শুরুর দিককার একটি মেমোতে ইন্টারনেশন জার্নালিজম নেটওয়ার্কের সারবত্তা; ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত জোটবদ্ধ প্রকাশনার এই দলটি শেষ পর্যন্ত তিনটি মহাদেশের ১৫টি দেশের সংবাদ মাধ্যমকে একত্র করতে সক্ষম হয়। ছবি: ফিলিপ ফ্রেজিয়ারের সৌজন্যে
ইন্টারনেশন: (সম্ভবত) বিশ্বের প্রথম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নেটওয়ার্ক
ইন্টারনেট যুগ শুরুর আগে আমি যখন একটি আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছিলাম, সে সময় ঠিক এমন একটি প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলাম বলে মনে পড়ে: “তোমরা আমেরিকানরা, তোমরা সবসময় পাহাড় সমান তথ্য নিয়ে মেতে থাকো।’’ ফোনের অন্য প্রান্তে ছিলেন দক্ষিণ সুইডেনের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র সিডসভেনস্কা দাগব্লেডেটের সম্পাদক নিলস গুনার নিলসন। আমরা ইউরোপীয় অন্য যে সব সম্পাদকদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাদের মতো নিলসনও কিন্তু “তথ্য” বিমুখ ছিলেন না। প্রকৃতপক্ষে, তার দলের সাংবাদিকসহ আমাদের কাছ থেকেও বিভিন্ন সময় তিনি তথ্য খুঁজে ফিরতেন। তিনি মূলত কথাটি বলেছিলেন একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মধ্যে তথ্যের উপস্থাপন নিয়ে। তিনি মনে করতেন আমরা আমেরিকানরা খুব তড়িঘড়ি করে শুরুর দিকেই তথ্য দিয়ে দেই। ফলে রসালো ও তাজা সব তথ্যের ভিড়ে প্রতিবেদনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খুঁটিনাটি বিষয়গুলো উল্টোনো পিরামিডের নীচে হারিয়ে যায়।
প্রায় ৪০ বছর আগে একটি আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী নেটওয়ার্ক – যা সম্ভবত বিশ্বের প্রথম – গড়ে তোলার সময়ের কথা ভাবলে এই কলটির কথাই মনে পড়ে। এই ধারণাটি তখন বেশ প্রচলিত ছিল: আমেরিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উদ্ঘাটনগুলোকে ইউরোপীয় কায়দায় সাহিত্যিক আদলে উপস্থাপন করা হতো না; ইউরোপীয় সাংবাদিকতায় মোটাদাগে উপসংহারের আগে পটভূমি থাকতো। ইন্টারনেট যুগ শুরুর পর দেশভেদে সাংবাদিকতার স্বতন্ত্র শৈলীগত বৈশিষ্ট্যগুলো এখন অনেকটাই মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে এবং গত দশ বছরে তথ্য ভাগাভাগির সুচারু কৌশলের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে জোটবদ্ধতা ও যুগান্তকারী অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি অনেকটাই সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তবে একটা বিষয় ছিল যা আমরা পরস্পরের সঙ্গে ভাগ করে নিতাম: অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার শক্তি এবং দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ক্ষমতার বলয়গুলোকে অনুসরণের ক্ষমতা।
একটি মৌলিক নতুন ধারণা
১৯৮৬ সালে, ধারণাটি ঘিরে উৎসাহ যোগান আমেরিকার প্রগতিশীল সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন দ্য নেশনের তৎকালীন সম্পাদক ভিক্টর নাভাস্কি। দেড়শ বছরেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম সাপ্তাহিক প্রকাশনা হিসেবে খ্যাত এ ম্যাগাজিনটি দেশ সেরা সাংবাদিক তৈরির মাধ্যমে চলমান স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে প্রজন্মের বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার গোড়াপত্তন করে। দ্য নেশনে যোগ দেওয়ার আগেই ম্যাগাজিন সাংবাদিকতায় ঝানু লেখক ও সম্পাদক হিসাবে নাম কুড়িয়েছিলেন নাভাস্কি। নতুন