

কবি থেকে রিপোর্টার: মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে নাইজেরিয়ার সংঘাতের গল্প বলা
নাইজেরিয়াতে সহিংসতা বা সংঘাত নিয়ে রিপোর্টিং করাটা (কনফ্লিক্ট জার্নালিজম) গত দশক থেকে অনেক বেশি কঠিন হয়ে উঠেছে এখন। সন্ত্রাসী হামলা, বিদ্রোহ আর সংঘাতের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে সাংবাদিকরাও ব্যাপক সহিংসতা ও ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছেন।
নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ঢোকায় বাধাা, সরাসরি হুমকি পাওয়া; রিপোর্টিং করে ফেরার পর ট্রমা বা মানসিক অবসাদ-অস্থিরতায় ভোগা; বিধি-নিষেধ আরোপ; টাকাপয়সার টানাটানি —সাংবাদিকদের জন্য এ ধরনের প্রতিবন্ধকতার যেন কোনো শেষ নেই। আফ্রিকার বৃহত্তর গণতান্ত্রিক দেশে সংঘাত নিয়ে রিপোর্টিং করেন এমন সাংবাদিকের সংখ্যা এমনিতেই হাতেগোনা। তাছাড়া এ বিটটি ঘিরে পুরুষ সাংবাদিকদের প্রাধান্যই চোখে পড়ে। নাইজেরিয়াতে তাই স্বাভাবিকভাবেই এ ক্ষেত্রটিতে নারী সাংবাদিকদের কম দেখা যায়।
কিন্তু এ ধারণাটা বদলে দিচ্ছেন হিউমঅ্যাঙ্গেলের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হাওয়া শাফি নুহু। অলাভজনক অনুসন্ধানী মিডিয়া প্লাটফর্ম হিউমঅ্যাঙ্গেল প্রতিষ্ঠিত হয় ২০২২ সালে। হিউমঅ্যাঙ্গেল (অর্থ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে) নাইজেরিয়ায় সংঘাত, সন্ত্রাসবাদ, মানবিক সংকট ও উন্নয়নখাতে সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করে। প্রতিবেদনের গভীরতা বাড়াতে ব্যবহার করে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানী পদ্ধতি, ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা, ডেটা অ্যানালাইসিস, এবং ইন্টারঅ্যাকটিভ ও ভিজ্যুয়াল গল্প বলার কৌশল।
শাফি নুহু পড়াশুনা করেছেন আইন নিয়ে। গল্প-কবিতা লিখতেন। এখন তিনি সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছেন। ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্টারি আর দীর্ঘ প্রতিবেদনের মাধ্যমে মানুষের ওপর যুদ্ধ ও সংঘাত পরবর্তী প্রভাবগুলো তুলে ধরছেন বিস্তারিতভাবে। সম্প্রতি তিনি উইমেন’স মিডিয়া ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে একজন কিশোরী মেয়ের সাথে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ নির্যাতনের গল্প প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরেছেন। ডোগো গিদে নামের এক কুখ্যাত ডাকাত ও সন্ত্রাসী নেতা ২০২১ সালে স্কুল থেকে কিশোরী মেয়েদের গণহারে তুলে নিয়ে যায়। ধর্ষণ পরবর্তী তাদের মাতৃত্বের জন্য বাধ্য করে। সে দলে ছিল এই মেয়েটিও। পুলিৎজার সেন্টার ও নেফার নামের একটি সংগঠনের সহায়তায় শাফি নুহু আরো একটি অডিও ও ভিডিও ডকুমেন্টারিও তৈরি করেছেন। নেফার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নারীদের নিয়ে কাজ করে, যাদের স্বামী বা পরিবারের সদস্যরা গুম হয়েছেন বা বন্দিদশায় আছেন। সংগঠনটি তাদের মুক্তির জন্য চাপ দেয়। হিউমঅ্যাঙ্গেলের ধারাবাহিক রিপোর্টিংয়ের কারণে এরইমধ্যে কয়েকজন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
