অনভিজ্ঞ ও তরুণ, মেধাবী ও প্রতিশ্রুতিশীল: এমন নতুন রিপোর্টারদের দলবদ্ধ অনুসন্ধানের জন্য তৈরি করবেন কীভাবে
আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:
২০২৩ সালের কথা। লাতিন আমেরিকার ১২টি দেশে বন উজাড়ের নেতিবাচক প্রভাব খুঁজতে নামেন অর্ধশতাধিক সাংবাদিকসহ বিশেষজ্ঞদের একটি দল। তথ্যের স্বাধীনতা আইনের (ফোয়া) অধীনে সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে তাঁরা অনুরোধ পাঠালেন। কিন্তু এরপরই মুখোমুখি হন নতুন এক চ্যালেঞ্জের। তা হচ্ছে বিভিন্ন দেশের সরকারি কর্তা-ব্যক্তিদের কাছ থেকে তথ্য পেতে বেশ চড়াৎ উৎরাই পেরোতে হয়। ইকুয়েডরে যেমন ইমেইলের মাধ্যমে তথ্য চেয়ে অনুরোধে কোনো কাজ হয়নি। মাসের পর মাস কেটে গেলেও সরকারি কর্মকর্তাদের পাঠানো ইমেলগুলোর কোনো জবাবই দেয়নি তাঁরা। বলিভিয়াতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে অনুরোধ দাখিল করতে হয়েছে। গুয়াতেমালার কর্তৃপক্ষ ২০১৬ সালের পরের তথ্য দিতে সক্ষম হয়নি। সাংবাদিকরা যদিও ২০২১ সাল পর্যন্ত হওয়া পরিসংখ্যানগুলো খুঁজছিলেন। আর আর্জেন্টিনাতে তথ্য চেয়ে করা অনুরোধের জবাব এসেছে প্রতিবেদনটি প্রকাশের দিন কয়েক আগে।
৩০ বছর বয়সী মেক্সিকান রিপোর্টার মারিয়ানা রেকামিয়ার কে রীতিমতো কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। একই অভিজ্ঞতা হয়েছে ভেনেজুয়েলার ২৫ বছর বয়সী ডায়ানা সিডেরও। তাঁরা মঙ্গাবে ও ডিস্টিনটাস ল্যাটিটিউডসের হয়ে যৌথ এ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির জন্য একসঙ্গে কাজ করেছেন। প্রতিবেদনটি তৈরির নেতৃত্ব দেয় আন্তর্জাতিক অনলাইন নিউজ সাইট ডিস্টিনটাস ল্যাটিটিউডস।
আগে কখনও এতো বড় গুরু দায়িত্ব তাদের কাঁধে চাপেনি। এটিই তাদের প্রথম বড় কোনো অ্যাসাইনমেন্ট। তারা ল্যাটাম নেটওয়ার্ক ফর ইয়ং জার্নালিস্ট থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। তরুণ সাংবাদিকদের জন্য এ ধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করে ডিস্টিনটাস ল্যাটিটিউডস। এদের মূল প্রতিষ্ঠান ফ্যাকচুয়াল। মেক্সিকোভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয় অঞ্চল জুড়ে প্রতিশ্রুতিশীল সাংবাদিকদের খুঁজে বের করে ও প্রশিক্ষণ দেয়। প্রায় এক বছর ধরে চলা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তরুণ সাংবাদিকদের প্রতিভাকে কাজে লাগানো হয়। প্রশিক্ষণের পর তাঁরা যেন সহযোগিতামূলক প্রতিবেদন তৈরির চাহিদা ও চ্যালেঞ্জগুলোকে মেটাতে পারে, নিশ্চিত করা হয় তাও।
