প্রবেশগম্যতা সেটিংস

রিসোর্স

বিষয়

মানব পাচার অনুসন্ধান: চোখের সামনেই লুকোনো যে অশুভ শক্তি

আর্টিকেলটি পড়ুন এই ভাষায়:

ছবি: শাটারস্টক

সম্পাদকের নোট: আগামী নভেম্বরে, গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ অপরাধ অনুসন্ধানের একটি পূর্ণাঙ্গ গাইড। সেখান থেকে কিছু কিছু অংশ আগামী কয়েক সপ্তাহজুড়ে প্রকাশিত হবে জিআইজেএনের ওয়েবসাইটে। এই পর্বে নজর দেওয়া হয়েছে মানব পাচারসংক্রান্ত অনুসন্ধানের দিকে। লিখেছেন দুবারের পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিক মার্থা মেনডোজা। তিনি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সেই অনুসন্ধানী দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যাঁরা থাইল্যান্ডে সামুদ্রিক মাছ ধরার শিল্পে শ্রমদাসত্বের বিষয়টি উন্মোচন করেছেন।

মানব পাচার এমন একটি অপরাধ, যা একই সঙ্গে বিপজ্জনক এবং যার বিস্তার বিশ্বজুড়ে। ঠিক এ কারণে এটি সাংবাদিকদের জন্যও হয়ে উঠেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অন্যতম বিষয়। প্রায়ই দেখা যায়: আধুনিক দাসত্বের ঘটনাগুলো ঘটে আমাদের চোখের সামনে; এলাকার ম্যাসাজ পার্লারে কিংবা বিদেশের কোনো বন্দরে বাঁধা মাছ ধরা নৌকায়। মানব পাচারের ক্ষেত্রে এই শোষণ-নিপীড়নের ঘটনা দেখা যায় প্রধানত দুই ধারায়: যৌন নির্যাতন ও শোষণ (যেটি মোট মানব পাচারের প্রায় অর্ধেক) এবং শ্রম শোষণ। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে এখন আধুনিক দাসত্বের শিকার ৪ কোটির বেশি মানুষ। যাদের বেশির ভাগই শিশু ও নারী। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্য অনুযায়ী: এসব তথাকথিত পাচারকারী ও দাস প্রভুরা বছরে অবৈধভাবে মুনাফা করে ১৫,০০০ কোটি ডলার

মানব পাচার নিয়ে অনুসন্ধান করা মানসিক চাপের বিষয়। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ভিকটিমদের বড় ঝুঁকি নিতে হয়। তাই তাঁরা ট্রমার মধ্যে থাকেন। একটি ভয় হলো, সেই দস্যুদের নিয়ে যারা তাঁদের বন্দি করে রাখে। এবং রিপোর্টারের সঙ্গে কথা বলা তো দূরে থাক, তাঁদেরকে এই বলেও সতর্ক করে দেওয়া হয়, যেন তাঁরা বাইরের কারও কাছে সাহায্য না চান। তাই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললে তাঁদের জীবনও হুমকির মুখে পড়ে যেতে পারে। ফলে এই ধরনের কাজ শুরুর আগে আপনাকে যত্নশীল হতে হবে। মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা যেকোনো মানুষকে শোষণ-নিপীড়নের জন্য তৈরি থাকে। নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য তারা নির্মম-নির্দয় হয়ে উঠতেও দ্বিধা করে না।

কথা বলবেন কার সঙ্গে

মানব পাচার নিয়ে অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সহায়তা করার মতো দারুণ কিছু সোর্স আছে। শুরুতেই বলা যাক সেসব বেসরকারি সংগঠনের (এনজিও) কথা, যারা আধুনিক শ্রম দাসত্ব নিয়ে কাজ করছে। যেমন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন, মাইন্ডারু (ওয়াক ফ্রি) ফাউন্ডেশন, পোলারিস প্রজেক্টক্যাথলিক চ্যারিটি। বিভিন্ন দেশে এই সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি আছে। এবং তারা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল নিয়ে আপনাকে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারবে।