শাফি নুহু সম্প্রতি মর্যাদাপূর্ণ ডার্ট সেন্টার ওচবার্গ ফেলোশিপের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। হিউমঅ্যাঙ্গেলের প্রতিবেদকরাও তাদের প্রতিবেদনের জন্য বেশ কিছু মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার জিতেছেন—যেমন মাইকেল এলিয়ট অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সেলেন্স ইন আফ্রিকান রিপোর্টিং, সিগমা অ্যাওয়ার্ডস এবং ওয়েস্ট আফ্রিকান জার্নালিস্ট অব দ্য ইয়ার।
এই প্রশ্নোত্তর পর্বটি নেতৃস্থানীয় অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের নিয়ে জিআইজেএনের চলমান সাক্ষাৎকার সিরিজের অংশ। এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরা হয় । শাফি নুহু এখানে নাইজেরিয়াতে সংঘাত নিয়ে সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা, তাঁর শেখা গুরুত্বপূর্ণ পাঠ ও পরামর্শগুলো তুলে ধরেছেন।
জিআইজেএন: আপনি যে সব অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করেছেন, তার মধ্যে কোনটি আপনার প্রিয় এবং কেন?
হাওয়া শাফি নুহু: কিসের ওপর ভিত্তি করে “প্রিয়” শব্দটিকে তর্জমা করবো, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। তবে “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ” অর্থে বলতে পারব। আমি এখন আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনটি নিয়ে কাজ করছি। নাইজেরিয়ার গ্রামীণ অঞ্চলে ঘটে যাওয়া একটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনুসন্ধান। প্রতিবেদনটি যেহেতু এখনও প্রকাশ হয়নি, তাই আমি এ বিষয়ে আর কিছু বলতে পারছি না।

ছবি হাওয়া শাফি নুহু
তবে এরপরেই যে প্রতিবেদনটি আমার কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, ২০১৪ সালে বুনি ইয়াদি স্কুলে সংঘটিত মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া ছাত্রদের নিয়ে হিউমঅ্যাঙ্গেলের জন্য করা কাজটি। বোকো হারাম—একটি উগ্রপন্থী গোষ্ঠী যারা পশ্চিমা শিক্ষাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে—সেদিন স্কুলে হামলা চালিয়ে ঘুমন্ত ছাত্রদের পুড়িয়ে হত্যা করে। সেদিন যাঁরা পালানোর চেষ্টা করেছিল, তাদের গুলি করা হয়। আমি কয়েকজন বেঁচে যাওয়া ছাত্রকে খুঁজে বের করি। তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন ও পডকাস্ট তৈরি করি। এটি সেই কয়েকটি প্রতিবেদনের মধ্যে একটি, যা এই হত্যাযজ্ঞ এবং পরবর্তী পরিস্থিতি যথাযথভাবে নথিভুক্ত করতে সমর্থ হয়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ার বিরনিন ইয়াউরিতে স্কুলছাত্রীদের অপহরণের ঘটনা। স্কুল থেকে অপহৃত এবং পরবর্তীতে মুক্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১২ জন মেয়ে অন্যদের চেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বন্দি ছিল—মোট দুই বছর। মেয়েগুলো ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ—এমনকি মাত্র ১৩ বছর বয়সী একটি মেয়েও গর্ভবতী হয়ে পড়ে। যা ছিল নিদারুণ হৃদয়বিদারক এক ঘটনা, যা সামনে আনাটা খুব জরুরি ছিল। তথ্যচিত্র ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে এ ঘটনাগুলো বলতে পারার কারণে আমি কৃতজ্ঞ বোধ করি। শুধু নির্যাতিত ভুক্তভোগীদের কথা নয়, তাদের পরিবারগুলোর ওপর গণ-অপহরণের মনস্তাত্বিক ও সামাজিক প্রভাবগুলো কী ছিল, আমরা তাও তুলে ধরতে সমর্থ হই।
জিআইজেএন: আপনি যে অঞ্চলে কাজ করেন, সেখানে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো কী?
