তিউনিসিয়ার একনায়কের শেষ, উন্মত্ত ফোনকল উন্মোচিত হলো যেভাবে
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
ক’জনইবা ভেবেছিল, ১০ বছর আগে উত্তর আফ্রিকার মাত্র সোয়া কোটি মানুষের দেশ ছোট্ট তিউনিসিয়াতেই জ্বলে উঠবে বিপ্লবের আগুন, আর তা আরব বসন্ত অভ্যুত্থাণে রূপ নিয়ে ছড়িয়ে পড়বে গোটা অঞ্চলে। কিন্তু ২০১০ সালের ডিসেম্বরে, সরকারের ক্রমাগত হয়রানিতে ক্ষুব্ধ, তিউনিসিয় ফেরিওয়ালা মোহাম্মদ বুআজিজি যখন নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করলেন, সেটি সপ্তাহখানেকের মধ্যে এই অঞ্চলের সবচেয়ে দাপুটে একনায়কদের একজনের পতনের কারণ হল।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে তিউনিসিয়ার সদ্য-সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইন আল-আবিদিন বেন আলী, আকস্মিকভাবে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করেন। এই ঘটনার বর্ষপূর্তিতে একটি অনুসন্ধানী তথ্যচিত্র সম্প্রচার করে বিবিসি। এটি নির্মিত হয়, ২৩ বছরব্যাপী স্বৈরশাসনের চূড়ান্ত ঘন্টা বাজার আগে, বেন আলীর শেষ কয়েকটি ফোন কলের ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ড নিয়ে।
তাদের এই উন্মোচন আবর্তিত হয়েছে ছয়টি ফোন কলকে ঘিরে। বেন আলী তাঁর সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও কর্মকর্তাদের কাছে কলগুলো করেছিলেন। এদের একটি ছিল ১৩ই জানুয়ারিতে দেয়া তাঁর বিখ্যাত ভাষণের আগে। ক্ষমতা ধরে রাখার শেষ চেষ্টা হিসেবে, এই ভাষণে তিনি ক্ষমা ভিক্ষা চান। সৌদি আরবে পালানোর পর, ফিরে আসার সম্ভাবনা যাচাই করতে তিনি উন্মত্ত হয়ে তিউনিসিয়ায় তাঁর বন্ধু ও সহযোগীদের বাকি পাঁচটি ফোন কল করেছিলেন।
এই রেকর্ডিংগুলো দুর্নীতিগ্রস্ত সেই সরকারের শেষ দিনগুলো সম্পর্কে বিরল ও পর্দার অন্তরালের এক দৃশ্য দেখার সুযোগ করে দিয়েছে এবং সমসাময়িক ইতিহাসে প্রথম আরব একনায়কের পতনকে ধারণ করার মাধ্যমে ঐতিহাসিক একটি মুহূর্তকেও ধরে রেখেছে।
ফাঁস হওয়া অডিও প্রাপ্তি, পরিচয় যাচাই এবং রেকর্ডিংগুলো কীভাবে ভবিষ্যতের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করতে পারে – এমন সব বিষয় নিয়ে বিবিসি নিউজের আরবি প্রযোজক এবং তথ্যচিত্রটির পরিচালক আমির নাদেরের সঙ্গে কথা বলেছেন জিআইজেএনের আহমাদ হাজ হামদু।
জিআইজেএন: আপনি কীভাবে “দ্য ডিক্টেটরস লাস্ট কলস” নিয়ে কাজ শুরু করলেন? ফাঁস হওয়া অডিও কি গল্পের দিকে নিয়ে গেছে, নাকি গল্পটি এই রেকর্ডিংগুলো খোঁজার দিকে নিয়ে গেছে?
ইএন: আমরা এই রেকর্ড পেয়েছি একজন সোর্সের কাছ থেকে, যার সম্পর্কে বেশি কিছু বলতে পারছি না। হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছি, তবে এই রেকর্ড দিয়ে ঠিক কী করব, সেই চিন্তা শুরু করার আগে বুঝতে পারছিলাম, এই জিনিসটির পেশাগত বিশ্লেষণ ও পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই প্রক্রিয়া বেশ জটিল।
জিআইজেএন: গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার প্রেক্ষিতে সোর্সের কাছ থেকে কীভাবে রেকর্ডগুলো আদায় করলেন?
