প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

বিষয়

অভিবাসন নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির সেরা কৌশল সম্পর্কে বললেন লাতিন আমেরিকার সাংবাদিকেরা

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

সম্প্রতি সপ্তম অভিবাসন সাংবাদিকতা সম্মেলন উপলক্ষে স্পেনের মাদ্রিদে জড়ো হয়েছিলেন লাতিন আমেরিকা ও স্পেনের সাংবাদিকেরা। তাঁরা মনে করেন অংশীদারত্বমূলক সাংবাদিকতা, নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, বৈচিত্র্যময় বার্তাকক্ষসহ স্থানীয় সাংবাদিকদের যুক্ত করার মতো বিষয়গুলো চর্চার মাধ্যমে অভিবাসন ইস্যুকে আরও ভালোভাবে তুলে ধরা যায়।

আমরা সবসময় চেয়েছি ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতাসম্পন্ন মানুষের সঙ্গে ‍যুক্ত হতে, যাঁরা আমাদের পরিপূরক হতে পারেন এবং আমাদের সাথে তহবিল ভাগ করে নিতে পারেন—রোসিও গাইয়েগোস, লা ভার্দাদ ডিজিটাল ইনভেস্টিগেটিভ মিডিয়া আউটলেটের পরিচালক

সম্মেলনের প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বিশ্বের স্প্যানিশ ভাষা-ভাষী সাংবাদিকেরা। অভিবাসন রিপোর্টিং ঘিরে তাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ তুলে ধরেন।

মেক্সিকোর অন্যতম বড় শহর সিউদাদ হুয়ারেজের অনুসন্ধানী ডিজিটাল মিডিয়া আউটলেট লা ভার্দাদের পরিচালক সাংবাদিক রোসিও গাইয়েগোস। অভিবাসন নিয়ে প্রতিবেদন তৈরিতে অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতামূলক সাংবাদিকতার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন তিনি।

গাইয়েগোস বলেন, টেক্সাসের এল পাসো শহরের স্বাধীন ও অলাভজনক বার্তাসংস্থা এল পাসো ম্যাটার্স এবং নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক সহযোগী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সংস্থা লাইটহাউস রিপোর্টসকে সাথে নিয়ে লা ভার্দাদ কীভাবে ফরেনসিক অনুসন্ধান পরিচালনা করেছিল। একক কোনো মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের পক্ষে যা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না।

আমরা তাদের ভেতরেযেতে দিচ্ছি নাসিউদাদ হুয়ারেজের অভিবাসী কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের রাতে কী ঘটেছিল  ?” শিরোনামের কাজটি ছিল একটি মাল্টিমিডিয়া প্রতিবেদন। যা যুক্তরাষ্ট্র – মেক্সিকো সীমান্তের অভিবাসন কেন্দ্রে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও নির্যাতনের ঘটনাগুলো তুলে ধরেছিল। শুধু সে রাতেই  ৪০ জন অভিবাসী অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান।

“আমরা জানতাম যে এ গল্পটি নতুন করে বলা জরুরি। তবে মুশকিলটা ছিল, গোটা ঘটনা লা ভার্দাদের একার পক্ষে করা সম্ভব ছিল না।  আমরা তাই এমন এক মিত্রের খোঁজ করছিলাম, যাদের দক্ষতা আমাদের মতোই এবং যারা আমাদের সঙ্গে তহবিল ভাগাভাগি করে নেবে।” সম্মেলনের দ্য চ্যালেঞ্জ অব ইনভেস্টিগেটিং উইথ আদারস” শীর্ষক প্যানেলে এ কথা বলেন গাইয়েগোস।

তিনি আরো জানান, ওই এলাকার অভিবাসীদের নিয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠানের কাজের অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন সোর্সের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ—এই তিনের সমন্বয়ে কীভাবে তাঁরা অনুসন্ধানটি করেছিলেন। অভিবাসন ও সীমান্ত নিয়ে প্রতিবেদনে নিজেদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগায় এল পাসো ম্যাটার্স। আর ফরেনসিক তথ্য-প্রমাণ জোগাড়ের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সমর্থন ও তহবিল সরবরাহ করে লাইটহাউজ রিপোর্টাস।

নতুন এ প্রতিবেদনে আগুন লাগার ঘটনায় সরকারি যুক্তিগুলো খণ্ডনের পাশাপাশি প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছিল যে, অভিবাসন কেন্দ্রের ৪০ জন অভিবাসীর মৃত্যু এড়ানো সম্ভব ছিল।