ধারণাটি ঘিরে তিনি তখন বিদেশের সমমনা সাপ্তাহিক ও দৈনিক প্রকাশনাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন, যারা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ঘিরে আগ্রহী ছিল। সে সময় পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর পাশাপাশি লাতিন আমেরিকার সদ্য স্বাধীন গণতান্ত্রিক কয়েকটি রাষ্ট্রে নতুন কিছু প্রকাশনা বিকশিত হওয়া শুরু করে। যৌথভাবে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিকে কেন ‘অভিন্ন স্বার্থ’ ভাবা হবে না? এটা ঠিক যে প্রকাশনাগুলো নিজ দেশে পরস্পরের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, তবে বিদেশের বাজারে তারা নিশ্চয়ই পরস্পরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে না। যখন কর্পোরেট শক্তি আর অপরাধী চক্রগুলো দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আরো বড় পরিসরে সরে যেতে শুরু করেছে, তখন আমরা কেন জোট বেঁধে তাদের ট্র্যাক বা উন্মোচন করবো না? আজ বিষয়টি অত্যন্ত স্বাভাবিক মনে হতে পারে, কিন্তু তখন এভাবে কাজ করার ধারণাটি ছিল সম্পূর্ণ নতুন।
ওই সময় আজকের মতো চাইলেই নতুন ধারণা নিয়ে আলোচনার জন্য কারো সঙ্গে চট করে ইমেইলে যোগাযোগ করা যেত না। আটলান্টিকের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের ফোন কলগুলোও ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই নেটওয়ার্ক তৈরির একমাত্র উপায় ছিল সেকেলে পন্থায় সশরীরে যোগাযোগ করা। আশ্চর্যজনকভাবে, ভিক্টর আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে আমি আগ্রহী কিনা। আমার বয়স তখন মাত্র তিরিশের ঘরে, সাংবাদিকতায় খুব একটা পোক্ত হয়ে উঠিনি, কিন্তু গল্পের বৈশ্বিক উপস্থাপনে দীর্ঘদীন থেকেই আগ্রহী ছিলাম। আমি বিদেশী ম্যাগাজিন বা অনূদিত বৈশ্বিক সংবাদপত্রের সংকলন খুঁজতাম এবং ইউরোপ ও মেক্সিকোতে রিপোর্টিং করেছি। তখন সদ্য প্রতিষ্ঠিত সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিংয়ে জুনিয়র রিপোর্টার হিসেবে চাকরি করছিলাম। এটির দুই সহ-প্রতিষ্ঠাতা তখন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা শেখান। আমি দ্য নেশনের জন্য কয়েকটি প্রতিবেদনও লিখেছিলাম এবং সহ-লেখক হিসেবে “সার্কেল অফ পয়জন“, (সিআইআর-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড ওয়েয়ারের সঙ্গে) কাজ করেছি। বইটি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নিষিদ্ধ কীটনাশকের ডাম্পিংয়ের ঘটনা উন্মোচিত করেছে। ওই বইয়ের জন্য প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে আমি শিখেছি, কিভাবে সীমানা পেরিয়ে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে হয়। এবং আপনি যদি জানেন যে, কোন তথ্য ঠিক কোন জায়গাতে খুঁজতে হবে, তাহলে আন্তর্জাতিক প্রচুর উৎস থেকে তথ্য পাওয়া যায়। তাই আমি অনেকটাই আশাবাদী ছিলাম যে, এই ধরনের একটি উদ্যোগ ফলপ্রসু হতে পারে। আমি প্রস্তাবে রাজি হলাম, ফ্রেঞ্চ ভাষার ওপর কলেজ থেকে একটি কোর্স করে কয়েক মাস পর প্যারিসে পাড়ি জমালাম। ইন্টারনেশন ভূমিষ্ট হলো।