হাওয়া শাফি নুহু: সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ প্রতিবেদনে ভারসাম্য রক্ষা করা এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষের বক্তব্য নেওয়া। রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলাটা বেশ কঠিন। কারণ তাঁরা প্রায়ই প্রশ্নের উত্তর দিতে চায় না। আবার কোনো সহযোগিতাও করে না কিংবা কোনো ধরনের দিকনির্দেশনাও দেয় না। সাংবাদিকদের বন্ধু মনে করে না, প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে। যা আমাদের কাজের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টাতেই অনেক সময় চলে যায়। আবার যখন যোগাযোগ করা সম্ভব হয়, তখন তারা আমাদের এড়িয়ে যেতে চায় অথবা তথ্য দিলেও তা অসম্পূর্ণ থাকে।
তাদের কথা বলাটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি শুধু প্রতিবেদনকে ভারসাম্যপূর্ণ করে না, বরং যেসব অংশীদারেরা পরিবর্তন আনতে সক্ষম বা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে, তাদেরও বিষয়গুলোর সাথে একমত হতে বাধ্য করে। সাংবাদিক হিসেবে, আপনার পরম প্রাপ্তি হচ্ছে, লোকেরা আপনাকে বিশ্বাস করেই তাদের ব্যাথা ও যন্ত্রণার কথাগুলো বলেন। কেননা তাঁরা মনে করেন, আপনি তাদের দুঃখ-কষ্টগুলো অন্যদের কাছে এমনভাবে তুলে ধরতে সক্ষম, যা শুধু তাদের আবেগকেই নাড়া দেবে না, নীতিনির্ধারণ বা বাস্তব পরিবর্তনের সম্ভাবনাও তৈরি করবে—এটি সত্যিই গভীর একটি বিষয়। আমি নিয়মিত এই গুরু দায়িত্বের কথা ভাবি। তবে, অর্থবহ পরিবর্তনের সম্ভাবনাগুলো তখনই বাধাগ্রস্ত হয়, যখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলোকে স্বীকার করার কোনো আগ্রহ দেখায় না।
জিআইজেএন: অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে আপনি সবচেয়ে বড় কী ধরনের বাধা বা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন?
হাওয়া শাফি নুহু: আমি ঠিক নিশ্চিত নই যে, শুধুমাত্র একটি চ্যালেঞ্জকে সবচেয়ে বড় বলা যায় কিনা। তবে, গ্রামীণ অঞ্চলে যাওয়া, বিশেষ করে সংঘাতপূর্ণ এলাকায় কাজ করা, বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। আমি এমন কিছু এলাকায় গিয়েছি, বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ায়, যেগুলো অত্যন্ত বিপজ্জনক ছিল। কিন্তু এসব সফর আমাকে এমন সূত্রের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে, যাদের থেকে তথ্য পাওয়া অন্য কোনোভাবেই আর সম্ভব হতো না।
সংঘাত নিয়ে যাঁরা কাজ করেন এমন সাংবাদিকদের কাজ বেশ কঠিন। কেননা যুদ্ধকালীন নৃশংসতার প্রমাণ সংগ্রহের একমাত্র উপায় থাকে এখানে। আমরা এমন সব গল্পকে তুলে ধরি, যেগুলো রীতিমতো ধাক্কা দেওয়ার মতো এবং যা সহজে হজম করা কঠিন বলে মনে হয়। কখনো কখনো এটি মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে—যা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই ক্ষোভই পরিবর্তনের চালিকাশক্তি হতে পারে। তবে, মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখে আমাদের বারবার মনে হয়, সংঘাতপূর্ণ গ্রামগুলোতে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বিপদের সম্মুখীন হওয়ার কারণে ঠিক কী পরিমাণ সত্য আমরা প্রকাশ করতে পারছি না। এটি এক বিরাট বাস্তবতা।
জিআইজেএন: সাক্ষাৎকার গ্রহণের সেরা কৌশল বা পরামর্শ কী?