গাইয়েগোস বলেন, বড় মিডিয়া আউটলেটের বদলে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান, যেগুলো মিডিয়া আউটলেট নয়, তাদের সঙ্গে সমন্বয় লাভার্দাদের মতো ছোট স্বাধীন বার্তাকক্ষকে অনেক বেশি স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ করে দেয়। “বড় বড় সংবাদমাধ্যমের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। তারা এসে বলেছে, “এটাই আমাদের উদ্দেশ্য, আমরা এটাই চাই,’” তিনি বলেন।

আরো জানান যে, “কিন্তু এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করা, যারা  কোনো সংবাদমাধ্যম নয়, কিন্তু আমাদের কাজে সহযোগিতা করেছে, আমাদের আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিয়েছে। আমাদের এমন একটি জায়গা দিয়েছে, যেখানে আমরা একে অপরের কথা সমানভাবে শুনতে পারি।”

“স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কাজের সুবিধা হচ্ছে তাঁরা ওই এলাকা সম্পর্কে অনেক কিছু আগে থেকেই জানেন। বিভিন্ন সম্প্রদায় আর নির্দিষ্ট সোর্সের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ থাকে। তাই আপনি সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কোনো গল্প খুঁজে পেতে পারেন।”— এল ক্লিপের সাংবাদিক অ্যাঞ্জেলা কান্তাদর।

প্যানেল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন লাতিন আমেরিকান সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের (এল ক্লিপ) সাংবাদিক অ্যাঞ্জেলা কান্তাদর। তিনি মনে করেন, অভিবাসন নিয়ে কাজের ক্ষেত্রে যৌথ অনুসন্ধানী দলে স্থানীয় সাংবাদিকদের রাখাটা বেশ কাজের। কারণ তাঁরা খুঁজে খুঁজে এমন সব কণ্ঠগুলোকে তুলে আনেন, অন্যথায় যা উপেক্ষিত থেকে যেতে পারে।

স্পেনের সাংবাদিক ও তথ্য অনুসন্ধানী জেসুস এসকুডেরো। তিনি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)-এর সাথে যুক্ত। জেসুস ও কান্তাদর যৌথভাবে “ট্রাকস, ট্র্যাপস ফর মাইগ্রেন্টস প্রকল্পে কাজ করেছেন। এ প্রকল্পটি নোটিসিয়াস টেলেমুন্ডো, ওপেন সোর্স সাংবাদিকতায় বিশেষজ্ঞ বেলিংক্যাট, এবং স্থানীয় সংবাদমাধ্যম পিয়ে দে পাগিনা, চিয়াপাস প্যারালেলো ও এন উন ২×৩ তামাউলিপাস, এবং গুয়াতেমালার প্লাজা পুবলিকা ও হন্ডুরাসের কনট্রাকোরিয়েন্টের সহযোগিতায় পরিচালিত হয়েছে।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে যে , মধ্য আমেরিকা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কার্গো ট্রাকে করে বিপজ্জনকভাবে মানব পাচারের ঘটনা ঘটছে আগের চেয়েও বেশি। ২০২৩ সালে টেক্সাসে সান আন্তোনিওতে একটি ট্রাকের মধ্যে আটক অবস্থায় ৫৩ জন অভিবাসীর মৃত্যুর পর এই তথ্যটি সামনে আসে। বিভিন্ন সংস্থা তখন অন্যান্য অভিবাসীদের কাছ থেকে একই ধরনের ভ্রমণের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সাক্ষাৎকার সংগ্রহ করে।  সে সময় তারা বুঝতে পারে যে, এ ধরনের অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজন একটি আন্তঃদেশীয় উদ্যোগ। পাশাপাশি মেক্সিকোর মধ্য দিয়ে ভ্রমণকারী অভিবাসীরা যে সব দেশ থেকে আসছেন, তা জানতে স্থানীয় পর্যায়ে অনুসন্ধান চালানোও জরুরি।

আমরা সাধারণত যাদের কথাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি তাদের দিকেই মনোযোগ দিই। কিন্তু ঘটনার আড়ালেও আরো অনেক গল্প থাকে। এ ধরনের সহযোগিতাপূর্ণ উদ্যোগের ফলে উপেক্ষিত ওই গল্পগুলোও তখন উঠে আসে, বলেন কান্তাদর।

