প্রবেশগম্যতা সেটিংস

Niles Canyon Railway, in Sunol, California. This land was transferred to the State of Alabama, who gave it to Auburn University. The Indigenous title was bought for $0.

লেখাপত্র

বিষয়

আদিবাসীদের জমি থেকে ৫২ মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুনাফা উন্মোচিত হলো যেভাবে

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

English

ক্যালিফোর্নিয়ার সানোলের এই জমি ১৮৫১ সালের ২৮ মার্চ আদিবাসীদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল একটি অস্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে। এটি দেওয়া হয়েছিল অ্যালাবামার অউবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে। হাই কান্ট্রি নিউজের অনুসন্ধান থেকে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই জমির জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি। ছবি: ক্যালেন গুডলাক / হাই কান্ট্রি নিউজ

মিনেসোটার মুরহেডে চার বেডরুমের একটি বাড়ি বিক্রি হবে। বিজ্ঞাপনে লেখা, “আদর্শ জায়গা।” পাশেই আছে একটি গলফ কোর্স। শপিং সেন্টার থেকে শুরু করে ব্যাংক, সেলুন, হোটেল, ফাস্ট ফুডের দোকান; সব কিছুই হাতের নাগালে। ১৯ শতকের শেষ দিকে ১৬০ একরের এই বিশাল জায়গাটির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার, ডাকোটার আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে পরিশোধ করেছিল মাত্র ৩.৭৪ ডলার। এই জমিটি পরবর্তীতে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় (অ্যালকর্ন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়মিসিসিপি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়) গড়ে তোলার জন্য অনুদান হিসেবে দেওয়া হয় মিসিসিপি রাজ্যকে। জমি অনুদান পাওয়া দুই বিশ্ববিদ্যালয় এই জায়গা বিক্রি করে ৩৮ গুণ মুনাফা করেছিল।

আদিবাসীদের জমি ছিনিয়ে নিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য রাজ্যগুলোকে দিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রণীত হয়েছিল ১৮৬২ সালের মোরিল অ্যাক্ট। কৃষি ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে আরো সহজলভ্য করার কথা বলে, অসম চুক্তি ও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে আদিবাসীদের জমি দখলকে এই আইনের মাধ্যমে বৈধ করা হয়েছিল।

সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য টাকা সংগ্রহ করা হতো এই জমিগুলো বিক্রি করে। কিন্তু কিছু জমি রাজ্যের মালিকানাতেই থেকে গেছে। সেই জমি থেকে যে মুনাফা হয়েছে, তাও বিশ্ববিদ্যালয়েই গেছে। সব মিলিয়ে এই আইনের আওতায় ২৫০টি আদিবাসী গোষ্ঠীর কাছ থেকে এক কোটি একরের বেশি জমি (প্রায় ডেনমার্কের সমান) দখল করা হয়েছে ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য।

ছবি কৃতজ্ঞতা: মার্গারেট পিয়ার্স / হাই কান্ট্রি নিউজ

মোরিল অ্যাক্ট প্রণয়নের প্রায় ১৬০ বছর পরে ইতিহাসবিদ, কার্টোগ্রাফার, ফটোগ্রাফার, ফ্যাক্ট চেকার, ওয়েব ডিজাইনার, কোডার ও রিপোর্টারদের একটি দল বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করেছে। তারা দেখিয়েছেন, কিভাবে এসব জমি অধিগ্রহণ প্রভাব ফেলেছে আদিবাসী গোষ্ঠী ও বিশ্ববিদ্যালগুলোর ওপর। ফান্ড ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমপুলিৎজার সেন্টারের সঙ্গে জোট বেঁধে পরিচালিত হয়েছে এই অনুসন্ধান। ল্যান্ড-গ্র্যাব ইউনিভার্সিটি নামের এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে অলাভজনক সংবাদমাধ্যম হাই কান্ট্রি নিউজ-এ।