হাওয়া শাফি নুহু: অনেক কৌশল আছে। সত্যি বলতে, আমার প্রিয় কাজগুলোর একটি হলো শেখানো। প্রথমত, কারো সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় সে যদি নীরব হয়ে যায় তাহলে বিচলিত হবেন না। নীরবতাকে সময় দিন, বাড়তে দিন। আরেকটি পরামর্শ হলো সবসময় অনুমতির বিষয়টি নিশ্চিত করুন। এমনকি তাঁরা যদি আগে থেকে অবগতও থাকে, তারপরও জিজ্ঞেস করুন। যেমন, তাদের বলুন যে আপনি সাক্ষাৎকারটি রেকর্ড করতে যাচ্ছেন। এরপর জিজ্ঞাসা করুন, তাঁরা এতে সম্মত কিনা। আপনি কেন প্রতিবেদনটি তৈরি করছেন, তা তাদের বলুন। আর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় মাঝে মাঝে তাদের বলা কথার পুনরাবৃত্তি করুন। যেন তারা বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে পারে বা নতুন কিছু যোগ করতে পারে।
“সবসময় বাড়তি চেষ্টা করো। যদি ন্যূনতম কোনো সম্ভাবনাও থাকে যে একটু বেশি সময় থাকলে, অন্য কোথাও গেলে, আরেকজনের সঙ্গে কথা বললে, বা সময় বাড়ানোর অনুরোধ করলে আরও তথ্য বের করে আনতে পারবে—তাহলে তাই করো।”—হাওয়া শাফি নুহু
এছাড়া, তাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলুন এবং কিছু দরকারি নোট নিন। এসবের জন্য রেকর্ড করাটাই সেরা উপায়। আমরা জানি, সাংবাদিকদের কাজ হলো তথ্য প্রকাশ। যদিও এ বিষয়গুলো সূত্রদের সতর্ক করে তোলে। অনেক সময় তারা অনেক বেশি সতর্ক হয়ে যায়, ফলে যথেষ্ট তথ্য দিতে চায়না।
তাই সাক্ষাৎকার নেওয়ার গোটা প্রক্রিয়াটিকে যতটা সম্ভব মানবিক করুন। আনুষ্ঠানিকতা কমান। চোখে চোখ রেখে আন্তরিকতার সাথে কথা বলুন। আপনি তাদের প্রতি যত্নশীল—এটি বুঝিয়ে দিন। যা সাক্ষাৎকারকে আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর করে তুলবে।
জিআইজেএন: অনুসন্ধানে ব্যবহৃত আপনার প্রিয় রিপোর্টিং টুল, ডেটাবেস, বা অ্যাপ কী?
হাওয়া শাফি নুহু: সম্ভবত আমার আইফোন: ক্যামেরা, রেকর্ডিং অ্যাপ, আর গুগল ডকস।
জিআইজেএন: আপনার ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত সেরা যে পরামর্শটি পেয়েছেন, তা কী? এবং একজন উদীয়মান তরুণ অনুসন্ধানী সাংবাদিককে আপনি কী পরামর্শ দেবেন?
হাওয়া শাফি নুহু: সবচেয়ে উপকারী পাঠটি আমি আমার সম্পাদক আহমদ সালকিদার কাছ থেকে পেয়েছি। শিক্ষাটি হলো, কখনোই সাধারণ বা গড়পড়তা কাজ করে তুষ্ট থেকো না। সবসময় বাড়তি চেষ্টা করো। যদি সামান্যতম কোনো সম্ভাবনাও থাকে যে একটু বেশি সময় থাকলে, অন্য কোথাও গেলে, আরেকজনের সঙ্গে কথা বললে, বা সময় বাড়ানোর অনুরোধ করলে আরও তথ্য বের করে আনতে পারবে—তাহলে তাই করো। এতে তোমার প্রতিবেদন আর সাংবাদিক হিসেবে তোমার কাজগুলো আরও সমৃদ্ধ হবে।
জিআইজেএন: আপনি যে সাংবাদিকদের অনুরাগী, তাদের সম্পর্কে জানতে চাই এবং কেন?
