Oil leak from Ship , Oil spill pollution polluted water surface water pollution as a result of human activities. industrial chemical contamination. oil spill at sea. petroleum products. Insurance
কীভাবে খুঁজবেন, পরিবেশের ক্ষতির পেছনে কে বা কারা জড়িত?
অবৈধভাবে মাছ ধরা, সংরক্ষিত এলাকায় বন উজাড়, বা লাইসেন্স ছাড়া তেল উত্তোলন— পরিবেশ নিয়ে করা এ ধরনের প্রতিবেদনে প্রায়ই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের দরুন যে ক্ষয়ক্ষতি তা উঠে আসে।
পুলিৎজার সেন্টারের রিপোর্টিং নেটওয়ার্ক রেইনফরেস্ট ইনভেস্টিগেশন নেটওয়ার্ক এবং ওশান রিপোর্টিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা শুধুমাত্র অবৈধ কর্মকাণ্ডগুলোই নয়, এ থেকে কারা লাভবান হচ্ছে কিংবা কী ধরনের প্রতিষ্ঠান জড়িত তাও উন্মোচন করতে চাই।
যেমন, সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে অবৈধভাবে কাঠ সংগ্রহের প্রতিবেদন তৈরির সময় আমরা সাংবাদিকদের বিভিন্ন বিষয় শনাক্তে সহযোগিতা করি। যেমন, জমির মালিক কে? কাঠগুলো কারা কাটছে , কারা বিক্রি করছে? রপ্তানির সঙ্গে কারা জড়িত? আসবাবপত্র তৈরি করছে কারা? কে ওই আসবাবপত্র আমদানি করছে এবং শেষ পর্যন্ত ভোক্তার কাছে কে বা কারা পৌঁছে দিচ্ছে?
পরিবেশ সম্পর্কিত যে কোন অবৈধ কাজের সঙ্গে অনেক বেশি আর্থিক সংশ্লেষ থাকে। আর তা উন্মোচনের লক্ষ্য নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চল, আইন এবং প্রতিষ্ঠানের ওপর ভিত্তি করে আমরা বেশকিছু কৌশল খুঁজে বের করেছি।
এর মুনাফা কোথায় যায়— তা অনুসরণের পাশাপাশি পরিবেশগত অপরাধকে পাশ কাটানো যায় এমন আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কেও আমরা বুঝতে চাই।
এ ধরনের প্রতিবেদন তৈরি করতে এসে আমি শিখেছি যে সংঘবদ্ধ অপরাধের ওপর আলো ফেলার মাধ্যমে আপনি মূলত একজন অপরাধীকে সবার সামনে নিয়ে আসেন। শেষ পর্যন্ত হয়তো তিনি গ্রেপ্তার হন।
তবে সেই শূন্যস্থান কিন্তু পূরণ হয়ে যায়। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির জায়গায় আর কেউ আসে। তবে সরকার আর বিচার ব্যবস্থা কীভাবে অপরাধীদের সুযোগ করে দিচ্ছে— আপনি যদি এ ধরনের পদ্ধতিগত সমস্যাগুলোকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারেন, তাহলে আপনার প্রতিবেদন অনেক বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
পরিবেশভিত্তিক প্রতিবেদন তৈরির উদ্দেশ্য হলো সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো সুবিধাভোগীদের গোটা সাপ্লাই চেইনকে (সরবরাহ শৃঙ্খল) কীভাবে সুযোগ করে দিচ্ছে তা উন্মোচন করা।
পদ্ধতিগতভাবে তৈরি এ সিরিজ প্রতিবেদনে, অর্থ প্রবাহের মূল তিন উৎস (মালিকানা, বিনিয়োগ ও সাপ্লাই চেইন) এবং এর নেপথ্যে কারা কলকাঠি নাড়ছে, তা উন্মোচনের বিভিন্ন অনুসন্ধানী কৌশল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এখানে আমরা সৃজনশীল উপায়ে গবেষণা করে কিছু উদাহরণ তুলে ধরেছি। যেগুলো আমাদের বাধা অতিক্রমে সাহায্য করেছে।
কর্পোরেট গবেষণাকে আমরা যেভাবে কাজে লাগাই, এ সম্পর্কিত কিছু উদাহরণ