প্রথম দিকের পর্যটক থেকে শুরু করে পরবর্তীতে বসতি গড়তে আসা মানুষ; এই মহাদেশে (বর্তমান আমেরিকা) নতুন আসা প্রায় সবাই স্থানীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে হত্যা ও নির্মূল করেছে। কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অনেক কর্মকাণ্ডের মিল আছে গণহত্যার আন্তর্জাতিক সংজ্ঞার সাথেও। এভাবে আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে বিতাড়িত করে সেই জমিতে বসতি গড়েছিলেন সেটলাররা। যুক্তরাষ্ট্র ও তার নাগরিকরা এসব কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা বলতে নারাজ। কিন্তু এই অনুসন্ধান থেকে দেখা যায় কিভাবে জমি দখল থেকে সুবিধা নিয়েছে একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়

জমি অনুদান পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন লাখ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি করছে, সেখানে আধুনিক সব গবেষণা চলছে। কিন্তু তাদের এসব প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যের মূলে যে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি দখল ও তাদের নির্মূল করার ইতিহাস — তা আলোচনার বাইরেই থেকে গেছে। কর্নেল থেকে শুরু করে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত জমি অনুদান পাওয়া বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম এখন বিশ্বে বেশ মর্যাদার সাথে উচ্চারিত হয়। কিন্তু এখন ডেটা বিশ্লেষণ থেকে ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে, এই উচ্চশিক্ষার নেপথ্যে ছিল উপনিবেশ গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা।

ছবি কৃতজ্ঞতা: মার্গারেট পিয়ার্স / হাই কান্ট্রি নিউজ

না-বলা ইতিহাসের সন্ধানে

আমাদের এই অনুসন্ধানের একেবারে কেন্দ্রে ছিল নিজেদের তৈরি একটি জিওডেটাবেজ। মোরিল অ্যাক্টের যেসব বিপুল পরিমাণ ফুটপ্রিন্ট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল, তা আমরা এক জায়গায় করেছি এই জিওডেটাবেজ দিয়ে। ২৪টি রাজ্যের ডেটা থেকে প্রায় ৮০ হাজার আলাদা আলাদা জমি সনাক্ত করে, আমরা একটি মানচিত্রে বসিয়েছি। এরপর দেখেছি এই প্রতিটি আলাদা আলাদা জমি কী প্রক্রিয়ায় আদিবাসীদের কাছ থেকে অধিগ্রহণ করা হয়েছে; প্রতিটি জমির জন্য কী পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে (যদি আদৌ করা হয়ে থাকে); এবং বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার জন্য কী পরিমাণ অর্থ (এখনকার বইগুলোতে যে তথ্য আছে) সেই জমি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

আদিবাসীদের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণের পুরনো মানচিত্র সংগ্রহ করে, তার ওপর বসিয়েছি আমাদের তৈরি জিওডেটাবেজের মানচিত্র; এবং প্রথমবারের মতো সনাক্ত করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধাভোগীদের সাথে জমির মূল মালিক বা কেয়ারটেকারদের সম্পর্ক। মোরিল অ্যাক্টের মাধ্যমে কিভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ পুনঃবন্টন করা হয়েছে, সেই ধারণা পেতে আমরা দেখেছি জমির জন্য আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোকে কী পরিমাণ মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই জমি বিক্রি করে কী পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করেছে। প্রতিটি আলাদা আলাদা জমির তথ্য আমরা ডেটাসেটে যুক্ত করেছি।

এই ডেটার ওপর ভিত্তি করে আমরা বলেছি কিভাবে আদিবাসী গোষ্ঠীগুলো তাদের জমি হারিয়েছে এবং জমি অনুদান পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মুনাফায় ফুলেফেঁপে উঠেছে। জমিগুলো এখন কিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা জানার জন্য আমরা ফটোগ্রাফার ক্যালেন গুডলাককে সেই জায়গাগুলোতে পাঠিয়েছি। তিনি ছবি তোলার জন্য ঘুরেছেন মিনেসোটা থেকে নেব্রাস্কা পর্যন্ত। গিয়েছেন নেভাদা, ক্যালিফোর্নিয়া ও ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে।

