প্রবেশগম্যতা সেটিংস

لقطة من فيديو "مقتل خاشقجي"، وهو فيديو تحقيقي نشر في نيويورك تايمز في أعقاب تحركات الفريق السعودي الذي تسبب بمقتل الصحفي جمال خاشقجي.

লেখাপত্র

বিষয়

চারপাশে ছড়িয়ে থাকা তথ্য দিয়ে যেভাবে “কিলিং খাসোগি” নির্মাণ করল নিউ ইয়র্ক টাইমস

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

English

“কিলিং খাসোগি” নামে নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি ভিডিও অনুসন্ধান থেকে নেয়া স্ক্রিনশট। সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার সাথে জড়িত সৌদি ঘাতক দলের গতিবিধি অনুসরণ করে এটি তৈরি করা হয়েছে।

লিখতে শেখারও আগে মানুষ তার হাতের কাছে পাওয়া বস্তু সামগ্রী দিয়ে নিজেদের জীবনযাত্রার ছবি মূর্ত করেছে। সতেরো হাজার বছর আগের শিল্পীরা – প্রাণীজগত, অলৌকিক বস্তু আর বিজয়ের স্বপ্ন দিয়ে ফ্রান্সের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে লেস্কু গুহায় গড়েছিলেন প্রখ্যাত সেই চিত্রশালা। তারা ধুলোময়লা নিংড়ে বের করেছেন খনিজ উপাদান, তার সাথে ব্যবহার করেছেন মাটির মিশ্রণ, পাথুরে হাতিয়ার দিয়ে খোদাই করেছেন কঠিন শিলা, এমনকি নলখাগড়া আর ফুটো করা হাড় দিয়ে উদ্ভাবন করেছিলেন যান্ত্রিক রংতুলিও।

সাইবার নজরদারি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে এসে, জন্ম নিয়েছে আধুনিক গল্পকারদের এক নতুন ঘরানা, যারা সেইসব আদি শিল্পীদের মতই সৃজনশীল। এই গল্পকাররা প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সংগ্রহ করতে শিখেছেন লুকোনো তথ্য-প্রমাণ। তারপর ফ্রেম থেকে ফ্রেম, পিক্সেল থেকে পিক্সেল ধরে – তাদের একটির সাথে আরেকটিকে জুড়ে দিয়ে বুনে যাচ্ছেন এই সময়ের যত অপরাধ আর ট্র্যাজেডির গল্প।

নিউ ইয়র্ক টাইমসে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের এমন একটি দল আছে। তারা নির্মম সব ঘটনার দুরূহ রহস্য উন্মোচন করেন। এমন সব সত্য বের করে আনেন যা অত্যাচারী শাসক বা তাদের অনুগত পুলিশ বাহিনীকে ঘাবড়ে দেয়।

সাংবাদিকতার কি ভবিষ্যত আছে?”- এমন প্রশ্নের জবাবে হাভার্ড ইতিহাসবিদ ও লেখক জিল লেপোর, একটি নিরস ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনে। তিনি এই পেশাকে বর্ণনা করেছেন এভাবে: “দেখতে মাদকাসক্তদের মত, অস্থিচর্মসার, নষ্ট আর কুঁচকানো, যার পকেট থাকে ফাঁকা আর রাত কাটে না-ঘুমানো।” কিন্তু লেপোর কিছু ভালো দিকও চিহ্নিত করেছেন। লিখেছেন, “বিস্ময়কর রকমের কাজ করে এমন সাংবাদিকদের অভাব নেই্, যারা বিচক্ষণ ও সাহসী, উদার ও মেধাবী। গল্পের আকর্ষণীয় ফর্ম বা কাঠামো উদ্ভাবনে তাদের আগ্রহেরও কোন ঘাটতি নেই, বিশেষ করে ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং বা সচিত্র প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে।”

লেপোর কোনো উদাহরণ টানেননি, কিন্তু টাইমসের ভিজ্যুয়াল অনুসন্ধানগুলো ঠিক এমনই। ২০১৭ সাল থেকে পত্রিকাটি শক্তিশালী সব সিরিজ প্রতিবেদন তৈরি করে আসছে সচিত্র প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে, যার অধিকাংশই ওপেন-সোর্স তথ্য থেকে সংগৃহীত। সেগুলো হতে পারে সিসিটিভি, স্যাটেলাইট বা ড্রোন ফুটেজ; ফেসবুক, ইউটিউব বা পুলিশ ক্যামেরার ভিডিও; প্রত্যক্ষদর্শীর স্মার্টফোন থেকে নেয়া ছবি কিংবা ভিডিওর অংশবিশেষ। যাই হোক না কেন অডিও-ভিডিওর এমন বিশাল সম্ভার হরহামেশাই খুঁজে পাওয়া সম্ভব, যা থেকে একজন প্রতিবেদক কাটছাঁট, বিশ্লেষণ ও সমন্বয় করে অসাধারণ অনুসন্ধানী এবং ব্যাখ্যামূলক ভিজ্যুয়াল সাংবাদিকতা করতে পারেন। অনেক সময় সাদা-কালো অস্পষ্ট ছবিকে “ভিডিও ফরেনসিকের” সাহায্যে সুক্ষাতিসূক্ষভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। এভাবে  ব্যক্তি ও নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর মাধ্যমেও অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির একটি নতুন ধারা গড়ে উঠেছে, বিশেষ করে ইউরোপে।

প্রথাগত রিপোর্টিংয়ের সাথে যুক্ত হওয়া চুলচেরা এমন বিশ্লেষণ পদ্ধতি, কাটঅ্যাওয়ে গ্রাফিক্স, ম্যাপিং, মোশন ভিডিও, সাউন্ড ট্র্যাক আর নিপুণ বর্ণনার সাহায্যে টাইমসের ভিজ্যুয়াল অনুসন্ধানী দলটি গড়ে তুলেছে অসাধারণ রিপোর্টের এক গ্যালারি। যা তাদের উদ্দেশ্যের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ: “আজকের দিনে সংবাদ প্রায় সবসময়ই ক্যামেরায় ধারণ করা হয়। আপনি যেসব ঘটনা শুনে থাকবেন, আমরা তাকে বিশ্লেষণ করি প্রতিটি ডেসিবল, পিক্সেল এবং ফ্রেম ধরে ধরে। উন্মোচন করি সত্যটাকে।”

নিউ ইয়র্ক টাইমসের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অনুসন্ধান:

২০১৭ সালে লাস ভেগাস কনসার্টে স্টিফেন প্যাডকের গুলিবর্ষণের একটি টাইমলাইন তৈরি করেছিল নিউ ইয়র্ক টাইমসের ভিজ্যুয়াল ইনভেস্টিগেশন টিম। ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস ভিজ্যুয়াল ইনভেস্টিগেশনস।

নিজের দিকে বন্দুক তাক করার আগে আগে লাস ভেগাসের উন্মুক্ত কনসার্টে গুলি চালিয়ে ৫৮ জনকে হত্যা এবং আরও ৭০০ জনকে আহত করেছিল স্টিফেন প্যাডক নামের এক ব্যক্তি। ঘটনাটি ২০১৭ সালের। কীভাবে আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে বীভৎস এই বন্দুক হামলার পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করা হয় তা তুলে ধরে টাইমসের অনুসন্ধানী দলটি। এজন্য তারা কনসার্ট এবং হোটেলের সাত দিনের ফুটেজ জড়ো করে। এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং হত্যাযজ্ঞের ভিডিও, হোটেল রুমের ম্যাপ, গ্রাফিক্স একত্রিত করে ঘটনাটি পুননির্মাণ করে।