রেইনফরেস্ট ইনভেস্টিগেশন নেটওয়ার্কের ফেলো দিদিয়ের মাকাল কঙ্গো অববাহিকা জুড়ে ১০টি খনি কোম্পানির একটি তালিকা সংগ্রহ করেন। যেগুলো কঙ্গোর হাউত-কাটাঙ্গা এবং লুয়ালাবা অঞ্চলে খনির কার্যক্রম চালানোর জন্য লাইসেন্স প্রাপ্ত। শুরুতে, আমরা তাদের নিবন্ধন নম্বর, কোম্পানি শুরুর তারিখ, ঠিকানা এবং ব্যবস্থাপনা ও মালিকানার তথ্য খুঁজে বের করি।
ঠিক কতদিন ধরে খনন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে তা নিশ্চিত হতে কোম্পানি প্রতিষ্ঠার তারিখটি কিন্তু বেশ কাজে লাগে। তাই প্রতিটি কোম্পানির ব্যবস্থাপক ও মালিকদের তথ্য নেড়েচেড়ে আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযোগ বের করার চেষ্টা করি। একটা সময় দেখি যে, এদের মধ্যে কারও কারও নামে ইউরোপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। একটি যেমন সুইস মাইনিং জায়ান্ট গ্লেনকোরের কানাডিয়ান শাখার মালিকানাধীন কোম্পানি।
ওশান রিপোর্টিং নেটওয়ার্কের ফেলো রেজিন উইনথার পলসেন অনুসন্ধান চালান ইউরোপীয় আইন অনুসারে সমুদ্র থেকে মৎস্য আহরণ কোটা নিয়ে। কোটা অনুসারে একটি প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট এলাকা থেকে নির্দিষ্ট প্রজাতির মাছ ধরার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি, কোটা বন্টন রীতিমতো ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। যেখানে মুষ্টিমেয় কয়েকটি কোম্পানি অনেকগুলো কোটা হাতিয়ে নিয়ে ব্যবসা করছে।
এ পর্যায়ে আমরা কোম্পানির সহযোগী, মালিক এবং ব্যবসায়িক অংশীদারদের খুঁজে বের করতে কর্পোরেট ডেটাবেস ব্যবহার করি। এভাবে আমরা ধারণা পাই কোম্পানিগুলো কীভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এছাড়া আমরা ট্রেড ডেটাবেস ব্যবহার করে দেখেছি যে কীভাবে তারা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে মাছ কেনা-বেচা করছে।
কর্পোরেট গবেষণা:
পরিবেশের ক্ষতি করছে এমন প্রতিষ্ঠান বা জমির মালিক কে? শুরুতেই আমরা তা খুঁজে বের করতে চেষ্টা করি। কিংবা তার নামে আর কোনো সম্পদ আছে কিনা— যেমন, উড়োজাহাজ বা ট্রাক। কোম্পানির থেকে অনুসন্ধান শুরু করলেও ধরন অনুযায়ী আমাদের প্রতিটিকে আলাদা করতে হবে।
- শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি: শেয়ারহোল্ডার এবং আর্থিক তথ্য পাওয়া যাবে স্টক এক্সচেঞ্জ বা নিয়ন্ত্রকসংস্থার ওয়েবসাইটে। এছাড়া কোম্পানির নিজস্ব ওয়েবসাইটে। এ তথ্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে শেয়ারহোল্ডারদের ধারণা দেওয়া হয়। তাই কোম্পানির সব রিপোর্ট (এমনকি যখন অডিট করা হয়) চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যাবে না।
- রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি— নাম থেকেই বোঝা যায় এটি রাষ্ট্রের মালিকানাধীন। তবে রাষ্ট্রই এখানে একমাত্র অংশীদার নয়। তাই আমরা যে পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাইভেট কোম্পানির মালিকদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো, এক্ষেত্রে তা কাজে লাগাতে পারি।