ভিক্টরের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক শেষে, কখনো কখনো পানপাত্র ভর্তি ভদকা হাতে, আমরা একটি পরিকল্পনা দাঁড় করাই। আমার বন্ধু, মেধাবী প্রকাশনা ব্যবসায়ী ফিলিপ ফ্রেজার নিউ ইয়র্কে আমার সঙ্গে কাজ করবেন। (তিনি রাজনৈতিক দুর্নীতি ও পরিবেশের ওপর একটি নিউজলেটার নিয়ে কাজ শুরু করেন, যা পরবর্তীতে সাংবাদিকতায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে এবং ব্যবসায়িকভাবেও লাভজনক হয়; এখন আমেরিকান অনলাইন প্লাটফর্ম সাবস্ট্যাকে হাইটাওয়ার লোডাউন যেমনটা রয়েছে।) এছাড়াও তিনি যাবতীয় লজিস্টিক দিকগুলো সামলাতেন। আমার দায়িত্ব ছিল বিভিন্ন দেশের সম্পাদকদের সঙ্গে দেখা করা, পারস্পরিক আগ্রহ আছে এমন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির লক্ষ্য ও প্রকাশনা ঘিরে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করা, লেখকদের খুঁজে বের করা এবং দ্য নেশনের তৎকালীন বিদেশী সম্পাদক জর্জ ব্ল্যাকের (যিনি সম্প্রতি ভিয়েতনামের উপর একটি বিখ্যাত বই লিখেছেন) কাছে পাঠানোর আগে প্রতিবেদনগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে সম্পাদনা করা। হ্যামিল্টন ফিশ, দ্য নেশনের তৎকালীন প্রকাশক (বর্তমানে ওয়াশিংটন স্পেক্টেটরের প্রকাশক) আমাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে উদ্যোগটি সম্পর্কে সবাইকে জানাতে।
১৯৮৭ সালের বসন্তে আমস্টারডামে আমাদের প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সহ-আয়োজক ডাচ সাপ্তাহিক ভ্রিজ নেদারল্যান্ড, এর সম্পাদক রিনাস ফার্ডিনান্দুস আমস্টারডামে একদল অনুসন্ধানী সাংবাদিক সম্মিলিত হওয়ার পর কী ঘটতে পারে তা দেখার জন্য সহজাত কৌতুহল নিয়ে উদার চিত্তে আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। উদ্বোধনী সম্মেলনের একটি অডিও রেকর্ড সংরক্ষণ করেছিলেন ফিলিপ। ৩৬ বছরের পুরানো খসখসে অডিও রেকর্ডে আমরা শুনতে পাই আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের একটি সহযোগী নেটওয়ার্ক সম্পর্কে চিন্তার বিষয়টি কতটা অসম্ভাব্য ছিল তা নিয়ে কথা বলা শুরু করেছিলেন ভিক্টর। (আমি আরো খুঁজে পেয়েছি যে ফিলিপ আমাদের কর্মকাণ্ডের অগ্রগতি সম্পর্কে রিপোর্ট করার জন্য তাকে পাঠানো কিছু চিঠিও সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছেন, যার উপর ভিত্তি করে কিছু স্মৃতিচারণও করা হয়েছে)। আমস্টারডামের ফ্লেমিশ কালচারাল সেন্টারে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী সম্মেলনে ভিক্টরের মন্তব্য ওই সময়ের কথা বলে, যেখানে সাংবাদিকদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান ও ট্রান্স-ন্যাশনাল অনুসন্ধানে সহযোগিতার ধারণাটি, আমরা আজ যেভাবে বলতে পারি, তখনও ঠিক যুগের ধারায় পরিণত হয়নি।
ভিক্টর বলছিলেন, “সংজ্ঞা অনুসারে অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা নিঃসঙ্গ, অসহযোগী, ডবল এজেন্ট, তারা তথ্য ভাগ করে না। তারা ঠিক কী নিয়ে কাজ করছেন, তা গোপনের অসাধারণ প্রতিভা তাদের রয়েছে। তারা টাকা-পয়সা তেমন পান না, কারো দিকনির্দেশনাও ভালভাবে গ্রহণ করতে পারেন না।” এ মুহুর্তে রুমজুড়ে আপনি বিচলিত হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, তারা সতর্ক সম্পাদকদের সঙ্গে তর্ক করেন; যেই সম্পাদকেরা “তারা আশপাশে না থাকলে কী না কী করছে ভেবে সন্দেহ করেন।”