মানব পাচারসংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করা, গ্রেপ্তার ও সাজা দেওয়ার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস মিশনের মতো কিছু সংগঠন। অন্য সংগঠনগুলোর মধ্যে ইসারা ইনস্টিটিউটের কাজ করে অভিবাসী কমিউনিটির সঙ্গে। তারা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নিরীক্ষা পরিচালনা করে এবং শ্রমিকদের অধিকারের কথা বলে।  ফ্রি দ্য স্লেভ-এর মতো গ্রুপও পাবেন, যারা সমাজের সেসব শর্তই বদলাতে চায়, যা আধুনিক দাসত্বকে টিকিয়ে রাখে। এসব এনজিওর মধ্যে অনেকেই আছে ধর্মীয় বিশ্বাসভিত্তিক। কিছু সংগঠন পরিচালনা করে বিভিন্ন দেশের সরকার এবং কিছু কাজ করে নির্দিষ্ট বিষয় বা দেশকে কেন্দ্র করে।

মানব পাচার নিয়ে অনুসন্ধানের প্রথম ধাপ হচ্ছে এসব সংগঠনের সঙ্গে কথা বলা। যে জায়গা নিয়ে অনুসন্ধান করছেন, সেখানকার সংশ্লিষ্ট যতগুলো সম্ভব সংগঠনের সঙ্গে কথা বলুন। তারা আপনাকে মানব পাচার ও দাসত্বের শিকার হয়েছে, এমন কারও সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। এর আগে বিষয়টি নিয়ে আদালতে কী হয়েছে এবং নির্দিষ্ট কোন জায়গায় গেলে সাংবাদিকেরা মানব পাচারের ঘটনা খুঁজে পাবেনসংগঠনগুলো সাধারণত এসব খবর রাখে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় মালয়েশিয়ার রাবার গ্লোভস কারখানার কথা। সেখানে বেশ কয়েক বছর ধরে শোনা যাচ্ছে অভিবাসী শ্রমিকদের শ্রম হয়রানির ঘটনা। সেখানে কাজ করার সুযোগ পাওয়ার জন্য প্রায়ই এসব শ্রমিকের অর্থ পরিশোধ করতে হয়, যেটি অবৈধ। দুবাই ও আবুধাবির মতো মধ্যপ্রাচ্যের শহরে বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে চলছে জমজমাট যৌনবাণিজ্য। যেখানে ঘরোয়া কাজের কথা বলে বিদেশ থেকে নারীদের নিয়ে এসে যৌনবৃত্তিতে যেতে বাধ্য করা হয়। বাণিজ্যিকভাবে মাছ ধরার ক্ষেত্রেও এমন দাসত্বের ঘটনা দেখা যায়, যেখানে নিপীড়নের ঘটনাগুলো ঘটে গভীর সমুদ্রে। কারও নজর না থাকায় এই অভিবাসী শ্রমিকেরা বন্দিত্ব ও নির্যাতনের মুখে ভীষণ অসহায় হয়ে পড়েন।

সরাসরি মানুষের সঙ্গে কথা বলার বাইরেও আপনি আরও বেশ কিছু উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। মাঠপর্যায়ে আধুনিক দাসত্বের অবস্থা নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদন তৈরি করে বিভিন্ন দেশের সরকার ও জাতিসংঘ। এদের মধ্যে আছে: ইউএন অফিস অব ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইমের গ্লোবাল রিপোর্ট অন ট্রাফিকিং ইন পার্সনস, ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের ট্রাফিকিং ইন পার্সনস রিপোর্ট এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের টুগেদার অ্যাগেইনস্ট ট্রাফিকিং ইন হিউম্যান বিইংশিশু শ্রম বা জোরপূর্বক শ্রমের মাধ্যমে কোন পণ্যগুলো তৈরি হচ্ছে, সেগুলোর একটি তালিকাও তৈরি করে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব লেবার। এখানে ১৫৫টি নির্দিষ্ট পণ্যের নাম পাওয়া যায়। যেমন কম্বোডিয়া থেকে টেক্সটাইলস, ভারত থেকে ফুটবল বল বা ইউক্রেন থেকে কয়লা। এই পণ্যগুলোর সরবরাহ চেইনের কোথাও না কোথাও ঘটে শ্রম শোষণের ঘটনা।