- প্রাইভেট কোম্পানির নিজস্ব মালিকানা কাঠামো রয়েছে। এদের ধরন ও আকার অনুযায়ী তথ্য নথিভুক্ত ও ফাইল করার নিয়ম রয়েছে। আর এর ওপর নির্ভর করে ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আপনি কতটা তথ্য (যেমন মালিকানা) পাবেন। নিচের ছবিতে আপনি বিভিন্ন ধরনের কোম্পানি সম্পর্কে জানতে পারবেন। তবে আমরা মালিকানা সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে বের করতে একটি সাধারণ পদ্ধতি ব্যবহার করব।
অনেক সময় কোম্পানির আর্থিক সত্তা থেকে নিজেকে আলাদা করার জন্য মালিকেরা এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গঠন করে। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি বন্ধ হয়ে যায় বা ব্যবসা গুটিয়ে নেয়, মালিকেরা তখন কোম্পানির ঋণের জন্য দায়বদ্ধ হতে চান না। যেমন ঋণ, আবাসন এজেন্ট, পণ্য সরবরাহকারী এবং কর্মচারীদের বেতন বাবদ কোম্পানিটি ব্যাংকের কাছে অর্থ দাবী করতে পারে।
এভাবেই সীমিত দায়বদ্ধতার ধারণাটি আসে: মালিকেরা প্রতিষ্ঠানে যে পরিমাণ অর্থ রাখেন শুধুমাত্র তার জন্যই দায়বদ্ধ।
প্রাইভেট কোম্পানির ধরন:
- লিমিটেড কোম্পানি
এটি সবচেয়ে প্রচলিত প্রাইভেট কোম্পানি, যেখানে মালিকদের দায়বদ্ধতা সীমিত ৷ যুক্তরাজ্যে এর নাম লিমিটেড (Limited কিংবা Ltd), জার্মানিতে জিএমবিএইচ (GmbH), ফ্রান্সে এসএআরএল (Sarl), বেলজিয়ামে বিভিবিএ (BVBA), নেদারল্যান্ডসে বিভি (BV) এবং যুক্তরাষ্ট্রে এলএলসি (LLC)।
- অংশীদারিত্ব
অংশীদাররা লাভ ভাগ করে, তবে লোকসানের জন্যও দায়ী। এর বেশিরভাগই হচ্ছে হিসাবরক্ষণ কিংবা আইনি প্রতিষ্ঠান।
- সীমিত দায়বদ্ধতা
এ ধরনের কোম্পানিতে অংশীদারদের দায় লিমিটেড কোম্পানির মতোই সীমিত। যার বেশিরভাগই হেজ ফান্ড এবং প্রাইভেট ইক্যুইটি সংস্থা।
- সীমিত অংশীদারিত্ব
নেদারল্যান্ডসে এ ধরনের কোম্পানি সিভি (CV) নামে পরিচিত। অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান দেশটিতে সীমিত অংশীদারিত্ব কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। তাছাড়া কোম্পানির অংশীদারদের (সাবসিডিয়ারি কোম্পানি) অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যদি অন্য কোনো দেশে পরিচালিত হয়, সেক্ষেত্রে তাদের কর দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও থাকে না।
শেয়ারহোল্ডিং এবং সাবসিডিয়ারি কোম্পানি
শেয়ারহোল্ডিং কোম্পানির একমাত্র কাজ হচ্ছে সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মালিক হওয়া। একদল লোক মিলে যখন একাধিক ব্যবসা পরিচালনা করে, তখন এ ধরনের কোম্পানি গঠন করা হয়। X নামের কোনো ব্যক্তি A নামের কোনো শেয়ারহোল্ডিং কোম্পানির মালিক হতে পারে। A নামক শেয়ারহোল্ডিং কোম্পানিটি হয়তো B এবং C নামক দুটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের মালিক। অনেক সময় কর এড়াতে সাবসিডিয়ারি কোম্পানির সব মুনাফা শেয়ারহোল্ডিং কোম্পানিতে রাখা হয়। কেননা ওই শেয়ারহোল্ডিং কোম্পানিতে কর ছাড়ের সুবিধা রয়েছে। কখনও কখনও মালিকানা সম্পর্কিত তথ্য গোপন রাখতে শেয়ারহোল্ডিং কোম্পানি গঠন করা হয়।