এরপর তিনি উদ্বোধনী প্যানেলের চারজন সম্পাদকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন: ভ্রিজ নেদারল্যান্ডের ফার্ডিনান্দুস; ব্রিটিশ সাপ্তাহিক দ্য নিউ স্টেটসম্যানের জন লয়েড; ড্যানিশ সাপ্তাহিক ইনফরমেশনের পিটার উইভেল; এবং সিডভেন্সকা দাগব্লেডেটের নিলস গুনার নিলসন। ভিক্টরের কথা শুনতে (নীচের অডিও ক্লিপ শুনুন)। মনে হচ্ছিল, সবাই নিজ নিজ দেশের অভ্যন্তরে অর্থ, ক্ষমতা আর কর্পোরেট প্রভাব অনুসরণের জন্য সাংবাদিকদের দক্ষতা বিকাশ এবং এই কাজের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতার সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু কিভাবে? অসংখ্য বৈঠক ও আলোচনার পর একটি খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করা হয়: প্রতিবেদনগুলো এক থেকে দুই সপ্তাহ সময়ব্যাপী করা হবে; সম্পাদকরা তাদের দেশের পাঠকের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনগুলো নির্বাচন করবেন; প্রতিটি প্রতিবেদনে একটি ট্যাগলাইন থাকবে, “অ্যান ইন্টারনেশন স্টোরি” (যদিও বিধানটি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয় না)। আমার কাজ ছিল ফলো-আপ করা, লেখকদের খুঁজে বের করা এবং গল্প নির্মাণ করা।
ওই সম্মেলনে আমরা অন্য ধরনের ইতিহাসও সৃষ্টি করি। আমাদের মূল বক্তা ছিলেন আই.এফ. স্টোন। কিংবদন্তী এ মার্কিন সাংবাদিক, সম্মেলনে শেষবারের মতো সবার সামনে তার বক্তব্য রেখেছিলেন। আই.এফ. স্টোন বা ইজি যে নামেই ডাকি না কেন, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম অনুসন্ধানী নিউজলেটার শুরুর জন্য বিখ্যাত, যার নাম ছিল আই.এফ স্টোনস উইকলি। ১৯৫৩ সালে তিনি যখন উইকলি শুরু করেন, ওই সপ্তাহে জো ম্যাকার্থি সিনেটের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির চেয়ারম্যান হন। আর এখান থেকেই সিনেটর তার কুখ্যাত কমিউনিস্ট-বিরোধী সন্ত্রাসের প্রচারণা শুরু করেছিলেন। তাই খুব দ্রুতই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ইজি অনুসন্ধানের নতুন উপায় নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন। একক লড়াকুচিত্তে ১৯৫০ এর দশক থেকে ১৯৭০ এর দশকের শুরু পর্যন্ত লিখিত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সাড়া জাগানো সব প্রতিবেদন তৈরির কারিগর ছিলেন তিনি। প্রতি সপ্তাহে নিজস্ব আউটলেটের মাধ্যমে সেগুলো প্রকাশ করতেন। এতে ভিয়েতনাম যুদ্ধের অসংখ্য স্কুপ ও সমালোচনা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আশির দশকে, আশি পেরুনো ইজিকে যখন বিদেশে গিয়ে বক্তব্য রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়, তখন তিনি শুধু একটা অনুরোধই করেছিলেন: তিনি উড়তে পছন্দ করেন না, তাই তাকে যেন জাহাজে করে ইউরোপে পাঠানো হয়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার এই জীবন্ত কিংবদন্তীকে সম্মান দেখাতে, তিনি ও তার স্ত্রীর জন্য ট্রান্সআটলান্টিক মহাসাগরের লাইনার, কুইন মেরিতে একটি কেবিন বুক করা হয়। এটি দ্য নেশনের জন্য খানিকটা ব্যয়বহুল ছিল। আমাদের সম্মেলন শুরুর একদিন আগে রটারডাম বন্দরে এসে পৌঁছেছিলেন ইজি।
সেদিন ফিলিপ ফ্রেজারের সংরক্ষিত রেকর্ডে, আমরা সমবেত সম্পাদক ও সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে স্টোনের উষ্ণ ও বিমোহিত উপদেশগুলো শুনতে পাই, যদিও অডিও শব্দগুলো আজ অনেকটাই ভেঙ্গে গেছে বা কর্কশ হয়ে পড়েছে। স্টোন ছিলেন দার্শনিক। “আমরা সাংবাদিকেরা অর্থবহ সাংবাদিকতার জন্য ক্রমাগত চাপের মধ্যে আছি,” সবার উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন। তিনি মূলত বাস্তব অবস্থা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন: বলেছিলেন, “সংবাদপত্র শেষ পাতা থেকে পড়া শুরু করুন, এরপর সামনের দিকে এগোন”; কারণ অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য রসদ রয়েছে এখানেই। “পেছনের পৃষ্ঠাগুলোতে, আপনি সব ‘খুঁটিনাটি’ বিষয়গুলো দেখতে পাবেন, যা সামনের পৃষ্ঠায় জায়গা পায়নি… কারণ তাতে প্রচলিত জ্ঞান বিরোধিতার বীজ নিহিত রয়েছে।”
