পরিমাণ অর্থ প্রদান করে, কিন্তু কাজটি করা মূলত অসম্ভব।”

আবারো বলছি, বড় কোনো ঘটনা উন্মোচনের জন্য সাংবাদিকদের ভীষণ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হয়: ফিফায় দুর্নীতির তদন্তের সময় কারা কারা ঘুষ নিয়েছিলেন— এ তালিকার জন্য ব্রিটিশ অনুসন্ধানী প্রতিবেদক অ্যান্ড্রু জেনিংসকে দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছিল, বলেন লুন্ড।

নিরীক্ষক বা হিসাবরক্ষকদের রেকর্ড, যাই হোক না কেন, এখনো খেলাধুলার ব্যবসা-সম্পর্কিত দিকগুলোর জন্য নথির সূত্র ধরে খোঁজা অমূল্য বলে প্রমাণিত হতে পারে। লুন্ডের অনুসন্ধানে অর্থ প্রবাহ অনুসরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। তার অনুসন্ধানের মধ্যে ছিল, কেন একটি সুইডিশ ফুটবল ক্লাব একজন খেলোয়াড়কে অতিরিক্ত ১ মিলিয়ন ক্রাউন (আনুমানিক ৯১ হাজার ২০০ ইউএসডলার) প্রদান করেছে। পাশাপাশি উয়েফা ও ফিফার হয়ে কাজের সময় রেফারিদের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধান চালানো হয় ।

এক্ষেত্রে, রোজেনকে অ্যাথলেট সোর্সের পক্ষ থেকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি প্রদান করা হয়, যা তাকে বিভিন্ন নথি নেড়েচেড়ে দেখার অনুমতি এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার সংগ্রহে সহায়তা করে।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

BBC Africa Eye undercover investigation codeine cough syrup black market

পদ্ধতি পরামর্শ ও টুল

আন্ডারকভার রিপোর্টিং? আফ্রিকার অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু পরামর্শ

আন্ডারকভার রিপোর্টিং কৌশলগুলো কীভাবে কাজে লাগাবেন তা আরও ভালভাবে তুলে ধরার জন্য জিআইজেএন কথা বলেছে আফ্রিকার অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সঙ্গে। আন্ডারকভার রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে এই সাংবাদিকেরা যুগান্তকারী সব প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।

post office boxes, shell companies

পরামর্শ ও টুল

শেল কোম্পানির গোপন মালিকদের যেভাবে খুঁজে বের করবেন

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য শেল কোম্পানি ও সেগুলোর প্রকৃত মালিকদের পরিচয় খুঁজে বের করা বেশ কঠিন হতে পারে। তবে শক্তিশালী কিছু টুল রয়েছে যার সাহায্যে জটিল এই ক্ষেত্রে নতুন আসা সাংবাদিকেরাও গোপনে অবৈধ সম্পদ লুকোনো ব্যক্তিদের পদচিহ্ন খুঁজে বের করতে পারেন।

পরামর্শ ও টুল

আবাসন থেকে ঘোড়দৌড়: বিশ্বব্যাপী গোপন সম্পদ ঘিরে অনুসন্ধান

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য গোপন সম্পদের উৎস খোঁজার দক্ষতা থাকা জরুরী। অর্থের গতিপথ ধরে খুঁজতে খুঁজতে সাংবাদিকেরা অনেক সময় আবাসন, বিমান, ইয়ট, শিল্পকর্ম, এমনকি ঘোড়দৌড়েও গোপন সম্পদের সন্ধান পান। 

পরামর্শ ও টুল

জাহাজ ও বিমানের গতিপথ অনুসরণ: বিশেষজ্ঞ পরামর্শ

সরবরাহ চেইন, চোরাই পণ্য পাচার, পরিবেশগত অপরাধ, আর্থিক দুর্নীতি… ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানের সময় জাহাজ ও বিমানের গতিপথ অনুসরণ করার প্রয়োজন হতে পারে। এই লেখায় পাবেন এ সংক্রান্ত কিছু উপকারী রিসোর্স ও পরামর্শ।