মানব পাচারসংক্রান্ত কাজের সময় সাংবাদিকদের নজর থাকতে হয়, দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করার দিকে। এর সবচেয়ে ভালো উপায়, সশরীরে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা। পণ্যের লেবেল খেয়াল করুন। এর ছাপ-ব্র্যান্ড খেয়াল করুন। শ্রম হয়রানি চালিয়ে কারা লাভবান হচ্ছে, তা জানার জন্য অনুসরণ করুনসেই পণ্য বা হয়রানির শিকার হওয়া শ্রমিকেরা কোথা থেকে এসেছে। এই ধরনের শ্রমকেন্দ্রিক সরবরাহ চেইন অনুসন্ধানের জন্য ব্যবহার করতে পারেন বিভিন্ন বাণিজ্যভিত্তিক ডেটা। সাংবাদিকেরা এখান থেকে দেখতে পাবেন: কোন কারখানা থেকে কোন পণ্য কিনে কোন দেশে বিক্রি করা হচ্ছে।

এ-সংক্রান্ত অর্থের খোঁজ চালানোর আরেকটি দারুণ জায়গা করপোরেট রেকর্ড। এখানে বার্ষিক মুনাফা, ব্যবসায়িক অংশীদার ও বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে সম্পর্কের কথা বলা থাকে। মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের আদালতের রেকর্ডও অনেক উপকারী হতে পারে সাংবাদিকদের জন্য। এখান থেকে তাদের নেটওয়ার্ক ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংগঠন সম্পর্কে জানা যায়। 

কেস স্টাডি

দ্য গার্ডিয়ান: যুক্তরাজ্য পিপিই কিনেছে সেই সব কারখানা থেকে, যারা গোপনে উত্তর কোরিয়ার দাস শ্রমিক ব্যবহার করে 

ছবি: স্ক্রিনশট

কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর, মাস্ক, গ্লোভস, সোয়াব, গাউন ইত্যাদি চিকিৎসাসামগ্রীর চাহিদা বেড়েছে হু হু করে। এসব সামগ্রীর বেশির ভাগই উৎপাদিত হয় চীনে। ফলে বাড়তি সেই চাহিদা পূরণের জন্য চীনের কারখানাগুলোতে চাপ বেড়েছে। ২০২০ সালের নভেম্বরে, গার্ডিয়ানের একটি বিশেষ অনুসন্ধান থেকে দেখা যায়: যুক্তরাজ্য সরকার পিপিই কেনার জন্য চীনের যেসব কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে, তারা গোপনে তাদের কারখানায় জোর করে কাজ করাচ্ছে উত্তর কোরীয় কর্মীদের দিয়ে। তিন মাসের এই অনুসন্ধান থেকে দেখা যায়: দাসত্বের জালে আটকা থাকা এই মানুষেরা থাকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে। তারা কারখানার বাইরে যেতে পারে না এবং দিনে ১৮ ঘণ্টাও কাজ করতে হয়। এই শ্রমিকদের বেশির ভাগই নারী। উত্তর কোরিয়া নিয়মিতভাবে তার নাগরিকদের এভাবে বিদেশে পাঠায় কাজের জন্য এবং তাদের বেতন সংগ্রহ করে। এই অনুসন্ধানের প্রতিক্রিয়ায়, যুক্তরাজ্য সরকার এসব চুক্তির ক্ষেত্রে আরও সতর্ক ও স্বচ্ছ হওয়ার অঙ্গীকার করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে: এই সরবরাহ চেইনগুলোতে যে শ্রম হয়রানির ঘটনা ঘটেছে, তা সরকার উপলব্ধি করেছে এবং এগুলো রোধে তারা কাজ করছে। 