তাঁর কৌশল, তিনি বলেছিলেন, প্রথম পৃষ্ঠার ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাকস্টোরি পেতে হবে। বলিভিয়ায় অভ্যুত্থান? তার প্রথম প্রচেষ্টা ছিল স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে নয়, বরং ব্যুরো অফ মাইনস থেকে তথ্য সংগ্রহ। সেখানে কোন কোন খনি কোম্পানিগুলো কাজ করছে তা বোঝা এবং অভ্যুত্থানের পেছনে কাদের অংশগ্রহণ রয়েছে সে সম্পর্কিত সূত্র জোগাড় করা। যেমন, ভূগর্ভস্থ একটি পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা? নেভাদায় এ পরীক্ষাটি প্রত্যক্ষ করার জন্য আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের প্রতিনিধি দলে তিনি যোগ দেননি। তবে জাপান ও কানাডার সিসমোগ্রাফারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, যারা তাকে বলেছিলেন, তাদের সিসমোগ্রাফে (ভূমিকম্পের সময় মাটির গতি রেকর্ড করার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র) রেকর্ডকৃত বিস্ফোরণের ধাক্কা হাজার হাজার মাইল দূর পর্যন্ত অনুভূত হতে পারে, যদিও পেন্টাগনের পক্ষ থেকে মাত্র ২০০ মাইল পর্যন্ত প্রভাব পড়বে বলে দাবি করা হয়।
স্টোন উল্লেখ করেছেন, তখনকার আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের মধ্যে সহযোগিতার সামান্যই মানসিকতা ছিল (নীচের ক্লিপটি শুনুন)। ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধের মতো ঘটনা, পেন্টাগন যেটিকে যাচাইযোগ্য হবে না বলে দাবী করেছিল, এ ধরনের ‘আলোচিত বৈশ্বিক বিষয়কে’ কেন্দ্র করে সমমনা প্রকাশনাগুলোর মধ্যে নেটওয়ার্ক তৈরি করে কাজ না করার বিষয়টি নিয়ে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন। ’’আমাদের ওই সময় যদি ইন্টারনেশনের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা থাকত, সংস্কারপন্থী সাংবাদিকদের মধ্যে যদি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা থাকত, তাহলে ফলাফল অনেক ভিন্ন হতে পারত,” তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। স্কুপগুলো বন্টন ও নির্মাণ করা যেতে পারতো। “ঠিক এ কারণেই আমি মনে করি ইন্টারনেশন একটি দুর্দান্ত ধারণা,” তিনি বলে যেতে থাকেন।
এভাবে ইজি স্টোন আমাদের নতুন উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
একটি শুভ সূচনা
পরবর্তী তিন বছর আমরা তার চেতনাকে বাস্তবে প্রয়োগের চেষ্টা করেছি। প্যারিসে একটি ফিল্ম প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে আমি একটি অফিস শেয়ার করতাম। মনে আছে, আমার প্রায় অর্ধেক সময় কাটতো ফ্যাক্স মেশিনের সামনে দাঁড়িয়ে, আমাদের সমস্ত সহযোগী আউটলেটকে প্রতিবেদন সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলার কাজে এবং বিভিন্ন মতামত সংগ্রহ করে। ইউরোপে এমন কিছু রিপোর্টার ছিলেন, যারা প্রাথমিকভাবে দ্য নেশনকে একটি অপরিচিত প্রকাশনা হিসাবে দেখেছিলেন, ঠিক যেমন ইউরোপীয় প্রকাশনা সম্পর্কে আমেরিকানরা অনুভব করেছিলেন। কিন্তু শেষমেশ ফলাফল আসতে শুরু করে।