তিনি আরো জানান, “স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কাজের সুবিধা হচ্ছে তাঁরা ওই এলাকা সম্পর্কে অনেক কিছু আগে থেকে জানেন। বিভিন্ন সম্প্রদায় আর নির্দিষ্ট সোর্সের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ থাকে। তাই আপনি সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কোনো গল্প খুঁজে পেতে পারেন।”

মেক্সিকান সাংবাদিক মার্সেলা তুরাতি মেরিডায় অভিবাসন সাংবাদিকতা সম্মেলনে বলেন, দীর্ঘমেয়াদি ও বৃহৎ পরিসরের অনুসন্ধান পরিচালনার জন্য তিনি দলগতভাবে কাজ করেন। নানা দৃষ্টিভঙ্গির অনুসন্ধানকারী সাংবাদিকরা যুক্ত করেন এই কাজে।

মেক্সিকোতে অভিবাসী পাচার ও নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে সান ফের্নান্দো: লাস্ট স্টপ নামে একটি বই লিখেছেন তুরাতি। নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা নিয়ে কাজ করেন, এমন সহকর্মীদের সাথে মিলে Másde72 নামে একটি সংগঠন চালু করেছেন। তাদের মূল লক্ষ্য অনুসন্ধান কাজে একে অপরকে সাহায্য করা এবং নিরাপত্তা সহায়তা প্রদান করা।

Marcela Turati speaking at Congress of Merida migration journalism conference

অভিবাসন সাংবাদিকতা সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন মার্সেলা তুরাতি মেরিদা । ছবি: স্ক্রিনশট, পোরকাইসা ইউটিউব চ্যানেল

“ইনকমপ্লিট মর্নিং: ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সেস অন দ্য মাইগ্র্যান্ট রুট” শীর্ষক প্যানেলে তুরাতি বলেন, “এই প্রকল্পগুলো ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদি। আমি এগুলো যৌথভাবে করেছি কারণ একা করা সম্ভব ছিল না।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা যা করি তা হলো একে অপরকে রক্ষা করার চেষ্টা, কারণ নিরাপত্তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আমরা একে অপরকে চিনি না এবং আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করি, তবুও আমরা মনিটরিং করার চেষ্টা করি।”

অভিবাসনের নারীবাদী প্রেক্ষিত

আপনি যখন অভিবাসনের কারণগুলো খুঁজতে যাবেন, সেখানে গুরুত্বপূর্ণ জেন্ডারভিত্তিক উপাদান পাবেন, বলেন স্প্যানিশ সাংবাদিক মারিয়া দে লস অ্যাঞ্জেলেস ফার্নান্দেজ। তিনি নারীবাদী ডিজিটাল ম্যাগাজিন পিকারার  প্রধান এবং অভিবাসন নিয়ে কাজ করা স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ডেসপ্লাজাডোস.অর্গ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

তিনি বলেন, এমন কিছু কারণ আছে যা শুধুমাত্র নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেমন জোরপূর্বক বিয়ে, পারিবারিক সহিংসতা, লিঙ্গ পরিচয়ের জন্য নির্যাতন বা বৈশ্বিক কেয়ার চেইনের (শিশু যত্ন, বয়স্ক পরিচর্যা এবং স্বাস্থ্যসেবা) অংশ হওয়া, যা পুরুষ অভিবাসীদের জন্য সাধারণত প্রযোজ্য নয়।

সেনোরোস: উই নিড ফেমিনিস্ট লেন্সেস ইন মাইগ্রেশন জার্নালিজম শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় ফার্নান্দেজ বলেন, “নারীবাদী দৃষ্টিকোণ আমাদেরকে কেবল প্রচলিত ক্ষমতার কাঠামো বোঝার ক্ষেত্রে সাহায্য করে না, বরং পিতৃতন্ত্রের মতো আরো একটি ক্ষমতা কাঠামোকেও স্পষ্টভাবে তুলে ধরে ও বোঝার সুযোগ করে দেয়।” তাই তিনি মনে করেন, নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করলে নতুন প্রশ্ন তোলা যায়, নতুন কিছু অনুসন্ধান করা যায়, এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা যায়।

 

আর্জেন্টিনার সাংবাদিক লুসিয়ানা পেকার একাধারে লিঙ্গ বিষয়ক বিশেষজ্ঞও। একই প্যানেল আলোচনায় অংশ নেওয়ার সময় বলেন, নারীবাদী সাংবাদিকতায় কেবল নারী এবং যৌন নিপীড়নের মতো বিষয়গুলো কাভার করা নয়, বরং আন্তঃবিভাগীয় দৃষ্টিকোণ থাকা উচিত।