গুডলাকের ফটোগ্রাফির সুবাদে আমরা এই অনুসন্ধানে পুরোনো কায়দার সরেজমিন রিপোর্টিং-এর আদল আনতে পেরেছি। প্রত্যক্ষভাবে সব জায়গায় যাওয়ার ফলে আমরা এই তথ্যও জানতে পেরেছি যে, লস অ্যাঞ্জেলসে ডিরেক্টর গিল্ড অব আমেরিকার ভবন যে জমিতে গড়ে উঠেছে, সেটি নেওয়া হয়েছিল আশেপাশের প্রায় ১২টি আদিবাসী গোষ্ঠীর কাছ থেকে। এবং সেটি অনুদান আকারে দেওয়া হয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে। সেই জায়গার সঙ্গে অর্থ পরিশোধের ডেটা মিলিয়ে আমরা দেখিয়েছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই জমির জন্য কোনো টাকাই খরচ করেনি। সেই আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তারা শুধু একটি আইনি চুক্তি সাক্ষর করেছিল। আর সেই জমি বিক্রি করে বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রহ করেছিল ৭৮৬.৭৪ ডলার।

আমরা এই অনুসন্ধানের জন্য যে ওয়েবসাইটটি বানিয়েছি, সেখান থেকে ঘেঁটে যে কোনো পাঠক প্রতিটি জমির তথ্য আলাদাভাবে খতিয়ে দেখতে পারবেন। সেখোনে সব ডেটা সাজানো আছে ইন্টারঅ্যাকটিভ ম্যাপ ও টেবিলের মাধ্যমে। এটি যে কেউ ডাউনলোড করতে পারে। আমরা অন্য নিউজরুম, গবেষক, আদিবাসী গোষ্ঠী, সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও আহ্বান জানাচ্ছি, জমি অনুদান ব্যবস্থার ভিত্তি ও দায় সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে।

জিওডেটাবেইজ তৈরি

মোরিল অ্যাক্টের মাধ্যমে পাওয়া জমির তথ্য কোনো একটি জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয়নি। এই আইনের মাধ্যমে কী পরিমাণ জমি বন্টন করা হয়েছে, তার কোনো পূর্ণাঙ্গ হিসেব ছিল না। আমাদের ডেটাবেজ যতটা সম্ভব পূর্ণাঙ্গ করার জন্য আমরা প্রতিটি রাজ্য ধরে ধরে তালিকা বানিয়েছি। জমির দলিলপত্র খোঁজ করেছি বিভিন্ন ডিজিটাল ও নথিপত্রের আর্কাইভে। বেশিরভাগ ডেটাই আমরা সংগ্রহ করেছি ডিজিটাল উপায়ে। ইউএস ব্যুরো অব ল্যান্ড ম্যানেজমেন্টের জেনারেল ল্যান্ড অফিসের ডেটাবেজ থেকে আমরা হাজার হাজার দলিল নামিয়ে নিয়েছি, যার সঙ্গে মোরিল অ্যাক্টের সংযোগ ছিল।

এরপরও যেসব তথ্য ঘাটতি ছিল, সেগুলোর জন্য আমরা গিয়েছি ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল আর্কাইভসে। সেখান থেকে আমরা মোরিল অ্যাক্ট সংশ্লিষ্ট জমির দলিলের ছবি তুলে নিয়েছি। আঁটসাঁট করে বেঁধে রাখা এই দলিলগুলো দেখে বোঝা যায়, এগুলোর মধ্যে অনেক কাগজই আর্কাইভ করে রাখার পর প্রথমবারের মতো খোলা হয়েছে।