এক বছরের মধ্যে, আমাদের বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আমরা কাজ চালিয়ে যাই। আমাদের যুগান্তকারী অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মধ্যে ছিল: ইউরোপে মার্কিন ডানপন্থীদের আক্রমণাত্মক বিস্তার এবং নব্য ফ্যাসিবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে তাদের সংযোগ; তৎকালীন রিগান প্রশাসন কীভাবে মার্কিন পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ও তার স্টার ওয়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করতে ইউরোপীয় সরকারগুলোকে চাপে রেখেছিল; ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাণিজ্য, যার বেশিরভাগই ছিল বেলজিয়াম কেন্দ্রিক; উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বৈশ্বিক বিপজ্জনক বর্জ্য রপ্তানি; এবং আর্জেন্টিনায় সাম্প্রতিক ক্ষমতাচ্যুত ডানপন্থী সামরিক সরকারের সঙ্গে মার্কিন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সংযোগ।
ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং লাতিন আমেরিকার সাংবাদিকদের রিপোর্ট এক ডজনেরও বেশি আন্তর্জাতিক আউটলেটে প্রকাশিত হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্য নেশনের পাশাপাশি দ্য নিউ স্টেটসম্যান (যুক্তরাজ্য), ভ্রিজ নেদারল্যান্ড (নেদারল্যান্ডস), ডি মরগেন (বেলজিয়াম), ল’ইভেনমেন্ট ডু জেউডি (ফ্রান্স), দাগেনস নাইহেটার এবং সিডসভেনস্কা দাগব্লেডেট (সুইডেন), ইনফরমেশন (ডেনমার্ক), হেলসিংগিন সানোমাট (ফিনল্যান্ড), টাগেসাইটুং (জার্মানি), টেজেস আনজেইগার (সুইজারল্যান্ড), ল’এসপ্রেসো (ইতালি), প্রসেসো (মেক্সিকো), এবং এল পেরিওদিস্তা (আর্জেন্টিনা) আমাদের প্রতিবেদনগুলো প্রকাশিত হয়। আমরা মনে করি অনুবাদ ও শৈলীগত পরিবর্তনগুলো নির্ভুল ছিল আর আজকের সম্পর্কে ভিত্তি ছিল বিশ্বাস। বিভিন্ন পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিকেরা প্রতিবেদনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলোকে সম্প্রসারিত করে স্থানীয় পরিস্থিতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে বিষয়বস্তুকে গভীরভাবে তুলে ধরেন।
এক বছর পরে, ১৯৮৮ সালে লন্ডনে আমরা একটি ফলো-আপ সম্মেলন করি, আমাদের নেটওয়ার্কে ৬৫ জন সাংবাদিক ও সম্পাদক অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৯১ সালে, মস্কোতে আমরা যখন চূড়ান্ত সম্মেলনের আয়োজন করি, বিশ্ব ততদিনে আমূল বদলে গেছে। বার্লিন প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো সোভিয়েত কক্ষপথ থেকে ছিটকে বেরিয়ে গেছে এবং শীঘ্রই তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আবেদন করবে। রাশিয়া নিজেই পেরেস্ত্রোইকা (সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ প্রবর্তিত শব্দটি সোভিয়েত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পুনর্গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের একটি সিরিজকে বোঝায়) এবং গ্লাস্তনস্তের (গর্বাচেভ প্রবর্তিত আরেকটি শব্দ, যার অর্থ উন্মুক্ততা; বৃহত্তর স্বচ্ছতা, বাকস্বাধীনতা এবং উদার রাজনীতির ওপর জোর দেওয়া) প্রাথমিক অবস্থার মধ্যে ছিল। ক্যাটরিনা ভ্যানডেন হিউভেল তখন দ্য নেশন-এর একজন তরুণ, উদীয়মান তারকা সাংবাদিক, যিনি পরে সম্পাদক হিসেবে ভিক্টরের স্থলাভিষিক্ত হন। রাশিয়ায় তার গভীর যোগাযোগ দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে আমরা সেখানে ফলপ্রসু একটি সম্মেলন করতে সফল হই এবং রাশিয়ার উদীয়মান প্রকাশনাগুলোকে বৈশ্বিক গণমাধ্যমগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করি।