বিশেষ করে যখন দক্ষিণপন্থী সরকারগুলো অভিবাসীদের বিরুদ্ধে একই ধরনের সহিংস অবস্থান নিচ্ছে, যেমন তারা নারীবাদী আন্দোলনের বিরুদ্ধে নেয়। তিনি আরো যোগ করেন যে, নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখার মাধ্যমে সহিংসতার সম্ভাব্য চিত্রগুলো আগে থেকেই বোঝা সম্ভব।

পেকার বলেন, “আমরা আবারও পুরুষকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে একচেটিয়াভাবে দেখা, লেখা, এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করছি। ফলে আমরা আমাদের বর্তমান বিশ্বের গতিশীলতা বুঝতে পারছি না। আজ নারীবাদী দৃষ্টিকোণের অভাব মানে হলো নতুন সহিংসতার সূত্রপাত কোথা থেকে হতে পারে তা আগাম বুঝতে ব্যর্থ হওয়া।”

তিনি আরো বলেন, সংবাদমাধ্যমগুলোকে অভিবাসন এবং নারীবাদ নিয়ে পাঠকদের আগ্রহী করতে হবে, পাশাপাশি লাতিন আমেরিকার নারী অভিবাসী সাংবাদিকদের লেখাগুলো পড়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের সমর্থন দেওয়া জরুরি।

“একটি নিবন্ধ কতবার পড়া হয়েছে আমরা যখন সে হিসাব করতে যাবো, তখন চলুন, আমরাও দেখিয়ে দেই যে, অভিবাসীদের কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা তাদের  লেখা পড়ছি এবং আমরা তাদের কথা শুনতে চাই,” তিনি বলেন।

অভিবাসন কাভারেজে বার্তাকক্ষে বৈচিত্রের প্রয়োজনীয়তা

“দ্য চ্যালেঞ্জ অব বিল্ডিং ডাইভার্স নিউজরুমস” প্যানেলে অংশগ্রহণকারীরা অভিবাসন নিয়ে সংবাদ কাভারেজে বার্তাকক্ষে বৈচিত্রের প্রয়োজনীয়তার কথা তোলেন। এ ধরনের বার্তাকক্ষ কীভাবে এই প্রতিবেদনগুলোকে প্রভাবিত করে তা নিয়েও আলোচনা করেন।

মেক্সিকো সিটির অটোনোমাস ইউনিভার্সিটির সাংবাদিক ও অধ্যাপক আমারেলা ভারেলা বলেন, বার্তাকক্ষের বৈচিত্র্য মানে জাতিগত বা লিঙ্গ কোটার পূরণ নয়, বরং যারা সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তাদের মধ্যে বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী ও লিঙ্গ বৈচিত্র্য নিশ্চিত করা, যাতে তাঁরা প্রতিবেদন তৈরির সময় সব ধরনের মানুষের কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরতে আরও আগ্রহী হন।

ভারেলার মতে, মেক্সিকোর মাইগ্রেন্ট ক্যারাভানের (প্রতি বছর সেন্ট্রাল আমেরিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বৃহৎ অভিবাসী গোষ্ঠীর যাত্রা) মতো অভিবাসনের ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন করার সময় মিডিয়াগুলো ঘুরেফিরে সাধারণত প্রতিষ্ঠান, কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞদের কণ্ঠগুলোকেই তুলে ধরে। অভিবাসীদের কথা খুব কম থাকে।

“অভিবাসীদের দেখা হয় পাচার শিল্পের গ্রাহক হিসেবে। কেউ গবেষণার বিষয় হিসেবে দেখে, যেমন আমরা একাডেমিকরা করি,” বলেন তিনি। “কেউ দেখে সোর্স হিসেবে, কেউ তাদের ভিকটিম মনে করে সুরক্ষা ও পরামর্শ দেয়। কিন্তু তাঁরা নিজেরা যে নিজেদের জ্ঞানবুদ্ধির মালিক এমনটা মূল্যায়ন করে তাঁদের মূল চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা বা বার্তাকক্ষকে চালিত করতে পারেন এমনটা ভাবা হয় না।

স্প্যানিশ ডিজিটাল মিডিয়া আউটলেট ডিয়ারিও পুবলিকো-এর নির্বাহী পরিচালক নাচো কালে প্যানেল আলোচনায় উল্লেখ করেন, বৈচিত্র্যময় বার্তাকক্ষ তৈরির জন্য নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে লোক নিয়োগ ছাড়াও অন্যভাবে অগ্রসর হওয়া জরুরী। বিশেষ করে বৈচিত্র্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির জন্য দলকে প্রশিক্ষিত করতে হবে।