প্রতি বছর রিপোর্টারদের উন্মুক্ত আবেদনের আহ্বান জানায় এ নেটওয়ার্কটি। যাদের বয়স তিরিশের কম এবং সবেমাত্র কর্মজীবন শুরু করেছেন তাঁরা এখানে আবেদন করতে পারেন। প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ জন আবেদনকারীর মধ্যে থেকে বাছাই করা হয় ছোট একটি দলকে। বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞ অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও প্রশিক্ষকেরা তাদের প্রশিক্ষণ দেন।
মূলত তরুণ সাংবাদিকদের হাতে-কলমে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে শেখানো হয়। সহযোগিতামূলক বড় কোনো প্রকল্পে কাজে নামার আগে এ ধরনের প্রশিক্ষণ তাদের নিজস্ব স্বক্ষমতা আর আগ্রহের জায়গাগুলোকে চিনতে সাহায্য করে। পাশাপাশি সুনিদিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ও নির্ভুলতার সঙ্গে কীভাবে একটি ভালো গল্পকে উপস্থাপন করতে হয় এবং দলের অংশ হয়ে কাজ করতে হয় সে সম্পর্কেও ধারণা দেয়।
এ সম্পর্কে ডেস্টিনটাস ল্যাটিটিউডসের পরিচালক জর্ডি মেলেন্দেজ বলেন, “নেটওয়ার্কগুলো আমাদের বাঁচিয়ে রাখে।”
তাঁর এ কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মারিয়ানা রেকামিয়ার ও ডায়ানা সিড। তাঁরা বলেন, বন উড়াজ প্রকল্প থেকে তাঁরা শিখেছেন কার্যকর সূত্র খুঁজে বের করা, অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয়া এবং তথ্য তুলে আনার মূল চাবিকাঠিই হচ্ছে পারস্পরিক যোগাযোগ ও দলগত বোঝাপড়া। এভাবে আমরা দারুণ একটি প্রতিবেদন তৈরিতে সক্ষম হয়েছি। গ্রাফ আকারে ছবির সাহায্যে বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে কী পরিমাণ বড় উড়াজ হয়েছে তা তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটি ২০২৩ সালে জিআইজেএনের স্পেন ও লাতিন আমেরিকার সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের তালিকায় স্থান করে নেয়।
“যদিও [ল্যাটাম] নেটওয়ার্কে যোগ দেয়ার আগে, আমি একটি বড় অনুসন্ধানী প্রকল্পে কাজ করি। কিন্তু তখন আমি একজন ছাত্র, আর আমার ভূমিকাও ছিল ছোট। তাই [ডিস্টিনটাস ল্যাটিটিউডস প্রকল্প] আমার প্রথম বড় কোনো কাজ। যতটা সম্ভব সেরা উপায়ে প্রতিবেদন তৈরির পাশাপাশি এটি আমাকে অন্যান্য দেশের বাস্তবতা সম্পর্কেও জানার সুযোগ করে দিয়েছে,” বলেন মারিয়ানা।
নেটওয়ার্কটি কীভাবে তরুণ সাংবাদিকদের সহযোগিতামূলক অনুসন্ধানী প্রকল্পের প্রশিক্ষণে সাহায্য করেছে তা আরও ভালভাবে বোঝার জন্য ডেস্টিনটাস ল্যাটিটিউডসের পরিচালক জর্ডি মেলেন্দেজের সঙ্গে কথা বলে জিআইজিএন। কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটায় অনুষ্ঠিত গাবো উৎসবে সহযোগিতামূলক সাংবাদিকতার কর্মশালা শেষে এ সাক্ষাৎকারটি নেয়া হয়।
জিআইজিএন: অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় তরুণদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি—এদিকে কেন মনোযোগ দিলেন?