ইএন: সাধারণভাবে, বিবিসি তাদের সোর্সের নিরাপত্তা প্রচণ্ড গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। তাঁরা তাদের অবদানের কারণে ক্ষতি বা চাপের মুখোমুখি হতে পারেন বলে আমরা সোর্সদের ব্যাপারে বেশ যত্নশীল থাকি। শুধুমাত্র এনক্রিপ্টেড অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ এবং সোর্সের দেওয়া তথ্য- বাছাই করা অল্প কিছু মানুষের মধ্যে রাখার বিষয়টি নিশ্চত করা জরুরী, যেন তা বেহাত না হয়।
জিআইজেএন: অনুসন্ধানে আপনি বলেছেন যে তথ্যচিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দলটি রেকর্ডগুলো দু’ভাবে যাচাই করেছে। প্রথমত কণ্ঠ বিশেষজ্ঞেদের মাধ্যমে, এবং দ্বিতীয়ত প্রেসিডেন্ট বেন আলীর নিকটজনদের মাধ্যমে। আপনি কি এই যাচাই প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলতে পারেন?
ইএন: অডিওগুলো যে নির্ভেজাল শুধু তা-ই নয়, আমরা যাদের নাম বলছি টেপে শোনা কন্ঠগুলো যে আসলেই তাদের – এবং সেই বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে আমরা যে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি – আমাদের তা নিশ্চিত করতে হয়েছে। তাই আমরা এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেছি এবং রেকর্ডগুলো বিশ্লেষণের জন্য অনেক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করেছি। প্রাথমিকভাবে আমরা দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করেছি: প্রথমত, অডিও ফরেনসিক দিয়ে কারিগরি বিশ্লেষণ, এবং দ্বিতীয়ত, রেকর্ডে থাকা ব্যক্তিদের নিকটজনদের [ফোনকল] শোনানো।
আমরা যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, ও যুক্তরাষ্ট্রে অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের খোঁজ করি, যাঁরা নিজেদের বিশেষভাবে উদ্ভাবিত সফটওয়্যার ব্যবহার করেন। শেষে, আমরা চারটি আলাদা বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে কাজ করেছি, যাঁরা রেকর্ডে বিকৃতির প্রমাণ তদন্তে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। ডিজিটাল পদ্ধতিতে কণ্ঠ বদলে ফেলার কৌশল, ডিপফেক টুলের মাধ্যমে সম্পাদনা বা জালিয়াতি করার কোনো চিহ্ণ ছিল কিনা – তা-ও খতিয়ে দেখা হয়েছে।
আমরা যুক্তরাজ্যের একজন নেতৃস্থানীয় অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গেও কাজ করেছি। তিনি একজন উত্তর আফ্রিকান ধ্বনিবিদ্যা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কাজ করেছেন যাতে ফোনালাপ বা শব্দের মধ্যে কোনো অসঙ্গতি থাকলে তা ম্যানুয়ালি শনাক্ত করা যায়। এই প্রক্রিয়াটিকে “ক্রিটিকাল লিসেনিং” বলা হয়।
ফোনকলে যাঁদের কণ্ঠ আমরা শুনেছি, তাঁদের প্রত্যেকের নামও আমরা নিশ্চিত করেছি। এজন্য যারা তাঁদের কণ্ঠ চেনেন, তাদেরকে শোনানো হয়েছে। বেন আলীর ক্ষেত্রে শোনানো হয়েছে তাঁর তিন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা, তাঁর রাজনৈতিক দলের নেতা, এবং প্রেসিডেন্টের একজন কণ্ঠ-অনুকরণকারীকেও। অন্যান্য ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বা পেশাগতভাবে তাদের নিকটজনদের আমরা খুঁজে বের করেছি।
অবশ্যই, বিপ্লবের সকল বিবরণ গভীরভাবে গবেষণা এবং ঐতিহাসিক রেকর্ডের সঙ্গে কলগুলোর বিষয়বস্তুর মিলিয়ে দেখার মাধ্যমে কলের সত্যতা যাচাই করার সাধারণ প্রক্রিয়াও এখানে ছিল।
কোনো পর্যায়েই অডিওগুলোতে সন্দেহ করার মতো প্রমাণ আমাদের চোখে পড়েনি।
জিআইজেএন: রেকর্ডগুলো হাতে পাওয়ার পর কীভাবে স্টোরির পরিকল্পনা ও প্রযোজনা করেছিলেন?