১৮ মার্চ, ২০১৮ সাল। ভাংচুরের সন্দেহে স্টিফন ক্লার্ক নামের এক নিরস্ত্র ব্যক্তিকে ২০টি বুলেট ছুড়ে হত্যা করে সাক্রামেন্টোর দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পাশে এবং পেছন থেকে ছয়বার আঘাত করা হয়। ২৩ সেকেন্ডের এই সিকোয়েন্সটি পুননির্মাণ করেছিল নিউ ইয়র্ক টাইমস

২০১৭ সালে সিরিয়ার একটি গ্রামে প্রাণঘাতি সারিন গ্যাস হামলা চালানো হয়। এর দায় অস্বীকার করেছিল সিরিয়া এবং রাশিয়া। এই ঘটনা নিয়ে তারা সত্য বলছে কীনা তা বের করতে থ্রিডি মডেল ব্যবহার করা হয়। (টাইমস বের করেছে তারা সত্য বলেনি।)

২০১৮ সালে ইসরায়েল গাজা সীমান্তে স্বেচ্ছাসেবী নার্স হিসেবে কর্মরত ২০ বছর বয়সী নারী রাউজান আল নাজ্জারকে কীভাবে গুলি করে হত্যা করেছিল এক ইসরায়েলী সেনা, তা তুলে ধরেছে তারা।

পুরস্কার বিজয়ী এই দলের জ্যেষ্ঠ প্রযোজক মালাচি ব্রাউন। তাঁর মতে ভিজ্যুয়াল অনুসন্ধানকারীদের মূল অনপ্রেরণা জবাবদিহিমূলক সাংবাদিকতা। এর মাধ্যমে তারা উন্মোচন করতে চান অন্যায়, ঠেকাতে চান কর্তৃপক্ষের মিথ্যাচার। “মিথ্যা উদঘাটন এবং সমস্যা সমাধান”, এভাবেই ব্রাউন তাদের ভূমিকা তুলে ধরেন। “যতক্ষণ পারো ক্ষমতাকে ঠেকিয়ে যাও।”

মালাচি ব্রাউন

“আমাদের দৃষ্টির চারপাশেই অবিশ্বাস্য রকমের তথ্য প্রমাণ লুকিয়ে থাকে”, নভেম্বরে রেডিটের একটি ফোরামে বলেন ব্রাউন। “আপনি যখন সেগুলো একসাথে বিশ্লেষণ করবেন, তখন সাংবাদিকতার মৌলিক প্রশ্নগুলোর জবাব খুঁজে পাবেন। যেমন, ঘটনা কখন এবং কোথায় ঘটেছিল, কারা জড়িত ছিল, কী ঘটেছিল এবং কীভাবে ঘটেছিল। ‘তিনি বলেন, তারা বলেন’ – এমন সাংবাদিকতার যুগে, প্রতিবেদনের যে কোনো দাবির সমর্থনে তথ্যপ্রমাণ হাজির করাটা গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে একটি ঘটনা কীভাবে ঘটেছে স্বচ্ছতার সাথে পাঠকদের কাছে তার ব্যাখ্যা তুলে ধরা যায়।”

ব্রাউন আইরিশ বংশদ্ভূত সাবেক একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার। সোশ্যাল মিডিয়া রিপোর্টিংয়ে তার অনেক বছরের অভিজ্ঞতা। তিনি বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে অনেক প্রতিবেদন তৈরি করেছেন স্টোরিফুলসহ বেশ কিছু অনলাইন গণমাধ্যমে, যারা সামাজিক মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রথাগত রিপোর্টিংয়ের বিস্তৃতি ঘটিয়েছে।

তিনি এবং তার সহকর্মীরা সংবাদ লেখার প্রচলিত কৌশলের পাশাপাশি ভিজ্যুয়ালের সাথে ভয়েস-ওভার বা নেপথ্য কণ্ঠ জুড়ে দেন। নিখাদ প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনগুলো হয়ে ওঠে শক্তিশালী, জবাবদিহিমূলক, এবং তা সামজে পরিবর্তনও আনে দ্রুত।

ব্রাউন জানান, এই ধরণের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কোনো দৃষ্টান্ত সামনে না থাকায়, রিপোর্টাররা মুদ্রণ সাংবাদিকতার প্রচলিত ঐতিহ্য মেনে ঘটনার বিশদ বিবরণ তুলে ধরার ওপরই জোর দেন। এজন্য তারা ব্যবহার করেন পাঠক আকর্ষণ করার মত শিরোনাম ও টুকরো ছবি, টিক-টক ক্রোনোলজি আর নাট গ্রাফ। তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “শুরুতেই আপনি পাঠককে বলে দেবেন, তিনি এই প্রতিবেদনে সাথে থাকলে কী কী পাবেন।” প্রতিবেদনের শুরুতে যে সমস্যা দেখানো হয়, সেটি তারা আস্তে আস্তে সমাধান করতে থাকেন। ঠিক পত্রিকার সাংবাদিকদের মতোই ভিজ্যুয়াল সাংবাদিকরাও, নাট গ্রাফ অর্থ্যাৎ গল্পের শুরুতে যা দেখানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে দর্শককে, সেটি অনুযায়ী কিছুটা ছেড়ে কিছুটা ধরে রেখে গল্পকে এগিয়ে নিতে থাকেন। “আমরা এর মধ্যে একটি ভারসাম্য ধরে রাখার চেষ্টা করি,” ব্রাউন বলেন।

২০১৮ সালের নভেম্বরে টাইমসের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আমার মনোযোগ কাড়ে। সেটি ছিল: “খাসোগি হত্যা: যেভাবে উন্মোচিত হল সৌদির এক পাশবিক হত্যাকাণ্ড।”

গত বছরের অক্টোবরে ইস্তান্বুলের সৌদি দূতাবাসে দেশটির নাগরিক সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা এবং টুকরো টুকরো করা হয়। সেই ঘটনার জন্য অভিযুক্ত ঘাতক দলটির গতিবিধি পুর্ননিমাণ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। ময়না তদন্ত বিশেষজ্ঞ, (জামাল খাসোগির মত) দেখতে একই রকম ব্যক্তি আর একটি কালো গাড়ী ছিল এই ভিডিওটির প্রধান উপাদান। এর দৃ্শ্যায়নটা হয়েছিল ক্যালেন্ডার বা দিনক্ষণ ধরে। মর্মান্তিক এই হত্যাকান্ড, পরবর্তী নিষ্ঠুরতা ও মিথ্যাচার উন্মোচন করা হয়েছে সপ্তাহ, দিন, ঘন্টা মেপে।