“প্রতিষ্ঠানের সব কর্মী নারী হলেই তারা নারীবাদী সংবাদপত্র হয়ে যায় না। নারীবাদকে ধারণ করতে হয়, দিতে হয় প্রশিক্ষণ। এমন লোকেদের নিয়োগ দিতে হয় যাঁরা নারীবাদকে ধারণ করেন,”  বলেন কালে।

“আমরা এমনও সংবাদমাধ্যম দেখেছি, যাদের পরিচালক একজন নারী বলে তাঁরা নিজেদেরকে নারীবাদী বলে দাবি করতে চায়। যা কোনো মানদণ্ডই নয়।”

স্পেনে নির্বাসিত কলম্বিয়ান সাংবাদিক আন্দ্রেয়া আলডানা সমালোচনা করে বলেন, স্প্যানিশ সাংবাদিকরাই এখানে অভিবাসন ইস্যুগুলো কাভার করেন।

“আমি অন্তত এতটুকু বুঝি যে স্প্যানিশ সাংবাদিকরা অভিবাসন কাভার করছেন কারণ ঘটনাটি তাদের সামনে ঘটছে। বিষয়টি একজন পুরুষ সাংবাদিকের লিঙ্গ ইস্যু নিয়ে প্রতিবেদন করার মতো। আমার মনে হয় এই জন্যই প্রতিবেদনে অভিবাসীদের কণ্ঠস্বর খুব কম থাকে” বলেন তিনি।

লাতিন আমেরিকায় পোরকাউসা কী মনে করে

স্পেনভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা পোরকাউসা কাজ করে অভিবাসন নিয়ে। ইবেরো আমেরিকার সাংবাদিক এবং মিডিয়া আউটলেটের সাথে প্রায় ১০ বছর ধরে এটি তাদের বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং গবেষণা ভাগাভাগি করে নিচ্ছে।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক লুসিলা রদ্রিগেজ-আলারকন বলেন, পোরকাউসা তাদের “সার্কুলার ন্যারেটিভ” পদ্ধতির  মাধ্যমে ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রতিহত করে এবং অভিবাসনের প্রচলিত ধারণাকে বদলে দিতে সাংবাদিকতা ও একাডেমিক পদ্ধতির মধ্যে সমন্বয় করে।

সার্কুলার ন্যারেটিভ কী তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রদ্রিগেজ-আলারকন বলেন, এটি তথ্য ধারণ, গবেষণা ও পুনর্গঠনের একটি প্রক্রিয়া। যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি গল্পটি বলার সঠিক কাঠামোটি খুঁজে না পাবেন, ততক্ষণ আপনি বারবার এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবেন।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে মাইগ্রেশন: কিস টু  হিউমেন অ্যান্ড ইফেকটিভ পলিটিক্যাল ডিসকোর্স,  নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে পোরকাউসা। যা প্রমাণিত বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে মানুষের গতিশীলতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গির প্রস্তাব করে।

ল্যাটঅ্যাম জার্নালিজম রিভিউকে রদ্রিগেজ-আলারকন বলেন, চিলিতে একটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করার সময় তাঁরা দেখেন স্পেনে দশ বছর আগে ডানপন্থী দলগুলো অভিবাসনবিরোধী ভুল তথ্য ও বিদ্বেষমূলক কথা ছড়ানোর ফলে এ সম্পর্কে যে সব কথা চালু ছিল, এখানেই তাই ঘটছে। মূলত এ থেকেই বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির ধারণাটি আসে। তবে রিপোর্টটি শুধু চিলি নিয়ে নয়; এটি মূলত লাতিন আমেরিকার অভিবাসন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাহিনীর একটি সংকলন।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, “চিলিতে অভিবাসনের হার বৃদ্ধির সাথে সাথে ডানপন্থী দলগুলো শক্তিশালী গল্প তৈরি করছে, ফলে তাদের কাহিনীটা ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। আমরা আমাদের দিক থেকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের সংগ্রহিত তথ্য ও পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছি। যেন একটি জায়গা তৈরি করা যায়। যেখানে সঠিক তথ্য উদ্ধার করা যাবে এবং তা সবার কাছে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। যা কোনো ডানপন্থী রাজনৈতিক প্রার্থীর চাপিয়ে দেওয়া  মিথ্যা বর্ণনাকে রুখে দিবে।”