ইএন: মৃত বেন আলী (২০১৯ সালে সৌদি আরবে নির্বাসনে থাকাকালীন তাঁর মৃত্যু হয়) ছাড়া ফোনকলে জড়িত প্রত্যেককে যুক্ত করে আমরা একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু তাঁরা সবাই অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানান। বিভিন্ন বিন্যাসে চলচ্চিত্রটি নির্মাণের চেষ্টা ও চিন্তায় আমরা অনেকটা সময় ব্যয় করেছি। পরিশেষে আমার সম্পাদক মুস্তাফা খলিলি ও আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ফোনকলগুলো কাজে লাগিয়ে এবং আর্কাইভের উপকরণ ব্যবহার করে বেন আলীর শাসনের শেষ ৪৮ ঘন্টার বর্ণনা শুধুমাত্র একজন তিউনিসিয় নয়, বরং বৈশ্বিক দর্শকদের কাছেও আকর্ষণীয়, বোধগম্য, এবং প্রাসঙ্গিক মনে হবে।
আমাদের প্রতিষ্ঠানের মোশন ডিজাইনার ও অ্যানিমেটর জেসমিন বনশোর এই বিশাল কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি আমাদের চাহিদা মোতাবেক স্টোরি বোর্ড ও সিকোয়েন্স পুনঃনির্মাণ করেছেন। তারপর তিনি এই দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার জন্য আমাদের সহকর্মী ইসমাইল মুনিরের সহায়তা নিয়েছেন।
জিআইজেএন: অনুসন্ধানের কাজে ফাঁস হওয়া রেকর্ড ব্যবহারের সবচেয়ে ভালো উপায় কী?
ইএন: দর্শকশ্রোতার সামনে আপনি যে কাজ তুলে ধরছেন, একজন সাংবাদিক হিসেবে আপনি সবসময় সেই কাজের সত্যতায় আস্থা রাখতে চান। আমি বরং বলব, আমি আবিস্কার করেছি যে কাজের ক্ষেত্রে উপকরণ হিসেবে অডিওর সত্যতা নিশ্চিত করা সবচেয়ে কঠিন এবং চাতুর্যপূর্ণ।
যদি তা করতে পারেন, তাহলে আপনি যত বেশি সম্ভব দর্শকশ্রোতার জন্য এটিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে চাইবেন। আমাদের জন্য এই অ্যানিমেশন সত্যিকার অর্থেই বৈশ্বিক দর্শকশ্রোতাদের সংযুক্ত করতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। আমরা যদি শুধুমাত্র ফোনকলে জড়িতদের ছবি ব্যবহার করতাম, আমার মনে হয়, এই রেকর্ডের আগ্রহ শুধুমাত্র তিউনিসিয়া ও আরব দর্শকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত।
জিআইজেএন: আপনার কী মনে হয়, সমগ্র বিশ্ব যখন তিউনিসিয়ার কী ঘটছে সেদিকে তাকিয়ে ছিল, ঠিক সেই সময়ে বেন আলীর মনের সংশয় উন্মোচন করা এই স্টোরির গুরুত্ব কতখানি?