সিএনএন: ট্রাবলড ওয়াটার্স: শিশু দাস বাণিজ্যের গভীরে

ছবি: তথ্যচিত্র থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট

ছোট ছোট শিশুকে কেনাবেচা করা হয় মাত্র ২৫০ ডলারের বিনিময়ে। তারপর তারা দিন পার করে মাছ ধরার জালের জট ছড়াতে ছড়াতে। বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথাবার্তা বলছিল স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও অধিকারকর্মীরা। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিএনএনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর এটি বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ঘানার লেক ভোলটায় দেখা মেলে এমন ২০ হাজার আফ্রিকান শিশুর, যাদেরকে খোদ বাবা-মায়েরাই জেলেদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন নগদ টাকা বা গরুর বিনিময়ে। এই কাজটি খুবই বিপজ্জনক ছিল। নেপথ্যে কী ঘটে চলেছে, তা উন্মোচনের জন্য সিএনএনের সাংবাদিকেরা কাজ করেছেন স্থানীয় এক অধিকারকর্মীর সঙ্গে। তিনি দাসত্বের জালে বন্দি হয়ে পড়া শিশুদের উদ্ধার করতেন, আশ্রয় দিতেন এবং লেখাপড়া শেখাতেন। সাংবাদিকেরা এই শিশুদের অনুসরণ করে দেখেছেন, তারা কোথায় কাজ করে। তাদের পরিবার, আটককারী ও উদ্ধারকারীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এই সবকিছু দিয়ে সিএনএন প্রকাশ করে দারুণ একটি ভিজ্যুয়াল প্রতিবেদন। এর আগে ২০১৭ সালে জয় নিউজও প্রকাশ করেছিল স্লেভস অব দ্য ভোলটা শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র। তাতে বলা হয়েছিল, কীভাবে শিশুরা এই বন্দিজীবন কাটায় এবং এটি তাদের জীবনে কী প্রভাব ফেলে। 

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস: দাসের ধরা সি-ফুড

ছবি: স্ক্রিনশট

১৮ মাস ধরে চলা এই অনুসন্ধানে, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সাংবাদিকেরা খাঁচায় বন্দি করে রাখা কিছু মানুষ খুঁজে পেয়েছিলেন। তারা তুলে এনেছিলেন: বন্দি জেলেরা কোথায় মাছ ধরছে এবং কীভাবে সেটি যুক্তরাষ্ট্রের সুপারমার্কেট ও পোষা প্রাণীর খাবারের বাজারে জায়গা করে নিচ্ছে। এই কাজটি ২০১৬ সালে পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছিল। তার চেয়েও বড় কথা, প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন দুই হাজার মানুষ। এই অনুসন্ধানের প্রভাবে অপরাধীরা সাজা পেয়েছে, তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয়েছে এবং গোটা খাত থেকে সরবরাহ চেইনের শ্রম ব্যবস্থা উন্নত করার অঙ্গীকার এসেছে। এই অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু খবর দেখে, যেখানে যেখানে অভিবাসী জেলেরা তাদের বন্দিদশার কথা তুলে ধরেছিলেন। এই প্রতিবেদনগুলো উদ্বেগ তৈরি করলেও সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি। এপির অনুসন্ধানে বন্দি হয়ে থাকা সেই মানুষগুলোকে শনাক্ত করা হয়েছিল, এবং যারা তাদের বন্দি করে রেখেছে, যারা এই অপরাধীদের সঙ্গে ব্যবসা করছে; তাদের সবাইকে জবাবদিহির আওতায় এনেছিল। এই প্রতিবেদনের পর, সরবরাহ চেইন নিয়ে আরও বেশ কিছু অনুসন্ধান পরিচালিত হয়েছে। যেগুলোর মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে বিশ্বজুড়ে শ্রম হয়রানির চিত্র। ফলাফল হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়েছে।

পরামর্শ ও টুল

যে সাংবাদিকেরা বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নামতে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য থাকছে কয়েকটি পরামর্শ:

১. আগেই ঠিক করুন, যৌন বা শ্রম হয়রানি থেকে বেঁচে আসা মানুষদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় কীভাবে তাঁদের মানসিক চাপ ও আঘাত বিবেচনায় নেবেন। ডার্ট সেন্টার ফর জার্নালিজম অ্যান্ড ট্রমায় এ প্রসঙ্গে বেশ কিছু রিসোর্স আছে। ভালো কিছু রিসোর্স পাবেন গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের সাইটেও। সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলোর কাছ থেকেও জানতে চাইতে পারেন যে, কীভাবে সোর্সদের সঙ্গে ভালোভাবে সংযুক্ত হওয়া যায় এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। 

