প্রবেশগম্যতা সেটিংস

লেখাপত্র

অনলাইনে হামলার শিকার হলে কী করবেন? সাংবাদিকদের জন্য ৬টি পরামর্শ

English

ছবি: শাটারস্টক

যেসব সাংবাদিক অনলাইনে ট্রল, হয়রানি বা হামলার শিকার হয়েছেন, কেবল তারাই জানেন বিষয়টি কত ভীতিকর হতে পারে। মনে হয়, যেন কেউ পাশে নেই। তবে আশার কথা হলো, গণমাধ্যমগুলো এখন অনলাইনে নিপীড়ন নিয়ে সচেতন হয়ে উঠছে, হয়রানির শিকার কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর গুরুত্বও বুঝতে পারছে।

একাদশ গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সের একটি সেশনে অনলাইন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরেছেন, বার্তাকক্ষের উদ্যোগে বিষয়টিকে মোকাবিলার কার্যকর সব কৌশল।

আপনার বার্তাকক্ষে আলাদা নিরাপত্তা বিভাগ থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। রিপোর্টারের পাশে দাঁড়াতে কিছু পদক্ষেপ, একজন নিউজরুম ম্যানেজারই নিতে পারেন।

ফিলিপাইনে জিআইজেএনের সদস্য প্রতিষ্ঠান র‌্যাপলার। অনেক দিন ধরেই দেশটির সরকার ও তাদের অনুগত ট্রলবাহিনী অনলাইনে আক্রমন চালিয়ে যাচ্ছে গণমাধ্যমটির বিরুদ্ধে। তাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক গ্লেন্ডা গ্লোরিয়া বলেন, সাংবাদিকদের নিয়ে ছড়ানো ভুয়া খবর প্রতিরোধ করা খুব জরুরি। একটি গণমাধ্যম যতটা গুরুত্বের সাথে পাঠককে ভুয়া খবর থেকে রক্ষা করে, ততটা গুরুত্বের সাথেই যেন, তার কর্মীর বিরুদ্ধে ছড়ানো ভুয়া তথ্যেরও জবাব দেয়।

“আপনি যদি ভুয়া খবরকে ভুয়া প্রমাণ করতে না-ও চান, তবু আপনার একনিষ্ঠ পাঠকদের স্বার্থে সেটি করতে হবে,” বলেন গ্লোরিয়া। “যখন সাংবাদিকতাই আক্রমণের মূল লক্ষ্যবস্তু, তখন আপনাকে নিজের ভিতটা আগলে রাখতেই হবে।”

বিশ্বের অনেক বার্তাকক্ষেই অনলাইন হামলা বা হয়রানি থেকে সাংবাদিকদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য স্বতন্ত্র বিভাগ নেই – এমনটাই জানিয়েছেন ভিয়েনাভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক স্কট গ্রিফেন।  অবশ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের কর্পোরেট নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান জেসন রাইখের মতে, বার্তাকক্ষে আলাদা নিরাপত্তা বিভাগ থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। তিনি মনে করেন, রিপোর্টারের পাশে দাঁড়াতে কিছু পদক্ষেপ, একজন নিউজরুম ম্যানেজারই নিতে পারেন। “হুমকি যাচাইয়ের কার্যকর টুলগুলো আমাদের হাতের কাছেই পাওয়া যায়,” বলেন রাইখ।

অনলাইন হয়রানির মানসিক চাপ বা হুমকির ভয়ে নিজেই খবর সেন্সর করার প্রবণতা থেকে সাংবাদিকদের রেহাই দিতে, বার্তাকক্ষ যেসব উদ্যোগ নিতে পারে, নিচে তারই কিছু উদাহরণ।

রিপোর্টারকে নিরাপদে রাখতে বার্তাকক্ষের অনেক কিছুই করার আছে। অংকন: ফিল নিন

রিপোর্টিংকে উৎসাহ যোগান

গ্রিফেন বলেন, বার্তাকক্ষে পারস্পরিক সহযোগিতার এমন সংস্কৃতি থাকা দরকার যেখানে হামলার শিকার হলেই একজন সাংবাদিক, তা জানাতে পারেন। আর সেই সংস্কৃতি প্রবর্তন করতে হবে একেবারে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায় থেকে। যেমন: প্রতিটি সম্পাদকীয় বৈঠকেই সম্পাদককে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করতে হবে।  “বিষয়টি যে গুরুত্বপূর্ণ তা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে বুঝতে হবে এবং তাদেরকে বলতে হবে, ‘হ্যাঁ, আমরা আমাদের সাংবাদিকদের পেছনে আছি,’” বলেন গ্রিফেন। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে যেন সাংবাদিকদের জানা থাকে, অনলাইনে হামলার শিকার হলেই কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে।