খোঁজাখুঁজির শেষপর্যায়ে আমরা দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কৃষি জমি বিক্রির মুদ্রিত তালিকা, যার মধ্যে কিছু কিছু ছিল ডিজিটালি সংরক্ষণ করা। কলম্বিয়ার মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নথি পাওয়া গেছে তাদের বিশেষ সংগ্রহশালায়। আর কিছু দলিল পাওয়া গেছে মাইক্রোফিল্ম আকারে। ব্যুরো অব ল্যান্ড ম্যানেজমেন্টের ডেটাবেজ থেকে আমরা জমির আকার, স্থান ও মালিকানা সম্পর্কিত তথ্যগুলো ডিজিটাল আকারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংগ্রহ করে নিতে পেরেছি। কিন্তু বিভিন্ন আর্কাইভ ও ছাপা সূত্র থেকে পাওয়া প্রাসঙ্গিক তথ্যগুলো আলাদাভাবে যুক্ত করতে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে, অপূর্নাঙ্গ বা হারিয়ে যাওয়া দলিলপত্রের কারণে হিসেবে ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

এই অনুসন্ধান থেকে আমরা মোরিল অ্যাক্টের আওতাধীন ৭৯,৪৬১টি জমি অধিগ্রহণ ও বিতরণ সনাক্ত করেছি এবং সেগুলোকে মানচিত্রে বসিয়েছি। সরকারি ভূমি জরিপ থেকে পাওয়া বিবরণ ব্যবহার করে, আমরা সব জমির পলিগন তৈরি করেছি। এই কাজে ব্যবহার করা হয়েছে আর্কজিআইস নামের অনলাইন ম্যাপিং টুল। ৯৭ শতাংশ জমির ক্ষেত্রে আমরা প্রায় নির্ভুল পলিগন তৈরি করতে পেরেছি। বাকি প্রায় সবগুলো জমিই এক বর্গমাইল বা তারও কম এলাকার মধ্যে ছিল। খুবই ক্ষুদ্র একটা অংশ — এক শতাংশের দশভাগের একভাগ পরিমাণ জায়গা ম্যাপে বসানো সম্ভব হয়নি অপূর্ণাঙ্গ বা অস্পষ্ট বর্ণনার কারণে।

ছবি কৃতজ্ঞতা: মার্গারেট পিয়ার্স / হাই কান্ট্রি নিউজ

জমির জায়গাগুলো সনাক্ত হয়ে যাওয়ার পর, আমরা বিশ্লেষণ শুরু করি, জমিগুলো কোন আদিবাসী গোষ্ঠীর কাছ থেকে এসেছে। কিভাবে আদিবাসীদের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, সে সংক্রান্ত ডেটার জন্য আমরা স্মিথসোনিয়ানের জন্য তৈরি করা ম্যাপগুলোর ওপর নির্ভর করেছি।  স্মিথসোনিয়ান যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত জাদুঘর ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ১৯ শতকের শেষের দিকে এই ম্যাপগুলো তৈরি করেছিলেন কার্টোগ্রাফার চার্লস রয়েস। পুরো বিংশ শতাব্দীজুড়ে এই ম্যাপগুলোকে আদালত ও ইতিহাসবিদরা আদর্শ বলে ধরেছেন। এখন এগুলো শেপফাইল আকারে অনলাইনেই পাওয়া যায়। আমরা মোরিল অ্যাক্টের আওতায় থাকা জমির তথ্যের সাথে এই শেপফাইলগুলোর তথ্য মিলিয়ে “প্রকৃত মালিকানা” নির্ধারণ করেছি।

তবে এখানে একটি বিষয় মাথায় রাখা দরকার যে, রয়েসের ম্যাপগুলোতে শুধু যুক্তরাষ্ট্র কার সঙ্গে আইনি চুক্তিতে গেছে, সেই কথাই আছে। এগুলোর সবকিছু পুরোপুরি সত্যি নয়, বিশেষভাবে যদি আদিবাসীদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়। কারণ সেই জমিগুলোতে বসবাস করত, এমন অনেক আদিবাসী গোষ্ঠীর কথা ম্যাপে উল্লেখ করা হয়নি। তারা হয়তো এই জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতাও করেছিল এবং তাদেরকে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে সেখান থেকে বিতাড়িত বা হত্যা করা হয়েছিল, অথবা চুক্তি থেকে বাদ রাখা হয়েছিল। সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের করা চুক্তিগুলো আজো বাস্তবায়ন হয়নি।