রদ্রিগেজ-আলারকন আরও জানান, তাঁরা চিলির ওপর একটি বিশেষ রিপোর্ট নিয়ে কাজ করছেন, যা ২০২৫ সালের এপ্রিলে প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে।

“আমরা ইবেরো-আমেরিকার সাংবাদিকতার নেটওয়ার্কের সাথে কাজ চালিয়ে যাব। সাংবাদিকতার নেটওয়ার্কই আমাদের শক্তি,”— বলেন রদ্রিগেজ-আলারকন।

লেখাটি প্রথমে ল্যাটঅ্যাম জার্নালিজম রিভিউতে প্রকাশিত হয়। তাদের অনুমতি নিয়ে এখানে পুনঃপ্রকাশ করা হয়েছে। স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ ভাষায়ও প্রকাশিত হয়েছিল। ইংরেজিতে অনুবাদ করেন জর্জ ভ্যালেন্সিয়া।


César López Linares

সেসার লোপেজ লিনারেসের কর্মজীবনের শুরু মেক্সিকান সংবাদপত্র রেফরমাতে।যেখানে তিনি বিনোদন ও মিডিয়া বিভাগে সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।টুডো অস্টিন, টেক্সাস মিউজিক ম্যাগাজিন, এবং দ্য অস্টিন ক্রনিকলে তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিন থেকে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স এবং ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি অব মেক্সিকো থেকে যোগাযোগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। সাংবাদিকতার বিভিন্ন উদ্ভাবন নিয়ে লিখেছেন গাবো ফাউন্ডেশনে। বর্তমানে নাইট সেন্টারের ল্যাটঅ্যামজার্নালিজম রিভিউ ডিজিটাল ম্যাগাজিনে রিপোর্টিং করছেন। মেক্সিকো সিটির বাসিন্দা সেসার বর্তমানে একজন ডিজিটাল নোম্যাড, যিনি কন্টেন্ট তৈরি করার সাথে সাথে ভ্রমণের প্রতি তার ভালোবাসা ধরে রেখেছেন। (ডিজিটাল নোম্যাডদের স্থায়ী অফিস বা নির্দিষ্ট জায়গা প্রয়োজন হয় না, তাঁরা সাধারণত বিভিন্ন দেশে বা শহরে ভ্রমণ করে, এবং তাদের কাজের জন্য ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করেন।)

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

অনুসন্ধান পদ্ধতি শিক্ষাদান ও প্রশিক্ষণ

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ‘হাব’ যেভাবে একটি প্রজন্মের রিপোর্টারদের তৈরি করেছে

মেক্সিকো সীমান্তে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য তাঁদের পেশাটা ছিল যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। কেন্দ্রে যাঁরা সাংবাদিকতা করেন, তাঁদের সঙ্গে দূরত্ব তো ছিলই, ছিল সার্বক্ষণিকি নিরাপত্তাহীনতাও। সাংবাদিকেরা একজোট হয়ে এই দূরত্ব ঘুঁচিয়ে আনতে গড়ে তোলেন একটি সংগঠন। প্রয়োজনীয়ল প্রশিক্ষণ শেষে হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁরা অনুসন্ধান করে তুলে আনেন বেশ কিছু প্রতিবেদন।

অনুসন্ধান পদ্ধতি গবেষণা

ডেনমার্কের কল্যাণ সংস্থার অ্যালগরিদমপদ্ধতি নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অনুসন্ধান

কল্যাণ সহায়তা বণ্টন পদ্ধতিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে অ্যালগরিদমভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করছিল ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠান। অনুসন্ধানে দেখা গেল, বৈষম্য বিলোপে নেওয়া এই উদ্যোগে উল্টো বাড়ছে বৈষম্য।

সংবাদ ও বিশ্লেষণ

২০২৪ ডাবল এক্সপোজার ফেস্টিভ্যাল: সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব না পাওয়া কিংবা অন্যায্যতার মতো ইস্যু নিয়ে অনুসন্ধান

জিআইজেএন সদস্য ও অলাভজনক অনুসন্ধানী বার্তাসংস্থা 100Reporters আয়োজিত চার দিনের ২০২৪ ডাবল এক্সপোজার চলচ্চিত্র উৎসব ও সিম্পোজিয়ামে (৭-১০ নভেম্বর) ২৩টি পূর্ণ ও স্বল্পদৈর্ঘ্য তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়ে গেল। দেখে নিন কী কী বিষয় নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন নির্মাতারা।