ইএন: আমি মনে করি, শেষ সময়ে প্রেসিডেন্ট কতটা অসহায় ছিলেন, তাই উন্মোচিত হয় এই অনুসন্ধানে। সেই অর্থে সরকার ও “রাজপথ” থেকে তাঁর বিচ্ছিন্নতা উন্মোচিত হয়। আরব বসন্তের সময় আমরা অনেক নেতাদের এমন পরিণতি দেখতে পাই। এটি আমাদের সামনে তুলে ধরে, ক্ষমতা কতটা ভঙ্গুর হতে পারে, ২৩ বছরের দীর্ঘ স্বৈরশাসন ভিতরে ভিতরে কতটা নড়বড়ে হতে পারে।
আমার মতে, এই ঘটনা আমাদের তিউনিসিয়ার বিপ্লবের শক্তিও মনে করিয়ে দেয়। হ্যাঁ, এই রেকর্ড আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, বেন আলীর মন্ত্রীরাই তাঁর উপর আস্থা রাখতে পারেননি এবং তাঁর প্রত্যাবর্তন নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন, তবে তাঁদের কার্যকলাপ শুধুমাত্র রাজপথের আলোয় প্রকাশ্যে আসে।
জিআইজেএন: স্টোরি অনুসারে, রেকর্ডে বেন আলীর সঙ্গে যাঁরা কথা বলেছিলেন, তাঁরা হয় অস্বীকার করেছেন, নয়তো কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। কীভাবে আপনি দল নিয়ে তাঁর সাবেক কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন? এ ধরনের অস্বীকৃতি মোকাবিলায় সাংবাদিকদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
ইএন: আরও স্পষ্ট করে বললে, আদতে কোনো দ্বন্দ্ব হয়নি। ফোন রেকর্ডে ঘটনাগুলোর পরম্পরা উঠে আসে। এই পরম্পরা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে, কীভাবে প্রেসিডেন্ট বেন আলী তাঁর সহযোগীদের কাছ থেকে সাংঘর্ষিক পরামর্শ পেয়েছিলেন। এই রেকর্ডগুলোতে কাউকে জবাবদিহি করার মতো কোন চূড়ান্ত সাক্ষ্য নেই। তবে, এই ঘটনায় জড়িত চরিত্রগুলো সম্পর্কে কৌতূহলী হওয়ার মতো বেশ কিছু উপকরণ ছিল।
তাঁদেরকে এই তথ্যচিত্রে অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে আমরা তাঁদের সবার সঙ্গে সরাসরি বা ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেছি, যেন আমরা এই ঘটনাকে তাঁদের দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখাতে পারি। আমাদের ধারণা ছিল, দশ বছর আগের ঘটনা নিয়ে কথা বলতে তাঁরা সংকোচ বোধ করবেন না। তবে, তাঁদের রাজি করাতে না পেরে, আমরা তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম। বোধ হয়, তাঁদের অনেকে এখনো আদালতে মামলার মুখোমুখি, আর অন্যরা অংশ নিতে চাননি।
যে কোন স্টোরিতে সবাইকে যথেষ্ট সুযোগ দেয়া উচিত, যেন সেই স্টোরিতে সবার ভাষ্য উঠে আসে। পরামর্শ হিসেবে আমি মনে করি, ভালো যোগাযোগ-সম্পন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করা সবসময় লাভজনক। কারণ সুযোগের নতুন দরজা খুলতে তারা নিজেদের ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারেন।
জিআইজেএন: কিসের ভিত্তিতে স্টোরিটিকে একটি তথ্যচিত্র বলবেন? যে পদ্ধতিতে এই স্টোরি বলা হয়েছে, সে সম্পর্কে বলুন।
ইএন: বেন আলীর শাসনকালের শেষ সময়ের বিভিন্ন বয়ান নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এসবের মধ্যে সাংবাদিক ও ইতিহাসবিদদের সংকলিত ভাষ্য, এবং পরবর্তীতে ট্রাইবুনালে তাঁর কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য উল্লেখযোগ্য। এই তথ্য ব্যবহার করে সময় অনুযায়ী ঘটনার বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রতিটা কল রেকর্ড উপস্থাপনের সামর্থ্য আমাদের ছিল। ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ নাটকীয় মুহূর্তের ভালো মানসম্পন্ন ভিডিও হাতে পাওয়ায় ভাগ্য আমাদের সহায় ছিল। অবশ্য আমরা ঘটে যাওয়া প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তুলে ধরতে পারিনি। আমরা মূলত একজন স্বৈরশাসকের সংকটাপন্ন অবস্থা ও প্রবল বিক্ষোভের মুখে ধ্বসে পড়ার মূল গল্প তুলে ধরেছি।
জিআইজেএন: ফাঁসনির্ভর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় ঐতিহাসিক আর্কাইভ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী?