শুরুর কয়েক সেকেন্ডে কিছু চেহারার শট (মন্তাজ)। নেপথ্যে ইস্পাত কঠিন কণ্ঠস্বর: “তারা ছিল ১৫ জন। বেশিরভাগ পৌছেছিল শেষ রাত্রিতে। ফাঁদ পেতে অপেক্ষায় ছিল শিকারের জন্য”– ভিডিওটি এভাবে এগিয়ে যায় রহস্যের জাল বিস্তার করে। দৈর্ঘ্য মাত্র ৮ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের। তার মধ্যেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্য, বিশ্বাসঘাতকতা, হত্যাকাণ্ডের ভয়ানক রহস্যময় এক কাহিনী যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তৈরি করেছিল। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আব্দুলআজিজ আল সৌদ-ই এর পেছনের প্রধান হোতা এমনটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। (যদিও সৌদি সরকার দাবি করেছে যে বিন সালমান কিংবা তার পিতা বাদশাহ সালমান কেউই খশোগিকে লক্ষ্য করে চালানো এই অপারেশনের বিষয়ে কিছুই জানেন না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সৌদির এই অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছেন।)

ডেভিট বটি

“খাসোগি হত্যা” ভিডিওটি তৈরির জন্য টাইমসের এক ডজনেরও বেশি প্রতিবেদক, প্রযোজক, গবেষক এবং ভিজ্যুয়াল সাংবাদিক কাজ করেছেন। সৌদি ঘাতক দল এবং যুবরাজের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ হিসেবে বিপুল পরিমাণ ডেটা জড়ো করেছেন তারা। ছবি নিয়েছেন সিসিটিভি এবং সংবাদ ফুটেজ থেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চষে অপরাধীদের পরিচয় বের করেছেন।

খন্ড খন্ড ভিডিও (তাদের মধ্যে কিছু শুধু অডিওতে ধারণ করা বক্তব্য), গ্রাফিক্স এবং মানচিত্র জড়ো করে তার সাথে ১২৫০ শব্দের ধারা বর্ণনা যুক্ত করেছেন ব্রাউন এবং তার সহকর্মী ডেভিড বটি । ভিডিওটিতে দুইটি ঘটনা ট্র্যাক করা হয়েছে: বাগদত্তাকে বিয়ে করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ সংগ্রহে খাসোগির সৌদি কনস্যুলেটে ধর্না দেয়া এবং সৌদি ঘাতক দলের সন্দেহজনক গতিবিধি। ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে গিয়ে তারা কতটা তালগোল পাকিয়েছিল সেটিও দেখিয়েছে টাইমস।

“কিলিং খাসোগি” কিংবা অন্য সচিত্র অনুসন্ধানগুলো শুধু যে ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিংয়ের জন্যেই এতটা আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে তা নয় (যুক্তি হিসেবে আরো শৈল্পিক প্রতিবেদনের উদাহরণও তুলে ধরতে পারেন কেউ)। বরং সৃজনশীলতা, নির্ভুল রিপোর্টিং, অত্যাধুনিক ভিজ্যুয়াল কৌশল; জটিল প্রামাণ্য তথ্যের বিপরীতে মেদহীন এবং সংক্ষিপ্ত লেখনী – সবই কাজ করেছে এর পেছনে। ব্রাউন এবং তার সহকর্মীরা, গল্পের নিখুঁত বর্ণনা তুলে ধরতে নির্ভর করেছেন ছোট ছোট বাক্য আর দৃশ্যের উপরে। তারা প্রমাণ খুঁজে বের করেছেন এবং সেগুলো স্পষ্ট আর বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন, তা সে খুনীর নাইজেরিয় সামরিক পোশাকে থাকা ব্যাজের ক্লোজআপই হোক; কিংবা খাসোগির মত পোশাক পরে হাঁটতে থাকা ব্যক্তির “বদলাতে ভুলে যাওয়া জুতোজোড়ার” ছবিই হোক।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে সংবাদপত্রের সাবেক একজন প্রতিবেদক হিসেবে “কিলিং খাসোগি” থেকে নতুন ধারার সাংবাদিকতার স্বরুপ বুঝতে চেষ্টা করেছি। (নিউ ইয়র্ক টাইমসের) এই অনুসন্ধানী ইউনিটটির অন্যান্য প্রতিবেদনও খতিয়ে দেখেছি। কীভাবে নজরদারির যন্ত্র আর সামাজিক মাধ্যম থেকে শব্দ ও ছবির এমন সব ন্যারেটিভ তারা তৈরি করছে তা আত্মস্থ করার জন্য আমি ব্রাউনের সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করি। (অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিতে) টাইমসের সহকর্মী আর বাইরের বিশেষজ্ঞরা যেসব দায়িত্ব পালন করেছেন তা নিয়েও তিনি আলোচনা করেছেন। লেখালেখি বিষয়ে বলবার জন্য এই কথোপকথনে যুক্ত করেছেন বটিকে। পরবর্তীতে ফোন আলাপে ব্রাউনকে আরো কিছু প্রশ্ন করেছি।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী, সামাজিক মাধ্যম বিশেষজ্ঞ, থ্রি-ডি মডেলিংয়েরে দক্ষ ব্যক্তি; সেই সঙ্গে একাডেমিকস এবং বিজ্ঞানীদের সহায়তায় কীভাবে তারা প্রতিবেদনগুলো তৈরি করেছেন – ব্রাউন এবং বটি সেগুলো সবিস্তারে জানিয়েছেন আমাকে। সহিংস ভিডিওগুলো দেখার ক্ষেত্রে কী ধরণের মানসিক যন্ত্রণা পোহাতে হয় ব্রাউন সেটি যেমন ব্যাখ্যা করেছেন, তেমনি লেখার ব্যাপারে আরো বিস্তারিত যারা জানতে চান তাদের জন্য বিশাল রিসোর্সও সরবরাহ করেছেন।

তাদের প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয়েছে। “কিলিং খাসোগি” রিপোর্টের প্রথম পর্বটি প্রকাশ হয়েছে প্রিন্ট সংস্করণে, যা এই ঘটনায় যুবরাজ এবং তার এজেন্টদের ভূমিকার প্রতি সবার নজর ঘুরিয়ে দিয়েছিল। সৌদি আরবের মিথ্যা বক্তব্যের সাথে সুর মিলিয়ে তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও দাবি করেছিলেন সাংবাদিককে হত্যার জন্য দায়ী দুর্বৃত্তরা। সিরিয়ার শহর দুমাতে রাসায়নিক অস্ত্র হামলা নিয়ে তাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা তথ্যগুলো পরবর্তীতে জাতিসংঘের প্রকাশিত এক ফরেনসিক প্রতিবেদনও সমর্থন করেছে। ফিলিস্তিনের গাজা নিয়ে প্রতিবেদনের কারণে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী রাউজান আল নাজ্জার হত্যাকাণ্ডের পূর্ণ দায়দায়িত্ব স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল। সৈন্যদের একটি এলিট দল বিক্ষোভকারীদের ভিড়ে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে কয়েক ডজন মানুষ হত্যা করেছে, টাইমস তা দেখানোর পর নাইজেরিয়ার সরকার সেই ঘটনার তদন্ত শুরু করে।