যখন টাকার পেছনে

কোন বিশ্ববিদ্যালয় কোন আদিবাসী সূত্র থেকে জমি পেয়েছে, তা এক জায়গায় করার পর আমরা দেখতে শুরু করি চুক্তির সময় আদিবাসীদের কী পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে, মোরিল অ্যাক্টের আওতায় অনুদান পাওয়া এই জমিগুলো থেকে কী পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে এবং অবিক্রিত জমির মূল্যমান কেমন। এজন্য আমাদের অনেক আইনি নথিপত্র, কেন্দ্রীয় হিসাবরক্ষণ সংক্রান্ত দলিলপত্র ও জমি অনুদান পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিসংখ্যান দেখতে হয়েছে। এই কাজের মাধ্যমে আমরা দেখাতে চেয়েছি মোরিল অ্যাক্টের মাধ্যমে কিভাবে আদিবাসী সম্পদ অধিগ্রহণ ও বিতরণ হয়েছে।

গবেষণা থেকে দেখা গেছে, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, এই জমিগুলো থেকে উত্তোলিত অর্থ ও অবিক্রিত জমির মূল্যমান ছিল প্রায় সোয়া দুই কোটি ডলার, এখন যার মূল্যমান পাঁচ কোটি ডলারের বেশি। এর বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার আদিবাসীদের দিয়েছে মাত্র চার লাখ ডলার। এসব জমির বেশিরভাগই ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যত জমি অনুদান দেওয়া হয়েছে, তার প্রায় এক চতুর্থাংশেরই দাম পরিশোধ করা হয়নি।

মোরিল অ্যাক্টের আওতায় জমিগুলো থেকে যে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল, সেগুলো এখনও মুনাফা দিয়ে যাচ্ছে। রিপোর্টিং করতে গিয়ে আমরা আবিস্কার করেছি, এই আইনের আওতায় বিতরণ করা পাঁচ লাখ একরেরও বেশি আদিবাসী ভূমির মালিকানা এখনো রাজ্যগুলোর হাতে। তারা স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষে সেটি পরিচালনা করে যাচ্ছে।

কিছু জমিতে তেল-গ্যাস ও অন্যান্য খনিজও আছে। সেখান থেকেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভালো আয় হয়। ২০১৯ সালে এই অংক ছিল ৮৬ লাখ ডলার। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক নানা প্রশ্ন তোলার সুযোগ আছে রিপোর্টারদের। ১৮৬২ সালের এই মোরিল অ্যাক্টের চলমান প্রভাব নিয়েও হতে পারে অনেক রিপোর্ট।

যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ মহামারির ডামাডোলের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে এই অনুসন্ধান। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে অনেক জায়গা থেকেই গবেষণাটির প্রশংসা করা হচ্ছে এবং এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আমরা জানতে পেরেছি, বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আদিবাসী শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি সংস্কারের দাবি তুলছেন, আদিবাসী সংশ্লিষ্ট বিভাগে অর্থ বিনিয়োগের কথা বলছেন, এমন পাঠ্যসূচি তৈরির কথা বলছেন যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের সত্যিকার ইতিহাস জানতে পারবে। এমনকি কোথাও কোথাও এই কথাও উঠেছে যে, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সেই জমিগুলো আবার তাদের ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় কিনা। কোভিড-১৯ কাভারেজের প্রবল প্রতাপ সত্ত্বেও কিছু স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এই ডেটা ব্যবহার করে আঞ্চলিক কিছু প্রতিবেদন তৈরির কথা চিন্তা করছে। তারা মনোযোগ দেবে তাদের অঞ্চলে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর দিকে। সেসব প্রতিবেদনের ফলোআপও তারা করতে থাকবে।