জর্ডি মেলেন্দেজ: তেরো বছর আগে আমি যখন ডিস্টিনটাস ল্যাটিটিউডস এবং নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করি তখন কিন্তু আমারও বয়স অল্প। আমিও তরুণ। তখন পরিষ্কারভাবেই আমি উপলব্ধি করছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকেরা খুব একটা উচ্চমানের প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন না। সাংবাদিকতার স্কুলগুলোতে ডেটা সাংবাদিকতা, লৈঙ্গিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাংবাদিকতা বা পডকাস্টের মতো বিষয় নিয়েও তেমন কিছু শেখানো হয়না। এমনকি ডিজিটাল সাংবাদিকতার ধারণাটিও নতুন।
২০১২ সালে, ডিজিটাল মিডিয়া ও সাংবাদিকতার ওপর আমরা আমাদের প্রথম ফোরামের আয়োজন করি, পরের বছর থেকে ধারাবাহিকভাবে আয়োজনটি হচ্ছে। আমরা বুঝতে পারছিলাম যে আমরা বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিভাবান সাংবাদিকদের সঙ্গে শক্তিশালী সংযোগ তৈরি করছি। মনে হলো: তাহলে আমরা কেন এ সংযোগগুলো প্রশিক্ষক তৈরিতে ব্যবহার করছি না? যাঁরা সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াতে পারেন, পরামর্শ দিতে পারেন এবং তরুণ সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করতে পারেন?
বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে সাংবাদিকতা পড়ানো হয়, আমি কখনও তেমন করে ক্লাস নেয়ার কথা ভাবিনি। আমার বরং মনে হয়েছে বিভিন্ন দেশের তুখোড় সব সাংবাদিকদের সঙ্গে তরুণ শিক্ষার্থীদের আলাপের সুযোগ তৈরি করে দেয়াটা জরুরী। শুরুটা এভাবেই।
জিআইজেএন: যেসব বার্তাকক্ষ অনুসন্ধানে তরুণ সাংবাদিকদের সম্পৃক্ত করতে চায় আপনি তাদের জন্য কী সুপারিশ করবেন?
জেএম: আমাদের আবেদন ফর্মটি শুধুমাত্র প্রতিভা চিহ্নিত করা নয়, সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের শনাক্ত করার উদ্দেশ্যে তৈরি। কে তুখোড় মেধাবী, আর কে সহযোগিতামূলক কাজে অংশ নিতে ইচ্ছুক—তাদের মধ্যে পার্থক্য করাটা গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। আমরা যদি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরিতে সক্ষম না হই, তাহলে সহযোগিতামূলক সাংবাদিকতার কথা ভাবার কোনো মানেই হয় না।
কিছু কিছু প্রশ্ন আমাদের কাজে লাগে, যেমন: আপনি কী ধরনের সাংবাদিকতা করতে চান? আপনি কোন ধরনের সাংবাদিক বা মিডিয়া আউটলেটের প্রশংসা করেন, কিংবা কেন?
জিআইজেএন: ডিস্টিন্টাস ল্যাটিটিউডসের সহযোগী অনুসন্ধানী প্রকল্পে তরুণরা কী ধরনের ভূমিকা পালন করে?
জেএম: আমরা জানি যে প্রতিটি প্রজন্মই আলাদা। কিছু লোক আছে যাঁরা অনুসন্ধানে ভীষণ আগ্রহী, অন্যরা কন্টেন্ট ছড়িয়ে দেয়া বা তথ্য চেয়ে অনুরোধ করা ইত্যাদির জন্য অনেক বেশি ভালো। পুরোটা সময় জুড়ে তাদের সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো [আমরা দেই] থাকে, সেখান থেকে কে কোনটাতে আগ্রহী ও পারদর্শী তা আমরা বুঝতে পারি।
গোটা দলটিকে চারটি আলাদা শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যেমন, গবেষণা ও সারেজমিন প্রতিবেদন, ডেটাবেস তৈরি ও সত্যতা যাচাই, অডিওভিজ্যুয়াল কনটেন্ট এবং প্রচারণা কৌশল তৈরি। যা আমাদের প্রতিজন অংশগ্রহণকারীর আলাদা বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করার পাশাপাশি কে কোন বিষয়ে পারদর্শী তা বুঝতে সাহায্য করে। যদিও তাঁরা অনেকসময় একাধিক দলে অংশগ্রহণ করে।
জিআইজিএন: তরুণদের উপর কী ধরনের প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন?