দুমা এবং লাস ভেগাসে নির্বিচার গুলিসহ অনেকগুলো অনুসন্ধানের নেতৃত্ব দিয়েছেন (পরবর্তীটি অ্যামি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী) ব্রাউন। হোয়াইট হাউস থেকে এক মাইল দূরের একটি বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের উপর তুর্কি নিরাপত্তা গার্ডদের চালানো হামলার ঘটনা তেমনই একটি। এপ্রিলে সোসাইটি অব পাবলিকেশন ডিজাইনার্স “কিলিং খাসোগি”-কে বর্ষসেরা ভিডিও এবং সেরা নিউজ ফিচার হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল। ইয়েমেন যুদ্ধের কাভারেজের কারণে রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড ইন ইন্টারন্যাশনাল জার্নালিজম বিজয়ী হয়েছিলেন টাইমসের ১৬ জন সাংবাদিক, তাদের দুজন ব্রাউন এবং বটি।

ব্রাউন বলেন “আমার কাছে সচিত্র অনুসন্ধানকে স্বাভাবিক রিপের্টিং প্রক্রিয়ারই এক ধরণের বিবর্তন বলে মনে হয়: সূত্রের জন্য ওয়েবে তথ্য খোঁজা, ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট বিশ্লেষণ, কোনো কিছু বের করতে বিনাপয়সার টুল ব্যবহার এবং সব ঘটনার সমন্বয় করা। এর সাথে যুক্ত হবে প্রথাগত রিপোর্টিং আর সাধারণ জ্ঞান।”

দৈর্ঘ্য এবং ব্যাখ্যার প্রয়োজনে আমাদের এই কথোপকথনটি সম্পাদনা করা হয়েছে। প্রশ্ন-উত্তর পর্বের পরে ব্রাউনের সুপারিশকৃত সাইট এবং রিসোর্সের একটি তালিকা দেয়া হয়েছে।

ছবি: জামাল খাসোগি

“কিলিং খাসোগি”- প্রতিবেনদের ধারণাটি কীভাবে এসেছিল? পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন কীভাবে করেছেন? কত সময় লেগেছিল?

মালাচি ব্রাউন: একদিন সন্ধ্যায় প্রায় সাতটার দিকে নিউ ইয়র্কে আমরা এই প্রতিবেদনের কাজ শুরু করি; তুরস্কের মিডিয়া অস্পষ্ট ছবিসহ ১৫ জন সন্দেহভাজনের নাম প্রকাশের পরপরই। আমরা বিভিন্ন ফরম্যাটে এটি প্রকাশ করেছি- প্রিন্ট প্রতিবেদন, গ্রাফিক্স রিকনস্ট্রাকশন (গ্রাফিক্স ব্যবহার করে ঘটনার পুননির্মাণ), এবং সবশেষে আমাদের উন্মোচন করা সবগুলো ক্লু এর সমন্বয়ে তৈরি করা ভিডিও। প্রিন্টে প্রতিবেদনগুলো একদিনের মধ্যেই প্রকাশ শুরু হয়; ভিডিও অনুসন্ধানে আমাদের প্রায় এক মাস লেগে যায়।

প্রাথমিকভাবে আমরা একটি শেয়ারড ডকুমেন্ট দিয়ে কাজ শুরু করি। কারা এসব মানুষ, তাদের পদমর্যাদা, সৌদি সরকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে কোনো সংযোগ যদি থাকে তা বের করার চেষ্টা করি। সেই সাথে ফ্লাইট রেকর্ড, সিকিউরিটি ফুটেজ, কনসুলেটের অবস্থান, এবং যেসব হোটেলে তারা ছিলেন সেখান থেকে সন্দেহভাজনদের গতিবিধি বের করা শুরু করি। এমন আরো অনেক কিছু।

এই কাজের ক্রেডিট তালিকায় আরো ১৮ জনের নাম রয়েছে। তারা কী ভূমিকা পালন করেছেন? প্রতিবেদনটি তৈরিতে তাদের দায়িত্ব কী ছিল?

ব্রাউন: এই প্রতিবেদনের বিস্তৃতি ছিল নিউজরুমের বড় অংশ জুড়ে

বৈরুত এবং ইস্তান্বুল থেকে ডেভিড কার্কপ্যাট্রিক, বেন হাবার্ড, হুয়াইদা সাদ, কারলোটা গল – এই প্রতিবেদনে অপরিহার্য ভূমিকা রেখেছেন । তারা আরব মিডিয়াজুড়ে তথ্যের খোঁজ করেছেন, তুরস্ক এবং সৌদি আরবের নিজস্ব তদন্তের সাথে জড়িত সোর্সদের সাথে কাজ করেছেন এবং তুর্কী মিডিয়াগুলোতে প্রতিদিন প্রকাশিত খবর থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ক্রিস্টিয়ান ট্রাইবার্ট আর আমি সামাজিক মাধ্যম ও উন্মুক্ত ওয়েব থেকে সন্দেহভাজনদের সম্পর্কে খোঁজাখুঁজি, কনসুলেটে তাদের গতিবিধি এবং কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করি। সৌদি আরবকেন্দ্রিক টুইট যারা নিয়মিত অনুসরণ করে, তাদের সঙ্গেও আমরা তথ্যের যাচাই করে নিয়েছি।

উদাহরণস্বরূপ, আমরা একটা ইমেইল ঠিকানা পাই যেটা ময়না তদন্ত বিশেষজ্ঞ সালাহ আল-তুবাইগির ব্যবহৃত সোসাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সংযুক্ত। এখান থেকে আমরা তার কিছু একাডেমিক পেপার, বিভিন্ন কনফারেন্সে অংশগ্রহণ, রাষ্ট্রীয় কমিটিগুলোতে দায়িত্ব পালন, সংবাদপত্রের নিবন্ধ, অস্ট্রেলিয়ায় একটি ফরেনসিক প্যাথলোজিস্ট ফেলোশিপে অংশগ্রহন, এবং তার অন্যান্য জীবন বৃত্তান্ত খুঁজে পাই। যেগুলো নিশ্চিত করে যে তিনি সরকারের উচ্চ পদে আসীন ছিলেন।

কনসুলেটের ভেতরে ধারণকৃত ফুটেজ অনুসরণ করে এবং চিত্রগ্রাহকদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ভবনের ভেতরের মডেল তৈরি করেন গ্রাফিক্স সম্পাদক এবং সাবেক স্থপতি অঞ্জলি সিংভি। খাসোগিকে সেখানে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এই বিষয়টি দেখানো হয়েছিল ডেভিড কার্কপ্যাট্রিকের (নিউ ইয়র্ক টাইমসের ইন্টারন্যাশনাল করেসপনডেন্ট) দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে। ব্রাসেলসে স্টিভেন আরল্যাঙ্গার কূটনৈতিক সূত্র দিয়ে নিশ্চিত করেন, অন্যতম প্রধান সন্দেহভাজন মাহের মুতরিব একসময় যুক্তরাজ্যে সৌদি দূতাবাসের কূটনৈতিক কর্মকর্তা ছিলেন। ডেভিড বটি এবং বারবারা মারকোলিনি এমন আর্কাইভ ছবি খুঁজে পান যেখানে বিভিন্ন বিদেশ সফরে সৌদি যুবরাজের সাথে মুতরিবকে দেখা গিয়েছিল।

ফ্রান্সে এমন কিছু সূত্র খুঁজে বের করেন আলিসা রুবিন। তারা রাজ পরিবারের সঙ্গে কাজ করেছিলেন এবং আরেক সন্দেহভাজনকে চেনেন। ওয়াশিংটনে অ্যাডাম গোল্ডম্যান তার জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত সূত্রগুলোকে চাপ দিয়ে আমাদের সংগ্রহ করা অনেক তথ্য নিশ্চিত করেন। সিয়াটল, সিলিকন ভ্যালি, হিউস্টন, বোস্টন এবং নিউ ইয়র্কের স্থানীয় প্রতিবেদকরা তাদের নিজ নিজ সূত্রের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে যুবরাজের সঙ্গে ভ্রমনে অংশ নেয়া সন্দেহভাজনদের সম্পর্কে তথ্য বের করেন।

“কিলিং খাসোগি”-র মতো একটি প্রতিবেদন তৈরিতে প্রযুক্তি কীভাবে কাজে এসেছে?