ইএন: এমনকি সামাজিক মাধ্যমে নথিবদ্ধ ও অনলাইনে আংশিক লাইভ হওয়ায় আরব বসন্তকে আমরা সবাই স্মরণ করি। তা সত্ত্বেও এই অবিশ্বাস্য সেইসব উপকরণের সংগ্রহ মোটেও সমৃদ্ধ নয় এবং ইতিহাস থেকে বোধ হয় অনেক কিছুই হারিয়ে গিয়েছে। যত ধরনের সোর্স পাওয়া যায়, সবগুলোই বিবেচনা করে দেখতে হবে – সংবাদ সংস্থার সংগ্রহশালা, মানুষের সঙ্গে কথা বলুন- তাদেরও নিজস্ব ভিডিও, অডিও রেকর্ড থাকতে পারে। ইউটিউব, ফেসবুক, ও টুইটারে খোঁজ করুন। যত ধরনের উপকরণ সম্ভব, সত্যিকার অর্থে সব আপনার প্রয়োজন।
জিআইজেএন: প্রভাবশালীদের নিয়ে ফাঁসনির্ভর স্টোরি করার সময় স্বাধীন অনুসন্ধানী সাংবাদিক বা মাঝারি সামর্থ্যের বার্তাকক্ষের জন্য আপনার মূল পরামর্শ কী?
ইএন: ব্যাপক সমর্থনের জন্য আহ্বান জানান! উপকরণের কারিগরি বিশ্লেষণ বেশ ব্যয়বহুল, তবে আপনি কয়েকজন বিশেষজ্ঞ খুঁজে পেতে পারেন, যারা কাজের শেষে নিজের নাম দেখার জন্য সানন্দে আপনাকে সাহায্য করতে চান। আপনার বাজেট কম হলে, সেটি বলতে মোটেও সংকোচ করবেন না। আপনি যদি এই ফাঁসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বুঝাতে পারেন, আমি মনে করি, সাধারণ মানুষ আপনার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী হতে পারে। প্রভাবশালীদের আর্থিক সামর্থ্য বেশি থাকতে পারে এবং আপনাকে আইনী পথে চাপ দিতে পারে। ভালো আইনী পরামর্শ পাওয়ার ব্যাপরে নিশ্চিত হন। আবারও মনে রাখবেন, কিছু আইনজীবী জনস্বার্থে নিঃসংকোচে আপনাকে সাহায্য করতে পারেন।
আমরা আইসিআইজের সঙ্গে অংশীদারিত্বে আরও বেশ কিছু ফাঁসভিত্তিক অনুসন্ধানে কাজ করেছি। আপনার কাছে কোনও রিসোর্সের ঘাটতি থাকলে, যাদের কাছে সেই রিসোর্স আছে, চাইলে তাদের সঙ্গেও যৌথভাবে কাজ করতে পারেন।
এই স্টোরি মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে একটি ধারাবাহিকের দ্বিতীয় পর্ব।
আরও পড়ুন
আল জাজিরার ডেটা সাংবাদিক মোহাম্মদ হাদ্দাদের প্রিয় অনুসন্ধানী টুল
রিপোর্টার কেটি ম্যাককিউ’জ টিপস ফর কাভারিং মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স ইন আরব গাল্ফ স্টেটস
আরব উপসাগরীয় অঞ্চলে অভিবাসন নিয়ে রিপোর্টিং গাইড
আহমাদ হাজ হামদু একজন সিরীয় সাংবাদিক। তিনি দামাস্কাস ইউনিভার্সিটি থেকে মিডিয়া বিষয়ে স্নাতক করেছেন। আরব রিপোর্টার্স ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম, দারাজ, গার্ডিয়ান এবং অন্যান্য গণমাধ্যমে তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি জিআইজেএনের সদস্য প্রতিষ্ঠান সিরিয়ান ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং ফর অ্যাকাউন্টেবিলিটি জার্নালিজমের (এসআইআরএজে) সহ-প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠানটি মূলত সিরীয় সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দেয়।