২. পানজিভাইমপোর্টজিনিয়াসের মতো ডেটাবেসগুলোতে পাবেন বৈশ্বিক আমদানি-রপ্তানির রেকর্ড। এ থেকে সাংবাদিকেরা দেখতে পারেন একটি পণ্য অন্য দেশের কোন কারখানায় বানানো হয়েছে। নির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ডের পণ্য কোন কারাখানা থেকে বানানো হয়, তা-ও থাকতে পারে এসব ডেটাবেসে। 

৩. বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানির তথ্যসংবলিত সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত ডেটাবেস, ওপেন করপোরেটস। এখানে ১৩০টি দেশের প্রায় ১৯০ মিলিয়ন করপোরেশনের তথ্য রয়েছে। এখানে অনেক খোঁজাখুঁজি করতে হলেও সাংবাদিকেরা দেখতে পারেন: কোনো কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে কারা আছেন, তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন, সংগঠন-সংক্রান্ত নথিপত্র এবং এমন আরও অনেক কিছু। এভাবে মানুষ টাকা এবং কোম্পানিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক যোগসূত্র বের করতে পারবেন।

৪. জিআইজেএন বা এ ধরনের অন্যান্য রিপোর্টিং উদ্যোগের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করুন। যেমন: সম্প্রতি  জার্নালিজম ফান্ড সাংবাদিকদের মধ্যে সহযোগিতা তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। মানব পাচার নিয়ে অনুসন্ধান করা খুব কঠিন কাজ। কিন্তু আপনি যদি মানব পাচারের উৎস ও গন্তব্যের দেশগুলোর সাংবাদিকদের সঙ্গে জোট বাঁধতে পারেন, তাহলে পুরো কাজটিই অনেক সহজ হয়ে যায়।

৫. সামাজিক রীতিনীতিগুলো পুনর্বিবেচনা করুন: কোথাও হয়তো এ ধরনের চর্চাই সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু আদতে সেটি হয়তো আধুনিক দাসত্বের কাতারে পড়ে। যেমন, মধ্যপ্রাচ্যের কাফালা বা স্পন্সরশিপের ব্যবস্থা প্রায়ই সেসব এশিয়ান কর্মীদের জন্য ঋণ দাসত্বে পরিণত হয়, যাদেরকে হয়তো সেখানে পাঠানো হয়েছে অস্থায়ী কিছু কাজের জন্য। হাইতিতে রেস্টাভেক শিশুদের যেভাবে তাদের বাবা-মা গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে পাঠিয়ে দেয়, তা একধরনের শিশু দাসত্ব। এবং যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকেরা হাওয়াইয়ের মাছ ধরার নৌকাগুলোর জন্য এমন এক ধরনের ভিসা ব্যবস্থা শনাক্ত করেছিলেন, যার মাধ্যমে বিদেশি শ্রমিকদের সেখানে কাজ করানো যাবে আমেরিকান শ্রম আইনের সুরক্ষা ছাড়াই। 

মনে রাখবেন

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের কাজই হলো কণ্ঠহীনদের কণ্ঠ দেওয়া এবং ক্ষমতাকে জবাবদিহি করা। মানব পাচার নিয়ে অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এই দুই কাজই করা হয়। আসলে রিপোর্টিংয়ের এমন জায়গা খুব কমই আছে, যেখানে এত দ্রুত পরিবর্তন আনা সম্ভব। এর মাধ্যমে হয়তো কোনো ব্যক্তির জীবনমান পরিবর্তন হতে পারে এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রের নানা চর্চায় দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন আসতে পারে।