ব্রাউন: লেজের নম্বর ব্যবহার করে বিমান ট্র্যাক করে, তার সাথে স্যাটেলাইট চিত্র আর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ফুটেজ তুলনার মাধ্যমে রানওয়েতে বিমানের অবস্থান জানার প্রযুক্তি এখানে কাজে এসেছে। বিমানবন্দরের টার্মিনালের ভেতরের পর্যাপ্ত স্থিরচিত্র এবং ফুটেজের কারণে সন্দেহভাজনরা পাসপোর্ট কন্ট্রোল অতিক্রম করে কোথায় গিয়েছিল সেটি বের করা সম্ভব হয়েছে। সৌদি আরবে জনপ্রিয় একটি স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে আমরা সন্দেহভাজনদের ফোন নম্বর এবং সৌদি সরকারের সংস্থাগুলোতে তাদের পদবী নিশ্চিত হই। কয়েকজন সন্দেহভাজনের ওপরে আমরা চেহারা সনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি তবে তার থেকে খুব একটা ফলাফল মেলেনি; বরং চেহারার আলাদা বৈশিষ্ট্যগুলো বের করে সেগুলো তুলনা করা, বেশি ফলপ্রসু ছিল।

জিপিএস কো অর্ডিনেটস, বডি ক্যামেরা ভিডিও, চেহারা সনাক্তকরণ এবং ফরেনসিক ম্যাপিংয়ের মতো প্রমাণ ব্যবহার করে ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলাররা কীভাবে একটি ন্যারেটিভ বা কাহিনী নির্মাণ করেন? রিপোর্টিং ম্যাটেরিয়াল, কাঠামো কিংবা ভাষাগত দিক থেকে অন্য  লেখকরা যা করেন তার চেয়ে তারা আলাদা কী করেন? তারা কী করতে পারেন যেটা মুদ্রণ সাংবাদিকরা পারেন না কিংবা উল্টোটা?

ব্রাউন: অনুসন্ধানকারীদের জন্য আজকাল প্রচুর অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রমাণ সহজলভ্য- সেল ফোন ভিডিও, ইনস্টাগ্রাম পোস্ট, স্যাটেলাইট ইমেজ, ম্যাপস, গুগল স্ট্রিট ভিউ, পুলিশ স্ক্যানার অডিও, লিংকডইন প্রোফাইল। এসব তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাব বিশ্লেষণ করে সূত্র মেলানোর পাশাপাশি সাংবাদিকতার মৌলিক প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া সম্ভব।

উদাহরণস্বরুপ প্রিন্ট মাধ্যমের একজন প্রতিবেদক হয়তো প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে কিংবা সামাজিক মাধ্যমের অসমর্থনযোগ্য প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে বলে দিতে পারেন শনিবার সন্ধ্যা প্রায় ৮ টা নাগাদ সিরিয়ায় একটি রাসায়নিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। সিরিয়ার সরকার পরবর্তীতে জোরজবরদস্তি খাটিয়ে সেই প্রতিবেদন চ্যালেঞ্জ করে বসতে পারে। সত্য মাটিচাপা দিতে বিপরীত ব্যাখ্যা দাড় করানো হতে পারে। কিন্তু ভিডিওর ফরেনসিক বিশ্লেষণ প্রমাণ করতে পারে কোথায়, কখন এবং কীভাবে হামলাটি হয়েছে। স্বচ্ছ উপায়ে সেটি সরকারের কারসাজি দেখিয়ে দিতে পারে।

একজন রিপোর্টার হয়তো এই সিদ্ধান্তগুলো ধরেই লিখতে পারেন। কিন্তু পড়া আর সচিত্র প্রমাণ দেখার মধ্যেও পার্থক্য আছে। আমাদের প্রতিবেদনগুলোতে আমরা গ্রাফিক্স স্ক্রিপ্ট মিলিয়ে সতর্কভাবে এমন একটি গল্পের কাঠামো দাঁড় করাই, যার মাধ্যমে জটিল প্রমাণগুলো ছাপিয়ে প্রতিবেদনটি ব্যাখ্যামূলক এবং অনুসরণ করার মতো সহজ হয়ে উঠে।

প্রতিবেদন তৈরিতে ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলাররা কোন ধরণের মডেল অনুসরণ করেন? বর্ণনা, ঘটনার ক্রমবিকাশ, ক্লাইমেক্স, ঘটনার পতন আর সমাপ্তি; ক্ল্যাসিক ন্যারেটিভের এই ধারাবাহিকতা কি তারা অনুসরণ করেন?

ডেভিড বটি: এটা আসলে প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করে। আমাদের ভিডিওগুলোতে বিশ্লেষণের উপর বেশি জোর দেয়া হয়। ফিচার এবং সাহিত্যে সচরাচর যেমন ন্যারেটিভ অনুসরণ করা হয় সেটা এখানে সবসময় যথার্থ নাও মনে হতে পারে। বলা হয়ে থাকে যে, আমরা প্রায়ই একটি প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি এবং আশাতীতভাবে শেষে সেই প্রশ্নের সমাধান হাজির করি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা গল্প বলি ক্রমান্বয়ে, কিংবা এমন একটি কাঠামোতে যেখানে একের পর এক প্রমাণ উপস্থাপনের মাধ্যমে ঘটনা উন্মোচন করা হয়। দুরূহ অনুসন্ধানের জন্য এটাকেই সেরা পদ্ধতি বলে মনে করা যায়, যা সহজে অনুসরণযোগ্যও বটে।

আপনারা ক্যালেন্ডার এবং সময়ের ব্যবহার কেন করেছেন- খাসোগি নিখোঁজের চারদিন আগে, খাসোগি নিখোঁজের ১২ ঘন্টা আগে, খাসোগি নিখোঁজের ৯ দিন পর- এগুলোর ব্যবহার গল্পের নির্মাণশৈলির অংশ হিসেবেই কি?

বটি: প্রতিবেদনটিতে অনেকগুলো নাম, স্থান এবং সময় আছে। আমরা চাইনি পাঠক এর মাধ্যমে বিভ্রান্ত হোক। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং স্বরণীয় মুহূর্ত খাসোগির নিখোঁজ হওয়া। সুতরাং আমাদের প্রত্যাশা ছিল এই মুহূর্তটিকে ঘিরে এমন কাঠামো তৈরি করা যার মাধ্যমে দর্শকরা বুঝে নিবে তারা এই কাহিনীর কোথায় অবস্থান করছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের “কিলিং খাসোগি” ভিডিও অনুসন্ধান থেকে নেয়া স্ক্রিনশট

ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং এবং ভিজ্যুয়াল রিপোর্টিংকে কীভাবে আলাদা করবেন? 