রবার্ট লি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমেরিকান ইতিহাসের শিক্ষক। তিনি সেলওয়েন কলেজের ফেলো ও হার্ভার্ড সোসাইটি অব ফেলোজের জুনিয়র ফেলো। তিনি পিএইচডি করেছেন একটি জমি অনুদান পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। 

 

ত্রিস্তান আতোন  কায়োয়া আদিবাসী গোষ্ঠীর সদস্য। তিনি জিআইজেএন-এর সদস্য সংগঠন, দ্য টেক্সাস অবজার্ভারের প্রধান সম্পাদক। তিনি ন্যাটিভ আমেরিকান জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক এবং নিম্যানের ফেলো। জিআইজেএন-এর আদিবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের রিসোর্স গাইডে তিনি কাজ করেছেন পরামর্শক হিসেবে।

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

BBC Newsnight NHS investigations lessons learned

কেস স্টাডি

যেভাবে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যসেবা কেলেঙ্কারির স্বরূপ উন্মোচন করেছে বিবিসি নিউজনাইট

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিয়ে ছোট একটি অনুসন্ধানের পরিকল্পনা করেছিল বিবিসি নিউজনাইট। কিন্তু পরবর্তীতে এক বছরব্যাপী অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নানাবিধ অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার বিস্তারিত চিত্র। পড়ুন, পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানটির নেপথ্যের গল্প ও অভিজ্ঞতা-পরামর্শ।

يبحث الفيلم الوثائقي الذي تنتجه هيئة الإذاعة البريطانية "تحت سماء مسمومة" في تأثير حرق حقول النفط العراقية على المجتمعات المجاورة وعلى البيئة. الصورة: لقطة الشاشة، بي بي سي

কেস স্টাডি

ইরাকি জনগোষ্ঠীর ওপর গ্যাস ফ্লেয়ারিংয়ের প্রভাব যেভাবে উঠে এসেছে বিবিসির অনুসন্ধানে 

২০৩০ সালের মধ্যে সব শীর্ষ তেল কোম্পানি ও অনেক দেশ নিয়মিত গ্যাস ফ্লেয়ারিং বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও ইরাকের মতো দেশগুলোতে এখনও ফ্লেয়ারিং হচ্ছে। এবং এতে পরিবেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। দক্ষিণ ইরাকে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর গ্যাস ফ্লেয়ারিংয়ের প্রভাব অনুসন্ধান করেছে বিবিসি আরবি সংস্করণের একটি দল। পড়ুন, কীভাবে হয়েছে এই পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানটি।

কেস স্টাডি

নতুন বা নারাজ সোর্সকে কথা বলাবেন যেভাবে

এমন অনেক কর্মকর্তা, ভুক্তভোগী ও সম্ভাব্য হুইসেলব্লোয়ার সোর্স আছেন যারা অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারেন, কিন্তু রিপোর্টারেরা তাদের নাগাল পান না। কীভাবে তাদের সন্ধান পেতে পারেন এবং কথা বলতে নারাজ— এমন ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিতে পারেন, তা নিয়ে কার্যকরী কিছু পরামর্শ পাবেন এই লেখায়।

কেস স্টাডি পরামর্শ ও টুল

ব্রাজিলের রাজনীতি নিয়ে অনুসন্ধান ও ফ্যাক্ট চেকিংয়ের টুল বানান তাই নালন

২০১৫ সালে, ব্রাজিলের বড় এক সংবাদমাধ্যমের চাকরি ছেড়ে নিজেই একটি অনুসন্ধানী ও ফ্যাক্ট চেকিং সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাই নালন। এখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন ২০ জনের একটি পুরস্কারজয়ী দলকে। এই লেখায় তিনি জিআইজেএন-কে জানিয়েছেন, ফ্যাক্ট চেকিংয়ের কাজে তাঁরা কোন ধরনের টুলগুলো বেশি ব্যবহার করেন। এর মধ্যে সুপরিচিত অনেক টুল যেমন আছে, তেমনি আছে তাদের নিজেদের বানানো কিছু টুল।