জেএম: তরুণেরা ভীষণ সৃজনশীল। আবার নতুন আর অভিনব সব ধারণার অধিকারী। যা আপনাকে গল্প বলা, ভিন্ন ভাবে দেখা আর পাঠকের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে গণ্ডির বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে সাহায্য করে। তাই তরুণদের কেবল অনুসন্ধানের জন্য দায়িত্ব দেয়া নয়, বিভিন্ন বিষয়ের ওপর [ধারণা] প্রস্তাব রাখার সুযোগ করে দেয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ।
মিডিয়া আউটলেটগুলো মাঝেমধ্যেই অনুসন্ধান থেকে পাওয়া তথ্য উপস্থাপন আর প্রতিবেদন তৈরিতে প্রচলিত পদ্ধতি ঘিরে বেশ অনড় অবস্থান নেয়। আমরা একটা ভিন্ন উপায় খুঁজে পেয়েছি। যা দারুণভাবে আমাদের কাজেও লেগেছে। আমরা প্রথমে বিষয়বস্তু আর ধরনকে সংজ্ঞায়িত করি। এরপর অনুসন্ধানে নেমে পড়ি। প্রথম প্রতিবেদনের জন্য আমরা যে তথ্য সংগ্রহ করেছি তা নিয়ে ফিরে আসি।
এরপর সৃজনশীলতার বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিই আমাদের কাছে থাকা তথ্য দিয়ে আমরা কী ধরনের কনটেন্ট তৈরি করতে চাই। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করি, আরও তথ্যের জন্য আমাদের আগের সোর্সগুলোর কাছে যেতে হবে কিনা। আর ঠিক তখন, তরুণ সাংবাদিকেরা অনুসন্ধানের ধরন ও পদ্ধতি নিয়ে প্রস্তাব রাখতে পারেন।
৩০ বছরের কম বয়সীরা সবকিছু অন্যভাবে দেখতে পছন্দ করেন। গৎবাঁধা পথে না হেঁটে বিষয়গুলো তাঁরা ভিন্ন চোখে দেখতে আগ্রহী। তাঁরা অন্যের দেখানো পথে হাঁটতে ইচ্ছুক নন। তাঁরা তাদের কাজ বা লক্ষ্য ঘিরে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে চাযন। আর যুক্তিহীন বিষয়গুলো একদমই গ্রহণ করেন না।
জিআইজেএন: অল্প বয়সী, কম অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের সঙ্গে কাজের চ্যালেঞ্জিং দিকগুলো সামলে নিতে আপনি কী ধরনের কৌশল গ্রহণ করেছেন?
জেএম: প্রথমত, আপনি যখন তরুণদের কোনো বিষয় সম্পর্কে [ধারণা] প্রস্তাব রাখার সুযোগ দেন, স্বাভাবিকভাবেই তারা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। অধিকার বোধ করে, যা অনুসন্ধানকে এগিয়ে নেয়।
আমরা দেখেছি, পরস্পরকে জানা মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই, চূড়ান্ত অনুসন্ধানে নামার আগে আমরা তাদের বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত করি। যেমন এমন কিছু সেশন রাখি যেখানে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। পরস্পরকে জানে। একে অন্যের সঙ্গে বই আদান-প্রদান করে, সাংবাদিকতার কোন কাজগুলো থেকে তাঁরা অনুপ্রাণিত হয়েছে, বা তাদের জীবন বদলে গেছে ইত্যাদি নিয়ে কথা বলে। যা তরুণ সাংবাদিকদের জন্য একটি চমৎকার পরিবেশ তৈরির মূল চাবিকাঠি। তাঁরা যেন কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই নিজেদের চিন্তাকে প্রকাশ করতে পারে, যেখানে কেউ তাদের কোনো তিরস্কার করবে না বা বলবে না যে বোকার মতো কী সব বাজে বোকছো। বন্ধুত্ব আর বিশ্বাস থেকেই দারুণ একটি পরিবেশ তৈরি হয়।