ব্রাউন: ভিজ্যুয়াল রিপোর্টিং বলতে অনেক কিছু বোঝায়। কিন্তু আমরা সচিত্র প্রমাণ ধরে ঘটনা বিশ্লেষণ করি, নতুন কিছু উন্মোচনের জন্য। এটা হতে পারে অডিও বিশ্লেষণ করে, কিংবা থ্রি-ডি পুননির্মাণ – যা আমাদেরকে নির্দিষ্ট পরিস্থিতির ছোট ছোট বিষয়গুলো বুঝতেও সহায়তা করে। এমনকি মানচিত্র এবং অনেক বছরের ডেটা ব্যবহারও করেও কোনো কোনো প্রবণতা ব্যাখ্যা করা যায়।

এসব তথ্য আমরা ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিংয়ে ব্যবহার করি দর্শককে জটিল বিষয় বোঝাতে, ঘটনার পুননির্মাণে, দর্শকদের একটি নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতার সাথে জড়াতে, কিংবা কোনো বিষয় স্বচ্ছভাবে প্রমাণ বা নাকচ করতে।

আপনাদের বর্ণনাটি ছিল আমার হিসাবে ১২৫০ শব্দের। এই বর্ণনাটি কীভাবে লিখেন, শব্দ এবং ছবির গাঁথুনি তৈরিতে কোন দিকটি খেয়াল রাখেন?    

ব্রাউন: ডেভিড এবং আমি, খাসোগি স্ক্রিপ্টের কয়েকটি প্রাথমিক সংস্করণ লিখেছিলাম। পরবর্তীতে আমাদের সম্পাদক সম্পাদক মার্ক শেফলারের পরামর্শে সেগুলো পরিবর্তন করেছি। অপ্রাসঙ্গিক অংশগুলোকে আলাদা করে পুরো মনোযোগ দেয়া হয়েছে মূল বিষয়বস্তুর উপরে। আমাদের ভিডিও অনুসন্ধানের অধিকাংশই শুরু হয় নাট গ্রাফ পদ্ধতিতে, কী ঘটেছিল তার সারসংক্ষেপ এবং আপনি, দর্শক, কী দেখতে যাচ্ছেন তা দিয়ে। ছবি আর গ্রাফিক্সের উপর নির্ভর করে আমরা লিখি যাতে বিষয়বস্তু যতটা সম্ভব ব্যাখ্যামূলক হয়। স্বচ্ছতার সাথে প্রতিবেদনটি উপস্থাপনের চেষ্টা করি আমরা যাতে কীভাবে ঘটনার উপসংহার বা পরিণতিতে পৌছলাম সে সম্পর্কে দর্শক স্বচ্ছ ধারণা পায়। কিছু কিছু প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে অবশ্য ঘটনাস্থল থেকে রিপোর্টিংও যুক্ত করা হয়।

একটি প্রচলিত ধারণা হল মানুষ ৯০ সেকেন্ডের বেশি দৈর্ঘ্যের ভিডিও দেখেনা। সেখানে টাইমস নিয়মিত এই সীমা অতিক্রম করছে। আপনার অভিজ্ঞতায় অডিয়েন্স কতক্ষণ দেখে?

বটি: এটা সত্য, একটা সময় ছিল যখন আমরা (ডিজিটাল ভিডিও কমিউনিটি) বিশ্বাস করতাম (ভিডিওর আকার) যত ছোট হবে ততই ভাল। সেটা ছিল ফেসবুকের টেক্সট-অন-ভিডিওর যুগ। কিন্তু বড় দৈর্ঘ্যের ভিডিও এখন আর অতবেশি মাথাব্যথার কারণ নয়। এজন্য ইউটিউবের ধন্যবাদ প্রাপ্য, যেখানে সাইটটির দর্শকরা (এবং অ্যালগোরিদম) লম্বা দৈঘ্যের ভিডিও সমর্থন করে। টাইমসের ওয়েবসাইটেও আমরা দেখেছি দর্শকরা স্বচ্ছন্দেই আমাদের ভিডিও দেখে। প্রতিবেদনের প্রয়োজন অনুসারে টাইমস নিয়মিত ১০ মিনিটের ভিডিও প্রকাশ করে এবং দর্শক ধরে রাখার ক্ষেত্রে সেগুলোর সাফল্যের হারও বেশি।

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের পাশাপাশি  আর কোন দিকগুলো দৃশ্যায়নের প্রচলিত পদ্ধতিকে বদলে দিল — ছবি এবং গ্রাফিক্স কীভাবে পরিপূর্ণ একটি ভিডিও প্রতিবেদনে রূপ নিল? 

বটি: বিজ্ঞাপনী আয় থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যমের ট্রেন্ডসহ বিভিন্ন কারণে প্রকাশকেরা ভিডিওতে মনোযোগ দিতে শুরু করেছেন। আমরাও বিশ্বাস করি ভিডিও হচ্ছে গল্প বলার শক্তিশালী এক মাধ্যম যে সুফলটি আমাদের রিপোর্টিংয়েও নেয়া উচিৎ। এই পরিবর্তনের কারণে ভিজ্যুয়াল বা সচিত্র অনুসন্ধানে যেকোন স্থানে, যেকেউ ভিডিও ধারণ বা ছবি তুলতে পারে। সব দিক বিবেচনায় সংবাদযোগ্য ঘটনার বিশাল ছবির ভান্ডার আছে, যা অনুসন্ধানের জন্য উর্বর ক্ষেত্র। স্যাটেলাইট শিল্পের উন্নয়নের কারণেও আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ এখন স্যাটেলাইট নির্ভর ছবি ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন। এর মানে আরো চোখ ঘুরাফিরা করছে – আরো বেশি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

আপনার কাছে কী মনে হয়, কোন বিষয়গুলো কিলিং খাসোগি বা (টাইমসের) অন্য অনুসন্ধানগুলোকে, ঘটনার বর্ণনায় এত শক্তির যোগান দিয়েছে?