-
অফশোর/কাগুজে কোম্পানি
এ কোম্পানিগুলো মূলত কোনো ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে না। কর ছাড় পেতে গঠন করা হয়। যেমন পানামা, বাহামা, লুক্সেমবার্গ, জার্সি এবং নেদারল্যান্ডসে এ ধরনের কোম্পানি খোলার জন্য অনুকূল আইনি কাঠামো রয়েছে। তবে গোলমেলে ব্যাপারটা হচ্ছে, যে সব কোম্পানি অফশোর কোম্পানি খুলতে সহায়তা করে তাদেরও প্রায়ই অফশোর কোম্পানি নামেই ডাকা হয়।
-
ট্রাস্ট
ব্যক্তি ও তার সম্পদের মধ্যে আইনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গঠন করা হয় ট্রাস্ট। যেখানে একজন ট্রাস্টির নামে (প্রকৃত মালিক নয়) সম্পদ থাকে। তবে প্রকৃত মালিকই (সুবিধাভোগী) সমস্ত সম্পদ ভোগ করেন। কর প্রদান না করা আর সম্পদ লুকানোর মতো ঝক্কি এড়াতে এ পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে, কারণ ট্রাস্টের হিসাব সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা নেই।
-
ফাউন্ডেশন এবং অলাভজনক কোম্পানি
শেয়ারহোল্ডিং কোম্পানি কখনও কখনও ফাউন্ডেশন বা অলাভজনক সত্তাও হিসেবে গঠিত হতে পারে। অনেক দেশে কর দিতে হয় না কিন্তু আর্থিক তথ্য নথিভুক্ত করতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে, আইআরএস ওয়েবসাইট থেকে এ ধরনের কোম্পানির তথ্য আপনি পেতে পারেন।
প্রাইভেট কোম্পানির তথ্য খুঁজতে পুলিৎজার সেন্টার রিসার্চ টিম কোম্পানির নিবন্ধনের পাশাপাশি ব্যবহার করেছে কোম্পানির আন্তর্জাতিক তথ্য ডেটাবেস সায়ারি। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কোম্পানির মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য (বেশিরভাগ) পাওয়ার ক্ষেত্রে যা কার্যকর একটি ডেটাবেস। বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠানের নথি এবং ডেটা স্ক্র্যাপ করে এ ডেটাবেসটি তৈরি করা হয়েছে।
একজন ব্যবস্থাপক বা মালিক কয়টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত (কিংবা অন্য কোনো দেশে তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম আছে কিনা) এমন সব তথ্য দিয়ে এ ধরনের ডেটাবেস আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক নেটওয়ার্কের সংযোগ উন্মোচন করে থাকে। এছাড়াও এখানে ব্যক্তির নাম দিয়ে আপনি খুঁজে দেখতে পারেন যে কী ধরনের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি যুক্ত। যেখানে বেশিরভাগ রেজিস্ট্রিতে কোম্পানির নাম ছাড়া আর কোনোভাবে অনুসন্ধানের উপায় থাকে না। আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে নিয়ন্ত্রক সংস্থার লোকেরা অনেক সময় কোম্পানির তথ্য জানতে এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে এ ডেটাবেসগুলো ব্যবহার করেন।