হাওয়া শাফি নুহু: এ তালিকায় অনেকেই আছেন: স্যালি হেইডেন, কুনলে আডেবাজো, লাইন ভ্যাবেন, ডেলে ওলোজেদে। এদের সবার মধ্যে যে মিলটি আছে তা হচ্ছে: তাঁরা মানুষের অনুভূতি বুঝতে পারেন এবং সেই অনুভূতিকে সঠিকভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম।

২০২১ সালে একটি স্কুলে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা নিয়ে হিউমঅ্যাঙ্গেলে করা প্রতিবেদনকে নিজের পেশাজীবনের অন্যতম প্রিয় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হিসেবে উল্লেখ করেছেন হাওয়া শাফি নুহু। ছবি: স্ক্রিনশট হিউমঅ্যাঙ্গেল
জিআইজেএন: আপনার করা সবচেয়ে বড় ভুল কী ছিল এবং এ থেকে আপনি কী শিখেছেন?
হাওয়া শাফি নুহু: শুরুর দিনগুলোতে আমি যে ভুলটি করেছি, তা হলো—ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে আমি অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু আর সোর্স নিয়ে অনেক বেশি গবেষণা করতাম। পরবর্তীতে আমি বুঝতে পেরেছি যে, দুটোই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যে লোকেদের কাছে যাচ্ছেন তাদের সম্পর্কে আগে থেকে খোঁজখবর করাটা যেমন প্রয়োজন, আবার সেখানে কী ধরনের নেটওয়ার্ক কাজ করে তা জানাটাও জরুরী। যেমন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন কিনা। যদি না হয় তবে আপনাকে একাধিক পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে যেতে হবে। সেখানকার লোকেরা কী ভাষায় কথা বলে—এ ধরনের আরো অনেক ছোটখাটো কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আগে থেকে জানতে হবে।
জিআইজেএন: কাজ ঘিরে যে শ্রান্তি সে সমস্যা মোকাবিলা করেন কীভাবে?
হাওয়া শাফি নুহু: আমি যেটা করি, তা হলো আগে থেকে নিজেকে তৈরি করে রাখি। কোনো গল্প নিয়ে সরোজমিনে মাঠে নামার আগে আমি জানি যে, এ কাজে হাত দেওয়াটা আমার জন্য বেশ কঠিন ও কষ্টকর হবে। আমি তখন নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করার চেষ্টা করি। নিজের সাথে কিছু অনুভূতিগত বোঝাপড়া তৈরি করি যা আমাকে এ পরিস্থিতি সামলাতে সাহায্য করবে। তাছাড়া আমি যখনই প্রয়োজন মনে করি, তখনই কাজ থেকে বিরতি নিয়ে থাকি।
জিআইজেএন: অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টিকে আপনি হতাশাজনক মনে করেন, বা ভবিষ্যতে কী পরিবর্তন দেখতে চান?
হাওয়া শাফি নুহু: আমি আশা করি রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আরও বেশি আগ্রহী হবেন।
মোহাম্মদ তাওহীদ নাইজেরিয়ার একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। কাজ করেন সংঘাত, অপতথ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, ভূরাজনীতি, উন্নয়ন এবং সামাজিক গতিশীলতা সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক, মিডিয়া ডাইভারসিটি ইনস্টিটিউট ইউকে, ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্ট, প্রিমিয়াম টাইমস, ফাউন্ডেশন ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি মিডিয়া ফেলোশিপ পেয়েছেন। এছাড়া সেন্টার ফর জার্নালিজম, ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিজেআিইডি), ওলে সোয়িংকা সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (ডব্লিউএসসিআইজে), ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং (আইসিআইআর), এবং লিবারেলিস্ট সেন্টার ফর এডুকেশন থেকে রিপোর্টিং অনুদান জিতেছেন।