বটি: আমরা সংবাদ কাভার করি গুরুত্ব বিবেচনায়, ব্যাপক উদ্বেগ আর বিপুল ঝুঁকি আছে এমন সব বিষয়বস্তু নিয়ে। কাজেই সেগুলোর মধ্যে সহজাত ন্যারেটিভ পাওয়ার বা বর্ণনা শক্তি থাকে। কিন্তু এটি ক্ষুদ্র একটি দিক মাত্র। সব ভিডিওর শুরুতেই আমরা একটি প্রশ্ন কিংবা সমস্যা উত্থাপন করি, দর্শককে জানিয়ে দেই, তাদেরকে আমরা ঘটনার গভীরে নিয়ে যাব। আপাতদৃষ্টিতে যা দেখা যায় তার আড়ালে লুকিয়ে থাকা গুরুত্বপূর্ণ সব ছবি উপস্থাপন করবো (যেমন খাসোগির মতো চেহারার ব্যক্তিটির বদলাতে ভুলে যাওয়া জুতাটি কিংবা নাইজেরিয়ার ধর্মীয় একটি গোষ্ঠীর উপর হামলায় যে সেনা ব্যাটেলিয়ন জড়িত ছিল তাদের পোশাকে থাকা প্রতীকটি)। এমন সবকিছুই দর্শককে বিস্মিত করে, পাশাপাশি তাদের দৃষ্টি ধরে রাখে।

সবশেষে, আমাদের বেশির ভাগ প্রতিবেদন ক্ষমতার মুখোমুখি হয়ে সত্য উচ্চারণ করে— প্রশাসনের ব্যাখ্যা আর ধামাচাপার বিপরীতে মিথ্যকে মিথ্য বলে প্রমাণ করে। আর প্রতিবেদনের এমন দিকগুলোই দর্শককে একাত্ম করে।

নতুন যুগের এই গল্প লেখকদের কাছ থেকে ন্যারেটিভ রচয়িতারা কী ধরণের শিক্ষা পেতে পারেন?

বটি: শুরুতেই দর্শকদের বলে দিন আপনার ভিডিওটি দেখে তারা কী পাবেন এবং কেন তাদের গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। প্রতিবেদকের আবিষ্কারের প্রক্রিয়ায় তাদেরকে যুক্ত করুন, প্রতিবেদনে (ধাপগুলো) একের পর এক উন্মোচন করুন। যে ঘটনা ঘটেছে তা বারবার বলতে ভয় পাবেন না– আপনার দর্শক যাতে হারিয়ে না যায় তা নিশ্চিত করাটা গুরুত্বপূর্ণ।।

কিন্তু আসল শিক্ষাটা লেখার আগে যা ঘটছে সেখানে নিহিত: স্টোরি বা প্রতিবেদন বাছাই। এটি কতটা প্রভাব রাখবে, ভালো ভিজ্যুয়াল বা নতুন কিছু সংযোজন করা যাবে কীনা তা নিশ্চিত করুন।

স্টিফেন ক্লার্কের প্রতিবেদনটি যখন শুরু হয়, সেখানে বলা হয়েছে, “সতর্কতা: দেখা পীড়াদায়ক হতে পারে।” অনেক সচিত্র অনুসন্ধানেই এই কথাটা খাটে। আবেগগত দিক থেকে সেগুলো তৈরি করা (আপনাদের জন্য) কতটা কঠিন? 

ব্রাউন: অনেক সময়ই কাজটা বেশ কঠিন । যখন আমরা দুমার অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকটা পুননির্মাণ করি (সারিন গ্যাস হামলার স্থান), আমাদের কাছে ৫ থেকে ৭ সেকেন্ডের ক্লিপস ছিল। ভয়ানক এইসব ভিডিও বারবার দেখাটা খুবই হৃদয়বিদারক। ঘটনাটি সামনাসামনি না দেখলেও, অপ্রত্যক্ষ ট্রমার মধ্যে পড়তে হয়। তাই সতর্কচিহ্নগুলো বুঝে নিয়ে আগেই নিজেকে তৈরি করে নিতে হয়।

কিন্তু নিরীহ মানুষের মৃত্যু কিংবা সহিংসতায় জীবনহানির ঘটনা – সমস্যা সমাধান এবং তাদের কাহিনী তুলে ধরতে উদ্বুদ্ধ করবে আপনাকে।

আপনার সহকর্মী অ্যাডাম এলিক নিম্যান ল্যাবে সম্প্রতি পূর্বাভাস দিয়েছেন, রিপোর্টিং মূলধারা এবং আঞ্চলিক সাংবাদিকতাকে বদলে দেবে ভিডিও ফরেনসিক। কেননা “সোশ্যাল ইন্টেলিজেন্স এবং আড়িপাতা যন্ত্রের টুলকিটগুলো” ক্রমশ “ডিআইওয়াই ভিডিও নির্মাতা, ক্ষয়িষ্ণু স্থানীয় সংবাদ বিভাগ এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই এমন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছেও সহজলভ্য হয়ে উঠছে।” এই নতুন প্রজন্মের প্রতি আপনার পরামর্শ কী, বিশেষ করে যারা ছোট দল আর স্বল্প বাজেটে এই উপকরণগুলো ব্যবহার করে শক্তিশালী কাহিনী বর্ণনা করতে চায়। 

ব্রাউন: বারবার চর্চার মধ্য দিয়ে ওপেনসোর্স ভিত্তিক দক্ষতা গড়ে ওঠে । টুইটারে ওসিন্ট কমিউনিটির কাছ থেকে শিখুন। বেলিংক্যাটের টুলকিট থেকে আপনার প্রয়োজন হতে পারে এমন সব টুলের ব্যবহার এবং জিআইএজেসি (গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্স) এর টিপশিটগুলো নিয়ে গবেষণা করুন। স্টার্ট ডট মি অথবা গুগল ক্রোম প্রোফাইল ব্যবহার করে টুলস এবং লিংকের একটি ডিজিটাল ওয়ার্কস্টেশন গড়ে তুলুন। ভেরিফিকেশন হ্যান্ডবুক থেকে ওপেনসোর্স ভিত্তিক তথ্য যাচাইয়ের পদ্ধতিগুলো শিখুন কিংবা ফাস্ট ড্রাফট নিউজ থেকে কেসস্টাডি দেখুন। প্রতিদিন নিজের পরীক্ষা নিন। আপনার পছন্দের সাংবাদিকের স্টোরিটেলিং বা গল্প বলার কৌশলগুলো  শিখুন এবং রপ্ত করুন।

যেসব সাইট দেখতে পারেন, যেসব টুলস ব্যবহার করতে পারেন এবং যেসব সোর্স থেকে শিখতে পারেন তা নিয়ে মালাচি ব্রাউনির পরামর্শ: 

স্থাপত্য, মানবাধিকার এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সাথে জড়িত বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাজ আমরা নজরে রাখি। অনেক সময় তাদের কারো কারো সাথে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করি। সময় এবং স্থানের ফরেনসিক পুননির্মাণকে নতুন এক মাত্রায় নিয়ে গেছে লন্ডনভিত্তিক সংস্থা ফরেনিসক আর্কিটেকচার এবং ব্রুকলিন ভিত্তিক সিটু রিসার্চ

আমরা যখন স্টোরিফুল (সামাজিক মাধ্যম অনুসন্ধান সাইট) এর মাধ্যমে অনুসন্ধান চালাই, ব্রিটিশ রিপোর্টার ইলিয়ট হিগিনস তখন একই ধরণের কৌশল প্রয়োগ করা ওপেন সোর্স অনুসন্ধানকারীদের জোট বেলিংক্যাট গড়ে তোলার প্রাথমিক ধাপে ছিলেন। ২০১৮ সালে তারা যুক্তরাজ্যের সালসবারিতে সের্গেই স্ক্রিপালকে বিষ প্রয়োগকারী রুশ জিআরইউ (সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা) এর সন্দেহভাজন এজেন্টদের নাম প্রকাশ করে।  তাদের রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে আমাদের সিরিয়া অনুসন্ধানও তথ্যসমৃদ্ধ হয়েছে। তারা অসাধারণ কাজ করে এবং এখন ন্যায়বিচার ও জবাবদিহির আঙিনায় পা রেখেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচও এসব পদ্ধতি ব্যবহার করে। বিশেষ করে অনুসন্ধান কাজে স্যাটেলাইট ছবির ব্যবহারে তারা অনেকদূর এগিয়েছে।