ফলে সতর্ক থাকুন। ধারাবাহিকভাবে কাজ করুন। এবং ভিকটিমদের সুরক্ষার কথা সব সময় মাথায় রাখুন। ২০১৬ সালে, এপিতে আমার সহকর্মীরা আবার  ফিরে গিয়েছিলেন তাঁদের রিপোর্টিংয়ের জায়গাগুলোতে। এবং তাঁরা আবার সেসব মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, যাঁরা আমাদের রিপোর্টিংয়ের ফলে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। কেউ কেউ অনেক মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে গেছেন। রাতে দুঃস্বপ্ন দেখেছেন। কেউ কেউ নিজের দাসত্বের জীবন নিয়ে লজ্জায় পড়েছেন, কেউ হয়তো আবারও সেই অবস্থার মধ্যে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। অন্যদিকে অনেকে ভালো কাজকর্মও খুঁজে পেয়েছেন, নিজের ব্যবসা শুরু করেছেন, ঘর-সংসার করছেন। কেউ এমনকি তাদের পাচারকারীকে জেলেও নিয়ে গেছেন। অনেকেই বলেছেন যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের যন্ত্রণাগুলো মিলিয়ে যেতে শুরু করেছে। এবং তাঁরা এই স্বাধীনতার জন্য কৃতজ্ঞ। “তারপরও, তাঁরা নিজের ঘরে ফিরে যেতে পেরে, মুক্ত মানুষ হিসেবে জীবন যাপন করতে পেরে খুশি। তাঁরা কেউই আর দাস নন,” লেখা হয়েছিল এপির রিপোর্টে।

জিআইজেএন ভিডিও: আধুনিক শ্রমদাসত্ব নিয়ে অনুসন্ধানের পরামর্শ

হিউম্যান ট্রাফিকিং রিসোর্সেস: বেস্ট প্র্যাকটিসেস ইন রিপোর্টিং

হাও দে ডিড ইট: ইনভেস্টিং দ্য ট্রাফিকিং অব গার্লস ফ্রম নেপাল টু দ্য গাল্ফ


মার্থা মেনডোজা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক। তিনি এখন ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালি থেকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, সাম্প্রতিক বিষয়াবলি নিয়ে লেখালেখি করেন। তিনি এপির সেই অনুসন্ধানী দলের অংশ ছিলেন, যাঁরা ২০১৫ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাছ ধরার খাতে বলপূর্বক শ্রমের বিষয়টি উন্মোচন করেছিলেন। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর মুক্তি পেয়েছিলেন ‍দুই হাজার দাস। 

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

IDL-Reporteros founder Gustavo Gorriti

সদস্য প্রোফাইল

আইডিএল-রিপোর্টেরস: যে নিউজরুম পেরুর রাজনৈতিক অভিজাতদের চ্যালেঞ্জের সাহস দেখিয়েছে

পেরুর ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য ক্রমাগত নানা ধরনের চাপ ও হুমকির মুখে পড়েছে অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম, আইডিএল-রিপোর্টেরস এবং এর প্রতিষ্ঠাতা গুস্তাভো গোরিতি। পড়ুন, কীভাবে সেগুলো সামলে তারা সাহসিকতার সঙ্গে রিপোর্টিং চালিয়ে যাচ্ছে।

post office boxes, shell companies

পরামর্শ ও টুল

শেল কোম্পানির গোপন মালিকদের যেভাবে খুঁজে বের করবেন

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য শেল কোম্পানি ও সেগুলোর প্রকৃত মালিকদের পরিচয় খুঁজে বের করা বেশ কঠিন হতে পারে। তবে শক্তিশালী কিছু টুল রয়েছে যার সাহায্যে জটিল এই ক্ষেত্রে নতুন আসা সাংবাদিকেরাও গোপনে অবৈধ সম্পদ লুকোনো ব্যক্তিদের পদচিহ্ন খুঁজে বের করতে পারেন।

টেকসইতা পদ্ধতি

সাংবাদিকতার প্রভাব পরিমাপ — আমরা নতুন যা জানি

সব সংবাদমাধ্যমই চেষ্টা করে তাদের রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে সমাজে প্রভাব তৈরির জন্য। কিন্তু এই প্রভাব পরিমাপ করার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে একেক ধরনের সূচক। পড়ুন, এ নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে নতুন কী জানা গেছে।

BBC Newsnight NHS investigations lessons learned

কেস স্টাডি

যেভাবে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যসেবা কেলেঙ্কারির স্বরূপ উন্মোচন করেছে বিবিসি নিউজনাইট

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিয়ে ছোট একটি অনুসন্ধানের পরিকল্পনা করেছিল বিবিসি নিউজনাইট। কিন্তু পরবর্তীতে এক বছরব্যাপী অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নানাবিধ অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার বিস্তারিত চিত্র। পড়ুন, পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানটির নেপথ্যের গল্প ও অভিজ্ঞতা-পরামর্শ।