হুমকির আলাদা ফাইল তৈরি করুন

রাইখের মতে, যে সাংবাদিক হুমকি পাচ্ছেন, তাকেই যে সবকিছু লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে, তা নয়। কারণ এই কাজ করতে গিয়ে তিনি আরো ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়তে পারেন। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা যেসব হুমকি পাচ্ছেন তাদের প্রতিটিকে আলাদা ফাইলে লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে নিউজরুমের ম্যানেজারকেই। এর সুবিধা দুটি: প্রথমত হুমকির কোনো প্যাটার্ন আছে কিনা বা একই লোক বারবার হুমকি দিচ্ছে কিনা, তা বোঝা যায়; আর দ্বিতীয়ত, এভাবে সাংবাদিককেও আরো গভীর মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করা যায়।

মিথ্যাকে ধরিয়ে দিন

অনেক সময় সাংবাদিকদের নামে ভুয়া খবর ছড়ানো হলে, আমরা সেটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমরা মনে করি বিষয়টি নিয়ে মাতামাতি করলে, “ট্রলরা আরো উৎসাহ পাবে।”  কিন্তু গ্লোরিয়া বলেন, র‌্যাপলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের সাংবাদিকদের নিয়ে কেউ ভুয়া খবর ছড়ালে, তারা খবরের মাধ্যমেই সেটি ধরিয়ে দিবে। তিনি সহকর্মী পিয়া রানাদার উদাহরণ তুলে ধরেন। তাকে নিয়ে একের পর এক নোংরা মিথ্যাচার ছড়ানো হচ্ছিল। গ্লোরিয়া জানান, একসময় রানাদার নামে গুগলে সার্চ দিলেই শুরুতে সব ভুয়া খবর আসতো। কিন্তু এখন সার্চ দিলে শুরুতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর হামলার খবর আসে।

পর্যাপ্ত গবেষণা করুন

গ্লেন্ডা গ্লোরিয়া, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, র‌্যাপলার। ছবি: নিক জাউসি/নিকজাউসি.কম

সাংবাদিকদের ওপর অনলাইনে কে আক্রমন করছে, সেটি র‌্যাপলার নিজেই গবেষণা করে খুঁজে বের করে। গ্লোরিয়া বলেন, ফিলিপাইনের মত দেশে, যেখানে স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর হামলা হয়, খোদ প্রেসিডেন্টের কথায়, সেখানে এমনটাই করতে হবে। এভাবে তাদের বার্তাকক্ষ গত কয়েক বছরে ৪০ হাজার ভুয়া একাউন্টের একটি তালিকা তৈরি করেছে। তারা এর নাম দিয়েছে “শার্ক ট্যাংক।” এই তালিকা ধরে তারা নজর রাখেন, র‌্যাপলারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণার ওপরে।

সহযোগীদের গ্রুপ গড়ে তুলুন

রাইখ এবং গ্রিফেন, দুজনই জোর দিয়েছেন এমন গ্রুপ গড়ে তুলতে, যেখানে সাংবাদিকরা হয়রানি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। তারা আদর্শ হিসেবে, রয়টার্স পিয়ার নেটওয়ার্কের উদাহরণ দেন।  অবশ্য তারা মনে করেন, অনেক বার্তাকক্ষের জন্য একটি সাধারণ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপই যথেষ্ট। গ্রিফেন বলেন, এসব পিয়ার নেটওয়ার্কে তাদেরকেও আসতে হবে, যারা হামলার শিকার নন, যাতে তারা হয়রানির মুখে থাকা সহকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে পারেন।