তবে আপনার যখন এই ধরনের ডেটাবেস ব্যবহারের অনুমতি থাকে না, তখন কোম্পানির অস্তিত্ব বা আইনি নাম যাচাই দিয়ে শুরু করুন। কাজটি করতে পারেন ফ্রি ডেটাবেস ওপেনকর্পোরেটস ব্যবহার করে। এখানে আপনি কোম্পানির ঠিকানা, নিবন্ধনের তারিখ এবং প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক তথ্য পাবেন। কোম্পানিটি যে আইনে নিবন্ধিত হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে পরিচালক বা মালিককেও খুঁজে পেতে পারেন। “অফিসার” শব্দটি লিখে ব্যক্তির নাম দিয়েও খুঁজতে (সার্চ) পারেন। যদিও ওই ব্যক্তি ঠিক কতগুলো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত, সে সম্পর্কিত তথ্য আপনি এখানে খুঁজে পাবেন না।
পরবর্তী ধাপে কোম্পানির রেজিস্ট্রিতে যান। প্রতিটি দেশে (যে দেশ থেকে আয় আসে, রাজ্য বা প্রদেশ) অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠানকে আগে নিবন্ধিত হতে হবে। অনেক দেশে নিবন্ধন সম্পর্কিত তথ্য অনলাইনে পাওয়া যায় (এবং ওপেনকর্পোরেটসে হাইপারলিঙ্কগুলোতে কোম্পানির তথ্যে দেখানো হয়)। আপনি কী পরিমাণ তথ্য পাবেন, কীভাবে অনুসন্ধান করবেন এবং আপনার কত খরচ হবে তা ওই দেশের ওপর নির্ভর করে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কোম্পানির আকার।
যুক্তরাজ্যে যেমন কোম্পানি ভেদে রেজিস্ট্রির আলাদা নিয়ম রয়েছে:
- ১০ দশমিক ২ মিলিয়ন পাউন্ড (১২ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বা এর কম টার্নওভার হয় এমন কোম্পানির জন্য আলাদা নিয়ম।
- ব্যালেন্স শিট ৫ দশমিক ১ মিলিয়ন পাউন্ড (৬ দশমিক ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বা তার কম— এ ক্ষেত্রেও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে।
- কিংবা কর্মচারী সংখ্যা যদি ৫০ জন বা এ রকম হয় সেক্ষেত্রেও নিয়মগুলো আলাদা হয়ে থাকে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো সংক্ষিপ্ত আর্থিক বিবরণী জমা দিতে পারে, কিংবা অডিট থেকে অব্যাহতি পাওয়ার আবেদনও করতে পারে। এছাড়া কোম্পানির পরিচালকের আর্থিক বিবরণীও জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
যুক্তরাজ্য ও বেলজিয়ামে এ ধরনের কিছু রেজিস্ট্রি রয়েছে, যেখানে কোনো ধরনের অর্থ খরচ ছাড়াই আপনি মালিকানা তথ্য এবং মূল নথি পেয়ে যাবেন। তথ্য প্রাপ্তির জন্য এর থেকে ভালো কিছু আর হয় না। আপনি ওয়েবসাইটের সাজানো ডেটা ব্যবহার করতে পারেন বা মূল নথিগুলোও পর্যালোচনা করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ নথির মধ্যে যেমন প্রতিষ্ঠানের তথ্য, বার্ষিক (বা সম্পূর্ণ) বিবরণী এবং চূড়ান্ত বিবৃতি রয়েছে। নথিতে দেশ ভেদে আলাদা তথ্য পাবেন। জাতীয় কিছু রেজিস্ট্রি ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ খানিকটা কঠিন হতে পারে। তবে সময় নিয়ে ওয়েবসাইট ঘেঁটে তথ্য সংগ্রহ সবসময়ই ফলপ্রসু।
কিছু কিছু দেশের অনলাইন কোনো ডেটাবেস নেই, আবার কিছু দেশে আছে। তবে তারা হয়তো সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো আপনাকে কেবল নাম যাচাইয়ের অনুমতি দিবে। বেশিরভাগ অনলাইন রেজিস্ট্রির বেলায় অর্থ দিয়ে ডাউনলোড বা সাবস্ক্রিপশনের বাধ্যবাধ্যকতা থাকে। যা নির্ভর করে কী ধরনের তথ্য রয়েছে তার ওপর। যেমন, অনলাইনে যদি মালিকানার তথ্য অন্তর্ভুক্ত না থাকে—নিউইয়র্কের রেজিস্ট্রিতে যেমন এ ধরনের তথ্য থাকে না— আপনি তখন মূল নথির অনুরোধ জানিয়ে আপনার ভাগ্য পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। কোথাও আবার প্রতিষ্ঠাতাদের নাম উল্লেখ করা হয় (নিউইয়র্ক রেজিস্ট্রিতে আপনি এটা পাবেন না)।