রাশিয়ায় তখন একের পর এক নতুন সব প্রকাশনা জন্ম নিচ্ছে: ওগোনিওক, নেজাভিসিমায়া গেজেটা ইত্যাদি; এমনকি প্রাভদা-ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন চেতনা ধারন করতে শুরু করেছে। অল্পদিনের মধ্যেই রাশিয়ার সদ্য ভূমিষ্ট সংবাদপত্র, বিভিন্ন প্রকাশনা আর টিভি স্টেশনগুলোর সম্পাদক এবং সাংবাদিকেরা তাদের পশ্চিম ইউরোপীয় সতীর্থদের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক গড়ে তোলে। সেন্সরশিপের জোয়াল থেকে মুক্ত হয়ে, প্রকাশনাগুলো রীতিমতো কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে— জনগণের সম্পদ চুরি থেকে শুরু করে ভঙ্গুর কমিউনিস্ট পার্টির দুর্নীতি পর্যন্ত সবকিছুর ওপর অনুসন্ধান চালায়।
তথ্যের জন্য অর্থ প্রদানের বিষয়টি গ্রহণযোগ্য কিনা— তা নিয়ে সম্মেলনে নৈতিক উত্তপ্ত আলোচনা সবার মনোযোগ আর্কষণ করে। “পশ্চিমা” আপত্তি স্বত্তেও শীর্ষস্থানীয় রাশিয়ান সম্পাদকেরা এ ধরনের অনুশীলনের জন্য ছাড় দিচ্ছেন। এই আলোচনা উপস্থিত সাংবাদিকদের জন্য ছিল চোখ-কান খোলার মতো বিষয়। পরিস্থিতি তুলে ধরে তারা ব্যাখ্যা করেছিলেন রাশিয়ার বড় ধরনের বাঁকবদলের কালে এবং বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মূল্যবান তথ্য পাওয়ার জন্য উৎসগুলোকে কিছু অর্থ প্রদানের প্রয়োজন ছিল। চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক পরিবেশে যা বেঁচে থাকার কৌশল হিসাবে দেখা যেতে পারে। রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে চলমান নাটকীয় পরিবর্তনকে তুলে ধরে এমন প্রতিবেদন তৈরিতে জোর দেয়া হয়— দ্য নেশনসহ নেটওয়ার্কের অন্যান্য সদস্যরা আরও সরাসরিভাবে সহযোগিতা করতে শুরু করে। (সেই বছরের সম্মেলনে উপস্থিত সব প্রকাশনা, টিভি স্টেশন এবং রেডিও প্রোগ্রামকে পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়, অথবা দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়, কিংবা প্রাভদার মতো সরকারপন্থী প্রচার-প্রচারণায় সামিল হয়ে টিকে থাকতে হয়।)
নীচে: একটি পাঁচ–পৃষ্ঠার মেমো, যেটি ইন্টারনেশনের সহযোগী সাংবাদিকতা নেটওয়ার্কের প্রাথমিক ইতিহাসের বিবরণ দেয়, পাশাপাশি ১৯৮৮ সালে ইংল্যান্ডের লন্ডনে অনুষ্ঠিত ইন্টারনেশনের দ্বিতীয় সম্মেলনের সারাংশ তুলে ধরে। ওই সম্মেলনের প্যানেল আলোচনায় মিডিয়ার কর্পোরেট মালিকানার প্রভাব, এইডস মহামারির ওপর বিশেষ আলোচনা, জাতীয় নিরাপত্তা প্রতিবেদনে তথ্যের স্বাধীনতা আইন ব্যবহারের প্রাথমিক ধারণা এবং জাতীয় সীমান্ত জুড়ে অর্থ ট্র্যাক করার টিপসের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় । ছবি: ফিলিপ ফ্রেজারের সৌজন্যে।
শুরুর শেষ যেখানে
প্রায়ই যেমনটি হয়, ইন্টারনেশনের অর্থ ফুরিয়ে যেতে শুরু করে। আমি আমেরিকাভিত্তিক ম্যাগাজিন মাদার জোনসে চাকরি নিয়ে প্যারিস ছেড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসি। কিংবদন্তী অনুসন্ধানী সাংবাদিক মার্ক ডাউই উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় তার বাড়ি থেকে ছোট আকারে ইন্টারনেশন পরিচালনার দায়িত্ব নেন। বছর শেষে দুটি উল্লেখযোগ্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হয়: একটি ছিল বৈশ্বিক সিমেন্ট জোটের কারসাজি প্রকাশ; অন্যটি পশ্চিম ইউরোপে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের ওপর নজর রাখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো গোপন দলের খবর।