নিরাপত্তা ব্যবস্থায় জেন্ডার অন্তর্ভুক্ত করুন

নিউজরুম সেফটি প্রটোকল নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আইপিআই দেখতে পেয়েছে, “নারী সাংবাদিকরা যে অনলাইনে বেশি হামলার শিকার হন শুধু তা-ই নয়, তাদের বিরুদ্ধে আক্রমনের ধরণও প্রচণ্ড আদিরসাত্মক ও কুরুচিপূর্ণ হয়ে থাকে।” র‌্যাপলারের বেলায়ও একই ঘটনা ঘটেছে, কারণ প্রতিষ্ঠানটির ৬০% কর্মীই নারী। তাদের সম্পাদক মারিয়া রেসাও একজন সম্মানিত নারী সাংবাদিক। গ্লোরিয়া বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠান যে এত বেশি হামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছে, তা মোটেও কাকতালীয় নয়।

দর্শক সারি থেকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এথিকাল জার্নালিজম নেটওয়ার্কের পরিচালক হান্নাহ স্টর্ম বলেন, নারী সাংবাদিকরা যে স্বতন্ত্র ধরণের হয়রানির শিকার হন, তা নিরাপত্তা প্রটোকলে অন্তর্ভু্ক্ত করতে হবে বার্তাকক্ষগুলোকে। তার মতে, এজন্য নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান হিসেবে নারী কর্মীকে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে, যা এখনো খুব একটা চোখে পড়ে না, এই শিল্পে।

মেগান ক্লিমেন্ট একজন সাংবাদিক ও সম্পাদক। তিনি জেন্ডার, মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক নীতিতে বিশেষজ্ঞ। তার লেখালেখির আরেক বিষয় প্যারিস নগরী, যেখানে তিনি ২০১৫ সাল থেকে রয়েছেন।

ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে আমাদের লেখা বিনামূল্যে অনলাইন বা প্রিন্টে প্রকাশযোগ্য

লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করুন


Material from GIJN’s website is generally available for republication under a Creative Commons Attribution-NonCommercial 4.0 International license. Images usually are published under a different license, so we advise you to use alternatives or contact us regarding permission. Here are our full terms for republication. You must credit the author, link to the original story, and name GIJN as the first publisher. For any queries or to send us a courtesy republication note, write to hello@gijn.org.

পরবর্তী

IDL-Reporteros founder Gustavo Gorriti

সদস্য প্রোফাইল

আইডিএল-রিপোর্টেরস: যে নিউজরুম পেরুর রাজনৈতিক অভিজাতদের চ্যালেঞ্জের সাহস দেখিয়েছে

পেরুর ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য ক্রমাগত নানা ধরনের চাপ ও হুমকির মুখে পড়েছে অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম, আইডিএল-রিপোর্টেরস এবং এর প্রতিষ্ঠাতা গুস্তাভো গোরিতি। পড়ুন, কীভাবে সেগুলো সামলে তারা সাহসিকতার সঙ্গে রিপোর্টিং চালিয়ে যাচ্ছে।

post office boxes, shell companies

পরামর্শ ও টুল

শেল কোম্পানির গোপন মালিকদের যেভাবে খুঁজে বের করবেন

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য শেল কোম্পানি ও সেগুলোর প্রকৃত মালিকদের পরিচয় খুঁজে বের করা বেশ কঠিন হতে পারে। তবে শক্তিশালী কিছু টুল রয়েছে যার সাহায্যে জটিল এই ক্ষেত্রে নতুন আসা সাংবাদিকেরাও গোপনে অবৈধ সম্পদ লুকোনো ব্যক্তিদের পদচিহ্ন খুঁজে বের করতে পারেন।

টেকসইতা পদ্ধতি

সাংবাদিকতার প্রভাব পরিমাপ — আমরা নতুন যা জানি

সব সংবাদমাধ্যমই চেষ্টা করে তাদের রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে সমাজে প্রভাব তৈরির জন্য। কিন্তু এই প্রভাব পরিমাপ করার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে একেক ধরনের সূচক। পড়ুন, এ নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে নতুন কী জানা গেছে।

BBC Newsnight NHS investigations lessons learned

কেস স্টাডি

যেভাবে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যসেবা কেলেঙ্কারির স্বরূপ উন্মোচন করেছে বিবিসি নিউজনাইট

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিয়ে ছোট একটি অনুসন্ধানের পরিকল্পনা করেছিল বিবিসি নিউজনাইট। কিন্তু পরবর্তীতে এক বছরব্যাপী অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নানাবিধ অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার বিস্তারিত চিত্র। পড়ুন, পুরস্কারজয়ী অনুসন্ধানটির নেপথ্যের গল্প ও অভিজ্ঞতা-পরামর্শ।