বিভিন্ন গ্রুপ শক্তিশালী জবাবদিহিমূলক কিছু কাজ করেছে, একে অন্যকে সহযোগিতার মাধ্যমে। যেমন, ২০১৭ সালে আল জিন্নাহ মসজিদে যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলার ঘটনাটি পুননির্মাণ করেছে বেলিংক্যাট, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ফরেনসিক আর্কিটেকচার। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নথিবদ্ধ করতে অ্যামনেস্টি মাঝে মাঝে আলেক্সা কনিগের নেতৃত্বে একদল অনুসন্ধানকারীর সাথে কাজ করে, বার্কলে হিউম্যান রাইটস সেন্টারে। বিবিসি আফ্রিকা আই-ও এই ধরণের চর্চার সাথে মানিয়ে নিয়েছে এবং ওপেন সোর্স কমিউনিটির সাথে কাজ করছে।

এই বিষয়ে প্রোপাবলিকারও আগ্রহ আছে, তারাও একই ধরণের অনুসন্ধানী ইউনিট গঠন করেছে।

আমাদের নিজেদের দলটিও স্টোরিফুল, অ্যামনেস্টি, বেলিংক্যাট এবং বার্কলের হিউম্যান সেন্টারের সাবেক সদস্যদের নিয়ে গঠিত।

ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং এর ক্ষেত্রে আমাদের কিংবা অন্যদের কাজের ধরণ নিয়ে তুলনা করতে যাওয়া কঠিন। ২০১৫ সালে  আফগানিস্তানে ফারখুন্দাকে নির্মমভাবে হত্যা ঘটনার পুননির্মাণ করেছিলেন জন উ এবং অ্যাডাম এলিক, যা এধরণের কাজের পথপ্রদর্শক। আমি সেটি আত্মস্থ করেছি এবং সেখান থেকে শিখেছি। সাংবাদিকতার দৃষ্টিকোন থেকে যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফোরের নিউজ টিমের প্রতি আমার মুগ্ধতা দীর্ঘদিনের। তার মধ্যে প্রত্যক্ষদর্শীদের  ফুটেজ ব্যবহার করে তৈরি সিরিয়া বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্রগুলোও আছে।

এর বাইরে সেবাস্তিয়ান জাঙ্গারের “হেল অন আর্থ” (২০১৭), জেহান নৌজাইমের “দ্য স্কোয়ার”(২০১৩) এবং সারা ইসহাকের “কারমা হ্যাজ নো ওয়ালস” এ ধারার তথ্যচিত্র ধর্মী কাজের শক্তিশালী উদাহরণ।

আমরা কাজে স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার চেষ্টা করি। এজন্য কিছু সৃজনশীল মেধাবী সহকর্মীর ওপর ভীষণ নির্ভরশীল আমি: তাদের মধ্যে আছেন ডেভিড বটি, নাতালিয়া রেনু, ড্রিউ জরডান, অঞ্জলি সিংভি, মার্ক শেফলার এভং ন্যান্সি গসসহ অনেকে। আমি জোহান কেসেল থেকেও শিখেছি, যিনি টাইমসের অন্যতম একজন সৃজনশীল ভিডিও স্টোরিটেলার।”


এই নিবন্ধটি প্রথম প্রকাশিত হয় নিম্যান স্টোরিবোর্ডে। অনুমোদন নিয়ে এখানে পুনপ্রকাশ করা হল।

চিপ স্ক্যানল্যান একজন পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক যার অভিজ্ঞতায় আছে নিউ ইয়র্ক টাইমস, এনপিআর, ওয়াশিংটন পোস্ট ম্যাগাজিন এবং আমেরিকান স্কলার; তার দুটি লেখা আমেরিকার সেরা নিবন্ধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। ১৯৯৪-২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি পয়েন্টার ইনস্টিটিউটে লেখালেখি শিখিয়েছেন। বর্তমানে ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবাগে বাস করেন এবং সেখানেই লেখালেখি করেন।

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

Uighurs protest China

কেস স্টাডি সংবাদ ও বিশ্লেষণ

“সেলফি” প্রচারণার ক্রমবর্ধমান হুমকি নিয়ে অনুসন্ধান

গত বছর, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াতে দেখা যায় কিছু “সেলফি” ভিডিও, যেগুলোতে চীনের উইঘুর জনগোষ্ঠীর মানুষদের গণহারে আটক করার কথা অস্বীকার করা হয়। বিস্তারিত অনুসন্ধানে দেখা যায়: এগুলো আসলে রাষ্ট্রীয় প্রভাবে পরিচালিত, সমন্বিত মিথ্যা প্রচারণা। এই লেখায় অনুসন্ধানটির নেপথ্যের গল্প বলেছেন সাংবাদিকেরা। এবং দিয়েছেন এ ধরনের অনুসন্ধানের জন্য কিছু উপকারী পরামর্শ।

কেস স্টাডি

মিম ধরে অনুসন্ধান: কীভাবে এক নারী হয়ে উঠলেন কিউঅ্যাননের “ডিজিটাল সৈনিক”

ইন্টারনেট মিম অনেকের কাছেই শুধু হাস্যরসের বিষয়। আবার অনেকের কাছে তা চরমপন্থী গ্রুপে নতুন সদস্য আমদানির কৌশল। ইন্টারনেট মিমের প্রভাবে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে কিভাবে এক উচ্চশিক্ষিত নারীর চিন্তাভাবনায় নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে, তা উঠে এসেছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক ভিজ্যুয়াল প্রতিবেদনে। এই লেখায় পড়ুন সেই অনুসন্ধান ও প্রতিবেদন তৈরির নেপথ্যের গল্প।

কেস স্টাডি

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় জরিপ: যে খবর এড়িয়ে যাওয়া কঠিন

কখনো কখনো ছোট ছোট স্থানীয় সংবাদপত্র এমন সব বড় খবরের জন্ম দেয়, যা হেভিওয়েট জাতীয় পত্রিকাগুলোতে খুঁজে পাওয়া যায় না। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় দুইশ কিলোমিটার দূরে, যশোরের গ্রামের কাগজের ঘটনাও ঠিক একই রকম।

অনুসন্ধান পদ্ধতি শিক্ষাদান ও প্রশিক্ষণ

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ‘হাব’ যেভাবে একটি প্রজন্মের রিপোর্টারদের তৈরি করেছে

মেক্সিকো সীমান্তে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য তাঁদের পেশাটা ছিল যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। কেন্দ্রে যাঁরা সাংবাদিকতা করেন, তাঁদের সঙ্গে দূরত্ব তো ছিলই, ছিল সার্বক্ষণিকি নিরাপত্তাহীনতাও। সাংবাদিকেরা একজোট হয়ে এই দূরত্ব ঘুঁচিয়ে আনতে গড়ে তোলেন একটি সংগঠন। প্রয়োজনীয়ল প্রশিক্ষণ শেষে হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁরা অনুসন্ধান করে তুলে আনেন বেশ কিছু প্রতিবেদন।