তবে যদি কোনো রেজিস্ট্রি ডেটাবেস না থাকে, তাহলেও কিন্তু বিকল্প একটি পথ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় বা ব্যবসায়িক গেজেট খুঁজে দেখুন। অনেক দেশ ধারাবাহিকভাবে এগুলো প্রকাশ করে, যেখানে কোম্পানির নিবন্ধনের পাশাপাশি মালিকানা পরিবর্তন সম্পর্কিত তথ্যও লিপিবদ্ধ করা হয়।
ধরুন, যে আইনে কোম্পানি নিবন্ধিত হয়েছে সেখানে অনলাইন গেজেটের রেজিস্ট্রি নেই। এ ক্ষেত্রে ফাঁস হওয়া তথ্য দিয়ে আপনি আপনার ভাগ্য মেপে দেখতে পারেন। আর তার জন্য আপনার কোনো পয়সা খরচও করতে হবে না। যেমন, আইসিআইজের অফশোর লিকস এবং ওসিসিআরপির আলেফ (Aleph)। এছাড়া আদালতের নথি, গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের সম্পর্কে প্রকাশিত খবর এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের বার্তাতে প্রতিষ্ঠানের মালিকানা সম্পর্কিত তথ্য থাকতে পারে।
তবে কোনো দেশেই যদি অনলাইনে উন্মুক্ত ডেটবেস না থাকে তবে কোম্পানিটি মালিকানা গোপন করার উদ্দেশ্যে সেখানে নিবন্ধিত হয়েছিল এমনটা ধরে নেওয়া যায়।
কিছুতেই যদি কোনো তথ্য বের করতে না পারেন, সেক্ষেত্রেও কিন্তু আরো একটি বিকল্প উপায় রয়েছে। এ পর্যায়ে গুগলের অ্যাডভান্স সার্চ ব্যবহার করুন। কোথাও কোনো সম্মেলনে অংশ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কোনো স্লাইডশো (filetype:ppt) দেখিয়েছে কিনা বা নিজস্ব ওয়েবসাইটে কোনো পিডিএফ ফাইল (filetype:pdf) আপলোড করেছে কিনা তা খুঁজে পাবেন এখানে। লোকেরা মাঝে মাঝে লিঙ্কডইন বা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে। যদিও মূল নিবন্ধন নথির বিপরীতে এ ধরনের তথ্য কোম্পানির সত্যিকার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য খানিকটা কঠিন।
কোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে দরকারি তথ্য খুঁজতে গিয়ে আপনি হয়তো বারবার হোঁচট খাচ্ছেন, বা কোনোভাবেই প্রয়োজনীয় তথ্য বের করতে পারছেন না। এমন অবস্থায় কী করবেন? এ সিরিজের পরবর্তী প্রতিবেদনে আরো বেশি সৃজনশীল গবেষণা কৌশল ব্যবহার করে আমরা আপনাদের সামনে তা তুলে ধরতে চেষ্টা করবো। আমাদের নেটওয়ার্কের সাংবাদিক, এবং ডেটা ও গবেষণা দলের সদস্যরা আপনাদের দেখাবেন, আর্থিক বিনিয়োগকারী বা জমির মালিকদের কীভাবে খুঁজে বের করতে হয়। কিংবা কোম্পানির আর্থিক বিররণী বিশ্লেষণের পাশাপাশি সাপ্লাই চেইনগুলোকে কীভাবে অনুসরণ করতে হয়।
জেল্টার মিয়ার্স পুলিৎজার সেন্টারের এনভায়রনমেন্ট ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের গবেষণা সম্পাদক। এ ইউনিটটির মধ্যে রয়েছে রেইনফরেস্ট ইনভেস্টিগেশন নেটওয়ার্ক (আরআইএর) এবং ওশান ইনিসিয়েটিভ। ইলিনয়ের মিডওয়েস্ট সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং–এ অনুসন্ধানী রিপোর্টার হিসেবে কাজ শুরু করেন মিয়ার্স। সেখানে তিনি আবাসন, অভিবাসী শ্রম এবং চাষাবাদের ওপর জবাবদিহিমূলক প্রতিবেদন লিখতেন।