১৯৯২ সাল নাগাদ, আমাদের মুক্ত নেটওয়ার্কটি বিকশিত হয়ে ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে —যার বেশিরভাগই ছিল যৌথ প্রতিবেদন ও অনুবাদ। মার্ক ডাউই যেমনটা বলেছেন, “সিন্ডিকেট থেকে একটি সিন্ডিকেটের উদ্ভব হয়েছিল।” অর্থাৎ নেটওয়ার্কটি আরও সংগঠিত, সমন্বিত ও বিকশিত হয়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ইতিহাসের ওপর ডাউয়ের আসন্ন বই, “হোয়েন ট্রুথ ম্যাটারড: হিস্ট্রি অ্যান্ড স্পিরিটেড ডিফেন্স অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম ফ্রম ৪৪৫ বিসি টু দ্য প্রেজেন্ট,” যেখানে সহযোগিতামূলক চেতনাগুলো ঘিরে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। (এটি নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে আগামী বছর প্রকাশিত হবে।)
ওই সময় এটা কল্পনা করা কঠিন ছিল যে, আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতার মহাবিশ্ব কতটা উন্মোচিত হবে। আজ বিশ্বায়ন সাংবাদিকতাকে আঁকড়ে ধরেছে— এমন একটি বিশ্ব যেখানে আর শীতল যুদ্ধের বিভাজনগত আধিপত্য নেই — ইন্টারনেট যেখানে তাৎক্ষণিক সংযোগ ঘটিয়ে দেয়, আন্তর্জাতিক তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের দক্ষতা যখন পানামা পেপারসের গণ্ডি ছাড়িয়ে আরো বৃহৎ পরিসরে পৌঁছে যায়। বৈশ্বিক, জাতীয়, আঞ্চলিক বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পারস্পারিক সহযোগিতার ভিত্তিতে তৈরী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার শক্তিশালী উদাহরণ আমাদের সামনে রয়েছে— যেমন গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিম নেটওয়ার্কে ( জিআইজেএন) আমরা দেখতে পাই। এমন একটি বিস্তৃত পরিসরের কথা, আমরা তিন দশক আগেও কল্পনা করতে পারিনি। এ নেটওয়ার্কের কেউ কেউ ইন্টারনেশন প্রতিষ্ঠার প্রথমদিকের পথপ্রদর্শক ছিলেন (যারা জানেন, তারা জানেন)।
এরপর অনেক কিছু বদলেছে, কিন্তু আমস্টারডাম সম্মেলনে আই. এফ. স্টোনের সেই কথাগুলো আজও অনুরণিত হয়, ৩৫ বছর আগে জড়ো হওয়া সেই সাংবাদিকদের মধ্যে এবং এই গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কেও। আপনি খসখসে রেকর্ডিংয়ে স্টোনের হাস্যরসাত্নক অভিব্যক্তি টের পাবেন, নতুন প্রজন্মের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য একটি বার্তা যা নিঃসন্দেহে যুগে যুগে প্রতিধ্বনিত হবে। প্রথম ধাপ, তিনি বলেন: প্রচলিত ধারণাকে ভুলে যান। দ্বিতীয় ধাপ: “মাথা শুধু টুপি পরার জন্য নয়, অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের তা অন্য কাজেও খাটাতে হয়।”
মার্ক শ্যাপিরো একজন পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ লেখক। তার সাম্প্রতিক গ্রন্থ, “সিডস অব রেজিসটেন্স: দ্য ফাইট টু সেভ আওয়ার ফুড সাপ্লাই,” জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে স্থিতিস্থাপক ফসলের বীজ নিয়ন্ত্রণে চলমান লড়াইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর অনুসন্ধান তুলে ধরে। তার লেখা হার্পারস, মাদার জোন্স, ইয়েল ৩৬০, দ্য নেশন, দ্য আটলান্টিক, দ্য গার্ডিয়ান, লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস এবং অন্যান্য প্রকাশনায় প্রকাশিত এবং পিবিএস ফ্রন্টলাইন/ওয়ার্ল্ড এবং কেকিউইডি-তে প্রচারিত হয়েছে। তিনি পূর্বে সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং (২০০৩-২০১২) এর সিনিয়র সংবাদদাতা ছিলেন, যেখানে তিনি পরিবেশগত অপব্যবহার এবং অপরাধবিষয়ক তদন্ত পরিচালনা করেন। ২০১২ সালে থেকে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলে গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ জার্নালিজমের একজন লেকচারার হিসেবে স্টোরিটেলিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশ এবং জলবায়ুর ওপর প্রতিবেদন তৈরির ওপর পাঠদান করেন।