তাছাড়া, তরুণদের নিয়ে কাজ করা, আর তাদের চ্যালেঞ্জগুলো [আমরা সম্মুখীন হই] সামলানো কিন্তু সত্যিই চমৎকার। চূড়ান্ত অনুসন্ধানে নামার আগে, অনুশীলনের জন্য তাদের বিভিন্ন কাজ দেয়া হয়। ব্যর্থ হলে কিছু যায় আসে না। এখানে, তাদের ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমি মনে করি আপনি যদি একজন তরুণ সাংবাদিক হন এবং একটি অনুসন্ধানী দল বা বার্তাকক্ষে যোগ দেন, তবে আপনি কখনই ব্যর্থ হতে চাইবেন না। হতে পারে চাকরিচ্যুত বা আস্থা হারানোর ভয়ে। এ কারণেই আমি মনে করি তাদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করাটা জরুরী। শুরুতে অল্প চ্যালেঞ্জ দিয়ে শুরু করে পরে তা বাড়াতে হবে, এরপর তারা ঠিক কী মাত্রায় ভুল করতে পারে যে বিষয়ক ছোট একটা গণ্ডিও টেনে দিতে হবে।
জিআইজেএন: যেমনটা সবসময় করা হয়। তরুণ সাংবাদিকদের কম গুরুত্বপূর্ণ বা সুনির্দিষ্ট কিছু কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু আপনি সহযোগিতামূলক অনুসন্ধানের জন্য তাদের আগে থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন কেন?
জেএম: বর্তমানে আমরা যে জটিল জগতে বাস করি তার জন্য সহযোগিতা করতে শেখাটাও একটি মৌলিক দক্ষতা। আমরা মনে করি সহযোগিতার অর্থ হল নিয়ম মানা আর দলবদ্ধভাবে কাজ করার পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে শেখা। কিন্তু এর জন্য বিশ্বাস, সহানুভূতি আর খোলামেলা উদার মানসিকতা তৈরির অনুশীলনও প্রয়োজন।
বড় ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রে অনুসন্ধান পরিচালনা, সমন্বয় সাধন আর নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তরুণ সাংবাদিকদের উপর আস্থা রাখা প্রয়োজন, যা তাদের প্রাপ্যও। তাদের হয়তো হাতেকলমে কাজের অভিজ্ঞতার ঘাটতি আছে, তার অর্থ এই নয় যে তাদের মেধা, প্রতিশ্রুতি বা দায়িত্বের অভাব রয়েছে। সত্যি বলতে কী, আমরা নিশ্চিত ভাল সহায়তা আর নির্দেশনা পেলে তরুণ সাংবাদিকেরা দারুণ সব অনুসন্ধান আর প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে।
আর এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে নেটওয়ার্কের তরুণ সদস্যরা দলবদ্ধ হয়ে কাজ করার সময় পারস্পারিক সহানুভূতি বোধ, সময়ের প্রতি শ্রদ্ধা, বার্নআউটের সময়গুলোতে একে অপরকে সমর্থন দেওয়া আর মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করে। ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞ সাংবাদিক ও সংস্থার সঙ্গে সংযোগ তৈরির পাশাপাশি নেটওয়ার্কটি তাদের সক্ষমতা ও পেশাদারী কাজে অংশগ্রহণের পরিসরকে প্রশস্ত করেছে বলে জানায়।
মিরিয়াম ফরেরো আরিজা কলম্বিয়ার ডেটা ও ফ্রিল্যান্স অনুসন্ধানী সাংবাদিক। তার করা প্রতিবেদনগুলো বিভিন্ন সময় ভাইস, কলম্বিয়াচেক, এবং এল এসপেক্টাদরে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সহযোগিতামূলক অনুসন্ধান, ডেটা বিশ্লেষণ এবং ভিজ্যুয়ালাইজেশনে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। এছাড়া ইবেরোআমেরিকান ডেটা জার্নালিজম হ্যান্ডবুকের সহ-লেখকও।